পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রাজধানী ঢাকা বসবাসের অনুপযোগী, এটা নতুন কিছু নয়। বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনে বছরের পর বছর ধরে তা তুলে ধরা হচ্ছে। যানজট, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ থেকে শুরু করে আবর্জনার নগরীর দুর্নাম পেয়েছে ঢাকা। তাতে নগর দেখভালের কর্তৃপক্ষ, দুই সিটি করপোরেশনের কোনো টনক নড়েনি। দুই মেয়র মুখে মুখে অনেক পরিকল্পনার কথা বললেও বাস্তবে তার ছিঁটেফোটাও দেখা যায় না। নগরবাসীর কাছ থেকে ট্যাক্স নিয়ে তাদের সেবাদান করার কাজটি করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। বলা যায়, নগরবাসীর ট্যাক্সের পয়সা দুই সিটি করপোরেশন অপচয় করছে। নগরীর অসংখ্য সমস্যার মধ্যে এখন সবচেয়ে প্রকট আকার ধারণ করেছে দূষিত পরিবেশ। পুরো রাজধানী যেন ময়লা-আবর্জনার নগরীতে পরিণত হয়েছে। সিটি করপোরেশনের যে বর্জ্যব্যবস্থাপনা, তা কোনো কাজেই আসছে না। গৃহস্থালী বর্জ্যসহ অন্যান্য বর্জ্য অপসারনের যে প্রক্রিয়া তাতে গলদ রয়েছে। সময়মতো অপসারণ না করা, মূলসড়কের পাশে, গলির মোড়ে মোড়ে, ফুটপাতে, সড়ক ডিভাইডারের উপরসহ এমন কোনো স্থান নেই যেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলার স্থান করা হয়নি। এক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের গাফিলতি ও অপরিকল্পনা, ওয়ার্ড কমিশনারদের ব্যর্থতার পাশাপাশি নাগরিকদের চরম অসচেতনতা রয়েছে।
সরকার দেশের ব্যাপক উন্নয়ন করেছে বলে দাবি করলেও রাজধানীর যে উন্নয়ন করতে পারেনি, তা দৃশ্যমান। উন্নয়নশীল একটি দেশের রাজধানী এত নোংরা ও বাসঅযোগ্য হয়ে থাকা কোনোভাবেই উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে না। এর কারণ, রাজধানী হচ্ছে যেকোনো দেশের চেহারা। এই চেহারার সৌন্দর্য দেখেই বলে দেয়া হয় দেশ কতটা উন্নত। ঢাকার পরিবেশ ও পরিস্থিতি দেখলে কোনোভাবেই বলা যায় না, এটি দ্রুত উন্নয়নশীল দেশের রাজধানী। এখানে এমন কোনো অনিয়ম নেই, যা হয় না। যে যেভাবে পারছে একে ব্যবহার করছে। রাজধানীকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, পরিবেশ উন্নয়নসহ সেবাদান করার জন্য অনেক সংস্থা থাকলেও তাদের সেবার কোনো নমুনা দেখা যায় না। যানজট, শব্দদূষণ, বায়ুদূষণের কথা বাদ দিয়ে বলা যায়, রাজধানীতে প্রতিদিন প্রায় যে সাড়ে ৬ হাজার মেট্রিক টন গৃহস্থালীসহ অন্যান্য বর্জ্য উৎপাদিত হয়, তা অপসারণের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায় না। মাথাপিছু এই বর্জ্য উৎপাদনের হার আধা কেজির বেশি। নগরবিদরা বলছেন, ১০ বছর পর নগরীতে বর্জ্য উৎপাদন বেড়ে হবে সাড়ে ৮ হাজার টন। বলার অপেক্ষা রাখেন না, এসব বর্জ্যরে সিংহভাগ গৃহস্থালী, শিল্পকারখানা, বাড়ি ও স্থাপনা নির্মাণ সামগ্রী এবং নগরবাসীর নিত্যকার ব্যবহার্য সামগ্রীর বর্জ্য। রাজধানীর পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে, নাগরিক অসচেতনতা। বিশ্বের আর কোনো নগরীতে এমন অসচেতন নাগরিক দেখা যায় না। উন্নত বিশ্ব দূরে থাক, পার্শ্ববর্তী কলকাতা নগরীর দিকে তাকালেও বোঝা যায়, সেখানে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলার ক্ষেত্রে নাগরিক যথেষ্ট সচেতন। তার চেয়ে বেশি সচেতন নগরীর সিটি করপোরেশন। অন্যদিকে, ঢাকার নাগরিকদের মধ্যে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলার