পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রেজাউর রহমান সোহাগ : নিঃসন্দেহে দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক পরিচিতি এখন ক্রিকেট। সমগ্র ক্রিকেট বিশ্ব এখন বাংলাদেশকে এক নামে চেনে এবং বাংলাদেশের ক্রিকেটকে মর্যাদা দেয় অত্যন্ত গুরুত্ব আর সম্মানের সাথে যা বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা অর্জন করেছে সম্পূর্ণ তাদের যোগ্যতা দিয়েই। বিশ্বের বড় বড় ক্রিকেট বোদ্ধারাই এখন নিঃসন্দেহে বলতে পারেন, বাংলাদেশ বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা দলগুলোর মধ্যে একটি। বিশ্বের যেকোনো শক্তিশালী দলকেই বাংলাদেশ হারানোর যোগ্যতা রাখে যা ইতিমধ্যে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় প্রমাণ করেছেন। আইসিসি ও আম্পায়ারদের রোষানলে না পরলে গত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলারও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল বাংলাদেশের। সর্বশেষে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠানরত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে উঠে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাওয়ার আরো একটি গৌরবোজ্জ্বল নজির সৃষ্টি করলো। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটাই এযাবতকালের বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাফল্য। সেমিফাইনালে বাংলাদেশ ভারতের কাছে অনেক বড় ব্যাবধানে পরাজিত হলেও সার্বিক মানদÐে বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রাপ্তি অনেক। ইংল্যান্ড হচ্ছে ক্রিকেটের জনক। সেই ইংল্যান্ডকেও আমরা এখন হারাতে পারি ওয়ানডে এবং টেস্ট উভয় ক্ষেত্রেই। পৃথিবীর সব শক্তিশালী দলকেই বাংলাদেশ হারিয়েছে এবং হারানোর যোগ্যতা রাখে যা ১৫ বছর আগে কখনো কল্পনাই করা যেত না। এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও বাংলাদেশ ছিল আন্ডারডগ টিম। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শক্তিশালী দলগুলো ছিল বাংলাদেশের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে। অথচ মাঠের পরীক্ষায় বাংলাদেশ ঐ দলগুলোকে টপকে সেমিতে উঠে নিজেদের যোগ্যতারই প্রমাণই রেখেছে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ভবিষ্যতে আরো ভালো করুক আরো এগিয়ে যাক এই প্রত্যাশাই সকলের।
তবে কিছু কিছু সমস্যা বাংলাদেশের ক্রিকেটের এই অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারে বলে আশংকা করছেন দেশের অনেক ক্রিকেট বোদ্ধাই। বাংলাদেশের ক্রিকেটের একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে অতিমাত্রায় আবেগের সম্পৃক্ততা। আমরা অনেকেই এখনো বাংলাদেশের ক্রিকেট ম্যাচগুলোর জয় পরাজয়কে যোগ্যতার ও শক্তির মাপকাঠিতে মূল্যায়ন না করে আবেগের দৃষ্টি দিয়ে মূল্যায়ন করার চেষ্টা করি যেটা অনেক সময় মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের ওপর। অতিমাত্রায় প্রত্যাশার চাপ সৃষ্টিই অনেক সময় খেলোয়াড়রা তাদের স্বাভাবিক খেলার ছন্দ হারিয়ে ফেলেন যেটার নেতিবাচক প্রভাব পরে পুরো দলের পারফর্মেন্সে। যে কারণে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে ওঠার পর বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি বারবার মিডিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের দর্শকদের উদ্দেশ্য বলেছিলেন, “আপনারা অতিমাত্রায় কোন কিছু প্রত্যাশা করবেন না। এমন কোন আচরণ আপনারা করবেন না যা আমাদের খেলোয়াড়দের ওপর প্রচÐ মানসিক চাপের সৃষ্টি করে”। মাশরাফির এই আহŸানই প্রমাণ করে আমাদের দেশের দর্শকরা যে এখনো কত বেশী আবেগ প্রবণ।
ক্রিকেটকে দেখতে হবে ক্রিকেটের মূল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দিয়ে। ক্রিকেটকে বলা হয় বিশ্বের একমাত্র গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। এখানে ফেভারিট বলে কোন কথা নেই। তা না হলে আন্ডারডগ টিম হয়েও ইংল্যান্ডের মাটিতে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে পাকিস্তান চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে উঠলো কিভাবে? কাজেই বাংলাদেশের ক্রিকেটকে আরো এগিয়ে নিতে হলে আমাদের দর্শকদেরও বাস্তবতার নিরিখে আবেগ পরিহার করে বাংলাদেশ দলের পারফর্মেন্সকে মূল্যায়ন করতে হবে। কারণ বাংলাদেশের ক্রিকেটের এই সাফল্যের পেছনে আমাদের দর্শকদের অবদান ও ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রশংসনীয়। জয়কে যেভাবে উপভোগ করতে হবে ঠিক তেমনি পরাজয়কে মেনে নিতে হবে স্বাভাবিকভাবে, ক্রীড়াসুলভ মনোভাব নিয়েই।
