Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মায়ের বিশ্বাস একদিন খুনের বিচার হবেই

সালমান শাহ মৃত্যুর একুশ বছর

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সালমানের মৃত্যুর সূচনা হয়েছিল চিটাগাং ক্লাব থেকে - নীলা চৌধুরী
দেশের জনপ্রিয় অভিনেতা নায়েক সালমান শাহ মৃত্যুর ২১ বছর পেরিয়ে গেল। আজো তার মৃতুরহস্য ঘেরা। তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে সালমান শাহর মা-বাবা বার বার দাবী করছেন। অন্যদিকে পুলিশ সিআইডি মামলার তদন্তের পর বলছে এটা হত্যাকান্ড নয়। আজো এ বির্তকের অবসান হয়নি। এরেই মধ্যে আবারো সারা দেশে বির্তকের ঝড় ওঠেছে। নায়েক সালমানের পরিবার ও তার ভক্তরা এ মামলার আবারো সুষ্ট তদন্তনের দাবী করেছেন। এপ্রেক্ষিতে মামলাটি এখন পিবিআই তদন্ত করছে।
সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী বলেছেন, সালমানকে হত্যা করা হয়েছে। আমার বিশ্বাস এদেশের মাটিতে একদিন সালমান হত্যার বিচার হবেই। এ প্রত্যাশায় আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবী জানিয়েছি ,আমেরিকা থেকে যেন আসামী রুবিকে দেশে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মামলার তদন্তের স্বার্থেই এখন তা করার প্রয়োজন।
সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী বলেন, সালমানের মৃত্যুর সূচনা হয়েছিল চিটাগাং ক্লাব থেকে। ১৯৯৬ সালে ঢাকায় এসেছিলেন ভারতীয় অভিনেত্রী মুনমুন সেন। সালমান শাহর হত্যার চার দিন আগে সামিরার মায়ের দাওয়াতে চিটাগাং ক্লাবে গিয়েছিলেন চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও মুনমুন সেন গ্যাং। সেখানে তাদের (আজিজ মোহাম্মদ ভাই-মুনমুন সেন) গ্যাংয়ের সদস্য হওয়ার জন্য সালমানকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সেখান থেকেই হত্যার সিদ্ধান্তও পরিকল্পনা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর ইন্সপেক্টর সিরাজুল ইসলাম বলেন, মামলার তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই মামলার সাক্ষী হিসেবে নতুন করে সালমানের মামা ও মার বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া এ মামলার আসামি রুবির দুটি ভিডিও বার্তা সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। তবে দুই ভিডিও বার্তা দুই রকম কথা বলেছেন রুবি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও অবহিত আছেন। তাদের (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের) অনুমতি পাওয়া গেলে রুবিকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্ততি নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, মামলাটি বেশ পুরনো, তাই এ মামলার নতুন করে কোনো আলামত পাওয়া অত্যন্ত দুরুহ। যেসব আলামত ছিল তাও অধিকাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। অধিকাংশ সাক্ষী ও আসামি বিদেশ থাকায় মামলাটির তদন্ত নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে কবে নাগাদ এ তদন্ত শেষ হতে পারে তা বলা যাচ্ছে না।
১৯৯৬ সালের এই দিনে (৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ১১/বি নিউ ইস্কাটন রোডের বাসায় নিজের কক্ষে সালমান শাহকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। তার লাশ উদ্ধার করে প্রথমে হলি ফ্যামিলি এবং পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন। পরে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই সালমান শাহকে হত্যার অভিযোগ করে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরের আবেদন করা হয়।
কয়েক দফা তদন্তে সালমান শাহর মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হলেও তা এখনো মেনে নিতে পারেনি তার পরিবার ও অগণিত ভক্ত। সর্বশেষ গত বছরের শেষের দিকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নতুন করে মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়।
তবে দীর্ঘ সময় পার হওয়ায় এ মামলার অসংখ্য আলামত নষ্ট হয়ে গেছে। একই সঙ্গে সম্পৃক্তদের অনেকেরই জবানবন্দি নেয়া সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় অধিকতর তদন্তে কতটুকু অগ্রগতি হবে তা নিয়ে খোদ তদন্ত সংশ্লিষ্টরাই সন্দিহান।
এদিকে মামলাটির সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী। একই সঙ্গে তিনি সালমান শাহর অপমৃত্যুর মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরের দাবি জানিয়েছেন। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর এ মামলার অধিকতর তদন্তের প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য রয়েছে।
