পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গোশত, ইলিশ মাছ বা পানিতে সাঁতার কাটার দৃশ্য দেখে রুই-কাতল কিনবেন; চলে যান বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনের ব্যস্ত সড়কে। সবজি কিনবেন চলে যান বঙ্গভবনের উত্তর দিকে দিলকুশার ব্যাংকপাড়ায়। তরতাজা দেশি মাছ কিনবেন চলে যান মতিঝিলের সেনাকল্যাণ ভবনের সামনে। সবকিছুই পাবেন। এখন আর সবজি-ফলমূল-মাছ-গোশত কিনতে নির্দিষ্ট বাজারে যেতে হয় না। ব্যাংক পাড়া হিসেবে পরিচিত মতিঝিল ও দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা বাজারে সবকিছুই পাবেন।
এখন ব্যাংক বা অফিসে কাজের নয়; বেশি মানুষ আসেন টাটকা সবজি ও মাছ-গোশত কিনতে। বিসিআইসি ভবনের সামনের রাস্তা রীতিমতো ফলের আড়তে পরিণত করা হয়েছে। পুরানা পল্টন মোড় থেকে শুরু করে দৈনিক বাংলামোড়, মতিঝিলের সেনা কল্যাণ ভবন, ইনকিলাব অফিস, স্টক এক্সচেঞ্জ অফিসের সামনের রাস্তা সবগুলোই রাস্তার দুই ধার ও ফুটপাথে নিত্য বাজার বসছে। শুধু মতিঝিল নয়, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ি, ফার্মগেইট, মীরপুর রোড, মহাখালি সব রাস্তায় একই দৃশ। সবখানেই প্রতিদিন বাজার বসছে। হাজার হাজার মানুষ কেনাকাটা করছে। বলা যায় রাজধানী ঢাকার পুরোটাই যেন বাজার। ব্যস্ত সড়ক, গলিপথ সবখানেই পসরা সাজিয়ে বসে বিক্রেতারা।
নির্ধারিত কেনাবেচার জায়গা, মার্কেট, শপিংমলও যেমন বাজার অন্যদিকে মানুষ চলাচলের ফুটপাথ ও গাড়ি চলাচলের সড়কও বাজারে পরিণত হয়েছে। সব খানেই বিক্রি হয় জিনিসপত্র, কাপড়-চোপর, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। এখন আর নগরবাসীকে নির্দিষ্ট কোন পণ্য কিনতে নির্ধারিত কোনো মার্কেটে যেতে হয় না। মান যেমনই হোক সব জিনিসই পাওয়া যায় হাতের নাগালেই।
রাজধানীর সব সড়ক ও অলিগলিতে দোকান বা নিয়মিত বাজার বসানোর কারণে নগরীতে বেড়ে যাচ্ছে যানজটের তীব্রতা। অফিস শুরু বা ছুটি হলেই মারাত্মক যানজট হয়। ফুটপাথের দুই পাশে বসা এসব দোকানের সামনে ক্রেতাদের ভিড় লেগে থাকে, চলে দামাদামি।
রাজধানীর গুলিস্তান, পল্টন, নিউমার্কেট, সায়েন্সল্যাবরেটরি, এ্যালিফ্যান্ট রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা কলেজের সামনে, গাউসিয়া মার্কেট এলাকা, ফার্মগেট, উত্তরা, বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, মৌচাক, খিলগাঁও, মহাখালী, মতিঝিল, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ি, পুরান ঢাকার বংশাল, নবাবপুর এলাকায় নিয়মিতই বসে ফুটপাথে শত শত দোকান। হাজার হাজার মানুষ এসব দোকানে কেনাকাটা করেন। সরকারের রাত ৮টায় দোকান বন্ধ করার নির্ধারিক সময়ের পরও এসব দোকান খোলা রাখা হয়। রাতের বেলায় অধিকাংশ দোকানে বেশি বেচাকেনা হয়। আর এসব দোকানে রাস্তার পাশের বিদ্যুতের খুঁটি থেকে বিদ্যুতের লাইন নামিয়ে অবৈধ সংযোগ দেয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সড়কে এবং গুরুত্বপূর্ণ অফিস ও বৃহদায়কার বিল্ডিংয়ের সামনে অবৈধ দোকান থেকে প্রতিদিন মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। ফুটপাথ দখল করে ব্যবসা করেন এমন অনেকেই জানান, তারা নির্ধারিত ভাড়া দিয়ে পণ্য নিয়ে বসেন। বিকেলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নির্ধারিত লাইন্সম্যান এসে দিনের চাঁদা নিয়ে যায়। শুধু তাই নয় মাসেও তাদের মোটা অঙ্কের ভাড়া গুনতে হয়। মাঝে মাঝে এলাকার থানার ওসি বদল হলে নতুন ওসি এসে দোকান তুলে দেয়ার অভিযান করেন। তখন তাকে আগের মতো চাঁদা দেয়ার মাধ্যম দোকান বসিয়ে আগের মতোই ব্যবসা করা হয়। কয়েকদিন আগে গুলিস্তানের ফুটপাথ মুক্ত করতে উচ্ছেদ উচ্ছেদ খেলা হলো। ফুটপাতের ব্যবসায়ী ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে টম জেরির খেলা হয়েছে। অনেক দোকান রাস্তা থেকে তুলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু পরের দিনই সেই দোকান সড়ক দখল করে বসেছে।
ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে মুখরিত ফুটপাথ দেখে বোঝার উপায়ই নেই এটি পথচারীদের হাঁটার জায়গা। তবে শুধু ফুটপাথ নয়, শহরের অলিগলিজুড়েই আছে দোকান, মোড়ে মোড়ে, বড় রাস্তার পাশে বহুতল মার্কেট-বিপণিবিতান যেন পুরো ঢাকাই একটা বাজার। রাজধানী শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো ঘুরে দেখা যায়, যেখানেই মানুষের সমাগম, সেখানেই গড়ে উঠেছে বাজার। ঢাকা এখন মসজিদের শহরের পাশাপাশি নাম ধারণ করছে বাজারের শহর হিসেবে। আর এসব বাজার চলে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। কোনো কোনো এলাকা আবার রাত যত গভীর হয় বাজার তত জমজমাট হয়। শহরের কোনো জায়গা খোলা থাকলেই সেখানে বসে পড়ে দোকানপাট। একটা দোকান বসার পর থেকে তার দেখাদেখি বসতে শুরু করে শত শত দোকান। এর পর থেকে ওই এলাকাই একটি বাজারে পরিণত করে। আর এই অস্থায়ী বাজার এক পর্যায়ে স্থায়ী রূপ নেয়। এসব বাজার শুধু ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনা। এসব বাজারকে ঘিরে গড়ে উঠে বিশাল অঙ্কের সিন্ডিকেট। আর এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে থাকেন সরকার দলীয় প্রভাবশালী নেতারা।
রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র গুলিস্তান এলাকা। এখানে পাওয়া যায় না এমন কোনো জিনিস নেই। এখানেই রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কয়েকটি মার্কেট। এছাড়া এখানে রাস্তার উপরেই বিক্রি হয় নানা পণ্য। ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়ে এই জায়গা থাকে সব সময় মুখর। রাস্তার পাশে ও ফুটপাথে দোকানের কারণে প্রতিদিনই এই এলাকায় যানজট লেগেই থাকে। গুলিস্তানের গোলাপশাহ মাজারের পাশের গলিতে, ফুলবাড়িয়া ফ্লাইওভারের নিচে, স্টেডিয়ামের অপরদিকের রাস্তায় এবং সদরঘাট, ভিক্টোরিয়া পার্ক ও ল²ীবাজার এলাকায় সড়ক ও ফুটপাথ হকারদের অভয়ারণ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক’দিন পরপরই এসব জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। উচ্ছেদের পর আবার বসে পড়েন হকাররা। এখানেই প্রতিনিয়তই দেখা যায় হকার-পুলিশ খেলা।
দিনের কর্মব্যস্ততার পর পুরো শহর যখন ক্লান্ত হয়ে একটু বিশ্রামে ব্যস্ত, তখনো অপলক জেগে থাকে রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিরাবাজার। নাজিরাবাজারে দিনরাত সবই সমান। ২৪ ঘণ্টাই এখানকার খাবারের দোকানগুলো খোলা থাকে। বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণি-পেশার মানুষের আনাগোনায় সারাক্ষণ মুখর থাকে এলাকাটি। এই এলাকাসহ পুরো পুরান ঢাকার প্রায় সব এলাকাতেই গড়ে ওঠেছে বাজার।
ঢাকার প্রবেশপথগুলোর একটি যাত্রাবাড়ী এলাকা। এখানে ফ্লাইওভারের নিচে সকাল থেকে প্রায় সারাদিনই বসে মাছের বাজার। সড়কের উপরে মাছের বাজার বসার করণে দূরপাল্লার বাসগুলো ঢাকা থেকে বের হতে ও প্রবেশ করতে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এছাড়া সায়েদাবাদ ও ফ্লাইওভারের নিচ সব এলাকায়ই বসে বাজার। আরামবাগ-ফকিরাপুল, গুলিস্তান, নিউমার্কট একাধিক স্পটে সড়কের ওপরই বসে বাজার। ঢাকা কলেজের সামনে বাসে নিয়মিত কাপড়ের পাইকারি ও খুচরা বাজার।
উত্তরায় সড়ক দখল করে বসানো হয় বাজার। বিমানবন্দর-গাজীপুর মহাসড়কের উত্তরা এলাকায় সড়কের দুই পাশে বসে কাপড়সহ নিত্যপণের বাজার। এসব দোকানের কারণে পথচারীকে চলতে হয় রাস্তার উপর দিয়ে। এসব এলাকার ফুটপাথগুলো দখল করে দীর্ঘদিন ধরেই বসানো হয়েছে দোকান। মূল সড়কের বাইরেও আজমপুরসহ উত্তরার বেশকয়েকটি এলাকায় অলিগলি সড়কে বসানো হয়েছে দোকান। মতো সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এসব এলাকায় লেগে থাকে যানজট।
