পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় হাজী মুসা ম্যানশনে রাসায়নিক গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে চার জনের মৃত্যু ও ২৩ জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার ভোররাত সোয়া তিনটার দিকে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট ৩ ঘণ্টার চেষ্টার পর সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহত ২৩ জনের মধ্যে চার জনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। আগুনে পোড়া রয়েছেন দুই-তিন জন। আর বাকিরা ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে অগ্নিকান্ডে আহতদের চিকিৎসা চলছে। আরমানিটোলার হাজী মুসা ম্যানশনে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পক্ষ থেকে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অগ্নিকান্ডে নিহত চারজনের মধ্যে তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন-ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার (২২), ওই ভবনের নিরাপত্তা কর্মী ওয়ালীউল্ল্যাহ ও রাসেল। ভবনের ৫ম তলায় মৃত চারজনের মধ্যে দুইজনের লাশ পাওয়া গেছে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, ভবনটির নিচতলায় দোকান ও গুদামের ভেতরে পুড়ে যাওয়া বড় বড় ড্রাম ও রাসায়নিক পণ্য কেনাবেচায় ব্যবহৃত কনটেইনার পড়ে আছে। ভবনের নিচতলার মার্কেটে ১৬ থেকে ২০টি দোকান রয়েছে। এসব দোকানে রাসায়নিক পণ্য কেনাবেচা হতো। ভবনের নিচতলার পেছনের দিকের একটি রাসায়নিকের গুদাম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে বিকট শব্দ হয়ে বিদ্যুৎ চলে যায়। এতে বাসিন্দারা আটকে পড়েন। ভবনটিতে ১৮টি পরিবার বসবাস করতেন। অতিরিক্ত ধোঁয়ার কারণে প্রথমে আশপাশের ভবন থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়া হয়। আটকে পড়া অনেককেই মুমূর্ষু অবস্থায় গ্রিল কেটে, জানালা ভেঙে, ছাদের দরজা ভেঙে উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ফায়ার সার্ভিস সদরদপ্তর থেকে জানানো হয়, শুক্রবার ভোর ৩টা ১৫ মিনিটে বংশালের আরমানিটোলা খেলার মাঠের পাশে বাবুবাজার ব্রিজ সংলগ্ন ছয়তলা ভবনের নিচতলার কেমিক্যাল গোডাউনে অগ্নিকান্ডের ঘটনাটি ঘটে। আগুন লাগা ওই ভবনের নাম হাজী মুসা ম্যানশন। ভবনের নিচতলায় কেমিক্যাল গোডাউন থাকলেও দোতলা থেকে পাঁচতলা পর্যন্ত লোকজন বসবাস করে। অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে ভোর ৩টা ২৫ মিনিটেই ফায়ার সার্ভিস সেখানে পৌঁছায়। প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট কাজ শুরু করে।এরপর আগুনের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় আরও ৩টি ইউনিট যুক্ত হয়।এর কিছুক্ষণ পরে আরো ৮টি ইউনিট যুক্ত হয়েছে। মোট ১৯টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। তাদের দীর্ঘ তিন ঘণ্টার চেষ্টায় ভোর ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
আরমানিটোলায় আরমানিয়ান স্ট্রিটের হাজী মুসা ম্যানশনে আগুন লাগার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বজলুর রহমান। তিনি হাজী মুসা ম্যানশনের পাশে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এটিএম বুথের সিকিউরিটি গার্ড। বজলুর রহমান বলেন, ভোর ৩টা ১৫ মিনিটে এটিএম বুথের দরজা খুলে আমি ভেতরে রেস্ট নিচ্ছিলাম। সোজাসোজি হাজী মুসা ম্যানশনটি দেখা যাচ্ছিল। পরে হঠাৎ করে ৩টা ১৬ মিনিটের দিকে ভবনটিতে আলোর ঝলকানি দেখতে পাই এবং সঙ্গে বিকট শব্দ হয়। দৌড়ে ভবনটির সামনে যাই। তখন ছোট ছোট আগুন ছিল। কিন্তু আগুন দ্রুত ভবনে ছড়িয়ে পড়ছিল। তখন রাস্তায় থাকা একজনকে নিয়ে ভবনটির নিচ তলার গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করি। ভেতরে প্রবেশ করতেই একজনকে নিচে আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। তখন আমি ও আমার সঙ্গে থাকা লোকটি তাকে উদ্ধার করে বাইরে নিয়ে আসি। তারপর আমরা দু’জন দোতলায় যাই। কিন্তু দোতলায় গিয়ে দেখি আগুন বেড়ে যাচ্ছে। ফলে আমরা দ্রুত বের হয়ে আসি। আগুনের পরিমাণ আরো বাড়তে থাকে।
তিনি বলেন, তখন নিচ থেকে উপরে তাকিয়ে দেখি ভবন থেকে নারী-পরুষ আগুন থেকে বাঁচার জন্য চিৎকার করছেন। তারা বিভিন্নভাবে জানালার কাঁচ ভেঙে লাফ দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আগুন লাগার ঠিক ১০ মিনিটের মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে আসে। তারা এসে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও ভবনের ভেতরে প্রচুর ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়। এই ধোঁয়া থেকে বাঁচতে ভেতরের লোকজন তখনও চিৎকার করছিল। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন প্রথমে ভবনের গ্রিল কেটে প্রথমে শিশু ও নারীদের এবং পরে পুরুষদের উদ্ধার করে নিচে নামিয়ে আনে।
