Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধে ফের ক্ষতির শঙ্কা

ক্ষয়ক্ষতির তালিকা দিতে কর্মকর্তাদের অনীহা

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ১৬ জুন, ২০২২, ১২:০১ এএম

আষাঢ় মাস শুরু হয়েছে। বর্ষাকালে বন্যা ও নদীভাঙন বেড়ে যায়। নদীভাঙন রোধ ও বন্যা থেকে রক্ষায় নির্মাণ করা হয়েছে বাঁধ। এর মধ্যেই সে বাঁধের অনেকগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মন্ত্রণালয় থেকে দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের তালিকা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু সারাদেশের দুর্বল বাঁধ ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের তালিকা তৈরিতে কাজ করতে অনীহা পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাঠপর্যায়ের জেলা ও জোনের নির্বাহী প্রকৌশলীদের। গত ২৫ মে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আরএডিপির পর্যালোচনা সভায় প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রী এবং সচিব অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। আগামী ১৯ জুনের মধ্যে যেসব জেলা ও জোনের নির্বাহী প্রকৌশলীরা তালিকা পাঠাবে না, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেবে পানি উন্নয়ন বোর্ড। গতকাল বুধবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম চৌবে স্বাক্ষরিত চিঠি সকল বিভাগ, জেলা এবং জোনের কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম ইনকিলাবকে বলেন, বন্যায় ক্ষতি কমাতে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ ও স্থান চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ ও স্থান চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় অর্থের চাহিদা দ্রুত পাঠাতে ব্যর্থ হবেন তারা শাস্তির সম্মুখীণ হবেন। বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতে টাকার প্রয়োজন হলে টাকা দেয়া হবে।

টানা বৃষ্টি ও ভারতের উজানের ঢলে দেশের কয়েকটি জেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে কোনো কোনো এলাকায় আকস্মিক বন্যা হয়েছে বাঁধ ভেঙে, আবার কোনো কোনো এলাকায় ভারি বর্ষণের কারণে জলজট হয়ে। এর মধ্যে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহের শেষ দিক থেকে ভারি বর্ষণের কারণে দেশের আরও অঞ্চলে আকস্মিক বন্যা হতে পারে। বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যও আগামী কয়েক দিন ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে। এ পূর্বাভাস পাওয়া এলাকাগুলোতে বন্যা প্রতিরোধের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ বাড়াচ্ছে উদ্বেগ। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ সংস্কারে তারা এরই মধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর হালকা বৃষ্টিপাতে নীলফামারীতে বৃদ্ধি পেয়েছে তিস্তা নদীর পানি। তবে নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেও নদীর তীরবর্তী কোনো চরগ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তিস্তা, ধরলা, দুধকুমর ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়ছে। পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও নদনদী তীরবর্তী প্রায় ৫০টি চরের কয়েক হাজার মানুষের বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তিস্তা নদীর দুইদিকে দেখা দিয়েছে নদীভাঙন।

এবিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চল, রংপুর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পুর), মুহাম্মদ আমিরুল হক ভূঞা ইনকিলাবকে বলেন, এবার নতুন বাঁধ মেরামত করায় বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তিস্তার ভাঙা অংশ দিয়ে পানি ঢুকে উলিপুরের থেতরাই, দলদলিয়, গুনাইগাছ, বজরার কিছু অংশ ও চিলমারী উপজেলা সদরে পানি ঢুকে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে থেতরাই ইউনিয়নের দাড়িকিশোরপুর, হোকডাঙ্গা, গোড়াইপিয়ার এলাকায় কয়েক বছর আগে ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামতে এখনো কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। গত কয়েকদিন ধরে অভিরাম বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। আমি আবারো এসব এলাকা পরির্দশন করে নতুন দুর্বল বাঁধের তালিকা দ্রুত বোর্ডে পাঠাব।

অতিরিক্ত প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম চৌবে স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা প্রেক্ষিতে সকল জোন থেকে প্রাপ্ত দুর্বল বাঁধ, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের দুর্বল স্থানগুলো মেরামত সংক্রান্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা হয়। উক্ত প্রতিবেদনে নিরুপিত সম্ভাব্য ব্যয় মাত্রাতিরিক্ত প্রতীয়মান হওয়ায় গত ২৫ মে অনুষ্ঠিত পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আরএডিপি পর্যালোচনা সভায় প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রী ও সচিব অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। চিঠিতে আরো বলা হয়, দেশের সকল জোনের প্রধান প্রকৌশলীদের ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলো পুনরায় সরেজমিন পরিদর্শনপূর্বক যে সকল মেরামত ও সংস্কার কাজ অতীব জরুরি, সেগুলো সঠিকভাবে নির্ধারণপূর্বক যোক্তিকভাবে ব্যয় প্রাক্কালন প্রস্তুত করে সংশোধিত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা প্রদান করবেন। এর আগে গত ১৪ জুনের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য অনুরোধ করা হলেও তা অদ্যবধি রংপুর, রাজধানী, খুলনা, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জোন থেকে দাখিল করা হয়নি। দুর্বল বাঁধ মেরামত সংক্রান্ত আপনার জোনের সংশোধিত প্রতিবেদন আগামী ১৯ জুনের মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হলো।

ভারত যেভাবে সময়ে অসময়ে হঠাৎ করে পানি ছেড়ে দিচ্ছে. তাতে করে দেশে হঠাৎ করে বন্যা হতে পারে। অথচ দেশের ৩৫ জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ। গত ৪/৫ বছর আগে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ভয়াবহ নদীভাঙন থেকে রক্ষায় দেশের ৩৩টি জেলাকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে সরকার। প্রাকৃতির ভয়াবহতা ও বিপজ্জনক বিবেচনায় সমগ্র দেশকে ৬টি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। সেগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ সংস্কার এবং মেরামত কাজ এখনো বাস্তবায়ন করতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। এসব বাঁধের কাজ শেষ হতে না হতে আসন্ন বন্যার আশঙ্কায় দেশের ৩৫ জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ। সামান্য বড় বৃষ্টি হলে এসব বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা। তবে এসব ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতে টাকার বরাদ্দ দিতে ঘোষণা দিয়েছিল পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের তালিকা দিতে জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা গড়িমশি করছে বলে জানা গেছে।
মন্ত্রণালয় ও পাউবো কর্মকর্তারা জানান, সারা দেশে নদীভাঙন রোধ, নদীশাসন, নাব্যরক্ষাসহ সামগ্রিক নদী ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি বাংলাদেশ ব-দ্বীপ-২১০০ গ্রহণ করা হয়েছে। এই নীতির আলোকে প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ঝুঁকির সম্মুখীন এলাকাগুলোকে এক-একটি গ্রুপের আওতায় এনে টেকসই পদক্ষেপ নেবে সরকার।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ৩৫ জেলার মধ্যে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা, জামালপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, শরীয়তপুর, বরিশাল, ফরিদপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, রাজবাড়ী, পাবনা, মাদারীপুর, কুষ্টিয়া ও কক্সবাজার। আরডিপি বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় বলা হয়, চলতি ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৭৩৮৭.৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মোট ১১৪টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ১টি প্রকল্প পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধে ফের ক্ষতির শঙ্কা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