Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ভালোবেসে বিয়ে অতঃপর খুন নেপথ্যে পরকীয়া!

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

আতিয়া আক্তারকে (১৮) ভালোবেসে বিয়ে করেন সোহানুর রহমান (২২)। কিন্তু মেহেদীর রঙ না মুছতেই নিজহাতে শ^াসরোধে খুন করেন নববধূকে। খুনের পর লাশ ড্রামে ভরেন। পরদিন লাশভর্তি ড্রামটি তার কর্মস্থলের গুদামে নিয়ে যান। গুদামে ড্রামটি রেখে দুই দিন অফিস করেন। পরে ড্রামটি রাস্তার ধারে ফেলে ছুটি নিয়ে চলে যান গ্রামের বাড়ি বগুড়ায়, সেখান থেকে যান কুমিল্লায়। কুমিল্লা থেকে তাকে পাকড়াও করে পুলিশ। এরপর পুলিশের জেরার মুখে খুনের দায় স্বীকার করে তার বিস্তারিত বর্ণনাও দেন।
এর মধ্য দিয়ে নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় ড্রামভর্তি অজ্ঞাত পরিচয়ের লাশ উদ্ধারের ঘটনার রহস্য উদঘাটিত হলো। পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে বিয়ের পর অন্য নারীর সাথে স্বামীর পরকীয়া সম্পর্কের বিষয়টি নববধূ জেনে যাওয়ায় সংসারে শুরু অশান্তি। আর তার জেরেই এই নির্মম খুনের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ বলছে, তারা লাশটির পরিচয় শনাক্ত করেছে। নিহত নারীর নাম আতিয়া আক্তার। তাকে হত্যার ঘটনায় তার স্বামী সোহানুর রহমানকে বৃহস্পতিবার কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি আতিয়াকে হত্যার পর অন্যের সহযোগিতায় লাশ ড্রামে ভরে ফেলে দেন। সোহানুরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ ঘটনায় আরও তিন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলেন- মোহাম্মদ রুবেল, মোহাম্মদ আশিক ও লিটন। তারা লাশ গুমে সোহানুরকে সহযোগীতা করেন।
১৩ অক্টোবর নগরী পতেঙ্গা সৈকত এলাকার কালীবাড়ি সড়কের পাশ থেকে ড্রামভর্তি অজ্ঞাত পরিচয়ের নারীর গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা মামলা করে। নিহতের স্বজনদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বরাদ দিয়ে পুলিশ জানায়, দুই মাস আগে মামাতো বোন আতিয়াকে বিয়ে করেন সোহানুর। তিনি নগরীর পতেঙ্গা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন। অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্কের জেরে স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর ঝগড়া হয়। এই ঝগড়ার জেরে সোহানুর ক্ষিপ্ত হন। তিনি ১১ অক্টোবর রাতে আতিয়াকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন।
আতিয়াকে হত্যার পরদিন সকালে সোহানুর তার পূর্বপরিচিত রুবেল ও আশিককে বাসায় ডেকে নেন। তাদের সহযোগিতায় স্ত্রীর লাশ একটি প্লাস্টিকের বড় ড্রামে ঢুকিয়ে রাখেন। প্রতিবেশিরা সন্দেহ করতে পারেন এমনটা ভেবে লাশভর্তি ড্রামটি সোহানুর নিয়ে যান পতেঙ্গা এলাকায়। সেখানে তার কর্মস্থল একটি নির্মাণকারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের গুদামে ড্রামটি রেখে দেন। বাসা ছেড়ে দেওয়ায় কিছু সময়ের জন্য ড্রামভর্তি মালামাল কর্মস্থলের গুদামে রাখার কথা বলেন তিনি। গুদামে ড্রামভর্তি স্ত্রীর লাশ রেখে ১২ ও ১৩ অক্টোবর দুই দিন কাজ করেন সোহানুর। এর মধ্যে ভাড়া বাসাটিও ছেড়ে দেন।
১৩ অক্টোবর রাতে বাড়ি যাওয়ার কথা বলে কর্মস্থলের গুদাম থেকে ড্রামটি বের করেন তিনি। ড্রামভর্তি লাশটি একটি অটোরিকশা করে নিয়ে যান পতেঙ্গার কালীবাড়ি এলাকায়। পরে ড্রামভর্তি লাশটি সড়কের পাশে ফেলে দেন তিনি। তাকে এ কাজে সহযোগিতা করেন অটোরিকশা চালক লিটন। এ জন্য তাকে ভাড়াসহ মোট তিন হাজার টাকা দেন। স্ত্রীর লাশ ফেলে সোহানুর ছুটি নিয়ে কুমিল্লা চলে যান।
এদিকে লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ লাশের পরিচয় সনাক্ত করতে মাঠে নামে। তারা আশপাশের বিভিন্ন কারখানা ও প্রতিষ্ঠানের ছুটি নেওয়া কর্মীদের তালিকা সংগ্রহ করেন। ছুটিতে থাকা কর্মীদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেন। সোহানুর গ্রামের বাড়ি বগুড়ার সারিয়াকান্দি যাওয়ার কথা বলে ছুটি নিয়েছিলেন। ছুটিতে যাওয়ার আগে তাকে একটু অস্বাভাবিক দেখেছিলেন সহকর্মীরা। তিনি যে বাসায় ভাড়া থাকতেন, সেখানে যায় পুলিশ। সেখানে গিয়ে লাশের পরিচয় জানা যায়। সেখানে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে সোহানুর বাসাটি হঠাৎ ছেড়ে দিয়েছেন। তাছাড়া বাড়ি যাওয়ার কথা বলে ছুটি নিলেও বাড়ি গিয়ে ফের তিনি কুমিল্লায় চলে যান। পরে তাকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করা হয়। জানা গেছে, সোহানুর আগেও একাধিক বিয়ে করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুন

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