Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিরাপদ খাদ্যসংস্থানে লড়াই চালাচ্ছে চীন

| প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম


ইনকিলাব ডেস্ক : নিরাপদ খাদ্য সংস্থানে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে চীন। ভূমি সংস্কারের সুবাদে চীনে চাল ও গমের মতো শস্যের উৎপাদন বেড়েছে। নব্য মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে যোগ হওয়া কোটি কোটি মানুষ আগের চেয়ে বেশি সবজি ও শূকরের  গোশত খেতে অভ্যস্ত হয়েছে। গরুর  গোশত ও দুধের মতো বিলাসী খাবারেও তারা আগ্রহী হয়ে উঠেছে। চীনা নাগরিকদের খাবারে বৈচিত্র্য আসছে। বেকন থেকে বিফ— চীনা চাহিদার চাপে পাল্টে যাচ্ছে বিশ্বে খাদ্য উৎপাদন ও বিক্রির ধরন। চাহিদা মেটাতে আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি দেশে কৃষিজমি ও খামার কিনেছে চীন। কিছু জমি ও খামার ইজারাও নিয়েছে। এতেও কাজ হবে না। টেকসই খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে চীনকে সবার আগে কৃষিজমি সংরক্ষণ করতে হবে। খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) ও ওইসিডির তথ্যমতে, ১৯৯৭-২০০৮ সময়কালে চীন ৬ দশমিক ২ শতাংশ কৃষিজমি হারিয়েছে। লাভজনক রিয়েল এস্টেট প্রকল্পের জন্য স্থানীয় সরকারগুলো কৃষি ও পতিত জমি দখল করে নিচ্ছে। চীনের কৃষি মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার বর্ধমান জনসংখ্যা বর্তমান প্রজন্মের জীবদ্দশাতেই বৈশ্বিক খাদ্য চাহিদায় আরো ২০০ কোটি মুখ যোগ করবে। এ পরিস্থিতিতে চীন পড়েছে কঠিন পরীক্ষায়। চলতি শতকের দ্বিতীয়ার্ধে সব নাগরিকের পর্যাপ্ত খাবার জোগাতে চীনকে এটা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে বিশ্বে ৯০০ কোটি মানুষের খাদ্য উৎপাদন হয়। খবরে বলা হয়, শিল্পায়ন-নগরায়ণের কারণে বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি হারিয়েছে চীন। অনেক জমি বর্জ্য ও রাসায়নিকে দূষিত হয়েছে। চীনে পারদ মেশানো চাল বিক্রি অথবা দুধের গুঁড়োয় মেলামিন থাকার খবর নতুন নয়। ১৪০ কোটি মানুষের নিরাপদ খাদ্য সংস্থানে চীনকে তাই দেশের বাইরে তাকাতে হচ্ছে। দেশটির অভ্যন্তরে শুরু হয়েছে টেকসই কৃষির চর্চা। সিচুয়ান প্রদেশের দু চানমেই ছোটবেলায় শূকরের  গোশতকে বিলাসপণ্য হিসেবেই জানতেন। চান্দ্র নববর্ষের দিনেই শুধু তাদের বাড়িতে শূকরের  গোশত রান্না হতো। এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। পেট্রোচায়নার কর্মী দু চানমেই ও তার পরিবারের সদস্যরা এ বছর নববর্ষ উদযাপন করেছেন রেস্তোরাঁয়। তিনি বলেন, শৈশবে  গোশত ছিল দুর্লভ খাবার। এখন তা এত নিয়মিত হয়েছে যে, স্বাস্থ্যের কথা ভেবে আমরাই  গোশত এড়িয়ে চলি। চীনের অর্থনীতি ও জীবনাচারে এই দ্রæত ও আমূল পরিবর্তন কিছু নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি কারখানার দখলে গেছে, দূষিত হয়েছে। একজন মার্কিন নাগরিকের খাবার জোগাতে ১ হেক্টর জমি দরকার। চীনে একজন নাগরিকের খাবার জোগাতে প্রাপ্ত জমির পরিমাণ শূন্য দশমিক ২ হেক্টর; এর মধ্যে দূষণে নষ্ট হওয়া জমিও রয়েছে। বিগত দশকগুলোয় কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে গৃহীত পদক্ষেপ বুমেরাং হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধান, ভুট্টা ও গমের মতো প্রধান খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল চীন। কৃষকদের এসব শস্যে আগ্রহী করতে সরকার আগে থেকে ন্যূনতম মূল্য ঘোষণা করে সে অনুযায়ী শস্য সংগ্রহ করত। সরকারের আহŸানে সাড়া দিয়ে কৃষকরা নিজেদের ছোট প্লটগুলোয় ইচ্ছামতো সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করে ফলন বহুগুণ বৃদ্ধি করেছে। বাম্পার ফলনের সুবাদে চীনে সরকারি খাদ্য মজুদ বহুগুণ স্ফীত হয়েছে। গত বছর চীনের সরকারি গুদামে খাদ্য মজুদ ৬০ কোটি টনের বেশি ছিল। এ মজুদের অর্ধেক ছিল ভুট্টা। পচে যাওয়ার আগে সরকার এসব ভুট্টা বিক্রিতে জোর দিচ্ছে। এতে করে প্রাদেশিক সরকারগুলো ভুট্টা কিনে তা থেকে গাড়ির জ্বালানি তৈরিতে বাধ্য হচ্ছে। চীনের কৃষিবিষয়ক নীতিনির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখে সে দেশের সেন্ট্রাল রুরাল ওয়ার্ক লিডিং গ্রæপ। সংস্থার উপ-পরিচালক হান জুনের বক্তব্যে চীনা কৃষির সংকটের বিষয়টি উঠে এসেছে। হান জুন গত ৬ ফেব্রুয়ারি পিপলস ডেইলিতে লিখেছেন, ‘আমরা আমাদের সম্পদ ও পরিবেশের শক্তি নিঃশেষ করেছি। খাদ্য সংকট মোকাবেলায় আমরা যথেচ্ছা সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করেছি। খুব দ্রæত আমাদের পরিবেশবান্ধব ও মানসম্মত খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে।  ২০০৭ সালে চীন সরকার ১২ কোটি হেক্টর কৃষিজমি টিকিয়ে রাখার লক্ষ্য ঘোষণা করে। সরকারি হিসাবে তখন থেকে ভূমি রূপান্তরের গতি শ্লথ হয়েছে।  বøুমবার্গ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