Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পশ্চিমা জোটের সাথে মিত্রতার ফলাফল হিমালয়ে চীন-ভারত সীমান্ত সঙ্ঘাত

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স | প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

সম্প্রতি ভারতীয় ও চীনা সৈন্যরা বিতর্কিত প্রত্যন্ত হিমালয় পর্বতশৃঙ্গে ভারত-চীন সীমান্তের পাহাড়ী সীমান্ত চৌকি অঞ্চল তাওয়াংয়ে লড়াই করেছে। ৯ ডিসেম্বর পরমাণু অস্ত্রধারী দুই এশীয় প্রতিবেশী প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের চীন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারত আবারও বিতর্কিত সীমান্তে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। নয়াদিল্লি ও বেইজিং উভয়ই সীমান্ত অবকাঠামো জোরদার করায় সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তাহীনতা ক্রমেই বাড়ছে। একদিকে, ওয়াশিংটন এবং বেইজিংয়ের মধ্যে তীব্রতর প্রতিযোগিতা ও দ্বন্দ্ব এবং অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে ক্রমবর্ধমান কৌশলগত সহযোগিতার কারণে চীন ও ভারতের পারস্পরিক বৈরিতা আরও গভীর হচ্ছে।

চীন ও ভারত ২হাজার ১শ’ মাইলের একটি বিতর্কিত সীমান্তে পরস্পরের মুখোমুখি অবস্থান করছে, যেটি না কোনো মানচিত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, না এর কঠিন পর্বত ও হিমবাহগুলি ভূখণ্ড ভাগ করার মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়েছে। ব্যাপকভাবে, এটি চীনের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বে ভারতের অরুণাচল প্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরখণ্ড এবং উত্তরে ভারতের সামরিক অঞ্চল লাদাখ। ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ বা স্বাধীন ভারতের নেতারা চীনের সাথে সীমান্তের বিশদ প্রান্তিককরণের বিষয়ে কখনও একমত হতে পারেনি।
বিরোধপূর্ণ সীমান্ত দাবিগুলি নিষ্পত্তির কোনো আপাত উপায় না থাকায়, ভারত ও চীন ১৯৬২ সালে লাদাখ এবং অরুণাচল প্রদেশে একটি যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল, যা দুটি দেশের মধ্যে ‘প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা’ বা এলওসি সীমান্ত তৈরি করেছিল। উভয় দেশ সর্বদা নিজেদের সুবিধা মতো এলওসি’র সীমানার ব্যাখ্যা করে থাকে।

এর আগে, ১৯৬০ এবং ৭০ এর দশক জুড়ে ভারতের সামরিক বাহিনী চীনের ব্যাপক আধিপত্যে আতঙ্কিত হয়ে সীমান্তে দূরপাল্লার টহল মোতায়েন করে। ১৯৮০-এর দশকের গোড়ার দিকে, ভারতের সামরিক নেতৃত্ব প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার অনেক কাছাকাছি সেনা মোতায়েনর করে। ১৯৮৮ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী চীনের নেতা দেং জিয়াওপিংয়ের সাথে দেখা করতে বেইজিং ভ্রমণ করেন এবং তারা শান্তি বজায় রাখার জন্য সংলাপ ও আস্থা নির্মাণের জন্য একটি যৌথ বাহিনী গঠন করে। ১৯৮৯ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে ভারত ও চীনা পক্ষ ১৫টি বৈঠক করেছে এবং ৩০ বছর ধরে কোনো রক্তপাত হয়নি। গান্ধী-দেং বৈঠকের পর এলএসি’র সীমানা চিহ্নিত করে টহল দেয়া নিয়ে ভারতীয় এবং চীনা পক্ষের মধ্যে মত পার্থক্য কমিয়ে সমঝোতা করতে উভয় পক্ষ ১৯৯৩ সালে বিতর্কিত সীমান্তে সংযম এবং যৌথ পদক্ষেপের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এর পর সীমান্তে শান্তি বজায় রাখার লক্ষ্যে আরও চারটি চুক্তি হয়েছে।

অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং এলাকায় ৯ ডিসেম্বরের সংঘর্ষের পর ভারত ও চীনের মধ্যকার সেই সীমান্ত চুক্তিগুলি ভেস্তে গেছে। ফলে, ঐতিহ্যগতভাবে পাকিস্তানের হুমকি নিয়ে ব্যস্ত ভারতের কৌশলগত পরিকল্পনাকারীরা এখন আরও জটিল নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। ২০২০ সালে লাদাখে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পর ভারত অতিরিক্ত হাজার সেনা মেতায়েন করে সেখানে তার প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করেছিল। ভারতীয় সামরিক পরিকল্পনাকারীরা উদ্বিগ্ন যে, চীনের সাথে সীমান্তে নিরাপত্তার পর্যাপ্ত শক্তিশালীকরণের কারণে তাদের পাকিস্তানকে জব্দ করার লক্ষ্য ব্যর্থ হতে পারে। নয়াদিল্লির দৃষ্টিকোণ থেকে, বিতর্কিত সীমান্তে চীনের সাথে সামরিক সঙ্ঘাত হল পশ্চিমা জোটের সঙ্গে ভারতের হাত মেলানোর মূল্য। নয়াদিল্লি বিপাকে পড়ে এমনকি লাদাখে ২০২০ সালের সঙ্ঘাতের সময় চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন সহায়তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। গোয়েন্দা নিরাপত্তা ক্ষেত্রে নয়াদিল্লি ভারত-মার্কিন সহযোগিতাকে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে এবং ব্যক্তিগতভাবে ওয়াশিংটনকে চীনের উপর বাগাড়ম্বর কম করতে আহ¦ান করেছে। আপাতত চীনকে আরও চটাতে চায় না ভারত। ফলে এটির এই কৌশল পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন-ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