পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একটি অটোরিকশা বিক্রির মধ্যস্থতা করে পাঁচ হাজার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে ঝগড়া। আর তার প্রতিশোধ নিতে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে খুন করে লাশ গুম। অতঃপর এলিট বাহিনী র্যাবের হাতে ধরা পড়ে খুনের দায় স্বীকার করেন গ্যারেজ মালিক। এর মধ্য দিয়ে উদঘাটন করা হয়েছে আলোচিত অটোরিকশা চালক হেলাল উদ্দিন খুনের রহস্য। লাশ উদ্ধারের ৪৮ ঘণ্টায় ধরা পড়েছে হত্যাকাণ্ডের মূলহোতাসহ তিনজন।
গতকাল মঙ্গলবার তাদের গ্রেফতারের তথ্য জানানো হয়। গ্রেফতার তিনজন হলেন, হত্যা পরিকল্পনাকারী মো. ইলিয়াস (৩৫), ভাড়াটে সন্ত্রাসী মনির আহম্মদ মেহেরাজ (২৬) ও মো. বকতিয়ার (২৭)। খুনের শিকার হেলাল উদ্দিন পেশায় একজন সিএনজি অটোরিকশা চালক ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোণা জেলার পূর্বধুলা উপজেলার নিজহোগলা গ্রামে। সে দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালীর জমাদারহাট এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতো এবং সেখানে সিএনজি অটোরিকশা চালানোর পেশায় নিয়োজিত ছিলো। সিএনজি অটোরিকশা চালনোর সুবাধে তার ইলিয়াস নামের এক ব্যক্তি সাথে পরিচয় হয়। ইলিয়াস পেশায় একজন সিএনজি গ্যারেজের মিস্ত্রী। বিগত ৪ মাস আগে ইলিয়াসের মামাতো ভাইয়ের একটি সিএনজি অটোরিকশা বিক্রয় করার জন্য নিহত হেলাল উদ্দিনের সহযোগিতা চায় এবং সিএনজিটি বিক্রি করে দিতে পারলে ইলিয়াসের মামাতো ভাই তাদের দুজনকে ৫ হাজার টাকা বকশিস দিবে বলে জানায়। পরবর্তীতে উক্ত সিএনজিটি ইলিয়াস এবং হেলাল উদ্দিন দুজন মিলে ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে। সে সময় ইলিয়াসের মামাতো ভাই খুশি হয়ে ইলিয়াসকে কিছুটাকা বকশিস দেয় এবং সেই টাকা থেকে ইলিয়াস কিছু টাকা রেখে বাকী এক হাজার টাকা হেলাল উদ্দিনকে দেয়। তখন হেলাল উদ্দিন ইলিয়াসকে বলে তোর মামাতো ভাই তোকে ৫ হাজার টাকা দিয়েছে কিন্তু আমাকে মাত্র এক হাজার টাকা দিলে কেন? এই কথা নিয়ে হেলাল উদ্দিন ও ইলিয়াসের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা হয় এবং এক পর্যায়ে উভয়ের মধ্যে হাতাহাতিসহ মারপিট হয়। পরবর্তীতে ইলিয়াস প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকে।
ঘটনাক্রমে ইলিয়াস তার পরিচিত মো. বখতিয়ার ও মনির আহম্মদ মেহেরাজ দুজনকে ভাড়া করে হেলাল উদ্দিনকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। পরবর্তীতে গত ২৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় ইলিয়াস হেলাল উদ্দিনকে তার অটোরিকশা নিয়ে অটোরিকশা ক্রয়-বিক্রির উদ্দেশে কথা বলার জন্য চট্টগ্রামের বোয়ালখালী পৌরসভাধীন সিও অফিস সংলগ্ন একটি সিএনজি স্টেশন আসতে বলে। অতঃপর তার কথামতো হেলাল উদ্দিন তার ভাড়ায় চালিত অটোরিকশা নিয়ে উল্লেখিত জায়গায় এসে ইলিয়াসের সাথে সাক্ষাৎ করে। তখন ইলিয়াস হেলাল উদ্দিনের সিএনজিসহ তাকে নিয়ে সিএনজি ক্রয়ের কথা বলে বোয়ালখালী থানাধীন ৯ নং আমুচিয়া ইউনিয়নের পোস্ট অফিস সড়ক থেকে একটু ভিতরে দুর্গম এলাকার একটি খালি জায়গায় নিয়ে যায়। পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আরও একটি অটোরিকশা নিয়ে তার অপর সহযোগী বখতিয়ার ও মেহেরাজ হেলাল উদ্দিনের সিএনজির পিছন পিছন তাদের নিকট উপস্থিত হয়। এ সময় ইলিয়াস হেলাল উদ্দিনকে পূর্বের মারপিট করার হুমকি দেয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তার উপর উপুর্যপরি শরীরের বিভিন্ন স্থানে কিল-ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে। এরপর বখতিয়ার কাঠের লাঠি দিয়ে হেলাল উদ্দিনের মাথায় আঘাত করে ও মেহেরাজ তাৎক্ষণিক তার সাথে থাকা ছুরি দিয়ে পিঠে ছুরিকাঘাত করে। এতেও ক্ষান্ত না হয়ে ইলিয়াস সিএনজি থেকে হাতুড়ি নিয়ে এসে হেলালের মাথায় উপুর্যপরি আঘাত করে এবং সিএনজি চালক হেলাল উদ্দিনের মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর ইলিয়াস মৃত হেলাল উদ্দিনের সিএনজি নিয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ইলিয়াসের দুই সহযোগি বখতিয়ার ও মেহেরাজ মিলে লাশটি যাতে কেউ না দেখে সে জন্য পাশের একটি ধানি জমির উপর রেখে তাদের সিএনজি নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ ডিসেম্বর হেলাল উদ্দিনের স্ত্রী বাদী হয়ে বোয়ালখালী থানায় ৫ জন নামীয় এবং ৩/৫ জন অজ্ঞাতনামা করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। উক্ত হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সাথে জড়িত আসামিদের সনাক্ত করে দ্রুত গ্রেফতার করার দাবিতে হেলালউদ্দিনের স্ত্রী অধিনায়ক, র্যাব-৭, চট্টগ্রাম বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেন। হত্যার ঘটনাটি চাঞ্চল্যকর ও লোহমর্ষক হওয়ায় এবং একজন গরীব, অসহায়, বিধবা নারীর আবেদনটি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে আমলে নিয়ে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার ও ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। এরই প্রেক্ষিতে গত ৫ ডিসেম্বর রাতে একটি চৌকষ আভিযানিক দল চট্টগ্রাম মহানগরের বাকলিয়া থানাধীন নতুনব্রীজ এলাকা থেকে ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত ওই তিনজনকে গ্রেফতার করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।