শুধু বাংলাদেশের দর্শকরাই নয়, আমাদের কিছু কিছু মিডিয়াও অতিমাত্রায় পরচার প্রচারনার মাধ্যমে আমাদের খেলোয়াড়দেরকে অহংকারী ও উচ্চাভিলাষি হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছি যা পরবরর্তীতে ওইসব খেলোয়াড়দেরই ব্যাক্তিগত আচার আচরণ ও পারফর্মেন্সে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে যা কোনভাবেই কাম্য নয়। যেমন বাংলাদেশের পেস বোলার মুস্তাফিজকে নিয়ে ২/১ টি মিডিয়ায় প্রচার করা হলো মুস্তাফিজ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে খুব শিগগিরই মুস্তাফিজ ওয়াসিম আকরামকেও ছারিয়ে যাবে। ওয়াসিম আকরামের সকল রেকর্ড সে ভেঙ্গে ফেলবে। এই ধরণের কাল্পনিক ও অবাস্তব প্রচার প্রচারণা যে কতোটা ভয়াবহ তার জ্বলন্ত প্রমাণ মুস্তাফিজের বর্তমান হতাশাজনক পারফরমেন্স। আমি নিশ্চিত যারা এই প্রচারনাগুলো করছেন তারা কেউই ওয়াসিম আকরামের খেলা দেখেননি বা ওয়াসিম আকরামের ক্যারিয়ার সম্পর্কেও তাদের কোন ধারণা নেই। বাস্তবতা হচ্ছে ওয়াসিম আকরাম ওয়াসিম আকরামই আর মুস্তাফিজ মুস্তাফিজই। কাজেই এই ধরণের প্রচারণার ফাঁদে আমাদের খেলোয়াড়দেরকে না ফেলাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
পাশাপাশি আমাদের বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দেরও অনেক সচেতন হতে হবে এবং সতর্ক থাকতে হবে অনেক বিষয়েই। বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলোয়াড়রা বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ সুযোগ সুবিধা প্রাপ্ত খেলোয়াড়। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে, বোর্ড পর্যায়ে, ক্লাব পর্যায়ে ও পৃষ্ঠপোষক পর্যায়ে বর্তমানে বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলোয়াড়রা যে পরিমাণ আর্থিক সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে তা বিশ্বের অনেক শক্তিশালী ও সেরা ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়রাও পাচ্ছেন না। আর্থিক সুযোগ সুবিধা ও পৃষ্ঠপোষকতা এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটে ব্যাপক। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখেই বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের দেশের জন্য আরো বেশী নিবেদিত হয়ে পারফর্ম করা উচিত। একটি ঘটনা বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের স্মরণ রাখা প্রয়োজন । ওয়েস্ট ইন্তিজ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর সেই দেশের ক্রীড়ামন্ত্রী তাদের ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্টকে একটি চিঠি লিখে ক্রিকেট দলকে শুধু অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। অথচ বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বিশ্বকাপ জেতাতো দূরের কথা যে কোন প্রতিযোগিতায় ভালো খেললেই সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে খেলোয়াড়দেরকে উৎসাহিত করার জন্য আর্থিক পুরস্কারসহ রাষ্ট্রীয়ভাবে সংবর্ধনা দেয়া হয় এবং প্রধানমন্ত্রীও ব্যাক্তিগতভাবে খেলোয়াড়দের সাথে কথা বলেন। এই সুযোগ সুবিধা ক্রিকেটের অনেক শক্তিশালী দেশেও নেই।
আমাদের খেলোয়াড়দের উচিত অহংকার আর অহমিকায় গা না ভাসিয়ে যথাযথভাবে এই সুযোগটিকে কাজ লাগিয়ে দেশের ক্রিকেটকে আরো এগিয়ে নেয়া। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন অনন্য উচ্চতায়। এই উচ্চতা থেকে ক্রিকেটকে আরো এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজন খেলোয়াড়, দর্শক ও মিডিয়ার কিছু কিছু আচরণের দ্রæত পরিবর্তন যা ক্রিকেটের বৃহত্তর স্বার্থেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।