Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চীনের জনসংখ্যা কমে যাওয়া প্রভাব ফেলবে বিশ্ব অর্থনীতিতে?

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২১ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:৪৮ পিএম

পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর চীনের মোট জনসংখ্যা ছিল একশ চল্লিশ কোটি। সেখান থেকে এ বছর আট লাখ পঞ্চাশ হাজার মানুষ কমে গেছে। জন্মহার দেশটিতে অনেক বছর ধরেই কমছে, সেটা রোধে সরকার অনেকগুলো পদক্ষেপও নেয়। যার মধ্যে গত ৭ বছর আগে আলোচিত এক সন্তান নীতিও তুলে দেয়া হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধারা দেশটির জন্য সাময়িক কোন ঘটনা নয়। দুই হাজার ত্রিশ সালের পর জনসংখ্যা কমার প্রভাব পড়তে যাচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে। তবে এই সঙ্কটের কোন সহজ সমাধানের পথ খোলা নেই। বিশেষ করে চাইনিজ জনসংখ্যার যে ক্রমবর্ধমান বয়স সেটা ভাবনায় ফেলছে অর্থনীতিবিদ ও জনসংখ্যাবিদদের।

বিশ্বজুড়েই বয়স্ক জনসংখ্যা অর্থনীতির ক্ষেত্রে একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু চীনকে উদ্বিগ্ন করছে যে গতিতে এটা হচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যম থেকে উচ্চ আয়ের মাঝামাঝি এই বয়সটা চলে আসছে। সহজ কথায় চীন বড়লোক হওয়ার আগেই বুড়ো হয়ে যাচ্ছে। পরিসংখ্যান ব্যুরো এই সপ্তাহে জানায় যে ৬০ বছরে প্রথমবার দেশটিতে জনসংখ্যা কমার পাশাপাশি জন্মহারও পৌঁছেছে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। কিছু গবেষক মনে করেন, জনসংখ্যা কমা শুরু হয় ২০১৮ সাল থেকেই এবং শুমারির হিসেবে ভুল আছে। তবে যেটাই হোক চীনের কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা ২০১২ সাল থেকেই হুমকির মুখে। জাতিসংঘের হিসেবে ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সের জনসংখ্যা এই শতকের মধ্যে চীনের অন্তত আরো ৬০% কমে যাবে।

ফ্যাথম ফিন্যান্সিয়াল কনসাল্টিংয়ের সহকারী প্রধান অর্থনীতিবিদ অ্যান্ড্রু হ্যারিস বলেন, দেশটির গ্রামাঞ্চলে এখনো সস্তা শ্রমিক আছে যারা শহরাঞ্চলে কারখানায় শ্রমিকের ঘাটিতি পুষিয়ে দিতে পারবে। হ্যারিস বলেন, চীনের নির্মাণ এবং ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ফ্যাথমের হিসেবে নির্মাণ সেক্টরে এক তৃতীয়াংশই শ্রমিক তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যতটুকু উৎপাদন করার কথা সেটা তারা করছেন না।

সিঙ্গাপুরের সাবেক প্রধান পরিসংখ্যানবিদ পল চ্যাং অবশ্য মনে করেন, জনসংখ্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য চীনের কাছে অনেক জনশক্তি এবং সময় আছে।‘তারা এখনি খারাপ পরিস্থিতিতে যাবার মতো অবস্থা তৈরি হয়নি,’ চ্যাং বলেন। জাপান ও সিঙ্গপুরের উদাহরণ টেনে চ্যাং বলেন, এই দুটি দেশ তাদের বয়স্ক জনগোষ্ঠিকে সুরক্ষা দেবার পাশপাশি অর্থনৈতিক ভারসাম্যও বজায় রেখেছে।

তবে সবাই বিষয়টি নিয়ে আশাবাদী হতে পারছেন না। ‘চীনের সাথে কোরিয়া বা জাপানের মতো দেশগুলোর বড় পার্থক্য হল, এই জনসংখ্যার সঙ্কটের প্রভাবটা সবচেয়ে বেশি পড়ছে নিম্ন আয়ের মানুষদের মাঝে।’ ২০১৯ সালে চীনের একাডেমি অফ সোশ্যাল সায়েন্স এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণে চীনের প্রধান পেনশন তহবিল ২০৩৫ সালে শেষ হয়ে যাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের থিঙ্কট্যাঙ্ক পিউ রিসার্চের গবেষণায় উঠে আসে চীনে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৭ জনই মনে করে যে তাদের সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ২০১৬ সাল থেকেই সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এখন এই জনসংখ্যা সমস্যা আর করোনাভাইরাস সেই সঙ্কটকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে চীনের জনসংখ্যা কমে যাওয়ার বিষয়টি পুরো বিশ্ব অর্থনীতিতেই প্রভাব ফেলতে পারে।

চীনে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে সেখানে মজুরি বেড়ে যাবে। ফলে পণ্য তৈরীর খরচও বেড়ে যাবে। সম্প্রতি বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে ‘বিশ্বের ফ্যাক্টরি’ হিসেবে পরিচিত চীন থেকে অনেক অনেক অর্ডার এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাছে চলে যাচ্ছে। ‘চীনের কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমে যাওয়া ও উৎপাদন কমে গেলে ইউরোপ ও আমেরিকায় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে,’ বলছিলেন ই ফুজিয়ান, যিনি উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও চীনের বাতিল হওয়া এক সন্তান নীতির সমালোচক।

চীনে জন্মহার বাড়ানোর নানা উদ্যোগ খুব একটা সফলতার মুখ দেখেনি, তাই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ধরে রাখতে দেশটিকে এবার হয়তো অন্যপথে হাঁটতে হবে। এজন্য জোরালো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চায়না সেন্টারের অ্যাসোসিয়েট জর্জ ম্যাগনাস। তার মতে দেশটির অবসরের বয়স নিয়ে আবার নতুন করে ভাবা উচিত। চীনে পুরুষদের জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অবসরের বয়স ৬০ বছর, যা ওইসিডি ভুক্ত দেশগুলোতে গড়ে ৬৪.২ বছর। সরকারি চাকুরিজীবি নারীদের ক্ষেত্রে এই বয়সটা ৫৫ বছর এবং শ্রমজীবী নারীদের জন্য অবসরের বয়স ৫০ বছর।

যদিও এর আগে এই অবসরের বয়স বাড়ানোর চেষ্টা ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে পড়েছিল, কারণ বয়স্ক শ্রমিকরা তাদের পেনশনের জন্য আর অপেক্ষা করতে চাইছিলেন না। চীন এরইমধ্যে রোবোটিক্স ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে অটোমেশনের দিকে যাচ্ছে কিন্তু এর প্রভাব এখনো পরিষ্কার নয় বলে মনে করেন হ্যারিস। আরেকটা উপায় হতে পারে অভিবাসীদের মাধ্যমে জনসংখ্যা বাড়ানো। কিন্তু হ্যারিস এটাও বলছেন যে চীনের কম্যুনিস্ট পার্টি ঐতিহাসিকভাবেই এটাতে খুব বেশি আগ্রহী নয়। তবে অর্থনীতি সচল রাখতে চীন শুধু তার জনসংখ্যার উপর নির্ভরশীল হতে পারে না। অনেক বিশ্লেষকের মতে তাদের অন্যান্য দিকেও মনোযোগ দেয়া উচিত। সূত্র: বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