পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
অনেক দিন ধরে সাধারণ মানুষ নানা সমস্যায় তাদের ক্ষোভ, দুঃখ-কষ্ট, অসন্তোষ প্রকাশের তেমন কোনো প্ল্যাটফর্ম পায়নি। প্রকাশের জায়গা না পেয়ে মনের ক্ষোভ মনেই পুষেছে। কখনো কখনো পথে-ঘাটে, চলতে-ফিরতে মনের ক্ষোভ-অসন্তোষ উগরে দিলেও তা সরকারের কাছে পৌঁছেনি, সরকারও তা আমলে নেয়নি। সাধারণত বিরোধীদলগুলো তাদের রাজনৈতিক দাবি-দাওয়াসহ সাধারণ মানুষের সমস্যা ও সংকটের বিষয় নিয়ে সভা-সমাবেশ এবং আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে সরকারের সমালোচনা ও ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে। এতে সরকারের ওপর একধরনের চাপ সৃষ্টি হয় এবং সমস্যা ও সংকট সমাধানে উদ্যোগী হয়। পাশাপাশি সরকার জবাবদিহির আওতায়ও আসে। এটাই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য। তবে বিগত দিনগুলোতে দেশে এ ধরনের বৈশিষ্ট্য ছিল না বললেই চলে। সরকার নিজেই অনবরত জনগণের ভাল থাকার কথা বলেছে। জনগণ ভালো আছে কিনা, তা তাদের বলার সুযোগ দেয়নি। কেবল পরিসংখ্যান দিয়ে বিভিন্ন সূচকের উল্লম্ফন দেখিয়ে সাধারণ মানুষের উন্নয়নের কথা বলেছে। পত্র-পত্রিকা ও গণমাধ্যমগুলোও সরকারের গুণগান করতে বাধ্য হয়েছে এবং হচ্ছে। সরকারের প্রশংসা ছাড়া সমালোচনা বা নানা অনিয়মের কথা তুলে ধরার পরিবর্তে সেল্ফ সেন্সরশিপ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে চলেছে। কেন চলেছে বা চলছে, তা বোধকরি ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ নেই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ নানা কালাকানুনের ভয়ে বাধ্য হয়েই এ কাজ করতে হয়েছে। যারাই একটু সহাসী হয়ে সরকার বা সরকারি দলের লোকজনের সমালোচনা করে সংবাদ ও মতামত তুলে ধরেছে, তারা মামলা-মোকদ্দমা এবং জেল-জুলুমের শিকার হয়েছে। বহু বছর পর বিরোধীদলগুলো বিশেষ করে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি একটু একটু করে যেন খোলস থেকে বের হতে শুরু করেছে। তার রাজনৈতিক অধিকারসহ সাধারণ মানুষের সমস্যা নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে সভা-সমাবেশ করছে। গত আগস্ট থেকে তাদের এই সভা-সমাবেশ বেগবান হয়। এতে ভোলা ও নারায়ণগঞ্জে পুলিশের গুলিতে দলটির পাঁচ নেতা-কর্মী নিহত হয়েছে এবং অসংখ্য আহত হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে দেখা গেছে, বিএনপি কোথাও সভা-সমাবেশ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়লে খোলসের মধ্যে ঢুকে গেছে। মাঠের রাজনীতি থেকে ঘরের রাজনীতিতে চলে গেছে। এবার একটু ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। সরকার দলটির সমাবেশের জন্য এক জায়গায় অনুমতি না দিলে নাছোড়বান্দার মতো অন্য জায়গায় গিয়ে করেছে এবং পাঁচ নেতা-কর্মীর মৃত্যু ও অসংখ্য আহত হওয়ার মধ্যেও তারা ভয় পাচ্ছে না। ভয়কে জয় করে আরও সংঘবদ্ধ হয়ে সমাবেশ করেছে এবং করছে। এতে কিছুটা হলেও সাধারণ মানুষ তাদের কথা তুলে ধরার যেন একটি প্ল্যাফর্ম দেখতে পাচ্ছে।
দুই.
