Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পুরান ঢাকায় জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস

| প্রকাশের সময় : ১৩ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে হাজারও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন। জীবনের ঝুঁকি নিয় এমন ভবনে বসবাস করছেন বাসিন্দারা। এ সমস্ত এলাকার রাস্তাগুলোও এত সরু যে, কখনও কোন প্রকার দুর্ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি দুর্ঘনাস্থলে পৌঁছা সম্ভব হয় না। যে কারণে বিভিন্ন সময় ঘটে যাচ্ছে নিমতলীর মত ভয়াবহ দুর্ঘটনা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সূত্রাপুর এলাকার বিভিন্ন অলি গলি ঘুরে দেখা গেছে এমন বহু ঝুকিপূর্ণ ভবন। সরু গলি দিয়ে একটি রিকশা ঢুকলে আর পথচারি হাটার পথ থাকে না। দু’পাশে আকাশ ছোঁয়া সারি সারি বহুতল ভবন। কোনটির খোলস উঠে গেছে। একটু হাওয়া এলেই ঝুরঝুরে পলেস্তরা মাথার উপর পড়ে। আবার কোনটিতে বড় বড় ফাটল দৃশ্যমান। দেখলেই যে কারও ভয় লাগার মত। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হিসেবে কোন কোন ভবনের সামনে বড় অক্ষরের সাইনবোর্ডও রয়েছে। তবুও এসব ভবনেই জীবনের ঝুকি নিয়ে বসবাস করছে মানুষ।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, রাজধানী ঢাকায় ৭-এর অধিক মাত্রায় ভূমিকম্প হলে এসব ভবন মুহূর্তেই ধসে পড়বে। ভূমিকম্প ছাড়াও যে কোন মুহূর্তে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে পুরান ঢাকার এই এলাকায়। শুধু ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নয়, এই এলাকায় রয়েছে উন্নয়নের অভাবও। সামান্য বৃষ্টিতেই জমে হাঁটুপানি। নেই ড্রেনেজ ও স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা। পানি ও গ্যাসের সঙ্কটও প্রকট। সকাল ৭টার পর বিকাল অবধি গ্যাসের সন্ধান মেলে না। পানিতে রয়েছে তীব্র দুর্গন্ধ। ময়লা-আবর্জনা আর কাদামাটিতে ভরা ওয়াসার পানি নিয়ে অভিযোগের কমতি নেই স্থানীয়দের। এমন পানি দিয়েই গৃহস্থলির কাজ সারতে হয়। এই ওয়ার্ডে নেই সিটি কর্পোরেশনের কোনো খেলার মাঠ, কমিউনিটি সেন্টার ও পার্ক। একটি কাঁচাবাজার থাকলেও নেই সঠিক ব্যবস্থাপনা।
সূত্রাপুর থানার পাতলা খান লেন, শ্যামা প্রসাদ চৌধুরী লেন, কে জি গুপ্ত লেন, শ্রী দাস লেন, ঈশ্বর দাস লেন, পি সি ব্যানার্জী লেন, গোপাল সাহা লেন, প্রতাপ দাস লেন, নর্থব্রæক হল রোড, প্যারীদাস রোড, হেমেন্দ্র দাস রোড, জয়চন্দ্র ঘোষ লেন, হরিষ চন্দ্র বসু স্ট্রিট, রুপচাঁন লেন, বাগানবাড়ীসহ রুপলাল, শুকলাল দাস লেন, দেবেন্দ্র নাথ দাস লেন, মোহিনী মোহন, মদন সাহা লেন, আনন্দ মোহন, ফরাসগঞ্জ লেন, মালাকার টোলা লেন, উল্টিনগঞ্জ, ফরাশগঞ্জ রোড ও ফরাশগঞ্জ লেন এবং বি কে দাস এলাকা নিয়ে দক্ষিণ সিটির ৪৩নং ওয়ার্ড গঠিত। এই ওয়ার্ডে ২৩ হাজার ভোটারের পাশাপাশি ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ বসবাস করছেন।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুরান ঢাকার এই এলাকায় ৬০ ভাগের বেশি ভবন রয়েছে ভয়াবহ ঝুঁকিতে। এসব ভবনে বসবাস করছেন দুই লক্ষাধিক মানুষ। ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবন সংস্কারের জন্য নেওয়া হচ্ছে না বড় ধরনের কোনো উদ্যোগ। বাড়ীর মালিকদের নোটিশ দেয়া হলেও তারা তা মানছেন না। ফলে চরম জীবনাশঙ্কায় রয়েছেন বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়ারা।
