পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
অবিরাম বর্ষণ ও সীমান্তের ওপর থেকে ধেয়ে আসা ঢলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে নদীভাঙন ভয়ংকর রূপে আর্বিভূত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে শহর রক্ষা বাঁধসহ বেশ কিছু রক্ষা বাঁধ ইতোমধ্যে ধসে পড়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে নদীভাঙ্গন ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণে পরিণত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। খবর পাওয়া গেছে, কক্সবাজারের চকরিয়া শহর রক্ষা বাঁধ ও ফাসিয়াখালি ইউনিয়নের ঘুনিয়া পয়েন্টের বেড়ি বাঁধ মারাত্মক ভাঙনের কবলে পতিত হয়েছে। মাতামুহুরী নদীর ভাঙনে এর মধ্যেই পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের গনি শিকদারপাড়া গ্রামের বেশ কিছু বসতঘর ও আবাদী জমি বিলীন হয়ে গেছে। জানা গেছে, ভাঙনের কারণে বেড়ি বাঁধ এখন নদীর এক কিলোমিটার দূরত্বে এসে পৌঁঁছেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এখনই বাঁধ সুরক্ষায় উদ্যোগী না হলে চলতি বর্ষা মওসুমে পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড ও ফাসিয়াখালি ইউনিয়নের অন্তত ১২টি গ্রামের জনবসতি, জমিজিরাত ও স্থাপনা নদীগর্ভে হারিয়ে যেতে পারে বলে এলাকাবাসীর আশঙ্কা। ওদিকে ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। এতে ঝুঁকিতে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৪০টি পয়েন্ট। পানির চাপ বাড়লে এসব পয়েন্টে ধস নামতে পারে। তেমন কিছু হলে বিস্তীর্ণ এলাকা নদের গ্রাসে পরিণত হতে পারে। সিরাজগঞ্জের চৌহালি উপজেলায় নির্মাণাধীন নদী তীর রক্ষা বাঁধে ফের ধস দেখা দিয়েছে। ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এ বাঁধ এই নিয়ে সপ্তমবার ধসের শিকার হয়েছে। ইতোমধ্যে বাঁধের ৬০ মিটার যমুনাগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধেও এ ধরনের ধস দেখা দিয়েছে। এই বাঁধও বর্তমানে মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। আবহাওয়াবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, আগামী দিনগুলোতে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার পাশাপাশি সীমান্তের ওপার থেকে ঢলের মাত্রা বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। সেক্ষেত্রে শহর রক্ষা বাঁধ, বেড়ি বাঁধ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো ব্যাপকভাবে ভাঙনের শিকার হতে পারে। তেমনটি হলে ক্ষয়ক্ষতি ও মানবিক বিপর্যয়ের কোনো সীমা-পরিসীমা থাকবে না।
বন্যার অনিবার্য অনুসঙ্গ নদীভাঙ্গন। নদীতে যখন পানি বাড়ে তখন একবার ভাঙন দেখা দেয়। নদীর পানি উপচে পড়ে বন্যার সঙ্গে ভাঙনের তাÐব সৃষ্টি হয়। পরে যখন নদীর পানি কমে যায় বা নেমে যায় তখন ফের নদী তীরবর্তী এলাকা ভাঙনের শিকার হয়। এও লক্ষ্য করা যায়, নদী ভাঙ্গনে শুধু মাত্র বাড়িঘর, স্থাপনা, ফসলি জমিই বিলীন বা ধ্বংস হয়ে যায় না, এই সঙ্গে সকল প্রকার রক্ষা বাঁধও ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ভেঙ্গে যায় কিংবা ধসে পড়ে। রক্ষা বাঁধগুলোর মূল লক্ষ্য হলো, শহর, জনপদ, জমিজমা রক্ষা করা। অভিজ্ঞতার দেখা গেছে, এই রক্ষা বাঁধগুলো ভাঙন বা ধসের মুখে পড়ে আগে। ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এবং মানবিক বিপর্যয় চরম আকার ধারণ করে। প্রতি বছর নদীভাঙ্গন ও বাঁধ ধসের কারণে বাড়িঘর, ফসলাদি, জমিজমা ও স্থাপনার যে কত ক্ষতি হয়, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। কত মানুষ যে নি:স্ব হয়ে উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়, তারও কোনো হিসাব নেই। এবার হাওর রক্ষা বাঁধ কোনো কাজে আসেনি। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলের পানি আটকাতে পারেনি। এর ফলে হাওর এলাকায় ৯০ শতাংশ উঠতি বোরো ধান বিনষ্ট হয়েছে। লাখ লাখ কৃষক পথের ফকিরে পরিণত হয়েছে। তদন্তে দেখা গেছে, হাওর রক্ষা বাঁধগুলো যদি মজবুত হতো, যথাসময়ে তাদের সংস্কার কাজ সম্পন্ন হতো তাহলে এতবড় ক্ষতি হতে পারতো না। এজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্যর্থতাকে দায়ী করা হয়েছে এবং এর স্থানীয় ৬১ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদক মামলা দায়ের করেছে। বন্যা ও নদীভাঙ্গনের এখন যে তাÐব শুরু হয়েছে, রক্ষা বাঁধগুলো যেভাবে ভাঙন ও ধসের মুখে পড়েছে, অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে, তার জন্যও পানি উন্নয়ন বোর্ডই দায়ী। বাঁধগুলো ঠিকমত তৈরি হয়নি, পুন:নির্মাণ বা সংস্কার কাজও যথাসময়ে হয়নি। ফলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাঁধগুলোতে ভাঙন বা ধস দেখা দিয়েছে।
প্রতিবছরই বন্যার সময় রাজশাহী, চাঁদপুর, সিরাজগঞ্জ, খুলনা প্রভৃতি বড় শহরসহ বিভিন্ন স্থানের শহর রক্ষা বাঁধ ভাঙন ও ধসের সম্মুখীন হয়। এ নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেয়া হয়। তাৎক্ষণিকভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন ও ধস রোধের পদক্ষেপ নেয়। কোনো ক্ষেত্রে এর সফলতা আসে, কোনো ক্ষেত্রে আসে না। এটাই দীর্ঘদিনের বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বহুবার একথা বিভিন্ন মহল থেকে বলা হয়েছে, শহর রক্ষা বাঁধসহ সকল বাঁধ এমনভাবে নির্মাণ ও ফি বছর প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হোক, যাতে ভেঙে বা ধসে না পড়ে। একথার কোনো বাস্তবায়ন ও প্রতিফলন ঘটেনি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের একশ্রেণীর কর্মকর্তা বাঁধগুলোকে কেন্দ্র করে তাদের অনৈতিক আয়-উপাজর্নের ‘ব্যবসা’ গড়ে তুলেছে। প্রতিবছর বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে যে বিরাট অংকের বরাদ্দ দেয়া হয় তার বেশির ভাগ ‘লুটপাট’ হয়ে যায়। আর খেসারত দিতে হয় দেশ ও জনসাধারণকে। ব্যাপকভিত্তিক তদন্ত হলে দেখা যাবে, হাওর রক্ষা বাঁধের দায়িত্ব নিয়োজিত ৬১জন কর্মকর্তার মতো আরও বহু কর্মকর্তা তাদের দায়িত্বে অবহেলা ও দুর্নীতির জন্য দায়ী সাব্যস্ত হয়েছে। সেরকম একটা তদন্ত হওয়া উচিৎ বলে আমরা মনে করি। বলা বাহুল্য, এভাবে চলতে পারে না। অবশ্যই রক্ষা বাঁধ সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। চলতি বন্যায় যেসব বাঁধ হুমকিতে পড়েছে, আমরা আশা করি, জরুরি ভিত্তিতে তা রক্ষা করার ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।