নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
স্পোর্টস রিপোর্টার : নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে গত জাতীয় লিগেই মাঠে ফিরেছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। কিন্তু তেমন কিছু করতে পারেননি। সে কারণেই প্রথম শ্রেণির ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে (বিএসএল) খেলার সুযোগ হয়নি তাঁর। প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেটে ফিরলেন এবার। কিন্তু সেখানেও একই অবস্থা। ব্যাট হাসছিল না। ৭ ম্যাচে করেছিলেন মাত্র ৮৮ রান। গত ম্যাচে ব্রাদার্সের বিপক্ষে দলেও ছিলেন না। পারিবারিক সমস্যা ও রান না পাওয়ার চাপে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত ছিলেন। একটু বিশ্রাম চেয়েছিলেন। বিশ্রামটা তাঁর ভালোই কাজে লেগেছ। প্রিমিয়ার লিগে ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে অবশেষে হাসল আশরাফুলের ব্যাট। গোটা লিগে যে পরিমাণ রান করেছেন, এদিন করেছেন তার কাছাকাছিই। টানা ব্যর্থতার মধ্য গতকাল বিকেএসপিতে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের বিপক্ষে ৮১ রানের ইনিংস খেললেন। তাঁর এই ইনিংসে শেখ জামালকে বেশ সহজেই ৭ উইকেটে হারিয়েছে কলাবাগান ক্রীড়াচক্র। অধিনায়ক আব্দুর রাজ্জাককে হারিয়ে এলোমেলো হয়ে পড়া শেখ জামাল ধানমÐি ক্লাব হারল টানা তৃতীয় ম্যাচে। নয় ম্যাচে এটি তাদের দ্বিতীয় জয়। সমান ম্যাচে শেখ জামালের চতুর্থ পরাজয়।
বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে বৃষ্টির জন্য ম্যাচের দৈর্ঘ্য নেমে আসে ৪৫ ওভারে। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেটে ২১৩ রান করে শেখ জামাল। জবাবে ৯ বল বাকি থাকতে ৩ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্য পৌঁছে যায় কলাবাগান। ৮৭ বলে ৬টি চার ও দুটি ছক্কায় চমৎকার এই অপরাজিত ইনিংসে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন চলতি লিগে নিজের প্রথম অর্ধশতক পাওয়া আশরাফুল। এমন দিনে নিজের ফেসবুক পেইজে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেন নি বাংলাদেশ ক্রিকেটের একসময়ের উজ্জ্বলতর এই নক্ষত্র, ‘আলহামদুলিল্লাহ্ আজ (গতকাল) ব্যাটে রান পেয়েছি। আমার রানের উপর ভর করে দলও জিতেছে। ৮১ রানে অপরাজিত ছিলাম। প্রতিপক্ষ আরো কিছু রান করলে হয়ত সেঞ্চুরি হয়ে যেত। সেই আক্ষেপ আছে, তবে টিম জেতায় খুশি লাগছে। আমার সব ভক্ত, অনুরাগী আর শুভাকাঙ্খীদের ধন্যবাদ, খারাপ সময়ে আমাকে পাশে থেকে সমর্থন করার জন্য।’
এদিকে, আবু হায়দার রনি দ্যুতি ছুটছেই। বল হাতে আবারও ক্ষুরধার এই পেসার। এনামুল হকের ব্যাটে আরও একটি অর্ধশতক। রান পেলেন সোহরাওয়ার্দী শুভও। আরও বেগবান তাই গাজী গ্রæপের জয়রথ। গাজী গ্রæপ ক্রিকেটার্সের অপরাজেয় যাত্রা চলছেই। শীর্ষে থাকা দলটি ৭ উইকেটে হারিয়েছে খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতিকে। এবারের লিগে এখনও পর্যন্ত একমাত্র অপরাজিত দল গাজী গ্রæপ। জিতল নয় ম্যাচের সবকটিই। পয়েন্ট তালিকায় তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী পিছিয়ে চার পয়েন্টে।