ক্ষেত্রে ন্যূনতম সচেতনতা নেই। যে যেভাবে পারছে কফ-থুতুসহ ব্যবহার্য্য সামগ্রীর বর্জ্য যেখানে-সেখানে ফেলছে। অসচেতন নাগরিকদের সচেতন করার উদ্যোগও দেখা যায় না। সিটি করপোরেশনের যে উচিৎ, নাগরিকদের সচেতন করার বিভিন্ন পরিকল্পনা নেয়া, তা তাদের নিতে দেখা যায় না। কয়েক বছর আগে সড়কের মোড়ে মোড়ে আবর্জনা ফেলার ‘ওয়েস্ট বিন’ স্থাপন করা হয়েছিল। তাতে অর্থের অপচয় হলেও জনসচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ না থাকায় পুরো পরিকল্পনাটি ব্যর্থ হয়। আমরা যদি পোর্টসিটি সিঙ্গাপুরের দিকে তাকাই তাহলে দেখব, সেখানে নগর পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য কিভাবে নগরবাসীদের সচেতনতা বাড়ানো হয়েছে। কোনো নাগরিক সামান্য চুইংগামের কাগজ ফেললেও তা নির্দিষ্ট স্থানে রাখা ওয়েস্ট বিনে গিয়ে ফেলে আসে। রাস্তায় ফেলার কথা কল্পনাও করতে পারে না। তারা যে এই কল্পনা করতে পারে না, তার মূল কারণ সিঙ্গাপুর এমনভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং নাগরিকদের সচেতন করতে কঠোর আইন করেছে যে, তারা সড়কে বা যত্রতত্র আবর্জনা ফেলার চিন্তাও করতে পারে না। ঢাকায় যখন খুশি তখন, যেখানে খুশি সেখানে এমনকি বাসার বারান্দা থেকেও সড়কে গৃহস্থালী বর্জ্যরে ব্যাগ সড়কে ছুঁড়ে ফেলতে দ্বিধা করে না। দিনের বেলায় প্রকাশ্যে সড়কের পাশে মল-মূত্র ত্যাগ করার দৃশ্যও অহরহ দেখা যায়। নাগরিকদের এমন অসচেতনতা ও দুই সিটি করপোরেশনসহ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যর্থতা রাজধানীকে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত করেছে।
পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। কথাটি যেন নগরবাসী ভুলে বসে আছে। শুধু শারীরিক পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্যের দিকে নজর দিলেই হয় না, যে পরিবেশে বসবাস এবং চলাচল করা হয়, সেই পরিবেশটিও পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত হতে হয়। তা নাহলে, তার কোনো মূল্য নেই। এক্ষেত্রে নগরবাসীর অসচেতনতার পাশাপাশি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধিদের অমার্জনীয় ব্যর্থতা রয়েছে। সিটি করপোরেশন ও জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব যেমন নগরীর পরিবেশ উন্নয়নে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালানো, তেমনি জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেয়া। এই দুই ক্ষেত্রেই তারা ব্যর্থ হয়েছে। নগরীর পরিবেশ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত করতে হলে সিটি করপোরেশন ও জনপ্রতিনিধিদের কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার বিকল্প নেই। অপরিচ্ছন্ন রাজধানী শুধু দেখতে অসুন্দর নয়, রোগ-বালাইয়েরও কারখানা। রাজধানীর পরিবেশ নির্মল করতে পারলে নগরবাসীর রোগ-বালাই অনেকাংশে হ্রাস পাবে। এ কাজ করার জন্য সবার আগে জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। যত্রতত্র যাতে কেউ আবর্জনা ফেলতে না পারে এজন্য কঠোর আইন প্রণয়ন, প্রয়োগ ও সার্বক্ষণিক মনিটরের ব্যবস্থা করতে হবে। নগরবাসীকে এই আইন মানতে বাধ্য করতে হবে। সিটি করপোরেশনের বর্জ্যব্যবস্থাপনা আধুনিক করতে হবে। মূল সড়কের পাশে ময়লা ও বর্জ্যরে ডাস্টবিন বসানো যাবে না। আবর্জনা দ্রুত পরিস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।