Inqilab Logo

বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিএনপিকে সভা-সমাবেশ করতে দেয়ার নেপথ্য কারণ কী?

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ১৯ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০৫ এএম

বহু বছর ধরে রাজনীতিতে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি বা রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক শক্তিমত্তা প্রদর্শনের সংস্কৃতিটি যেন আবার ফিরে এসেছে। বিগত প্রায় একযুগের অধিক সময় ধরে বিষয়টি হয়ে পড়েছিল একপাক্ষিক। কেবল সরকারি দলই সভা-সমাবেশ করত। বিরোধীদল বিশেষ করে বিএনপিকে সভা-সমাবেশ দূরে থাক, নিদেনপক্ষে মানববন্ধন করতেও দেয়া হতো না। দলটিকে মাঠ থেকে ঘরে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল। ঘরোয়া সংবাদ সম্মেলন ও বক্তব্য-বিবৃতিতে সীমাবদ্ধ করে ফেলা হয়েছিল। এ বছরের মাঝামাঝি থেকে দলটি ধীরে ধীরে সভা-সমাবেশ করা শুরু করেছে। বলা যায়, দলটিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মাঠে নামতে দিয়েছে। অথচ স্বাভাবিক রাজনীতিতে বিরোধীদলকে রাজনীতি করা বা মাঠে নামতে দেয়ার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের অনুমতির প্রয়োজন নেই। এটা বিরোধীদলের গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক অধিকার। প্রশ্ন হচ্ছে, হঠাৎ করে কেন আওয়ামী লীগ বিগত এক যুগ ধরে বিএনপিকে সভা-সমাবেশ করতে না দিয়ে এখন দিচ্ছে? এখন কেন বিরোধীদলের আন্দোলন ও সভা-সমাবেশের জবাব আওয়ামী লীগ পাল্টা সভা-সমাবেশের মাধ্যমে দিচ্ছে? এ প্রশ্ন নিয়ে আলোচনার বিষয় রয়েছে। এখন বিএনপি ও আওয়ামী লীগ প্রতিযোগিতা করে সভা-সমাবেশ করছে। আওয়ামী লীগ প্রশাসনের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ঢোল-বাদ্য বাজিয়ে সভা-সমাবেশ করছে। ঠিক এর বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে বিএনপি’র সভা-সমাবেশের ক্ষেত্রে। বিএনপিকে অত্যন্ত কষ্টে, সরকারি-বেসরকারি, নানা বাধা-বিঘœ মোকাবেলা করে সভা-সমাবেশ করতে হচ্ছে। সমাবেশের জন্য এক জায়গায় অনুমতি চাইলে দেয়া হয় আরেক জায়গায়, তাও সমাবেশের এক-দুই দিন আগে। সমাবেশে যাতে লোকজন যেতে না পারে, এজন্য তথাকথিত ধর্মঘটের নামে সব ধরনের যানবাহনও বন্ধ করে দেয়া হয়। পথে পথে বাধা, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মহড়া এবং পুলিশি অভিযান ও হামলা-মামলা তো আছেই। সবধরনের বাধা মোকাবেলা করেই বিএনপিকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপে সমাবেশ করতে হচ্ছে। তবে সবধরনের বাধা সত্তে¡ও এসব সমাবেশে ব্যাপক লোকজনের উপস্থিতি ঠেকানো যাচ্ছে না। সমাবেশে যেতে বাধা দেয়া হবে জেনে দলটির নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ নির্ধারিত দিনের দুই-তিন দিন আগেই সমাবেশস্থলে গিয়ে উপস্থিত হচ্ছে। সেখানেই তাবু খাটিয়ে, ফুটপাতে কিংবা খোলা মাঠে রাত্রিযাপন করে। রান্না-বান্না করে খাওয়া-দাওয়া করে। বলা যায়, কয়েক ঘন্টার সমাবেশ দুই-তিনদিন ধরে হয়। আশার কথা, নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হলেও সরকার আগের মতো দলটিকে মাঠছাড়া করছে না।

