পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পড়া লেখা করতে ভালো লাগে না। আবার বেকার হওয়ায় লোকে মন্দ বলে। বন্ধুরাও কিছু না কিছু করছে। তা দেখেও মন খারাপ হয়ে যায়। বাসায় একা একা বসে ভাবি, কী করা যায়। নিয়মিত ক্রাইম পেট্রোল ও সিআইডি দেখি। সেখান থেকে হঠাৎ মাথায় বুদ্ধি আসে- বড় লোক হওয়ার।
পরিকল্পনা করি বাড়িওয়ালার নাতনিকে অপহরণ করব। খুনের পর লাশ গুম করে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করবো। কোন এক স্থানে মুুক্তিপণের টাকা রেখে যেতে বলব। পরে ভাড়া করা একটি গাড়িতে সে টাকা নিয়ে অনেক দূরে চলে যাব--। এভাবে শিশু আলিনা ইসলাম আয়াতকে (৫) অপহরণ ও খুনে পরিকল্পনা করার কথা স্বীকার করে কিশোর মো. আবির আলী। আবির আলীর বড় লোক তথা অনেক টাকার মালিক হওয়ার স্বপ্ন। আর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নেই ভয়ঙ্কর এই অপরাধ করে বসে সে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আয়াতকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যেই খুন করে। এরপর ঠান্ডা মাথায় লাশ ছয় টুকরো করে দুটি বস্তায় ভরে। একটি সাগরে আর একটি বস্তা ফেলা হয় পতেঙ্গা বেড়িবাঁধ লাগোয়া সøুইস গেইটের কাছে। পিবিআই কর্মকর্তারা বলছেন, আবির শিশু আয়াত খুনের যে নিখুঁত পরিকল্পনা করে তা পেশাদার অপরাধীদেরও হার মানিয়েছে। অপহরণ, খুন, লাশ গুম এরপর মুক্তিপণ আদায় এবং সব ধরণের আলামত তথা এভিডেন্স নষ্ট করার যে পরিকল্পনা তার সবকিছুই সে রপ্ত করেছে ভারতীয় টিভি সিরিয়াল দেখে। আবিরকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পিবিআই। তাকে নিয়ে গতকাল রোববার তার মায়ের বাসায় তল্লাশি চালানো হয়। বাসা থেকে আবিরের লেখা একটি ডায়েরি উদ্ধার করা হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক মনোজ কুমার দে বলেছেন, ডায়েরির পাতায় পাতায় অনেক টাকার মালিক হওয়ার স্বপ্নের কথা লেখা। কিভাবে অপরাধ করা যায়, আর কীভাবে অপরাধ করেও আলামত নষ্ট করা যায় তাও লেখা আছে। ডায়েরিতে লেখা থেকে আবিরের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার কাহিনী জানা যাচ্ছে বলেও জানান তিনি। আবিরকে নিয়ে গতকালও লাশের খোঁজে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। তবে লাশ মিলেনি। তদন্ত কর্মকর্তা জানান, আমরা হাল ছাড়িনি, অভিযান অব্যাহত আছে।
১৫ নভেম্বর বিকেলে নগরীর ইপিজেড থানার বন্দরটিলা এলাকায় থেকে শিশু আয়াতকে তুলে নেয় আবির। এরপর ৫ মিনিটের মধ্যে আয়াতকে খুনের পর লাশ গুম করতে দুই দিন সময় লাগে। আর নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে ফাঁকে ফাঁকে আয়াতের বাবা-মাকে সান্ত্বনা দেওয়ার দিয়েছে। প্রতিবেশিদের সাথে মিলে তাকে খুঁজতেও বের হয়েছে। লাশ গুমের পর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আয়াতের দাদার কাছে মুক্তিপণ দাবি করারও চেষ্টা করে সে। এ জন্য সে আগে থেকেই ৩৫০ টাকা দিয়ে একটি পুরাতন ওয়ালটন মোবাইল সেট কিনে রাখে। একটি পুরাতন সীম সংগ্রহ করে নিজের কাছে রাখে।
ক্রাইম পেট্রোল এবং সিআইডি থেকে নেওয়া অভিজ্ঞতা কাজে লাগায় সে। নিজের ফোন থেকে মুক্তিপণ দাবি করলে ধরা পড়ার আশঙ্কা আছে। তাই অন্য সেট, অন্য সিম জোগাড় করে সে। আর মুক্তিপণে টাকা আদায় শেষে ওই ফোন সেট ও সিম ধ্বংস করে এভিডেন্স গায়েব করারও পরিকল্পনা করে রাখে। আয়াতকে খুনের ৩ দিন পর সে যথারীতি ওই মোবাইল ফোন থেকে আয়াতের দাদা মঞ্জুর হোসেনের মোবাইলে ফোন দেয়। কিন্তু কুড়িয়ে পাওয়া বাংলা লিংকের সিমটি ছিল অচল। ফলে সে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করতে ব্যর্থ হয়। আয়াতকে অপহরণের বিষয়টি আবিরের বাল্যকালের বন্ধু হাসিবের সাথে শেয়ার করে।
