পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পাঁচ বছর বয়সী এক শিশুকে খুনের পর লাশ ৬ টুকরো করে সাগরে ফেলে দিয়েছে এক তরুণ। ১৯ বছর বয়সী ওই তরুণ আবির আলীকে গ্রেফতারের পর লোমহর্ষক এ খুনের ঘটনা জানাজানি হয়। পুলিশ বলছে, ভারতীয় টিভি সিরিয়াল ‘ক্রাইম পেট্রল’ আর ‘সিআইডি’ নিয়মিত দেখে সে। আর তা দেখে রপ্ত করে ভয়ঙ্কর অপরাধ সংঘটন এবং তা থেকে নিজেকে আড়ালের কৌশল।
তবে টানা ১০দিন সবার চোখে ফাঁকি দিতে পারলেও সিসিটিভি ফুটেজে ভারী ব্যাগ বহন করার একটি ছবির সূত্র ধরেই ধরা পড়ে সে। আর জিজ্ঞাসাবাদে শিশু আয়াতকে খুনের পর নির্মমভাবে টুকরো টুকরো করে লাশ গুমের কথাও স্বীকার করে। গতকাল শুক্রবার রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আত্মস্বীকৃত ওই ভয়ঙ্কর খুনিকে নিয়ে নগরীর ইপিজেড থানার আকমল আলী রোড এলাকায় সাগরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইর একটি বিশেষ টিম লাশ উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করছিল। তবে এখনও লাশ উদ্ধার করা না হলেও তাকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে ১০দিন পর আয়াতের নিখোঁজ এবং হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন হয়।
আবির স্বীকার করেছে আয়াতকে অপহরণ করে তার বাবার কাছ থেকে মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায় করা ছিল তার উদ্দেশ্য। তবে অপহরণের সময় আয়াত তাকে চিনে ফেলায় ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। আর এর দায় থেকে নিজেকে রক্ষায় সে লাশ গুম করে।
গত ১৫ নভেম্বর বিকেল থেকে নিখোঁজ ছিল আলীনা ইসলাম আয়াত। নগরীর ইপিজেড থানার দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের নয়ারহাট এলাকার বাসিন্দা সোহেল রানা ও সাহিদা আক্তার তামান্না দম্পতির সন্তান আয়াত। তিনতলা ভবনের মালিক সোহেলের ওই এলাকায় একটি মুদির দোকান আছে। আয়াত স্থানীয় তালীমূল কোরআন নূরানী মাদরাসার হেফজখানার ছাত্রী ছিল।
এই খুনের ঘটনায় গ্রেফতার আবির আলী শিশুটির পিতা সোহেল রানার ভবনের নিচতলার ভাড়াটিয়া আজহারুল ইসলামের ছেলে। তাদের বাড়ি রংপুর জেলার তারাগঞ্জে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করা এই যুবক একসময় পোশাক কারখানায় চাকরি করলেও গত ছয় মাস ধরে বেকার। তার মা আলেয়া বেগম ইপিজেডে একটি জুতার কারখানায় চাকরি করেন।
পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্টোর একজন কর্মকর্তা জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আবিরের বাবা আজহারুল ইসলাম এবং মা আলেয়া বেগমের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়। এর পর থেকে আলেয়া বেগম ছেলে আবির ও মেয়ে আঁখি আক্তারকে নিয়ে ইপিজেড থানার আকমল আলী রোডের পকেট গেইট এলাকায় আলাদা বাসা নেন। তবে আবিরের দুই বাসাতেই যাতায়াত ছিল। দীর্ঘদিনের পরিচিত হিসাবে শিশু আয়াতের পরিবারের সাথে তাদের সবার যোগাযোগ ছিল। আবির প্রায় আয়াতকে তাদের বাসা থেকে তার বাবার বাসা এবং মায়ের বাসায় নিয়ে যেত।
আবির জানায়, ১৫ নভেম্বর সে আয়াতকে অপহরণ করার পরিকল্পনা করে। প্রতিদিনের মতো ওই দিনও আয়াত বাসার পাশে মাদরাসায় যায়। যাওয়ার সময় তার দাদা সাথে থাকায় সে তাকে কোলে নিয়ে আদর করে ছেড়ে দেয়। মাদরাসা থেকে ফেরার পথে একাই ছিল আয়াত। আর তখন তাকে পেছন থেকে ঝাপটে ধরে। এতে সে ভয় পেয়ে চিৎকার শুরু করলে তার মুখ চেপে ধরে দ্রুত বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে সে ধস্তাধস্তি করতে থাকে। এক পর্যায়ে আবির তার নাক-মুখ চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