ফতুল্লায় মাঠ বৃষ্টিভেজা থাকায় দেরিতে শুরু খেলা নেমে আসে ৪৩ ওভারে। টস জিতে ব্যাট নেওয়া খেলাঘর বড় স্কোর গড়তে পারেনি আবু হায়দার ও পারভেজ রসুলের বোলিংয়ে। ৭ উইকেটে থামে মাত্র ১৭৫ রানে। রবিউল ৪১, রাফসান ২৮, অমিত ৪৯, নাজিম উদ্দিন করেন ২৫ রান। ৯ ওভারে ৩৫ রানে ৪ উইকেট নেন আবু হায়দার। এবারের লিগে চার উইকেট নিলেন এই নিয়ে তিনবার। ২২ উইকেট নিয়ে আছেন লিগের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি আরাফাত সানির (২৩) ঠিক পেছনেই। জবাবে এনামুল, সোহরাওয়ার্দী (৫৭*) ও রসুলের (৪২*) ব্যাটে মাত্র ৩ উইকেট হারিয়েই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় গাজী। চারটি চার ও তিন ছক্কায় ৭৭ বলে ৬৭ করে ফেরেন এনামুল। লিগে এবার চারবার পঞ্চাশ ছুঁয়ে একটিও নিতে পারলেন না তিন অঙ্কে। দারুণ বোলিংয়ে জয়ের ভিত গড়ে দিয়ে ম্যাচ সেরা আবু হায়দারই।
তবে দিনের অপর ম্যাচটি রোমাঞ্চ ছড়িয়েছে সবচেয়ে বেশি। জয়ের জন্য শেষ চার বলে ৪ রানের সমীকরণ মেলাতে পারেনি ব্রাদার্স ইউনিয়ন। আরিফুল হকের দারুণ বোলিংয়ে রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে ১ রানের নাটকীয় জয় পেয়েছে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। শেষ ওভারে ব্রাদার্সের দরকার ছিল ১১ রান। প্রথম বলে এক রান নিয়ে প্রান্ত বদল করেন ধীমান ঘোষ। পরের বলে ছক্কা হাঁকিয়ে সমীকরণ সহজ করে ফেলেন নিহাদউজ্জামান। তৃতীয় বলটি ডট, পরের বলে আসে দুই রান। পঞ্চম বলটি আবার ডট। ষষ্ঠ বলে উড়ানোর চেষ্টায় নিহাদউজ্জামান ধরা পড়েন তাইবুর রহমানের হাতে। হারতে বসা ম্যাচে দারুণ এক জয় পায় প্রাইম ব্যাংক। লিগে প্রাইম ব্যাংকের এটি সপ্তম জয়। অন্য দিকে ব্রাদার্সের ষষ্ঠ পরাজয়। বৃষ্টি হানা দেয়া বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠের এই ম্যাচেও দৈর্ঘ্য নেমে আসে ৪৩ ওভারে। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ২৪৯ রান করে প্রাইম ব্যাংক। জবাবে ৮ উইকেটে ২৪৮ রানে থেমে যায় ব্রাদার্সের ইনিংস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
খেলাঘর-গাজী গ্রæপ
খেলাঘর : ৪৩ ওভারে ১৭৫/৭ (রবিউল ৪১, পাপ্পু ৩, রাফসান ২৮, অমিত ৪৯, নাজিম উদ্দিন ২৫, জোসি ৪, সাগর ১০*, মঈন ৬, জনি ১*; আবু হায়দার ৪/৩৫, রসুল ২/৩৪)।
গাজী গ্রæপ : ৩৬.১ ওভারে ১৭৬/৩ (এনামুল ৬৭, মুমিনুল ৬, সোহরাওয়ার্দী ৫৮*, রসুল ৪২*; তানভির ৩/৩১)।
ফল : গাজী গ্রæপ ক্রিকেটার্স ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : আবু হায়দার (গাজী গ্রæপ)।
শেখ জামাল-কলাবাগান
শেখ জামাল : ৪৫ ওভারে ২১৩/৯ (মাহমুদ ১১, মাহবুবুল ৩২, আল মামুন ১৪, রাজিন ৪৫, সোহাগ ৩৯, সানি ৩৬*, শাহাদাত ৫*; হাসান ৩/৫০, নাসিম ২/৩০, মুক্তার ২/৪৮)
কলাবাগান : ৪৩.৩ ওভারে ২১৪/৩ (তাসামুল ৪৮, জসিম ২৯, আশরাফুল ৮১*, তুষার ১০, মেহরাব জুনিয়র ৪৩*; তানবীর ১/৩২, শাকিল ১/৪৩)
ফল : কলাবাগান ক্রীড়া চক্র ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : মোহাম্মদ আশরাফুল (কলাবাগান)।
প্রাইম ব্যাংক-ব্রাদার্স ইউনিয়ন
প্রাইম ব্যাংক : ৪৩ ওভারে ২৪৯/৬ (মারুফ ৫৮, শানাজ ২১, ঈশ্বরণ ৭০, জাকির ৫২, আরিফুল ১৪, সালমান ১৬, আসিফ ৫*; সাদ্দাম ১/৪৫, নিহাদউজ্জামান ৩/৪৯, কাপালী ২/৩৩)।
ব্রাদার্স ইউনিয়ন : ৪৩ ওভারে ২৪৮/৮ (জুনায়েদ ৫১, কাপালী ৪৬, বিসলা ৫৭, মাইশুকুর ৩৬, ধীমান ১৪; আল আমিন হোসেন ২/৪৪, আসিফ ১/২৮, আল আমিন ১/৩৫, তাইবুর ১/৪৬, আরিফুল ২/৫০)।
ফল : প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ১ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : অভিমন্যু ঈশ্বরণ (প্রাইম ব্যাংক)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।