দুই.
বিগত এক যুগ ধরে ক্ষমতাসীন দল বিএনপিকে কোনো ধরনের স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দেয়নি। তার একটাই অজুহাত ছিল, বিএনপি জ্বালাও-পোড়াও করে। সভা-সমাবেশ করতে দিলে ২০১৩ সালের মতো একই কাজ করবে। এ অজুহাতে দলটিকে মাঠে নামতে দেয়া হয়নি। কখনো কখনো মানববন্ধন কিংবা ছোট্ট পরিসরে সমাবেশ করার অনুমতি দিলেও তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে হতো। নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে গেলেই পুলিশ পিটিয়ে উঠিয়ে দিত। অর্থাৎ বিরোধীদলের রাজনীতি হয়ে পড়েছিল ক্ষমতাসীন দলের ইচ্ছা ও অনুমতিনির্ভর। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বহুভাবে বিরোধীদলকে রাজনীতি করার ক্ষেত্রে বাধা-বিঘœ না দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহŸান জানিয়েছে। সরকার সেসব আমলে নেয়নি। অত্যন্ত কঠোরভাবে বিরোধীদলের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। এ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নানা ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র সংকুচিত, হাইব্রিড, সরকার কর্তৃত্ববাদী, একনায়কতান্ত্রিক ইত্যাদি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। বছর দুয়েক আগে বাইডেন প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বের ১০০টি দেশ নিয়ে যে গণতন্ত্র সম্মেলন করে, তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এটা বেশ অসম্মানের হলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জবাবে বলেছিলেন, ওখানে যেসব দেশে কম গণতন্ত্র, সেসব দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তার এমন ব্যাখ্যা ধোপে টেকেনি। বরং বাংলাদেশের জন্য যে তা অসম্মানের ছিল, এটাই বিশ্লেষকরা মনে করেছেন। সরকারের মধ্যে এসব নিয়ে কোনো ভাবান্তর হয়নি। কেবল মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ অন্যান্য দেশ ও সংস্থা প্রতিবেদন প্রকাশ করলে সরকার প্রতিবাদ করেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্থাকে বিএনপি’র মুখপাত্র হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এমনকি একসময়ের যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশস্থ রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনাকেও ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করা হয়েছিল। তাকে ‘কাজের মেয়ে মর্জিনা’ বলে আখ্যায়িত করা হয়। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রকে সরকার পাত্তাই দেয়নি। ক্ষমতাসীন দল তার মতো করে দেশ পরিচালনা করে এবং করছে। ‘কম গণতন্ত্র বেশি উন্নয়ন’ এমন নীতি অবলম্বন করে। বিভিন্ন মেগাপ্রকল্পসহ উন্নয়ন কাজ শুরু করে। উন্নয়নের ¯েøাগান জোরেসোরে চালু করে। পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশনসহ বিলবোর্ডে কেবল উন্নয়নের ফিরিস্তি প্রকাশ করতে থাকে। এক্ষেত্রে পরিসংখ্যানেরও আশ্রয় নেয়া হয়। জিডিপি, রিজার্ভ, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। প্রতি বছরই মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির হিসাব দেয়া হয়। উন্নয়ন নিয়ে এক হুলুস্থুল ব্যাপার শুরু হয়ে যায়। এর মধ্যে খাদ্যে ও বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণতার কথা বলা হয়। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়, বিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। অনেক দেশ বাংলাদেশ কিভাবে উন্নয়ন করেছে তা অনুসরণ করছে বলে বলা হয়। এমনকি, কোনো কোনো মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর, কানাডা হয়ে গেছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকায় এমন উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে বলে প্রচার করা হয়। তবে এই স্থিতিশীল পরিস্থিতি কিভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে, তা বলা হয়নি। বিরোধীদলকে যে দমন-পীড়ন এবং জোর করে ঘরে ঢুকিয়ে স্থিতিশীলতা দেখানো হয়েছে, এ বিষয়টি আড়াল করে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠনের নানা ধরনের অপকর্ম ও সন্ত্রাসী কর্মকাÐ প্রায় নির্বিঘেœই চলতে থাকে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই বিভিন্ন সময়ে বিরোধীদলের রাজনীতি করতে না দেয়া, গণতন্ত্রকে সংকুচিত ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করার বিষয় নিয়ে দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলো বক্তব্য-বিবৃতি দিতে থাকে। সরকার এসবের কোনো তোয়াক্কা করেনি। বিরোধীদলকে ভালোভাবে দমন করে সরকার একযুগ কাটিয়ে দিয়েছে। তবে এই পরিস্থিতির মধ্যে সরকারের উন্নয়নে করোনা এসে বেশ ভাল ধাক্কা দেয়। সরকারের উন্নয়নে ভিত্তিটি টলে উঠে।

