Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিভীষিকাময় সাত খুনের ঘটনাক্রম

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৩ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নারায়ণগঞ্জের বিভীষিকাময় সাত খুনের ঘটনা সারাদেশের মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছিল। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালতে মামলায় হাজিরা দিতে যান সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম। গাড়িতে ফেরার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম এলাকা থেকে অপহৃত হন তিনি ও তাঁর পাঁচ সঙ্গী। একই সময়ে অপহৃত হন আরেক গাড়িতে থাকা আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়িচালক। এর দুদিন পর ৩০ এপ্রিল বিকালে শীতলক্ষ্যা নদীর বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া শান্তির নগর এলাকা থেকে নজরুল, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিমের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করা হয়। নৃশংস এ হত্যাকান্ডের পর উত্তেজিত জনতা সন্দেহভাজন কয়েকজনের বাড়িঘর ও দপ্তর জ্বালিয়ে দেয়। পরে বেরিয়ে আসে যে এই হত্যাকান্ডে জড়িত ছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরই কেউ কেউ, যা নিয়ে শোরগোল দেশের সীমানাও ছাড়িয়ে যায়। হত্যাকান্ডের প্রধান আসামি আরেক কাউন্সিলর নুর হোসেনের পালিয়ে যাওয়া নিয়েও সমালোচনা ওঠে। পলাতক অবস্থায় নুর হোসেনের সঙ্গে স্থানীয় এমপি এ কে এম শামীম ওসমানের ফোনালাপ প্রকাশ হলে তা নিয়েও ব্যাপক আলোচনা ওঠে। নুর হোসেন পরে ভারতে ধরা পড়েন, ফিরিয়ে আনা হয় তাকে। হত্যাকান্ডে নিহতদের স্বজনদের করা দুই মামলায় ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ৩৮টি শুনানির পর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ২৬ জনকে ফাঁসি এবং ৯জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। নিম্নে সাত খুনের ঘটনাক্রম তুলে ধরা হলো : ২৭ এপ্রিল ২০১৪: নিখোঁজ নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেনসহ ছয়জনকে আসামি করে ফতুল্লা থানায় অপহরণের মামলা করেন। যেটি পরে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। ২৮ এপ্রিল অপহরণের ঘটনায় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার; ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সব এসআইকে অন্য জেলায় বদলি করা হয়। ৩০ এপ্রিল বিকালে শীতলক্ষ্যা নদীর বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া শান্তির নগর এলাকা থেকে নজরুল, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিমের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশের সন্ধানে নদীর তীরে ছুটে যান স্বজনরা। তাদের কান্নায় বাতাস বারি হয়ে ওঠে। টেলিভিশনে সেই লাশ উদ্ধারের দৃশ্য দেখে সারাদেশের মানুষ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। ইতিহাসের চরম নৃশংসতার সেই দিনের দৃশ্য আজও মনে করে অনেকেই কেঁদে ওঠেন। ১ মে একই জায়গায় মেলে নজরুলের আরেক বন্ধু সিরাজুল ইসলাম লিটনের লাশ। সব লাশের পেটে ছিল আঘাতের চিহ্ন। প্রতিটি লাশ ইটভর্তি দুটি করে বস্তায় বেঁধে নদীতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ওই দিন সকালে উত্তেজিত জনতা কাউন্সিলর নূর হোসেনের কার্যালয়, রাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হাজি মো. ইয়াসিনের বাড়ি ভাংচুর করে ও সংলগ্ন কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। ৪ মে নজরুলের শ্বশুর অভিযোগ করেন, র‌্যাবের তিন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম এম রানা ও মেজর আরিফ হোসেন ছয় কোটি টাকার বিনিময়ে এ সাতজনকে অপহরণের পর খুন করেন। সেনা কর্মকর্তা তারেক সাঈদ ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার জামাতা। তিনি র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক ছিলেন। নৌবাহিনীর কর্মকর্তা রানা ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা আরিফও র‌্যাব-১১ এ ছিলেন। ৭ মে চন্দনের জামাতা বিজয় কুমার পাল অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে ফতুল্লা থানায় আরেকটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ১১ মে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির তৎকালীন সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন, সদস্য মাহবুবুর রহমান ইসমাইল ও চন্দনের জামাতা বিজয় কুমার পালের রিট আবেদনে হাই কোর্ট তিন র‌্যাব কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়। পরদিন পুলিশের পক্ষ থেকে গ্রেফতারে সহযোগিতা চেয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ১৫ মে পুলিশকে চিঠি দিয়ে কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিওর (সিআরপিসি) অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলে। ওইদিন রাতেই মিলিটারি পুলিশের সহায়তায় ঢাকা সেনানিবাসের বাসভবন থেকে তারেক সাঈদ ও মেজর আরিফ হোসেনকে গ্রেফতার করে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ। ১৭ মে আদালতে হাজির করা হয় তারেক সাঈদ ও আরিফ হোসেনকে। পরদিন রাতে নৌ-বাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা এম এম রানাকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানা পুলিশের কাছে তুলে দেন। এ আগেই তিন কর্মকর্তাকেই বাহিনী থেকে বরখাস্ত করা হয়। ২০১৪ সালের ১৪ জুন মামলার প্রধান আসামী কাউন্সিলর নুর হোসেনকে গভীর রাতে কলকাতার দমদম বিমানবন্দর সংলগ্ন বাগুইআটি থানা পুলিশ আটক করে। ২০১৫ সালের ১৩ নভেম্বর বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে তাকে বাংলাদেশের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। দেশে ফেরত আনার পর ২০১৫ সালের ১৪ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের আদালতে নুর হোসেনকে হাজির করানো হয়। নৃশংস এ হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৫ জনকে আসামি করে ২০১৬ সালের ৮ ফেব্রæয়ারি অভিযোগ গঠন করে আদালত।এদের মধ্যে ২৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যার ১৭ জন র‌্যাব সদস্য। পলাতক ১২ জনের মধ্যেও র‌্যাবের ৮ জন রয়েছেন।



 

Show all comments
  • শরীফ ২৩ আগস্ট, ২০১৭, ১১:৩৯ এএম says : 0
    এই ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া ঠিক হবে না। সকলের ফাঁসি হওয়া দরকার।
    Total Reply(0) Reply
  • জুয়েল ২৩ আগস্ট, ২০১৭, ১১:৪০ এএম says : 0
    এরা মানুষ কিনা সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। মানুষ কী এত নিষ্ঠুর হতে পারে ?
    Total Reply(0) Reply
  • AH Raj ২৩ আগস্ট, ২০১৭, ১:১৯ পিএম says : 0
    পাপ করলে পাপি শাস্তি পাবেই,, হয়তো আজ না হয় কাল,,
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুন

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