মতিঝিল এলাকা থেকে কেনাকাটা করেন আবুল হোসেন শাকিল। তিনি বলেন, মতিঝিল এলাকায় এখন সব জিনিসপত্র পাওয়া যায়। মাছ, তরকারি থেকে শুরু করে, হাড়ি পাতিল, কাপড়-চোপর সবই পাওয়া যায়। মার্কেটে যাওয়ার জামেলা নেই তাই এখান থেকেই কিনে ফেলি। কিন্তু এই এলাকায় ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থাকার কারণে আরও নিরাপত্তার জন্য ফুটপাথের ভিড় বা বাজার কমানো দরকার।
এদিকে, ঢাকার গুলশানে ফুটপাথের জায়গা দখল করে গড়ে ওঠা প্রায় ২৫০টি অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করেছে গুলশান সোসাইটি কর্তৃপক্ষ। গত শনিবার গুলশান-২ নম্বর এলাকার ১৫টি সড়কের ফুটপাথ থেকে এসব দোকান উচ্ছেদ করা হয়। গুলশান সোসাইটির সংশ্লিষ্টরা জানান, এই দোকানগুলো ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উচ্ছেদ করার কথা ছিল। বিষয়টি তাদের একাধিকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু ডিএনসিসির কর্তৃপক্ষের দেরি দেখে তারা নিজেরাই উচ্ছেদ করেছেন। গুলশান-২ নম্বরের নাভানা ও রবি টাওয়ারের আশপাশের ১০টি ও গুলশানের লেকপাড়ের পাঁচটি রাস্তায় অভিযান চালানো হয়। এছাড়া কয়েকটি সড়কের ফুটপাথ দখল করে বসানো দোকান ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। অভিযানে গুলশান সোসাইটির প্রতিনিধি, সোসাইটির শতাধিক নিরাপত্তাকর্মী ও গুলশান থানা-পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
গুলশান সোসাইটির মহাসচিব শুক্লা সারওয়াত সিরাজ সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা উত্তর সিটির কর্মকর্তারা বলেছিলেন, যৌথভাবে সিটি করপোরেশন ও গুলশান সোসাইটি মিলে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। উচ্ছেদের বিষয়ে সোসাইটির মনোভাব মেয়রকে জানানো হয়েছিল। করপোরেশন উচ্ছেদের পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু এর মধ্যে অনেক দিন চলে গেছে। এ কারণে পুলিশ প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে এই অভিযান চালানো হয়েছে। অবৈধ স্থাপনাগুলোর মধ্যে খাবার হোটেল, গাড়ি মেরামতের গ্যারেজ ও চায়ের দোকান ছিল।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি আখতার মাহমুদ বলেন, ওয়ার্ডভিত্তিক বাজার থাকার কথা থাকলেও প্রতিটি ওয়ার্ডে বাজার নেই। একারণে বিক্রেতারা দখল করছেন ফুটপাথ। সুষ্ঠু পরিকল্পনার মধ্যে আসা উচিত। যেভাবে বাজার গড়ে উঠছে ফুটপাথে, এটা কোনো পরিকল্পনামাফিক চলা রাজধানীর চিত্র হতে পারে না। হকারদের পুনর্বাসন করতে হবে। তাদের এমন জায়গায় পুনর্বাসন করতে হবে, যেখানে সহজেই কেনাকাটা করতে মানুষ যেতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে কোনোভাবেই হকারদের বসতে দেয়া যাবে না।
বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, রাজধানীতে যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা ফেরাতে হলে সড়কগুলো দখল মুক্ত করার কোনো বিকল্প নেই। এজন্য সবাইকে তৎপর হতে হবে। রাস্তার মোড়গুলোতে গাড়ি যেন আটকা না পড়ে সে ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। পুলিশকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। সড়ক ও ফুটপাথগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, ফুটপাথে যারা ব্যবসা করেন তাদের একটা নির্দিষ্ট জায়গায় বসতে দিতে হবে। যাতে তারা সুশৃঙ্খলভাবে ব্যবসা করতে পারেন। ফুটপাথ হাঁটার জন্য তাই মানুষের চলাচলের জায়গা ঠিক রাখতে হবে। তাদের নিকট থেকে চাঁদা আদায় করা যাবে না। একেক পক্ষ তাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে। এটা বন্ধ করতে হবে। সুশৃঙ্খলভাবে যাতে তারা ব্যবসা করতে পারেন তাদের সেই সুযোগ দিতে হবে। যেখানেই হোক একটা নির্দিষ্ট জায়গা ঠিক করে দিতে হবে। নির্ধারিত জায়গায় ক্রেতারা সেখানে যাবেন। তাহলে ফুটপাথে শৃঙ্খলা আসবে।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।