সরেজমিন দেখা গেছে, এলাকার প্রবেশপথগুলো একেবারেই সংকীর্ণ। অপরিকল্পিতভাবে বাড়ি-ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। রাস্তার জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা রাখা হয়নি। যে কারণে পুরো ওয়ার্ডের বেশির ভাগ সড়কই সংকীর্ণ। পাশাপাশি দুটি রিকশার একসাথে যাতায়াতের কোনো উপায় নেই। রাস্তায় ফুটপাত না থাকা সত্তে¡ও বিভিন্ন স্থানে রাস্তার উপরই গড়ে উঠেছে অবৈধ দোকানপাট।
সরু গলির কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্সসহ বড় ধরনের কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে পারে না। একযোগে গলিগুলোর দুই মুখ দিয়ে দুটি রিকশা প্রবেশ করলে লেগে যায় যানজট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও মেলে না মুক্তি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের পাশাপাশি এখানে মাদকের বিস্তারও প্রকট। সন্ধ্যা হলেই মাদকসেবীরা এলাকার বিভিন্ন সড়ক ও মোড়ে অবস্থান নেয়। এসব স্থানে প্রকাশ্যে চলে মাদকসেবন ও ব্যবসা। ব্যক্তিমালিকানায় মুক্তি খেলাঘর নামে একটি ছোট মাঠ থাকলেও সেটি পরিণত হয়েছে মাদকসেবীদের আড্ডায়। ফলে সন্তানদের নিয়ে বেকায়দায় রয়েছেন অভিভাবকরা।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও ডেসার অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী মোহাম্মদ আব্দুল মালেক বলেন, প্রাচীনকালে অপরিকল্পিতভাবে এখানে রাস্তাঘাট নির্মাণ করা হয়। তখন যে যেভাবে পেরেছে বাড়িঘর নির্মাণ করেছে। রাস্তার জন্য কেউ বেশি জায়গা রাখেনি। পাশাপাশি দুটো রিকশা চলারও জায়গা নেই। কেউ অসুস্থ হলে কিংবা আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকারও জায়গা নেই।
খেজুরবাগ থেকে পানি নিতে আসা হাছান আলী, মোহাম্মদ হাসেম ও লাভলী আক্তার জানান, তারা প্রায়ই পাম্প থেকে পানি নিতে আসেন। বাসায় পানি না থাকলে বাড়ীর মালিকরা নিজেদের ব্যক্তিগত মোটর দিয়ে পানি তোলেন কিন্তু ভাড়াটিয়া হওয়ায় তাদের পানি দেয়া হয় না। ওয়ার্ডে গ্যাসের সমস্যাও প্রকট। সকাল থেকে বিকেল পযর্ন্ত প্রায় সময় গ্যাস থাকে না। কখনো কখনো থাকলেও তা মোমবাতির মত জ্বলে।
এই ওয়ার্ডে ডিএসসিসির কোনো মাঠ ও পার্ক নেই। শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশ ও চিত্তবিনোদনের জন্য মুক্তি খেলাঘর নামে ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি মাত্র মাঠ থাকলেও সেটা এখন খেলার মাঠ বলার কোনো উপায় নেই। সেখানে কেবল মাদকসেবীদের আড্ডা। ফলে ছোট ছোট শিশুরা ব্যাট-বল ও ফুটবল নিয়ে অলি-গলিতে দাঁপিয়ে বেড়ায়।
ওয়ার্ডের বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে কাউন্সিলর হাজী আরিফ হোসেন বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর ইতোমধ্যে প্রতিশ্রæতি দেওয়া ৫০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করেছি। পানির সঙ্কট সমাধানে আগামী মাসের মধ্যে সিরিশ লেনে নতুন একটি পানির পাম্প স্থাপন করা হবে। সড়কবাতি, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, যত্রতত্র ময়লা ফেলা নিয়ন্ত্রণসহ জনদুর্ভোগ কমাতে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ওয়ার্ডের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আগামী মাসে আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৩২টি সিসি (ক্লোজড সার্কিট) ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর বিষয়ে এ মাসের শেষ নাগাদ ডিএসসিসি ও রাউজকের (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) সাথে সমন্বয় করে অভিযান পরিচালনা করা হবে। ###



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পুরান

১ সেপ্টেম্বর, ২০২০
২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