এদিকে অগ্নিকান্ডের ঘটনার পর পুরান ঢাকার আরমানিটোলার হাজি মুসা ম্যানশন থেকে রাসায়নিক অপসারণ শুরু করেছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। শুক্রবার বিকেল তিনটা থেকে এই অপসারণ কার্যক্রম শুরু হয়। ঢাকা জেলা প্রশাসনের লালবাগ সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা রহমান বলেন, ওই ভবনের নিচ তলায় রাসায়নিকের অনেকগুলো দোকান এবং গুদাম রয়েছে। এসব দোকান এবং গুদামে প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক রয়েছে। এগুলো ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মাতুয়াইল ল্যান্ডফিলে নিয়ে ফেলে দেয়া হবে।
শুক্রবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে পিবিআই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল ইসলাম বলেন, ভবনটির নিচতলায় কেমিক্যালের দোকান রয়েছে। নিচতলায় পেছনের দিকে বেশ কয়েকটি দোকানের প্রায় পুরোটাই পুড়ে গেছে। কোনো একটি দোকানের গোডাউন থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান বলেন, এটি অপরিকল্পিত কেমিক্যাল মার্কেট। এ ভবনে আমরা কোনো ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখতে পাইনি। ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়া গেলে অগ্নিকান্ডের কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।
ঢাকা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শহিদুল ইসলাম বলেছেন, যতদিন পর্যন্ত কেমিক্যাল গোডাউন স্থানান্তর করা না হবে ততদিন এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে। যে ঘটনাটি ঘটেছে এটি খুবই দুঃখজনক। এই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা কাম্য নয়। আমরা আহত ও নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। এখানে ২৩ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে একজন চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। চারজন আইসিইউতে এবং ১৮ জন বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের দাফন-কাফন ও চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে নিহতদের পরিবারকে ২৫ হাজার এবং আহতদের ১৫ হাজার টাকা করে দিয়েছি। ফায়ার সার্ভিসের চারজন সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আপনারা জানেন ঘটনার সময় সবাই ঘুমের মধ্যে ছিল। বিষাক্ত কেমিক্যালের ধোঁয়ায় মূলত তাদের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে।
যারা এই কেমিক্যাল গোডাউন করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা তার লাইসেন্স বাতিল করব। তার কোনো গাফিলতি ছিল কি না সে বিষয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ধরনের কেমিক্যাল গোডাউন যাদের আছে তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জেল-জরিমানার ব্যবস্থা করব। এখনো কী পরিমাণ কেমিক্যাল সেখানে মজুদ রয়েছে এ বিষয়ে বিস্ফোরক অধিদফতর খতিয়ে দেখছে। তিনি বলেন, কেমিক্যাল বিষাক্ত জিনিস। তাই যতদিন এ ধরনের গোডাউন আবাসিক এলাকা থেকে সরানো না হবে ততদিন এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে।
বংশাল থানার ওসি শাহিন ফকির বলেন, হাজি মুসা ওই ভবনের মালিক ধানমন্ডিতে থাকেন। তার ওপরে আমরা সব ধরনের নজরদারি রাখছি। এ ঘটনায় যাদের গাফিলতি পাওয়া যাবে, তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নিহতের স্বজনরা আইনি পদক্ষেপ নিতে চাইলে তা গ্রহণ করা হবে। নিহতের স্বজনরা মামলা করতে চাইলে আমরা মামলা নেব। নিহতদের পরিবারের স্বজনরা যদি মামলা করতে রাজি না হন, তাহলে পুলিশ বাদী হয়ে এ ঘটনায় মামলা করবে।
স্থানীয় বেশ কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, প্রত্যেক বছরই কোনো না কোনো ভবনে এই রাসায়নিক গুদাম থেকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। পুরান ঢাকায় বেশ কয়েকটি বড় অগ্নিকান্ড ঘটেছে এই রাসায়নিক গুদাম থেকে। ওইসব ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে আবাসিক ভবনে রাসায়নিক গুদাম বা দোকান স্থাপনের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও বাস্তবে তা আজও দেখা যাচ্ছে না। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চুড়িহাট্টায় পারফিউমের ফ্যাক্টরি ও গোডাউনে অগ্নি দুর্ঘটনায় ৭১ জন প্রাণ হারান। এর আগে ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীতে কেমিক্যাল গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ১২৩ জন প্রাণ হারান। নিমতলী ট্র্যাজেডির পর পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরিয়ে নেয়া হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির পর সরকারের পক্ষ থেকে আবারো একই প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।