নীলা চৌধুরী আরো বলেন, আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও মুনমুন সেনের দলে নেওয়ার বিষয়ে সালমানের সঙ্গে অনেক কথা কাটাকাটি হয়। কিন্তু সালমান তা মানেনি। ২ সেপ্টেম্বর চিটাগাং থেকে ঢাকায় ফেরে সালমান। আর মারা যাওয়ার একদিন আগে সালমান আমাকে বলেছিল, আম্মা, ওদের (আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও মুনমুন সেন) সব (অবৈধ কার্যকলাপ) কিছু আমি জেনে এসেছি। আমি বলেছিলাম, এমন খারাপ মানুষদের কাছে যেতে নেই। সব জেনে গেলে ওরা (গ্যাং) তো তোকে মেরে ফেলবে। সালমান বলেছিল, আম্মা, তোমার ছেলের হাতও অনেক লম্বা। ওরা আমাকে কিছুই করতে পারবে না। কিন্তু শেষরক্ষা হলো না আমার ছেলের।
তিনি বলেন, অনেক প্রচেষ্টার পর এ মামলাটি এতোদূর নিয়ে আসতে পেরেছি। সম্প্রতি রুবি নামের এক আসামি ভিডিও বার্তায় সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছে বলে স্বীকার করেছে। এটা বাস্তব সত্য। তার (রুবির) ভাইয়ের ওপর আঘাত করেছে বলেই সে এখন সত্য বলে দিচ্ছে। সেও আমার ছেলে হত্যায় জড়িত ছিল। হত্যার আলামত সালমানের স্ত্রী সামিরাই ওই রুবির হাতে দিয়ে নষ্ট করেছিল।
নীলা চৌধুরীর অন্যতম আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আইনজীবীরা সালমান শাহর প্যালেন আইনজীবী হওয়ার জন্য প্রস্তাব পাঠাচ্ছেন। বাংলাদেশের সকল বার থেকে আইনজীবী নিয়ে আমরা সালমান শাহ আইনজীবী পরিষদ গঠন করার চেষ্টা করছি। আইনজীবী সমাজ সজাগ হলে এ হত্যার বিচার হবেই। সমাজের সর্বস্তর থেকে সোচ্চার না হলে এ হত্যার বিচারের আলো মাঝে মাঝে জাগ্রত হবে, কিন্তু তা ফের নিভে যাবে।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে জনপ্রিয়তার মধ্যে ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইস্কাটন রোডে নিজের বাসা থেকে শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন ওরফে সালমান শাহর লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই সময় সালমানের মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন। পরে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরের আবেদন করা হয়। অপমৃত্যুর মামলার সঙ্গে হত্যাকান্ডের অভিযোগের বিষয়টি একসঙ্গে তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত। তদন্ত শেষে ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি। সেখানে সালমান শাহর মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়।
এরপর সিআইডির প্রতিতবেদন প্রত্যাখ্যান করে রিভিশন মামলা করা হলে ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের জন্য পাঠান আদালত। দীর্ঘ প্রায় বার বছর মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তাাধীন ছিল। ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার সিএমএম আদালতের বিচারক বিকাশ কুমার সাহার কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। এ প্রতিবেদনেও সালমান শাহর মৃত্যুকে অপমৃত্যু হিসাবে উল্লেখ করা হয়। ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন।
২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাহাঙ্গীর হোসেনের আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর নারাজি আবেদন করা হয়। নারাজি আবেদনে আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ১১ জন সালমান শাহর হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা বলা হয়। আদালত নারাজি আবেদনটি মঞ্জুর করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‌্যাব) মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। এরপর মামলাটিতে র‌্যাবকে তদন্ত দেওয়ার আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি রিভিশন মামলা করেন। ওই বছরের ২১ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক কে এম ইমরুল কায়েস রিভিশন আবেদন মঞ্জুর করে র‌্যাব মামলাটি আর তদন্ত করতে পারবে না বলে আদেশ দেন। সর্বশেষ ৭ ডিসেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিন ম্যাজিস্ট্রেট লস্কর সোহেল রানা মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। বর্তমানে পিবিআই মামলাটি তদন্ত করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুন

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