তিন.
সরকারের উন্নয়নের স্লোগানে করোনার পাশাপাশি সবচেয়ে বড় ধাক্কা দিয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ। একেবারে টলিয়ে দিয়েছে। এর ফলে নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গিয়েছে। পত্র-পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের কষ্টের কথা প্রতিবেদন আকারে প্রকাশিত হয় এবং হচ্ছে। এসব প্রতিবেদনের সারকথা হচ্ছে, সাধারণ ও সীমিত আয়ের মানুষ এখন তিনবেলার পরিবর্তে দুইবেলা খাচ্ছে। এর মধ্যে পুষ্টির ঘাটতিও রয়েছে। লাখ লাখ মানুষ কর্মহারা ও দরিদ্র হয়ে গেছে। গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে শিল্পোৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে। রফতানির ৮৩ ভাগ আয় যে গার্মেন্ট থেকে হয়, সে খাতের অনেক কারখানা বন্ধ ও শ্রমিক বেকার হয়ে যাচ্ছে। বিকেএমই’র সভাপতি কয়েকদিন আগে বলেছেন, গ্যাস-বিদ্যুতের অভাব ও মূল্যবৃদ্ধির কারণে গাজীপুরসহ অন্যান্য এলাকার অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, খোঁজ নিয়ে দেখেন, কত কারখানা বন্ধ ও শ্রমিক বেকার হয়েছে। এ পরিস্থিতির মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের রিজার্ভ প্রসঙ্গটি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে। রিজার্ভ দ্রæত গতিতে কমে যাচ্ছে। আমদানি ব্যয় ও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে তা বিপৎসীমার কাছাকাছি চলে এসেছে। তা ঠেকা দিতে আইএমএফ-এর সাথে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি করতে হয়েছে। আগামী ফেব্রæয়ারি থেকে ধাপে ধাপে এই ঋণ পাওয়া শুরু হবে। তবে রিজার্ভ যেভাবে কমা শুরু হয়েছে, এই ঋণ দিয়ে তা ঠেকানো সম্ভব হবে না বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন। এর মধ্যে বিএনপি’র পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রিজার্ভ সরকার গিলে খেয়ে ফেলেছে। রিজার্ভের অর্থ পাচার করে দেয়া হয়েছে। বিগত দশ বছরে দশ লাখ কোটি টাকা পাচার করে দিয়েছে। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, সরকার রিজার্ভ চিবিয়েও খায়নি, গিলেও খায়নি। এ ধরনের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য চলছে। শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী বছর দেশ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তে পারে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যখন দুর্ভিক্ষের কথা বলা হয়, তখন বিষয়টি আতঙ্কের। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, তাহলে সরকার বিগত প্রায় চৌদ্দ বছর ধরে যে উন্নয়নের কথা বলেছে, তার কি হলো? এতই যদি উন্নয়ন করে থাকে, তাহলে দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তে হবে কেন? উন্নয়ন কি এতই হালকা? অনেকে বলছেন, খাদ্যে যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার কথা সরকার বলেছে, তা কোথায় গেল? কেন লাখ লাখ টন খাদ্য আমদানি করতে হচ্ছে? আমদানি করতে গিয়ে অর্থসংকটে ভুগতে হচ্ছে কেন? সরকারের তরফ থেকে এখন জিডিপি, মাথাপিছু আয়ের হিসাব দেয়া হচ্ছে না কেন? এতই যদি উন্নতি হয়ে থাকে, তাহলে কেন আইএমএফ-এর কাছ থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে? সরকার তো একসময় বলেছিল, এখন আর আমাদের বিদেশিদের কাছে হাত পাততে হয় না। আমরাই ঋণ দেই। শ্রীলঙ্কাকে ২০ কোটি ডলার ঋণ দেয়া হয়েছে। আবার চাল রফতানিও করা হয়েছে। তাহলে এখন কেন আমাদের ঋণ নেয়া ও চাল আমদানি করতে হচ্ছে? এতই যদি উন্নয়ন হয়ে থাকে, তাহলে দেশ কেন এখনও আমদানি নির্ভর রয়ে গেছে? এসব প্রশ্ন এখন মানুষের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকার একটি কথাই বারবার বলছে, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী মন্দা চলছে। উন্নত দেশগুলোও মন্দায় পড়েছে। আমরাও মন্দায় পড়েছি। এর বাইরে তার জবাব নেই। উন্নত দেশের মন্দা আর আমাদের মন্দার মধ্যে যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান, এটা বলছে না। উন্নত দেশের অর্থনীতি এতটাই শক্তিশালী যে, তাদের জনগণকে প্রণোদনা দিয়ে মন্দা মোকাবেলা করা কোনো সমস্যাই নয়। আমাদের দেশে তো এখন টাকাই নেই। উল্টো ঋণ করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষকে প্রণোদনা দেবে কোত্থেকে? সরকার যে শনৈশনৈ উন্নতির কথা বলছে, সে উন্নতি এখন কোথায় গেল?

