পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রাম নগরীর বন্দরটিলায় শিশু আলিনা ইসলাম আয়াত (৫) নিখোঁজ হওয়ার রাতেই থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তার পিতা ব্যবসায়ী সোহেল রানা। দীর্ঘ ১০ দিনেও পুলিশ এই ঘটনার কোন কূল-কিনারা করতে পারেনি। শুরু থেকেই ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই। তারা আশপাশের সবকটি সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে তাতে ক্লু বা সূত্র খুঁজতে থাকে। প্রায় ৮০টি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে একটিতে এক যুবককে ভারী ব্যাগ বহন করার দৃশ্য খুঁজে পায়। এই সূত্র ধরে শুরু হওয়া তদন্তে চিহ্নিত হয় শিশু আয়াত অপহরণের ঘটনার মূলহোতা আবির আলী (১৯)। নিখোঁজের ১০ দিন পর অপহরণ, খুন ও লাশ গুমের রহস্য উদঘাটিত হয়।
শুধু শিশু আয়াত নয়, জামালখানে শিশু মারজান হক বর্ষা, পোর্ট কলোনীতে সাত বছরের শিশু সুরমা আক্তার, অটোরিকশা চালক মো. হাসান হত্যাসহ সম্প্রতি চট্টগ্রামে আরো বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর খুন ও ডাকাতির ঘটনার রহস্য উদঘাটন হয়েছে সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরে। মূলত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর ডিজিটাল প্রযুক্তিতেই চিহ্নিত হচ্ছে অপরাধীরা। অপরাধ করেও তারা আর পার পাচ্ছে না। অপরাধ প্রতিরোধ করে জন-নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশের পাশাপাশি মহানগরী এবং জেলায় ব্যক্তিগত উদ্যোগেও সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ভবন, সড়ক ও সড়ক দ্বীপ, আবাসিক এবং বাণিজ্যিক এলাকা এমনকি বাসা বাড়িতেও বসেছে ক্যামেরা। এসব সিসিটিভির সুফলও মিলছে। নগর পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, মহানগরীর প্রায় পুরো এলাকাকে এখন সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হচ্ছে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকেই এ বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। নিজেদের নিরাপত্তায় অনেকে বাসা-বাড়িতেও সিসি ক্যামেরা স্থাপন করছেন।
অপরাধীরাও ক্যামেরা ফাঁকি দিয়ে নিজেদের আড়াল করতে নানা উপায় বের করছে। তবুও কোন কোনভাবে তারা ক্যামেরায় ধরা পড়ছে। আবার অপরাধীদের শিকার যারা তাদের মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে অবস্থান নিশ্চিত করেও অপরাধীদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে।
এদিকে সিসি ক্যামেরা দেখে গ্রেফতার আবির আলীর দেখানো মতো শিশু আয়াতকে খুনের পর কেটে ছয় টুকরো করে সাগরে ভাসিয়ে দেওয়ার ১৫ দিন পর গতকাল বুধবার শরীরের খণ্ডিতাংশ উদ্ধার করা হয়েছে। আলোচিত এই মামলার তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, নগরীর আকমল আলী রোডের শেষপ্রান্তে একটি খালে সøুইচগেটের কাছে বিচ্ছিন্ন দুই পায়ের অংশ পাওয়া গেছে। আবির জানিয়েছে লাশে দুই হাতসহ তিন টুকরো বে-টার্মিল এলাকায় সাগরে আর দুই পাসহ শরীরের কিছু অংশ সøুইচ গেটের মুখে ফেলা হয়। এই ঘটনায় আবিরের বাবা আজহারুল ইসলাম, মা আলো আক্তার এবং ছোটবোন কিশোরী আঁখি আক্তারকেও গ্রেফতার করে তিনদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পিবিআই। সাত দিনের রিমান্ডের গতকাল তৃতীয় দিনে আবির আলীকে নিয়ে পিবিআই লাশের খন্ডিতাংশ উদ্ধারে এ তল্লাশি অভিযান চালায়। গত ১৫ নভেম্বর বিকেলে নগরীর ইপিজেড থানার দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের নয়ারহাট এলাকা থেকে আয়াতকে ২০ লাখ টাকা মুুুুুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করে খুন করে আবির আলী। ১০ দিন পর ২৪ নভেম্বর পিবিআই তাকে গ্রেফতার করে।
