পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উজানের ভারতের আসাম থেকে নেমে আসা ঢলে সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনার শতাধিক হাওর ডুবে গেছে। তবে এতোদিন সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার পাউবোর বাঁধ হালির হাওর রক্ষা করেছে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। পাহাড়ি ঢলের পানির প্রবল চাপে বাঁধ ভেঙে সুনামগঞ্জে হালির হাওর তলিয়ে গেছে। জামালগঞ্জ উপজেলার আহসানপুর গ্রামের পাশে পাউবোর ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে হালির হাওরে প্রায় ৫ হাজার ৭৫০ হেক্টর বোরো ধান পানির নীচে।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ দেব বলেন, বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করেও শুরু থেকেই হাওরের বাঁধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কৃষকদের নিয়ে কাজ করেছি। গত সোমবার রাতে হঠাৎ আহসানপুরের বাঁধ ভেঙে হালির হাওরে পানি প্রবেশ করে। আমরা চেষ্টা করেছি আটকানো সম্ভব হয়নি। তবে এই হাওরে প্রায় ৯০ ভাগের উপরে ধান কাটা হয়েছে।
গত ২ এপ্রিল থেকে শুরু করে গত সোমবার রাত পর্যন্ত জামালগঞ্জের হালির হাওর নিয়ে বাঁধ ভেঙে তলিয়েছে ৩১টি হাওরের কাঁচ ও আধাপাকা ধান। ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে আসা ঢলে সুনামগঞ্জ জেলায় একের পর এক হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে ও বাঁধ উপচে তলিয়ে কমপক্ষে ২০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। এদিকে জামালগঞ্জে গত সোমবার রত ১০টার দিকে হালির হাওর তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা চোখে অন্ধকার দেখছেন। তারা জানান, কাবিটা স্কিম বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির গাফিলতি, পাউবোর দুর্নীতি ও পিআইসির উদাসীনতায় বাঁধ ভেঙে বোরো ফসল তলিয়ে গেছে।
কৃষকরা জানান, এখনও হাওরের অর্ধেক ধানও কাটা হয়নি। এ মুহূর্তে পানি এসে হাওর তলিয়ে গেল। হালির হাওরের কৃষক মনি বলেন, জমিতে আধপাকা ধান আছে। এ পর্যন্ত অর্ধেক কাটা হয়েছে। আর মাড়া ও কাটাইকৃত ধান নিয়ে আছি আরো বিপদে। বহু কৃষকের জমি নিজের চোখের সামনেই পানিতে তলিয়ে গেছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সুব্রত সামন্ত সরকার জানান, হালির হাওরে প্রায় ৭০ ভাগ জমির ধান কাটা হয়েছে।
অপরদিকে জামালগঞ্জ উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, হালির হাওরে ৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমি রয়েছে। গত সোমবার পর্যন্ত সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমির ফসল কাটা হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল হক বলেন, গত সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে আছানপুরের বাঁধ ভেঙে হালির হাওরে পানি প্রবেশ শুরু করে। তবে চেষ্টা করা হয়েছে ভাঙন ফিরানো যায়নি।
এবার সুনামগঞ্জ জেলার ১২টি উপজেলার ৯৫টি হাওর ও ৪২টি বিলে ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হক্টের জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ধান। যার বাজার মূল্য সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। এদিকে জেলায় ৩ লাখ ৭৮ হাজার কৃষক চাষাবাদে জড়িত রয়েছেন। কৃষক নেতারা বলছেন, জেলার এ পর্যন্ত ৩১টি ছোট-বড় হাওরে অন্তত ২০ হাজার হেক্টর জমির কাঁচা ও আধাপাকা ধান পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে ফসলের ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৫০ কোটি টাকার। তবে সরকারি সূত্রের দাবি ক্ষতির পরিমাণ হবে ৯০ কোটি টাকার কাছাকাছি।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, গত সোমাবার পর্যন্ত জেলার ৮টি উপজেলায় ৫ হাজার ৭৬৫ হেক্টর জমির ধান ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। যার বাজার মূল্য হবে অন্তত ৯০ কোটি।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, গত বছরের ১৫ ডিসেম্বরে শুরু হয়ে চলতি বছরের ২৮ ফেরুয়ারির মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও জামালগঞ্জ উপজেলা হালির হাওরে বাঁধের কাজ শুরু করেছে মার্চের মাঝামাঝিতে। ফলে বাঁধের মাটি বসতে না বসতেই পাহাড়ি ঢলের পানিতে বাঁধটি ভেঙে গেছে। জামালগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আলাউদ্দিন হাওরের ৯০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে বলে দাবি করেন। তবে কৃষকরা বলছেন, আধাপাকা অন্তত ৫০ ভাগ ধান কেটেছে।