চার.
নিবন্ধের শুরুতেই বলা হয়েছে, সরকার কেন এখন বিএনপিকে সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে? এর কারণ হচ্ছে, সরকার যে কঠোর ও কর্তৃত্ববাদী হয়ে দেশ পরিচালনা করেছে এবং গণতন্ত্রকে সংকুচিত করেছে, সে ধরনের পরিস্থিতি এখন নেই। অর্থনৈতিক মন্দা ও প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো আগে বক্তব্য-বিবৃতির মাধ্যমে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন তারা মাঠে নেমেছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ জাতিসংঘ সিরিয়াসলি বলছে, আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত তো রীতিমতো দৌড়ঝাপ শুরু করেছে না। অন্যান্য প্রভাবশালী দেশগুলোও বেশ তৎপর। একদিকে অর্থনৈতিক দুরবস্থা, আরেক দিকে গণতান্ত্রিক সংকট ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অভাব-এসব মিলিয়ে ক্ষমতাসীন দল বেশ চাপে রয়েছে। এ চাপ উপেক্ষা করার পরিস্থিতি সরকারের নেই। ফলে তাকে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে সভা-সমাবেশ করতে দিতে বাধ্য হচ্ছে। অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন দলকেও রাজনৈতিকভাবে বিএনপিকে মোকাবেলা করতে সভা-সমাবেশ করতে হচ্ছে। বলা যায়, দেশে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধীদলের পরস্পরবিরোধী রাজনীতির যে সংস্কৃতি তা কিছুটা হলেও ফিরে এসেছে। এর ফলে ক্ষমতাসীন দলের একতরফা সভা-সমাবেশের যে অপসংস্কৃতি চালু ছিল, তাতে ছেদ পড়েছে। তার কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে। কারণ, বিরোধীদলের আন্দোলন-সংগ্রাম কখনোই ক্ষমতাসীন দলের জন্য সুখের বিষয় নয়। বিরোধীদল তার রাজনৈতিক অধিকারসহ সরকারের সমালোচনা ও মানুষের সমস্যার কথা বলা সরকারের জন্য অস্বস্তিকর। ক্ষমতাসীন দল এখন বিএনপিকে মোকাবেলা করতে গিয়ে বাগযুদ্ধে নেমেছে। এসবের মধ্যে বিএনপি’র অতীত ইতিহাস ও কর্মকাÐ তুলে ধরা ছাড়া আর কিছু নেই। অন্যদিকে, বিএনপি ক্ষমতাসীন দলের চলমান শাসন ব্যবস্থা, দুর্নীতি, দমন-পীড়ন, গণতন্ত্রের সংকট, অর্থনৈতিক দুরবস্থাসহ মানুষের জীবনযাপনের সমস্যা নিয়ে বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছে। দুই দলের এই বক্তব্য-বিবৃতির মধ্যে সাধারণ মানুষের কাছে অতীতের ঘটনার চেয়ে চলমান সমস্যা ও সংকটের কথাই বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। অতীতে যা ঘটে গেছে, তা নিয়ে তারা ভাবতে চায় না। বর্তমানে কি ঘটছে, কি সমস্যার মধ্যে নিপতিত, সরকার কি ব্যবস্থা নিচ্ছে, সামনে কি হবে, এসবই তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এর কারণ হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দল চৌদ্দ বছর ধরে ক্ষমতায়, আর বিএনপি পনের বছর ক্ষমতার বাইরে। ফলে জনগণের কাছে ক্ষমতাসীন দলের চৌদ্দ বছরের শাসন ব্যবস্থার বিষয়টিই সর্বাগ্রে অগ্রগণ্য। আগে যেমন পাঁচ বছর পরপর ক্ষমতা পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা ছিল এবং অল্প সময়ের ব্যবধানে দুই দলের দেশ পরিচালনার বিচার করতে পারত, সেই পরিস্থিতি এখন নেই। এখন জনগণ একদলের তিন টার্ম ক্ষমতার ফলাফলকেই বেশি প্রাধান্য দেবে। বিএনপি ক্ষমতায় আসবে কি আসবে না, আসলে কি করবে, এসব বিষয় তাদের কাছে মুখ্য নয়।

[email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি


আরও
আরও পড়ুন