কর্ণফুলী থানা এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা ছিনতাইয়ের জন্য ‘শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী’ চালককে খুন করে লাশ গুম করে রাখা হয় ডোবায়। সেই লাশ উদ্ধারের পর থানার পুলিশ নানাভাবে চেষ্টা করেও তার পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি। পুরোপুরি সূত্রবিহীন ওই ঘটনা নিয়ে ছায়া তদন্তে নেমে পিবিআই ৯৬ ঘণ্টার মধ্যে খুনের শিকার চালকের পরিচয় এবং খুনের সঙ্গে জড়িত দুই তরুণকে গ্রেফতার করে। তারা হলেন- মো. আলাউদ্দিন (২৮) ও শাকিল আহমদ (১৯)। ৯ নভেম্বর শিকলবাহা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আদর্শপাড়া এলাকায় রাস্তার পাশে একটি ডোবা থেকে মো. হোসেনের প্রায় অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার ডান হাত ছিল না।
একেবারেই ক্লুলেস এ খুনের ঘটনা তদন্ত তথ্যপ্রযুক্তি ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজের মাধ্যমে নিহতের পরিচয় শনাক্ত করে পিবিআই। হত্যাকাণ্ডের শিকার হোসেনের মোবাইলের অবস্থান থেকে পিবিআই নিশ্চিত হয় লালদীঘির পাড় থেকে তিনি ভাড়া নিয়ে কর্ণফুলী যান। সেখানে তাকে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয়া হয়। মূলত তার অটোরিকশাটি ছিনতাই করার জন্যই ওই দুই যুবক তাকে সেখানে নিয়ে যায় এবং হত্যা করে লাশ ফেলে দেয়। পরে তারা পতেঙ্গা ১৫ নম্বর ঘাট হয়ে চট্টগ্রাম নগরীতে চলে আসে। খুনিদের শনাক্ত করতে পিবিআই লালদীঘির পাড় থেকে কর্ণফুলী থানা এবং পতেঙ্গা ১৫ নম্বর ঘাট এলাকার ৮০টি স্পটের শতাধিক ফুটেজ সংগ্রহ করে। সেখানে দুই খুনিকে অস্পষ্ট দেখা যায়। তবে তাদের একজনের খালি পা এবং অপর একজনের গায়ে গেঞ্জিতে থাকা বিশেষ একটি চিহ্ন দেখে পরে ওই দুজনকে শনাক্ত করে।
নগরীর জামালখানে শিশু বর্ষা ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার রহস্য উদঘাটন এবং অপরাধী চিহ্নিত হয় সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে। জেলার রাউজান উপজেলায় এক প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতির প্রায় এক মাস পর এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীসহ ডাকাত দলের আট সদস্যকে পাকড়াও করে র্যাব। পুলিশ তদন্ত করে ব্যর্থ হয়। ছায়া তদন্ত করতে গিয়ে র্যাব বাড়িতে লাগানো একটি ক্যামেরার কিছু ফুটেজ পায়। ডাকাতরাও জানতো বাড়িতে সিসিটিভি আছে। এজন্য তারা সবাই মুখোশ পরে আসে। তবে মুখোশ পরা ডাকাতদের একজনকে দেখা যায় খুঁড়িতে হাঁটতে। খোঁড়া পায়ে একটি কালো সুতাও বাঁধা ছিল। এ সূত্র ধরে র্যাব ডাকাত সর্দার সাইফুলসহ দলের সবাইকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
নগরীর একটি বাসার নিচতলা থেকে একসাথে চুরি হওয়া তিনটি মোটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চন্দনাইশ থেকে চোরসহ মোটর সাইকেল উদ্ধার করে পুলিশ। নগরীর পোর্টকলোনিতে শিশু সুরমা আক্তারের লাশ উদ্ধার করার এক মাস পর সিসিটিভি ফুটেজে একটি রিকশা দেখে শনাক্ত হয় খুনি। ফুটেজে স্পষ্ট কোনকিছু দেখা যাচ্ছিল না। কিন্তু রিকশার পেছনে ময়ুর ও সাপের ছবি আঁকা ছিল। ওই সূত্র ধরে বন্দর, হালিশহর ও আগ্রাবাদ এলাকার সব রিকশার গ্যারেজে তল্লাশি চালায় পুলিশ। একপর্যায়ে রিকশার পেছনে যিনি ছবি এঁকেছেন তাকে খুঁজে পায় পুলিশ। পরে তার দেওয়া তথ্যমতে, একটি গ্যারেজে অভিযান চালিয়ে ওই আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। শিশুটিকে রিকশায় তুলে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ ফেলে যায় ওই রিকশাচালক। সূত্রবিহীন এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন হয় সিসিটিভি ফুটেজে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।