অস্বীকার করার উপায় নেই, দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটে সরকার বেশ বেকায়দায় রয়েছে। এর মধ্যে বহু বছর ধরে গণতন্ত্রকে সংকুচিত করে কতৃর্ত্ববাদী শাসন ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে চলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশ ও দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে সমালোচিত হয়ে আসছে। ক্ষমতাসীন দল এগুলো তেমন একটা আমলে নেয়নি। তার মধ্যে একটা ‘থোড়াই কেয়ার’ প্রবণতা বিদ্যমান। এই প্রবণতার মধ্যে বিশাল আঘাত হয়ে আসে গত বছরের নভেম্বরে, যখন র্যাব ও পুলিশের আইজিপিসহ ৭ সদস্যের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়। এতে সরকারের যেন টনক নড়ে। এর মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাতে দেশের অর্থনীতিও নড়বড়ে হয়ে গেছে। একদিকে গণতন্ত্রের সংকট, আরেক দিকে অর্থনৈতিক সংকটÑএই উভয় সংকটে পড়ে সাধারণ মানুষের এখন নাভিশ্বাস। সরকারও সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের টানাপড়েন এবং শোচনীয় পরিস্থিতি অস্বীকার করতে পারছে না। এর মধ্যেই বিএনপি আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য নিরপেক্ষ তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দাবির সাথে জনসম্পৃক্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে একের পর এক জনসভাসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে অন্যতম, ডিসেম্বর পর্যন্ত দলটির দশটি সাংগঠনিক বিভাগে গণসমাবেশ আয়োজন করা। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুরের গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব গণসমাবেশে দলটির নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষের বিপুল উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। এসব গণসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করা বা বানচালের জন্য পরিবহন মালিক সমিতি আগের দিন থেকে ধর্মঘটের ডাক দেয়। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, বাস ও অন্যান্য গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও সমাবেশগুলোতে ব্যাপক মানুষ উপস্থিত হয়েছে। বাধা উপেক্ষা করে আশপাশের জেলা ও দূর-দূরান্ত থেকে দলটির নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা দুইদিন আগে থেকে সমাবেশে জড়ো হতে থাকে। তারা সংশ্লিষ্ট শহরের হোটেলগুলোতে সিট না পেয়ে আত্মীয়-স্বজনের বাসায় কিংবা জনসভাস্থল ও ফুটপাতে লাইন ধরে রাত কাটিয়েছে। সঙ্গে চিড়া-মুড়ি ও শুকনো খাবার নিয়ে গণসমাবেশে ছুটে আসে। এ যেন কাফেলার মুসাফির। ফুটপাতে রাত্রিযাপনকারি এসব মানুষের ছবি পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এতে অনেকের মধ্যেই বিস্ময় জেগেছে। কেন ও কীসের আশায় তারা এত কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করছে? গণসমাবেশ থেকে তারা কি পাবে? সমাবেশ শেষে তারা কি নিয়ে ফিরে যাবে? এসব প্রশ্নের উত্তর অনেক গভীর। অনেকে এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বলেছেন, বিএনপি’র গণসমাবেশ অনেকটা মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানীর জনসভার মতো। দুঃখ-কষ্ট ও দুর্দশার মধ্যে থাকা মানুষ তাদের কথা ভাসানীর মুখ থেকে শুনতে এবং আশায় বুক বাঁধতে যেমন অনুন্নত ও দুর্গম পথ হেঁটে আসত, বিএনপি’র গণসমাবেশে যোগ দিতে আসা মানুষও একইভাবে বিএনপির কাছ থেকে তাদের কথা শুনতে ও আশায় বুক বাঁধতে শত কষ্ট স্বীকার করে উপস্থিত হয়েছে। অথচ এসব গণসমাবেশে দলটির চেয়ারপার্সন এবং মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিতি নেই। তারপরও মানুষ জনসভায় ছুটে এসেছে। যেকোনো উপায়ে জনসভায় যোগ দিতে হবে, তাদের মধ্যে এমন তাড়না কেন? তাদের কি ঠেকা পড়েছে, গাড়ি-ঘোড়া বন্ধ থাকা অবস্থায় শত কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে গণসমাবেশে যোগ দিতে হবে? এই এক বছর আগেও তো যানবাহন স্বাভাবিক থাকা অবস্থায় দলটির সমাবেশে এত মানুষ আসতে দেখা যায়নি। এখন আসছে এ কারণে যে, দেশের মানুষ ভালো নেই। তারা এতদিন এই ভালো না থাকার কথা বলতে পারেনি, বলার মতো কোনো প্ল্যাটফর্ম পায়নি। এখন পেয়েছে এবং তাদের দুঃখ-কষ্টের কথা বিএনপির নেতৃবৃন্দ বলবেন, এ আশা নিয়েই ছুটে এসেছে। বিএনপি’র নেতৃবৃন্দকে সাধারণ মানুষের এই পাল্স বুঝতে হবে এবং তা ধরে রাখতে হবে।
তিন.
