Inqilab Logo

রোববার ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০২ রবিউল সানী ১৪৪৬ হিজরী

রাজধানীর বাতাস ‘বিপজ্জনক’

আবারও বিশ্বের দূষিত শহরের শীর্ষে ঢাকার অবস্থান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:৫৪ এএম

বাতাসের মান ‹বিপজ্জনক› নিয়ে বিশ্বের দূষিত শহরের শীর্ষে আবারও উঠে এসেছে রাজধানী ঢাকার নাম। গতকাল সকাল ৯টার দিকে ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) স্কোর ছিল ৩০৮। ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে থাকা একিউআই স্কোরকে ‹খুব অস্বাস্থ্যকর› বলা হয়। আর ৩০১ এর বেশি স্কোরকে ‹বিপজ্জনক› বলা হয়।
ভারতের দিল্লি ৩০৭ এবং পাকিস্তানের লাহোর ২৭৮ একিউআই স্কোর নিয়ে যথাক্রমে তালিকার দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে। ১০১ থেকে ২০০ এর মধ্যে একিউআই স্কোরকে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলে মনে করা হয়। অন্যদিকে ৩০১ থেকে ৪০০ এর এর মধ্যে থাকা একিউআইকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ অর্থাৎ বিপজ্জনক বলে বিবেচিত হয়। যা বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে।

ঢাকা দীর্ঘদিন ধরে বায়ু দূষণের সমস্যায় জর্জরিত। এর বাতাসের মান সাধারণত শীতকালে অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায় এবং বর্ষাকালে কিছুটা উন্নত হয়। গত এক সপ্তাহে বিশ্বের দূষিত শহরের মধ্যে ৬ দিনের বেশকিছু সময়জুড়ে ঢাকা ছিল শীর্ষে। বাকি দু›দিন ছিল দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ অবস্থানে। ১০ ও ১১ ডিসেম্বর সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত একিউআই স্কোর ছিল ১৯০-২২০ এর ঘরে। এ দু›দিন বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ অবস্থানে ছিল ঢাকা।

এর পর থেকে বায়ুর মান খারাপ হতে শুরু করে। ১২ ডিসেম্বর থেকে গত শনিবার পর্যন্ত দিনের কয়েক ঘণ্টা জুড়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে ছিল ঢাকা। ১২ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় একিউআই স্কোর ২০২, ১৩ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় ২৬৫, ১৪ ডিসেম্বর সকাল ১০টা ১০ মিনিটে ৩৮২ এবং ১৫ ডিসেম্বর সকাল সোয়া ১০টায় রাজধানীর বায়ুর মান ছিল ৩৩৭। ১৬ ডিসেম্বর শুক্রবার ছুটির দিনে সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ঢাকা ছিল শীর্ষে। বায়ুর মান ছিল ২১০ থেকে ২৫৬-এর মধ্যে। আর ১৭ ডিসেম্বর শনিবার দুপুর ১টা ১৪ মিনিটের দিকে ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোর ছিল ২১৬।
অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণকাজ, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, খোলা ট্রাকে মাটি-বালু পরিবহন, অবৈধ ইটভাটা, মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি চলাচল, ট্রাফিক জ্যামের কারণে দূষণ বাড়ছে। এসব নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে, পরিবেশ অধিদফতর বলছে, বায়ুদূষণ রোধে বিধিমালা অনুযায়ী এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। অস্বাস্থ্যকর বাতাস থেকে রক্ষা পেতে ঢাকাবাসীকে মাস্ক পরা ও ঘরে বায়ু বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এবার শীত আসতে না আসতেই ঢাকার বায়ুর মান খুবই অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়েছে। তবে এ ব্যাপারে কতৃপক্ষ নিরব।

করোনা মহামারিকালে ঢাকার বায়ুরমান ছিল স্বাভাবিক। এরপর ২০২১ সালে আবার ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। চলতি বছরের শুরুর দিকে অর্থাৎ জানুয়ারিতে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) স্কোর ২৬৯ নিয়ে ঢাকা আবার বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষস্থানে উঠে আসে। এরপর গত ১৫ ডিসেম্বর ৩৩৭ স্কোর নিয়ে দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকা আবার শীর্ষে উঠে আসে। একিউআই স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে নগরবাসীর প্রত্যেকের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়তে পারে, বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও রোগীরা তখন চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকেন।

বায়ুদূষণকে পরিবেশবাদীরা মানুষের নীরব ঘাতক হিসাবে অখ্যায়িত করেছেন। বায়ুদূষণ ক্রমাগত বিশ্বব্যাপী মৃত্যু এবং বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টির শীর্ষ ঝুঁকির কারণগুলোর মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। বেশ কয়েকটি গবেষণায় জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে দূষিত বায়ুতে শ্বাস নেয়ার ফলে মানুষের হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের রোগ, ফুসফুসের সংক্রমণ ও ক্যান্সার হওয়ার শঙ্কা বৃদ্ধি পায়। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএইচও) মতে, বায়ুদূষণের ফলে সৃষ্ট বিভিন্ন রোগ যেমন- স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষ মারা যায়। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দুটি সংগঠন হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট ও ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড ইভাল্যুয়েশনের ‘এয়ার কোয়ালিটি অ্যান্ড হেলথ ইন সিটিস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, দূষিত বায়ুর কারণে ২০১৯ সালে রাজধানীতে ২২ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাজধানীর বাতাস ‘বিপজ্জনক’
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