পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ক্ষমতায় গেলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) কীভাবে দেশ পরিচালনা করবে, তার একটি রূপকল্প দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া গত বুধবার জাতির সামনে উপস্থাপন করেছেন। ভিশন ২০৩০ নামের এই রূপকল্পে ৩৭টি বিষয়ে ২৫৬টি দফা তিনি উপস্থাপন করেছেন। এর মধ্যে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা, সুশাসন নিশ্চিত করা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান এবং দেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করাসহ ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনের কথা রয়েছে। প্রতিহিংসা বাদ দিয়ে ভবিষ্যতমুখী রাজনীতির কথা স্পষ্টভাবে তুলে ধরেন বিএনপি চেয়ারপার্সন। প্রধানমন্ত্রীর এককক ক্ষমতায় ভারসাম্য বিধানের কথাও বলেছেন। পাশাপাশি সুধী সমাজ, জনমত জরিপ, জনগণের চাওয়া-পাওয়া, বিশেষজ্ঞ মতামত ও সর্বসাধারণের অভিজ্ঞানের নির্যাস গ্রহণ করে দেশ পরিচালনার লক্ষ্য তুলে ধরেছেন তিনি। উল্লেখ করা যেতে পারে, গত বছরের ১৯ মার্চ দলটির কাউন্সিল অধিবেশনে খালেদা জিয়া ভিশন ২০৩০-এর একটি সারসংক্ষেপ তুলে ধরেছিলেন। তারই বিস্তারিত বিবরণ গত বুধবার তুলে ধরলেন তিনি। এই ভিশন ২০৩০ নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বেশ তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, খালেদা জিয়ার ভিশন ২০৩০ একটি ফাঁকা প্রতিশ্রæতির ফাঁপানো রঙিন বেলুন। এই বেলুন অচিরেই চুপসে যাবে। এতে কোনো নতুনত্ব নেই। তিনি দাবি করে বলেন, আওয়ামী লীগের ধারণা চুরি করে বিএনপি ভিশন ২০৩০ দিয়েছে। অন্যের মেধাস্বত্ব চুরি করা একটি নৈতিক অপরাধ। এটা একধরনের রাজনৈতিক অসততা।
বিএনপির ভিশন ২০৩০ ঘোষণার পরপরই এটি নিয়ে রাজনৈতিক দল ও নেতা থেকে শুরু করে সুধীসমাজ ও বিশ্লেষকদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। কেউ বলেছেন, ইতিবাচক তবে বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় রয়েছে। কেউ বলেছেন, নতুনত্ব নেই। এটি একটি নির্বাচনী ইশতেহার বলেও কেউ কেউ অভিমত দিয়েছেন। এসব আলোচনার আলোকে বলা যায়, বিএনপি দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে তার আগামী রাজনীতি এবং ক্ষমতায় গেলে কীভাবে দেশ পরিচালনা করবে তার একটি আগাম ধারণা দিয়েছে। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার সুযোগ রয়েছে। কোনো কিছুই শতভাগ যেমন সঠিক হয় না, তেমনি শতভাগ বেঠিকও হয় না। তবে দেখার বিষয় হচ্ছে, কোনটির হার বেশি। যদি সঠিক হওয়ার হার বেশি হয়, তবে তা সঠিক বলেই গণ্য হয়। দল হিসেবে বিএনপির ভিশন সঠিক না বেঠিক এবং উভয়ের হার কত বেশি তা যত দিন যাবে, ততই পরিস্কার হতে থাকবে। বলা যায়, বিএনপি দেশের মানুষের মতামত নেয়ার একটি মিশন নিয়ে ভিশন ২০৩০ দিয়েছে। দলটির নেতারা ইতোমধ্যে বলেছেনও, এই ভিশনই যে সব তা নয়। এ সম্পর্কে যেসব সুধীসমাজ ও বিশেষজ্ঞদের তরফে যেসব মতামত আসবে তা গ্রহণের মাধ্যমে ভিশনকে সমৃদ্ধ করা হবে। এটি একটি ইতিবাচক দিক। তবে ক্ষমতাসীন দল বিএনপির এ ভিশনকে যেভাবে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছে, তা