আবির জানায়, তাকে মারতে তার অনেক বেগ পেতে হয়েছে। মৃত্যু নিশ্চিত হলে সে তার লাশ একটি বাজারের বড় ব্যাগে রাখে। তখন তার বাবা কারখানায় থাকায় বাসা খালি ছিল। লাশ বাসায় লুকিয়ে রেখে আবির আবার বাসার পাশের গলিতে চলে যায়। যেখানে সে আগে থেকেই বন্ধুদের সাথে ক্রিকেট খেলছিল।
এর মধ্যে আসরের আজান হলে আবির খেলা বন্ধ করে বাসায় চলে যায়। সেখানে গিয়ে লাশভর্তি ব্যাগে কিছু পুরাতন কাপড় ঢুকিয়ে নেয়। আর অপর একটি ব্যাগে আরো কিছু কাপড় নিয়ে নেয়। এরপর দুুটি ব্যাগ নিয়ে মায়ের বাসায় যাওয়ার জন্য বাবার বাসা থেকে বের হয়। বের হতেই এক বন্ধুকে কাছে পেয়ে তাকে কাপড়ের ব্যাগটি দিয়ে নিজে লাশ ভর্তি ব্যাগ নিয়ে মেইন রোডে আসে। সেখান থেকে রিকশায় মায়ের বাসায় চলে যায়। মাকে বলে বাবা বাসা ছেড়ে দিয়েছে, এখন থেকে আমাদের সাথে থাকবে।
এরপর লাশভর্তি ব্যাগ বাসায় রেখে সে আবার আয়াতদের বাসার সামনে চলে আসে। ততক্ষণে আয়াত বাসায় না ফেরার তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন তার পরিবারের সদস্যরা। আর তাদের সাথে আয়াতকে খুঁজতে নিজেও নেমে পড়ে আবির। রাত ১০টায় সে তার মায়ের বাসায় ফিরে যায়। যাওয়ার সময় একটি বড় ছোরা, ব্যাগ ও স্কসটেপ কিনে নিয়ে যায়। বাসায় গিয়ে মা এবং বোনকে আয়াতের হারিয়ে যাওয়ার খবর দেয় সে। তখন সে তার মা ও বোনকে আয়াতের বাবা-মাকে সান্ত¦না দিতে এবং দেখতে যেতে বলে। তারা বাসা থেকে বের হওয়ার পর বস্তাভর্তি লাশ নিয়ে বাথরুমে যায় আবির।
সেখানে বসে লাশ ছয় টুকরো করে দুটি বস্তায় ভরে। এরপর বস্তা সানসেটের উপর রেখে রাতে ঘুুমিয়ে পড়ে। সকালে তিন টুকরে লাশভর্তি একটি ব্যাগ নিয়ে বের হয় এবং তা আউটার রিং রোড এলাকায় সাগরে নিক্ষেপ করে। রাতে অপর তিন টুকরো ভর্তি ব্যাগটি নিয়ে আকমল আলী রোডের শেষ প্রান্তে সাগরের মুখে সøুইস এলাকায় খালের মুখে ফেলে দেয়। ঘটনার রাতে আয়াতের বাবা থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। এরপর পুলিশ আয়াতের খোঁজে মাঠে নামে। তবে তারা কোন কূলকিনারা করতে পারেনি।
চাঞ্চল্যকর মামলা হিসাবে পিবিআই ছায়া তদন্ত শুরু করে। ওই এলাকার সিসিটিভি ফুজেট সংগ্রহ করা হয়। তাতে আবিরের ভারী ব্যাগ হাতে বাসা থেকে বের হওয়ার একটি ফুটেজ পাওয়া যায়। পরে তার বাসায় গিয়ে ওই ব্যাগটিও পাওয়া যায়। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এক পর্যায়ে সে মুখ খুলে। তার দেখানো মতে শিশুর রক্তমাখা শার্ট, লাশ টুকরো করার দা, ছুরি উদ্ধার করা হয়।
পিবিআই জানায়, আবির ভারতীয় সিরিয়াল ক্রাইম পেট্রল দেখে এই অপরাধ করার পরিকল্পনা করে। প্রথমে তার টার্গেট ছিল আয়াতকে জিম্মি করা। পরে মুক্তিপণ আদায় করা। কিন্তু তাকে চিনে ফেলায় সে শিশুটিকে খুন করে। আর ক্রাইম পেট্রল থেকে নেওয়া অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সে লাশ গুম করে।
এদিকে শিশু আয়াতকে হারিয়ে তার পরিবারের চলছে শোকের মাতম। এলাকাবাসী খুনি আবিরের দৃষ্টান্তমূলক সাজা দাবি করেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।