অন্যদিকে হৃদয়ে বোবা কান্না ও আতঙ্ক নিয়েই চলছে হাওরপাড়ে ধান কাটার তোড়জোড়। পাকা-আধাপাকা ধান কেটেই মনের শান্তনা নিচ্ছেন কৃষকরা। তাছাড়া মৌসুমের শুরুতেই উজান থেকে নেমে আসা ঢলের তোড়ে বাঁধ ভেঙে কয়েকটি হাওর তলিয়ে শেষ হয়ে গেছে কৃষকের স্বপ্ন।
চৈত্রের শেষ সপ্তাহ থেকে হাওরাঞ্চলে আগাম বন্যার আশঙ্কা শেষ পর্যন্ত বাস্তবে রূপ পেল। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ি, গত দুই সপ্তাহে হাওর রক্ষা বাঁধ ভেঙে সুনামগঞ্জের ছোট-বড় অনেক হাওর প্লাবিত হয়। পাহাড়ি ঢলে বাঁধ উপচে ও ভেঙে ইতোমধ্যে শাল্লার ছায়ার হাওর, তাহিরপুরের নজরখালী, টাঙ্গুয়ার একাংশ, গুমরার হাওর, দিরাইয়ের চাপতি ও হুরামন্দিরা, জগন্নাথপুরে নলুয়ার হাওরসহ জেলার ১৯টি ছোট-বড় হাওর-বাওর ও ফসলি বিল তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কয়েক হাজার কৃষকের প্রায় ১০ হাজার হেক্টর আবাদি জমি।
একদিকে পাহাড়ি ঢল ও অন্যদিকে হাওর রক্ষা বাঁধে নিম্নমানের কাজ হওয়ায় হাওরাঞ্চলের কৃষক নিজেদের পাকা ও আধাপাকা ধান কাটছেন তোড়জোড় করেই। পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের তাগাদাও ছিল আতঙ্কের অন্যতম কারণ। প্রতি বছর সরকার হাওর রক্ষা বাঁধের জন্য কোটি কোটি টাকা দিলেও টেকসই বাঁধ হয় না কখনই।
পিআইসি কমিটির সদস্য, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, স্থানীয় প্রশাসন, আওয়ামী লীগ দলীয় কিছু নেতাকর্মীদের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে প্রতি বছরই অভিযোগ থাকে সাধারণ কৃষকদের পক্ষ থেকে। তবে কৃষকরা সব হারালেও মধ্যস্বত্ত্ব ভোগী হিসেবে পিআইসি, দলীয় কিছু নেতাকর্মী ও স্থানীয় প্রশাসনের একটি বড় অংশের পকেট ভারী হয়।
দিরাই উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, দিরাই উপজেলার ছোট-বড় ১০টি হাওর ও হাওর সংলগ্ন কয়েকটি হাওরে এ বছর ৩০ হাজার ১১০ হেক্টর বোরো চাষ হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে ইতোমধ্যে তলিয়ে ফসলহানি ঘটেছে চাপতি ও হুরামন্দিরা হাওরের। এ হাওরে ১ হাজার ৫০ হেক্টর আবাদি জমি রাতের মধ্যেই পুরো তলিয়ে হাজারো কৃষকের সারা বছরের স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। কৃষি বিভাগের হিসাব মতে, ওই দুই হাওর ৩ হাজার ৮০০ হেক্টর জমির ধান সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছে প্রায় ৬৫ কোটি টাকা। তবে কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কৃষি বিভাগের দেয়া এ ক্ষয়ক্ষতির তথ্যের সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই।
সূত্র আরও জানায়, এ বছর দিরাইয়ে মোট ৩০ হাজার ১১০ হেক্টর বোরো জমি আবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে হাওরে ২৮ হাজার ৪৩০ হেক্টর ও হাওরের বাইরে (পতিত জমিতে) ১ হাজার ৬৮০ হেক্টর। হাইব্রিড মোট ১৩ হাজার ৮৭৭ হেক্টর, হাওরে ১২ হাজার ৫১২ হেক্টর ও হাওরের বাইরে ১ হাজার ৩৬৫ হেক্টর। উফসি মোট ১৫ হাজার ৯৮৮ হেক্টর, হাওরে ১৫ হাজার ৬৮৮ হেক্টর ও হাওরের বাইরে ৩০০ হেক্টর। স্থানীয় মোট ২৪৫ হেক্টর, হাওরে ২০০ হেক্টর ও হাওরের বাইরে ১৫ হেক্টর।
চলতি বছর বোরো ধান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ১০৩ মেট্রিক টন চাল। গত বছর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা এ বছরের সমান থাকলেও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২৭ হাজার ৮১৪ মেট্রিক টন চাল। তবে সেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৩৩৪ মেট্রিক টন চাল। এ বছর বোরোতে ৩০টি প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে বলে সূত্র জানায়। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ সূত্র মতে, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত হাওরে ৯৩ শতাংশ ও হাওরের বাইরে ৬ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। তবে এ বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না বলে সূত্রটি জানায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।