আবিরের বাবা-মায়ের বরাত দিয়ে আলোচিত এই মামলার তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রিন ভিউ মডেল স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে ইতি টানে। অনেক চেষ্টা করেও তাকে টেকনিক্যাল কাজ শেখানো যায়নি। কারখানায় চাকরি দেওয়ার পরও সে তা ছেড়ে দেয়। বখাটে ছেলেদের সাথে চলাফেরা এবং সারাক্ষণ মোবাইলে ক্রাইম পেট্রোল, সিআইডি সিরিজ দেখে বিপদগামী হয়ে যায় আবির।
খুন এবং লাশ গুমের ক্ষেত্রেও আবির ক্রাইম পেট্রোলে দেখা ঘটনা অনুকরণ করেছে। আয়াতকে কৌশলে আবির তার বাসায় ওঠার সিড়ির কাছাকাছি নিয়ে যায়। সেখানে গেলে আবির তার মুখ চেপে ধরে তার বাবার ভাড়া রুমে ঢুকিয়ে ফেলে দরজা বন্ধ করে দেয়। তখন আয়াতের হাতে থাকা বই সিড়িতে এবং পায়ে থাকা স্যান্ডেল সিড়ির পাশে পড়ে গেলে আবির তা তুলে পাশের কবরস্থানের ফেলে দেয়। দ্রুত মৃত্যু নিশ্চিত করতে আবির শিশুটির গলায় আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে। হত্যার পর সে তার বাবার ব্যবহৃত একটি নীল রংয়ের লুঙ্গি দিয়ে লাশ মুড়িয়ে একটি কালো রংয়ের পলিথিনের বস্তায় ভরে ফেলে। অন্য একটি বস্তায় তাদের ব্যবহৃত কিছু পুরাতন কাঁথা কম্বল নিয়ে মোট দুটি বস্তা তার বর্তমান বাসা তথা মায়ের বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করে। বস্তা নিয়ে যাওয়ার সময় কেউ যাতে তাকে সন্দেহ না করে তাই সে পাশের এক ভাড়াটিয়াকে বস্তায় কাঁথা কম্বল নেওয়ার বিষয়টি তার আব্বুকে বলতে বলে।
আবির লাশসহ বস্তাগুলো নিয়ে তার মায়ের বাসার সানসেটে নিয়ে রেখে দেয়। সন্ধায় আয়াতকে খোঁজাখুঁজি শুরু হলে আবির ঘটনাস্থলে এসে লোকজনের সাথে তাকে খোঁজার অভিনয় করে। পরবর্তীতে রাতে আবির বাসায় যাওয়ার সময় আকমল আলী পকেট গেইটস্থ মো. আলীর স্টোর থেকে লাশ কেটে টুকরা করার জন্য একটি কাটার, পলি ব্যাগ এবং লাশ কাটার পর ঘরে যাতে কোন রক্ত না পড়ে সেজন্য সাদা টেপ কিনে নিয়ে যায়। সেগুলো নিয়ে বাসায় গিয়ে আবির তার মা এবং বোনকে আয়াতকে খোঁজার জন্য পাঠিয়ে দেয়। এরপর আবির সানসেট থেকে লাশ নিয়ে বাথরুমে গিয়ে তার ঘরে থাকা তরকারী কাটার বটি দিয়ে লাশটি ছয় টুকরা (২ হাত ২ টুকরা, ২ পা ২ টুকরা, মাথা ১ টুকরা, শরির ১ টুকরা) করে প্রত্যেক টুকরা পলি ব্যাগে ঢুকিয়ে সাদা টেপ পেঁচিয়ে পুনরায় আগের পলিথিনের ব্যাগে করে সানসেটে রেখে দেয়। রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে আবির যথানিয়মে ঘুমিয়ে পড়ে।
পরের দিন সকালে মা কাজে যাওয়ায় এবং বোন ঘুমিয়ে থাকার সুবাদে আবির সানসেটে থাকা মোট ৬ টুকরা লাশের মধ্যে ৩ টুকরা (দুই হাত ও শরির) একটি ব্যাগে করে নিয়ে সাগরে ফেলে দেয়। পরে বাসায় এসে আয়াতের পরনে থাকা খয়েরী রংয়ের একটি হিজাব, লাল সাদা রংয়ের একটি জামা এবং খয়েরী রংয়ের একটি প্যান্টসহ লাশ কাটায় ব্যবহৃত একটি কাটার পলিথিনে ঢুকিয়ে বাজারের ব্যাগে করে আকমল আলী পকেট গেইটস্থ খালে ফেলে দেয়। লাশ কাটা বটিটি বাড়ির সামনে ডোবার উপর ঘাসের মধ্যে ফেলে দেয়। আবিরের বর্ণনা মতে পরবর্তীতে এসব উদ্ধার করা হয়।
কেউ যাতে আবিরকে সন্দেহ করতে না পারে সেজন্য ঘটনার পরের দিন সে যথারীতি ওই বাড়ির সামনে খেলতে যায়। খেলা শেষে বাসায় এসে রাত অনুমান ৮টায় তার মা বাজার করতে গেলে সানসেটে থাকা লাশের বাকি ৩ টুকরা লাশ (মাথা ও দুই পা) একটি সাদা কালো রংয়ের ব্যাগে করে বেড়ী বাঁেধর সুøইচ গেটের মুখে ফেলে দিয়ে আসে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।