শোভন নয়। তাদের দেখানো পথে যদি কেউ হাঁটে, তবে তা তাদেরই কৃতিত্ব। এক পথ দিয়ে একজনই হাঁটবে, আর কেউ হাঁটতে পারবে নাÑএমন মানসিকতা পোষণ করা উচিত নয়। দেখার বিষয় হচ্ছে, দেশ ও জনগণের সেবায় সবার লক্ষ্য কল্যাণমুখী কিনা। রাজনৈতিক মতাদর্শগত পার্থক্য থাকা স্বাভাবিক, তবে সবারই লক্ষ্য থাকে ক্ষমতায় যাওয়া এবং স্ব স্ব আদর্শ ও পরিকল্পনা দিয়ে দেশের সেবা করা। দেশের মানুষ দলগুলোর সেবামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করছে কি করছে না, তা তাদের উপরই ছেড়ে দেয়া ভাল। বিএনপির ভিশন ২০৩০ তে যেসব বিষয় উল্লেখ করেছে, তাতে ত্রæটি থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়, তবে উদ্দেশ যে দেশের সার্বিক কল্যাণ, তাতে সন্দেহ নেই। ইতোমধ্যে দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিবর্গ এই ভিশন দেয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতার ভারসাম্য বিধান, সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, বিচার বর্হিভূত হতাকাÐ বন্ধের ঘোষণা, কালু কানুন বাতিল, দেশের জনগণের কাছে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দেয়া, যে কোনো ইস্যুতে গণভোটের পুনঃপ্রবর্তণ করা, কোনো রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করলে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলা, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার মতো বিষয়গুলো বাস্তবায়নে অঙ্গীকার করা শুভ ইচ্ছা হিসেবে পরিগণিত হতে পারে।
যে কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তার ভিশন বা ইশতেহার জনগণের সামনে তুলে ধরতেই পারে। সে ক্ষমতায় গেলে জনগণের জন্য কী করবে, কীভাবে দেশ পরিচালনা করবে, সর্বসমক্ষে প্রকাশ করা অবশ্যই উচিত। বিশ্বের যে কোনো দেশেই ক্ষমতাকামী দলগুলো এ কাজ করে। আমাদের দেশেও নির্বাচনের আগে জনগণকে অনেক প্রতিশ্রæতি দেয়া হয়। মূল বিষয় হচ্ছে, ক্ষমতায় গিয়ে প্রতিশ্রæতি কতটা রক্ষা করা হয়। আমরা দেখেছি, যারাই ক্ষমতায় এসেছেন, তারা ক্ষমতায় আসার আগে অনেক প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন। ক্ষমতায় গিয়ে তার অনেক কিছুই পূরণ করতে পারেননি বা করেননি। এতে বুঝতে অসুবিধা হয় না, ক্ষমতাসীন হওয়ার আগে দলগুলো তাদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকে না। ফলে নির্বাচনের আগে দেয়া প্রতিশ্রæতিগুলো তখন কথার কথায় পরিণত হয়। পরপর দুইবার নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও যে তাদের প্রতিশ্রæতি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পেরেছে, এটা মনে করারও কারণ নেই। কাজেই ক্ষমতাকামী দল হিসেবে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তার ভিশনের সবকিছু পূরণ করতে পারবে, এটাও মনে করার কারণ নেই। এটা নির্ভর করবে পরিবেশ, পরিস্থিতি ও সদিচ্ছার উপর। তবে ক্ষমতার বাইরে থেকে ভিশন দিলেই হবে না, তা দলটির নেতা-কর্মীদের চিন্তা-চেতনায় নিতে হবে। জনগণের সামনে তা তুলে ধরতে হবে। তাদের কাজও হওয়া উচিত দল ঘোষিত মিশন ২০৩০-এর আলোকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।