পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বর্ষা আসতে এখনো একমাস বাকি। গ্রীষ্মের সামান্য বৃষ্টিপাতেই রাজধানী ঢাকার অনেক রাস্তায় পানি জমে যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। রাস্তায় পানিবদ্ধতা কোন নতুন উপসর্গ না হলেও নগর কর্তৃপক্ষের নানা উদ্যোগ আয়োজনের পরও নগরীতে পানিবদ্ধতার সংকট আরো তীব্রতর হওয়ার বাস্তবতা উদ্বেগজনক। এ মাসের প্রথম সপ্তাহে এবং গত কয়েক দিনের সামান্য বৃষ্টিতে ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে রাস্তায় পানি জমে ব্যাপক জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে। এহেন বাস্তবতায় সামনের বর্ষায় এ চিত্র কি দশায় উপনীত হবে তা নিয়ে নগরবিদ ও নাগরিক সমাজের মধ্যে বাড়তি উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকার জলাবদ্ধতা, পয়:ব্যবস্থার সংস্কার, দখল হয়ে যাওয়া নদী, খাল ও জলাশয় পুনরুদ্ধারে গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে অনেক দাবী ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। দুই সিটি মেয়রসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকেও অনেক প্রতিশ্রæতি দেয়া হয়েছে। বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। পরিস্থিতি আগের যে কোন সময়ের চেয়ে খারাপ ও জটিল আকার ধারণ করেছে। পানিবদ্ধতা নিরসন ও পয়:নিষ্কাশনে স্থায়ী উদ্যোগ গ্রহনের বদলে যত্রতত্র রাস্তা খোড়াখুড়ি করে দীর্ঘদিন তা ফেলে রাখার কারনে সৃষ্ট জনদুর্ভোগ ও যানজটের কোন সুরাহা যেন কর্তৃপক্ষের হাতে নেই। একদিকে সরকারের তরফে নানা উচ্চাভিলাষি মেগা প্রকল্পের গালগল্প শোনানো হচ্ছে, অন্যদিকে পানিবদ্ধতা থেকে সৃষ্ট জনদুর্ভোগ লাঘবে ব্যর্থতা ঢাকতে দোষারোপ ও সমন্বয়হীনতার অজুহাত দেখানো হচ্ছে।
গতমাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ঢাকা ডিবেটিং সোসাইটি আয়োজিত ঢাকা উৎসব ২০১৭’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিনের মেয়র সাঈদ খোকন ঢাকায় জলাবদ্ধতার জন্য ঢাকা ওয়াসাকে দোষারোপ করেন। তার মতে, ঢাকা ওয়াসা পয়নিস্কাশন ও জলাবদ্ধতা নিরসনের মত জরুরী উদ্যোগগুলো দেখভালের বদলে শত শত কোটি টাকার বড় বড় প্রকল্প নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে। নির্বাচনের আগে ঢাকার মেয়রদ্বয় নাগরিক দুর্ভোগ লাঘবে এবং নগরিকে পরিবেশবান্ধব করে গড়ে তুলতে অনেক প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন। দায়িত্ব পাওয়ার দুই বছর পেরিয়ে এসে তারা এখন নগরবাসিকে হতাশার সুর শোনাচ্ছেন। বিশেষত: নগরিতে যত্রতত্র রাস্তা খোড়াখুড়ির কারনে জনদুর্ভোগের জন্য দায়ী বিভিন্ন সংস্থার কাজের সমন্বয়হীনতা। এ কারণে এসব সংস্থাকে একই প্লাটফর্মে নিয়ে আসার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলেও এ প্রসঙ্গে সরকারের উচ্চ মহলের পক্ষ থেকে কোন জোরালো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছেনা। এ সুযোগে ওয়াসা এবং সিটি কর্পোরেশন পরস্পর দোষারোপ ও দায় এড়ানোর চেষ্টায় লিপ্ত হয়ে পড়েছে। দক্ষিনের মেয়র সাঈদ খোকনের ভাষায়, ওয়াসা একটু সহযোগিতা করলে জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব। অন্যদিকে ওয়াসার এমডি তাকসিম খানের মতে, নগরিকে পানিবদ্ধতামুক্ত রাখতে সিটি কর্পোরেশনের দায় ও ভূমিকা অনেক বেশী।
