Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

পুরান ঢাকার নতুন ‘কাউয়া’

| প্রকাশের সময় : ২৭ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : তার নাম শুনলেই মানুষ ভয়ে আঁতকে ওঠে। দখল আর চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠরাও মুখ খুলতে ভয় পায়। তিনি সাইদুর রহমান সহিদ। সহিদ চেয়ারম্যান নামে যিনি ব্যাপক পরিচিত। পুরান ঢাকার অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান মন্ডল হত্যায় ১০ বছর জেল খেটেছেন। তার বিরুদ্ধে সেন্টু ও শাহাদাত হত্যা মামলার কার্যক্রম উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। হত্যা-চাঁদাবাজিসহ ডজনখানেক মামলার আসামি সহিদ ২০১৪ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে গেন্ডারিয়ার ৩৩/বি/১, সতীশ সরকার রোডের নিজ বাসা থেকে চারটি অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হন। ওই মামলায় কয়েকমাস জেল খেটে জামিনে বেরিয়ে এসে আওয়ামী লীগে ভিড়তে চান। সে চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতা সেজেছেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৬ (সূত্রাপুর-কোতোয়ালি) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন। এখন পোস্টার ও ব্যানারে ছেয়ে ফেলেছেন শ্যামপুর গেন্ডারিয়াসহ পুরান ঢাকার অনেক এলাকা। কোথাও তিনি শ্যামপুর থানা বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগের উপদেষ্টা আবার কোথাও ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) শ্যামপুর থানা তাঁতী লীগের প্রধান উপদেষ্টা। এলাকাবাসির অভিযোগ, এসব সংগঠনের ব্যানারে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে সহিদ আবার তার পুরনো পেশা চাঁদাবাজিতে ফেরার পাঁয়তারা করছেন।
জানতে চাইলে তাঁতী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরি সভাপতি সাধনা দাস গুপ্তা বলেন, এখনো পর্যন্ত ঢাকা মহানগরে তাঁতী লীগের কোথাও কোন কমিটি হয়নি। এছাড়া আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগ অননুমোদিত সংগঠন। এ ধরনের সংগঠনে উপদেষ্টা বলতে কিছু নেই। কিছু স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের স্বার্থে এ ধরনের অপকর্ম করে সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সম্প্রতি একাধিক সমাবেশে আওয়ামী লীগে কাউয়া (কাক) ঢুকেছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, প্রচার লীগ, তরুণ লীগ, কর্মজীবী লীগ, ডিজিটাল লীগ, হাইব্রিড লীগ আছে। জায়গায় জায়গায় কাউয়া আছে। বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে সংগঠনের নামে রাজনৈতিক দোকান খোলা হচ্ছে। যারাই এসব দোকান খোলার চেষ্টা করবে, তাদের পুলিশে দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, একাত্তরেও ছিল কাউয়া। কাউয়ারা এখনো আছে। ক্ষমতার সঙ্গে কাউয়া ঢুকে যায়।
শ্যামপুরের বাসিন্দারা বলেন, সহিদ আওয়ামী লীগের এ রকম একজন কাউয়া। তারা বলেন, মিল ব্যারাকের সিএসবি গোডাউনের কুলি থেকে গেন্ডারিয়া বাজারে মাছ বিক্রেতা সহিদ অর্থাভাবে প্রাইমারি স্কুল শেষ করতে পারেন নি। অথচ তিনিই পেশিশক্তি আর অবৈধ অস্ত্রের জোরে ডজনখানেক আলিশান বাড়ি, নাইট ক্লাবসহ অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক। ছাত্রদল করার মধ্য দিয়ে রাজনীতির হাতে খড়ি সহিদের। এরশাদ শাসনামলে ভোল পাল্টে জাতীয় পার্টির ব্যানারে ওয়ার্ড কমিশনার হন। ক্ষমতার দাপটে দখল আর চাঁদাবাজির টাকায় কোটিপতি বনে যাওয়া তার। এরপর হত্যা মামলায় কারাগারে। ফাঁসির দন্ডাদেশ থেকে খালাস পেয়ে আবারও রাজনৈতিক শেল্টারের চেষ্টা। অভিযোগ রয়েছে, অনেক চেষ্টা করেও ঐতিহ্যবাহী সংগঠন আওয়ামী লীগে তার ঠাঁই মেলেনি। এরপরেও তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগের সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নেতা হিসেবে জাহির করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হন। এরই অংশ হিসেবে স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখে সহিদ নিজেকে শ্যামপুর থানা বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগের উপদেষ্টা পরিচয়ে পোস্টার ও ব্যানার সাটিয়েছেন। একইভাবে সদ্য সমাপ্ত তাঁতী লীগের সম্মেলন উপলক্ষে তিনি নিজের ছবি ব্যবহার করে এলাকায় পোস্টার ও ব্যানার সাটিয়েছেন। সেখানে নিজেকে ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) শ্যামপুর থানা তাঁতী লীগের প্রধান উপদেষ্টা বলে পরিচয় দিয়েছেন। নির্বাচনী এলাকার মতোই তার ছবি সম্বলিত ব্যানার ও পোস্টারে দেখা গেছে দেয়ালে দেয়ালে।
এ ব্যাপারে শ্যামপুর থানা আওযামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ৫১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী হাবিবুর রহমান (হাবু) বলেন, সাইদুর রহমান সহিদ আওয়ামী লীগ কিংবা এর অঙ্গ সংগঠনের কেউ নন। আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের উপদেষ্টা হিসেবে পোস্টার টানিয়ে সহিদ সাধারণ এলাকাবাসির সাথে প্রতারণা করছেন। বিষয়টি সংগঠনের যথাযথ ফোরামে অবহিত করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। একইভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করে শ্যামপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন বলেন, আমার জানামতে সহিদ আওয়ামী লীগ কিংবা এর কোন অঙ্গ সংগঠনের সদস্য নন। ব্যানারে উল্লেখিত দলের নেতাদের এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানায়, আওয়ামী লীগে ঠাঁই না পেয়ে অনুমোদনহীন সংঠনের নেতা পরিচয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে অভিনব কৌশলে চাঁদাবাজি করছে। এসব ব্যাপারে জানতে চেয়ে সহিদকে একাধিকবার ফোন করা হয়। কিন্তু তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান মন্ডল হত্যায় ১০ বছর জেল খাটার পর উচ্চ আদালত থেকে খালাস পান সহিদ। তার বিরুদ্ধে সেন্টু ও শাহাদাত হত্যা মামলার কার্যক্রম উচ্চ আদালতে থেমে আছে। হত্যা চাঁদাবাজিসহ ডজনখানেক মামলার আসামি সহিদ ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে গেন্ডারিয়ার ৩৩/বি/১, সতীশ সরকার রোডের নিজ বাসা থেকে চারটি অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হন তিনি। ওই মামলায় কয়েকমাস জেল খেটে জামিনে মুক্ত হন।



 

Show all comments
  • মিজু ৩০ মার্চ, ২০১৭, ১:১০ পিএম says : 0
    ভাই মিথ্যা সুন্দর কইরা সাজানোর পর সত্যি মনে হইলেও সত্যি হয়না
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পুরান

১ সেপ্টেম্বর, ২০২০
২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