Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পুরান ঢাকায় মৃত্যুকূপে বসবাস : দায় কার?

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০০ এএম

২০১০ সালের পুরনা ঢাকার নিমতলী, ১০ বছর পর ২০১৯ সালের চকবাজারের চুরিহাট্টা অগ্নিকান্ডে অনেক প্রাণহাণি ঘটেছে। ওই দুই ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর দেশি-বিদেশি মিডিয়ায় ব্যাপক লেখালেখির কারণে পুরান ঢাকার বাসাবাড়ি থেকে কেমিক্যাল গুদাম সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু তারপর কি রাজধানীর ঘিঞ্জি এলাকা হিসেবে পরিচিত পুরান ঢাকা কেমিক্যাল মুক্ত হয়েছে? গতকালও পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় অগ্নিকান্ডে প্রাণ হারিয়েছে মানুষ। অনেকেই মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।
রাজধানীর পুরান ঢাকার আরমানিটোলার হাজী মুসা ম্যানসনের বহুতল ভবনের ছয় তলার বাসিন্দা শাহাদাত হোসেন অগ্নিকান্ডের বর্ণনা দেন এভাবে ‘ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ আগুন, আগুন চিৎকারে ঘুম থেকে জেগে উঠি। চারিদিকে শুধু কালো ধোঁয়া আগুনের লেলিহান শিখা। প্রচন্ড তাপে ফ্লোরে পা রাখতে পারছিলাম না। পরিবারের সবাইকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে ঘর থেকে ছুটোছুটি করে ছাদে উঠে যাই। ধোঁয়ায় বারবার শ্বাস আটকে যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল এখনই মারা যাব। এমন সময় ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা মই দিয়ে ছাদ থেকে আমাদের নামিয়ে আনে। আরেকটু দেরি হলে পরিবারের ছয় সদস্যের সবাই মারা যেতাম’।
ভয়াবহ এ অগ্নিকান্ডে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন- ওই ভবনের নিরাপত্তারক্ষী ওলিউল্লাহ, দোকান কর্মচারী রাসেল মিয়া, ভবনের চারতলার বাসিন্দা শিক্ষার্থী সুমাইয়া এবং কবীর। আহত অবস্থায় আরো ২১ জনকে রাজধানীর শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে গুরুতর দগ্ধ ৪ জনকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়েছে।
হাসপাতালটির সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন বলেছেন, অন্যান্যরা বাহ্যিকভাবে ভালো মনে হলেও আগুনের ধোঁয়ায় সবারই শ্বাসনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২১ জনের কেউই শঙ্কামুক্ত নন।
২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ওয়াহেদ ম্যানশনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ঘটে। সেখানে কেমিক্যালের গোডাউন থাকায় আগুন বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এ অগ্নিকান্ডে ৭০ জন নিহত হন। আহত হন অনেকেই। এছাড়াও প্রায়ই কেমিক্যালের গোডাউনগুলোতে ছোটখাটো অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে থাকে।
২০১০ সালের নিমতলীর ঘটনার পর থেকেই পুরান ঢাকার রাসায়নিক কেমিক্যাল গোডাউন ঢাকার আশপাশে সরিয়ে নেয়ার কথা উঠলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি। পরবর্তীতে চুরিহাট্টার ঘটনার পর সেই উদ্যোগ জোরদারের কথা বলা হয়। অথচ অতঃপর নীরব। আরমানিটোলায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে- উচ্চদাহ্য জাতীয় রাসায়নিক কেমিক্যাল থেকেই আগুনের স‚ত্রপাত। তবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত বাংলাদেশ কেমিক্যাল অ্যান্ড পারফিউমারি মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের পরিচালক নুরুল আক্তারের দাবি, এ ভবনটিতে কোনো দাহ্য পদার্থ ছিল না। দাহ্য পদার্থ থাকলে আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ত। কিন্তু তা ঘটেনি। তারা সরকারের নির্দেশনা মেনে ব্যবসা করছেন। অথচ কোনো ঘটনা ঘটলেই তাদের দোষারোপ করা হয়। মিটফোর্ড ও আরমানিটোলা এলাকার ১২শ’ কেমিক্যাল ব্যবসায়ীর পক্ষ থেকে শিল্পপার্কে জায়গা চেয়ে আবেদন শিল্পমন্ত্রণালয়ে জমা রয়েছে। কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও তারা জায়গা বরাদ্দ পাননি। প্রশ্ন হলো দায় কার? কাদের অসহযোগিতার কারণে শিল্পপার্ক হচ্ছে না। আর পুরান ঢাকা থেকে দাহ্যজাতীয় রাসায়নিক কেমিক্যালের গুদাম সরানো যাচ্ছে না কেন?



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