আমাদের মতো ক্ষয়ীষ্ণু গণতন্ত্রের দেশে বিরোধীদলের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করা সহজ নয়। কোনো সরকারই বিরোধীদলকে তার সমালোচনা বা বিরোধিতা করার জন্য সহজে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে দিতে চায় না। এখানে সরকারের বিরূপ আচরণ ও প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়েই বিরোধীদলকে তার রাজনৈতিক ও সাধারণ মানুষের অধিকার আদায় করে নিতে হয়। স্বাধীনতার পর থেকে সকল বিরোধীদলকে সরকারের বাধা উপেক্ষা করে বিরূপ পরিস্থিতিতে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হয়েছে। এজন্য বিরোধীদলগুলোকে যেমন অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে, তেমনি তারা সফলও হয়েছে। বিগত এক যুগের অধিক সময় ধরে ক্ষমতাসীন দল বিরোধীদলকে এ ধরনের সুযোগ দেয়নি বললেই চলে। পুরো প্রশাসনকে নিজের করায়ত্তে নিয়ে দমন-পীড়ন করে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে যে, বিরোধীদলের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ে। বিরোধীদলকে দমন করে সরকার তার ইচ্ছামতো দেশ পরিচালনা করে। সরকারের এই আচরণকে ‘একনায়কতান্ত্রিক’ কিংবা ‘কর্তৃত্ববাদী’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হলেও তাতে সে গা করেনি। তবে ইতিহাস বলে, গণতান্ত্রিক শাসন ধারায় পরিচালিত বিশ্বের কোনো দেশেই এ ধরনের সরকার চিরস্থায়ী হয়নি। ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করতে পারলেও একসময় তাদের বিদায় নিতে হয়েছে। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার তার তিন মেয়াদের শেষের দিকে রয়েছে। বিগত দুই মেয়াদ নামকাওয়াস্তে নির্বাচন এবং নানা কূটকৌশল ও দমন-পীড়নের মাধ্যমে মসৃণভাবে পার করতে পারলেও তৃতীয় মেয়াদের শেষের দিকে এসে যেন কিছুটা বেকায়দায় পড়েছে। বিশেষ করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমেই বৃদ্ধি সরকারকে ভাবিয়ে তুলেছে। সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিরোধীদলের রাজনৈতিক অধিকার সংকুচিত করা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত করাসহ নানা অভিযোগ আন্তর্জাতিক মহল থেকে জোরালো হয়ে উঠা সরকারের জন্য সুখকর বিষয় নয়। বাংলাদেশস্থ যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত তো ক্রমাগত নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলে যাচ্ছেন। বিশ্বের অন্যান্য প্রভাবশালী দেশও একই কথা বলে যাচ্ছে। ফলে সরকার যেমন অস্বস্তিতে রয়েছে, তেমনি কিছুটা হলেও তার মধ্যে নমনীয় ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর নজির হচ্ছে, কৌশলে বাধা দিয়েও প্রধান বিরোধীদল বিএনপিকে গণসমাবেশের মতো বড় রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দেয়া, যা একবছর আগেও দেখা যায়নি। বলা যায়, সরকার বাধ্য হচ্ছে, বিরোধীদলকে এই রাজনৈতিক আন্দোলন করতে দিতে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, কোনো সরকারেরই সব সময় সুখকর অবস্থার মধ্য দিয়ে যায় না। আর কর্তৃত্ববাদী হলে তো তার সময় ক্রমাগত খারাপ হতে থাকে এবং একসময় তার শক্তির ক্ষয় হতে থাকে। বর্তমানে দেশে এরকম একটি পরিস্থিতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। একটা না একটা সময় তা হওয়ারই কথা। এরশাদের দীর্ঘ ৯ বছরের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনামলও এভাবেই ক্ষয়ে নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন এ সরকারের মতো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সংকুচিত ও কর্তৃত্ববাদ না থাকলেও, এমন সংকটে পড়তে হয়েছিল। তবে বর্তমান সরকারের সময়কাল এমন যে, তাতে দেশের মৌলিক গণতান্ত্রিক কাঠামোটি ভেঙে পড়াসহ বিরোধীমত দমনের বিষয়টি তীব্র হয়ে উঠে। বিএনপি তার গণসমাবেশের মঞ্চে একটি চেয়ার খালি রাখে দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সম্মানে। কেউ কেউ এ খালি চেয়ারকে প্রতীক হিসেবে ধরে নিয়ে বলছে, এটি দিয়ে এটাও বোঝানো হয়, দেশে গণতন্ত্র খালি বা নেই হয়ে রয়েছে।
চার.