নগরির রাস্তায় স্বাচ্ছন্দ চলাচল নাগরিক সমাজের সহজাত অধিকার। পানি ও পয়:নিস্কাশনের জন্য নগরবাসিকে নিয়মিত ট্যাক্স দিতে হয়। জনগনের টাকায় ওয়াসা এবং অন্যান্য সংস্থা প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহন ও বাস্তবায়ন করছে। পয়নিষ্কাশন ও ড্রেনেজব্যবস্থার সংস্কারেও ওয়াসা বছরে শত শত কোটি টাকা খরচ করছে। তবে জলাবদ্ধতা নিরসনে শহরের পুরনো খালগুলো পুনরুদ্ধারের প্রস্তাবনা ও উদ্যোগের কোন দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। এখন সামান্য বৃষ্টিতেই নগরিতে জলাবদ্ধতার অভিজ্ঞতার আলোকে আগামী বর্ষায় এখানে কি পরিস্থিতি দাড়াবে এ নিয়ে যখন নাগরিক সমাজের উদ্বেগ বেড়ে চলেছে, তখনো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বর্ষার আগেই চলমান উন্নয়ন প্রকল্পসমুহ শেষ করে জলাবদ্ধতাসহ জনদুর্ভোগ লাঘবের আশ্বাস দিচ্ছেন। এই আশ্বাসে আস্থা রাখতে পারছেনা কেউই। মৌচাক, মালিবাগ, মগবাজার, আরামবাগ, শান্তিনগর থেকে শুরু করে মিরপুরের বিভিন্ন স্থানে, বনানী, মহাখালিতে সামান্য বৃষ্টিপাতে রাস্তা সয়লাব হয়ে পড়ার দৃশ্য যেন অপরিবর্তনীয়। বিশেষত: ঢাকার সাথে চট্টগ্রাম-সিলেটসহ দক্ষিণের প্রবেশদ্বার হিসেবে গণ্য যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভারের প্রায় প্রতিটি রাস্তার দুই ধারে বছর ধরে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে নগরবাসি। সংস্কার ও উন্নয়নের নামে রাস্তা খুড়ে মাসের পর মাস ধরে ফেলে রাখা হয়েছে। হাটু সমান কাদা ও বিপজ্জনক রাস্তায় যানজট ও দুর্ঘটনা এখানে নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এসব রাস্তার উন্নয়ন কাজ শেষ করতে না পারলে বর্ষায় এখানে কি পরিস্থিতি দাড়াবে তা’ সহজেই অনুমেয়। ঢাকার রাস্তায় জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ সিস্টেমকে জরুরী ভিত্তিতে আবর্জনামুক্ত ও সংস্কার করতে হবে। ওয়াসাসহ বিভিন্ন সংস্থার কাজের সমন্বয়ের পাশাপাশি নগরির বেদখল হওয়া খালগুলো পুনরুদ্ধার ও সংস্কার করে পানি নিষ্কাশনব্যবস্থার অনুকুলে কাজে লাগানোর কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। বৃষ্টি ও বন্যায় জলাবদ্ধতা নিরসনে পুরনো বন্যা নিয়ন্ত্রনব্যবস্থাকেও সংস্কার উন্নয়ন করতে হবে। এবার বর্ষায় একটি বড় ধরনের বন্যার আলামত পাওয়া যাচ্ছে। অতএব বর্ষার আগেই বন্যা নিয়ন্ত্রন ও জলাবদ্ধতা নিরসনে জরুরী ও বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।