Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জনতা রাজপথে হাসিনার পতন নিশ্চিত করেই ঘরে ফিরবে

চট্টগ্রামে বিএনপির পদযাত্রায় মানুষের ঢল আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ২৫ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে জেলা পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে চট্টগ্রামে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে লাখো মানুষের ঢল নামে। গতকাল শনিবার কর্মসূচিকে ঘিরে আন্দোলন সংগ্রামের ঐতিহ্যের নগরী চট্টগ্রাম পরিণত হয় মিছিলের নগরীতে। নগরীর ৪১টি ওয়ার্ড, ১৬টি থানা থেকে বিএনপি ও সহযোগী এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থকেরা মিছিলে মিছিলে পদযাত্রায় যোগ দেয়। সাধারণ মানুষও স্বতঃস্ফূর্তভাবে পদযাত্রায় শরিক হন। এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় এ গণমিছিল চলাকালে পুরো নগরী থমকে যায়। জনতার পদভারে আর মুহূর্মুহু স্লোগানে প্রকম্পিত হয় আকাশ-বাতাস।
পদযাত্রা পূর্ব বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, কোটি জনতা রাজপথে নেমে গেছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন নিশ্চিত না করে তারা ঘরে ফিরবে না। জনগণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ভোট চোর এ সরকারকে আর এক মুহূর্তের জন্যও ক্ষমতায় রাখবে না। এ ফ্যাসিস্ট সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার কোন অধিকার নেই। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও এ সরকারকে চূড়ান্ত বার্তা দিয়েছে। তারা এদেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার দেখতে চায়। মার্কিন কর্মকর্তারা বলে গেছেন, এদেশে গণতন্ত্রের মান যত নিচে নামবে সরকারের সাথে আমেরিকার সম্পর্কও তত কমে যাবে।
শান্তি সমাবেশের নামে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে গুণ্ডামি করে সরকার তার শেষ রক্ষা করতে পারবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সরকারের সময় শেষ। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেয়ালের লিখন পড়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, জনগণ আপনাকে আর চায় না। ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ এর মতো নির্বাচন নির্বাচন খেলা এদেশে হবে না। পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। আর না হলে পালানোর পথ পাবেন না। জনগণ তাদের ভোট, ভাতের অধিকার নিয়েই ঘরে ফিরবে। পদযাত্রা পূর্ব সমাবেশে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। তিনি আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামসহ সারাদেশে জেলা পর্যায়ে ১০ দফা দাবিতে পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মহানগর বিএনপি আয়োজিত এ কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন। এতে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নেতা জয়নাল আবেদীন ফারুক, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, মাহাবুবের রহমান শামীম। নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের সঞ্চালনায় সমাবেশে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানসহ মহানগর বিএনপির নেতারা বক্তব্য রাখেন।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশ চলাকালে জনতার স্রোত নুর আহমদ সড়কস্থ পুরাতন বিমান অফিস চত্বরে মঞ্চকে ঘিরে কাজির দেউড়ি হয়ে আলমাস সিনেমা মোড় থেকে ওয়াসা মোড় পর্যন্ত এবং অপরদিকে লাভলেইন হয়ে এনায়েত বাজার মোড় পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। বিএনপি, শ্রমিক দল, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, জাতীয়তাবাদী মহিলা দল, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে মিছিল নিয়ে নেতারা পদযাত্রায় যোগ দেন।
সমাবেশ শেষে পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু হলে দুই কিলোমিটার দীর্ঘ মিছিলটি কাজির দেউড়ি এলাকা অতিক্রম করতে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টায় সময় পার হয়ে যায়। এ সময় মহানগরীর একাংশে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কাজির দেউড়ি থেকে শুরু হয়ে পদযাত্রা এনায়েত বাজার মোড়, জুবিলী রোড, রাইফেল ক্লাব, ডিসি হিল, বৌদ্ধ মন্দির সড়ক, লাভলেইন হয়ে পুনরায় কাজির দেউড়িতে ফিরে আসে। নেতাকর্মীরা বিশাল সাইজের জাতীয় পতাকা, দলীয় পতাকার পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন ও প্লে-কার্ড বহন করে।
চাল, ডাল, তেল, চিনি, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ নিত্যপণ্যের দাম কমানোর দাবিতে বিভিন্ন প্লে-কার্ড বহন করা হয়। নেতারা পদযাত্রায় মিছিল করতে বারণ করলেও কর্মীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। বিভিন্ন সেøাগানে মুখরিত হয় নগরী। পদযাত্রা চলাকালে রাস্তার দুইপাশে দোকানপাট বাসাবাড়ি থেকে লোকজন স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে আসে। অনেকে করতালি দিয়ে মিছিলকারীদের স্বাগত জানান। কেউ আবার জনতার স্রোতে সামিল হয়ে মিছিলে কণ্ঠ মেলান। বিএনপির এ কর্মসূচিকে ঘিরে সমাবেশের আশপাশসহ নগরীতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। লাখো মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয় কর্মসূচি।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এ ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতা দখল করে আছেন। তারা জনগণের ভোট, ভাতের অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। রাষ্ট্রের মালিকানা এখন আর জনগণের হাতে নেই। এ অবৈধ দখলদারদের পতন নিশ্চিত করতে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমেছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ অস্ত্র ও গুণ্ডাপাণ্ডা নিয়ে কথিত শান্তি সমাবেশ করছে। দেশে যদি আইনের শাসন থাকে তাহলে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় রাস্তায় পুলিশ থাকবে। আর যদি আইনের শাসন না থাকে তাহলে অস্ত্রধারীরা থাকবে। আওয়ামী লীগের গুণ্ডাপাণ্ডার সমাবেশ প্রমাণ করে দেশে আইনের শাসন নেই। তিনি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করার আন্দোলনে চূড়ান্ত বিজয় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানের আলামত স্পষ্ট। খুব শিগগির দেশে গণঅভ্যুত্থান হবে, দখলদার সরকারের পতন হবে। তখন ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। জনগণ বিএনপির পক্ষে, বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে রাজপথে নেমেছে। জনতার এ প্রতিরোধ ঠেকানোর শক্তি কারও নেই। সরকার জনগণের ভাষা বুঝতে পারছে না। কিন্তু আমরা নিশ্চিত জনতার আন্দোলন সফল হবে। তিনি পাড়ায়-মহল্লায় ভোট চোর, দুর্নীতিবাজ, লুটেরাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ব্যর্থ ভোট চোর আর দুর্নীতিবাজ সরকারের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েছে। পদযাত্রা কর্মসূচিতে লাখো মানুষের স্রোত প্রমাণ করে জালিম সরকারের সময় শেষ। তিনি পুলিশ বাহিনীকে জনতার পক্ষে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। বিদ্যুৎ, গ্যাস, চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, মিথ্যা অভিযোগে মামলা, গ্রেফতার, গুলিসহ দমন-পীড়নের প্রতিবাদ, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দি নেতাদের মুক্তি, বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ পদযাত্রা পালন করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