ক্ষমতাসীন দল এখন যত কথাই বলুক, যতই ধমক ও ভয় দেখাক না কেন, তা এখন বিরোধীদলগুলো আমলে নিচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। সাধারণ মানুষও তা উপেক্ষা করছে। এর প্রমাণ বিরূপ পরিস্থিতিতেও সরকারবিরোধী দলগুলোর একাট্টা হয়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়া এবং তাদের সভা-সমাবেশে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ করা থেকে বোঝা যায়। বিশেষ করে সকল পথ রুদ্ধ থাকা সত্তে¡ও বিএনপি’র গণসমাবেশগুলোতে কষ্ট করে, খেয়ে- না খেয়ে, হেঁটে মানুষের অংশগ্রহণ করার মতো দৃশ্য বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এমনকি সরকারের ঘনিষ্ট মিত্র জাতীয় পার্টিও এখন যে ভাষায় সরকারের সমালোচনা ও বিরোধিতা করছে, তাতে সরকারের প্রতি অনাস্থারই প্রতিফলন ঘটছে। এর মূল কারণ হচ্ছে, সরকার যেভাবে কঠোর হস্তে বিরোধীদলকে দমন করে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দেশ পরিচালনা করেছে এবং করছে, তা সরকার সমর্থক ছাড়া দেশ-বিদেশের কারো পছন্দ হচ্ছে না। সরকার যে ‘কম গণতন্ত্র এবং বেশি উন্নয়নে’র তত্ত¡ নিয়ে দেশ পরিচালনা করছে, তা খুব বেশি সুফল বয়ে আনতে পারেনি। গণতন্ত্রের সংকোচন তো হয়েছেই, কাক্সিক্ষত উন্নয়নের ছোঁয়াও ধোঁয়াশায় পরিণত হয়েছে। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের মধ্যে হাহাকার সৃষ্টি হওয়া থেকে তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। সরকার যতই বিশ্ব পরিস্থিতির কারণ দেখাক না কেন, তা সাধারণ মানুষ মানতে নারাজ। তাদের মধ্যে এখন এই প্রশ্ন উঠছে, এতই যদি পরিস্থিতি খারাপ হবে, তাহলে বিগত চৌদ্দ বছরের উন্নয়নের ভিত্তি কোথায়? কেন একনিমিষে তা হাওয়া হয়ে যাবে? বিএনপি’র গণসমাবেশে মানুষের যে বিপুল উপস্থিতি তার অন্যতম কারণ, সরকারের শাসন ব্যবস্থার প্রতি একধরনের অনাস্থা প্রদর্শন। দেশের বা বিদেশের চাপে পড়ে হোক, সরকার যে বিরোধীদলকে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দিতে বাধ্য হয়েছে এবং হচ্ছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। বিরোধীদল দমন এবং গণতন্ত্রকে সংকুচিত করলে যে, তা কখনো সুফল বয়ে আনে না, সে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি এখন দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। দেশের মানুষ তা কখনো মেনে নেয় না এবং একসময় তারা ঘুরে দাঁড়ায়। বিএনপি’র গণসমাবেশে মানুষের উপস্থিতিতে এই ঘুরে দাঁড়ানোর আকাক্সক্ষাই প্রতিফলিত হচ্ছে।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।