Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিপিএলে চ্যাম্পিয়ন ঢাকা ডায়নামাইটস

সম্পাদকীয়-১

| প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ফ্র্যান্সাইজি টি-টুয়েন্টি টুর্নামেন্টের এবার চ্যাম্পিয়ন হলো ঢাকা ডায়নামাইটস। গত শুক্রবার মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বিপুল দর্শক সমাগমের মধ্যে ফাইনালে দলটি রাজশাহী কিংসকে ৫৬ রানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রথমে ব্যাট করে দলটি রাজশাহী কিংসের সামনে ১৬০ রানের টার্গেট দেয়। রাজশাহী কিংস এ টার্গেট অতিক্রম করতে পারেনি। দলটি ১৭.৪ ওভারে ১০৩ রানে অলআউট হয়ে যায়। দেশের স্বনামধন্য শিল্প প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকোর পৃষ্ঠপোষকতায় গড়া নতুন দল ঢাকা ডায়নামাইটস প্রথম আবির্ভাবেই চ্যাম্পিয়ন হয়। অবশ্য এর কর্তৃপক্ষ বিশ্ব ক্রিকেটের সুপারস্টারদের ভিড়িয়ে যেভাবে দল গঠন করে, তাতে শুরু থেকেই টুর্নামেন্টের সেরা হিসেবেই দলটি বিবেচিত হতে থাকে। সাঙ্গাকারা, ডোয়াইন ব্রাভো, আন্দ্রে রাসেলদের মতো বিশ্বখ্যাত ক্রিকেটার নিয়ে এসে শক্তিশালী দলে পরিণত করা হয়। স্বাভাবিকভাবেই দলটিকে সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ধরে নেয়া হয়। অবশ্য গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটের ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টি ভার্সনে শক্তিশালী দল বলে কিছু নেই। দুর্বল দলের কাছেও শক্তিশালী দল হেরে যেতে পারে। তবে ঢাকা ডায়নামাইটস যেমন শক্তিশালী দল গড়েছে, তেমনি দলের প্রত্যেকে সমানভাবে কাক্সিক্ষত পারফরম করায় তাদের চ্যাম্পিয়ন হতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। সুষম এবং যোগ্যতর দল হিসেবেই দলটি চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ঢাকা ডায়নামাইটসের ক্রিকেটার, কোচ এবং এর ফ্র্যান্সাইজি বেক্সিমকোকে আমরা অভিনন্দন জানাই। অভিনন্দন জানাই, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকেÑ এমন একটি জমজমাট টুর্নামেন্ট আয়োজনে সহায়তা করায়।
ক্রিকেটকে অধিক জনপ্রিয় করে তুলতে ওয়ান ডে এবং টেস্ট ক্রিকেটের পর আইসিসি ২০ ওভারের নতুন ভার্সন, টি-টুয়েন্টি শুরু করে। এক দশক আগেও এ ভার্সনটি ছিল না। আইপিএল-সিপিএলসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে এ ভার্সনটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা এবং দর্শক উন্মাদনা সৃষ্টি করায়, চার বছর আগে বাংলাদেশে বিপিএল-এর যাত্রা শুরু হয়। দেশের ক্রিকেট পাগল দর্শক এ টুর্নামেন্ট লুফে নেয়। বিশেষ করে বিশ্বের সেরা কোচ ও ক্রিকেটারদের দলে চুক্তিবদ্ধ করায় এর জৌলুস এবং আকর্ষণ অনেক বেড়ে যায়। ঘরোয়া পরিবেশে কাছ থেকে বিশ্বের সুপারস্টার ক্রিকেটারদের খেলা দেখার এমন সুযোগ সবসময় হয় না। ক্রিকেটপ্রেমীদের এ সুযোগ করে দিতে এবং দেশের ক্রিকেটকে বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে  এগিয়ে আসে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সহযোগিতায় তারা  ফ্র্যান্সাইজি হয়ে দেশের শীর্ষ ও উদীয়মান ক্রিকেটারসহ বিশ্বের নামী-দামী কোচ ও ক্রিকেটারদের সমন্বয়ে দল গঠন করে। ফলে বিপিএল তার প্রথম আসর থেকেই ব্যাপক দর্শকের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়। সাধারণত আমরা দেখি, জাতীয় দলের খেলা নিয়ে দেশজুড়ে দর্শকের মাঝে যে উন্মাদনা সৃষ্টি হয়, ঘরোয়া লীগে তেমনটি হয় না। যখনই জাঁকজমক আয়োজন ও বিশ্ব ক্রিকেটের তারকাদের নিয়ে বিপিএল শুরু হলো, তখন গ্যালারিভর্তি দর্শকের উচ্ছ্বাস এবং আনন্দ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বিপিএল হয়ে উঠে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় টুর্নামেন্টে। বিভিন্ন দেশ থেকে টুর্নামেন্টে খেলতে আসা ক্রিকেটাররাও এ আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করে পরবর্তী আয়োজনেও অংশগ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করেন। এবারের বিপিএলের ফাইনালে গ্যালারি উপচে পড়া যে দর্শক সমাগম হয়, তাতে প্রতিভাত হয়, দিন দিন টুর্নামেন্টটি দর্শক আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে। দেশব্যাপী এর উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়ছে। টুর্নামেন্টের প্রতি দর্শক আগ্রহ এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, টেলিভিশন সেট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও রেডিওতে টুর্নামেন্টের প্রতিটি খেলার ধারা বিবরণী অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে দেখতে এবং শুনতে দেখা যায়। ফাইনালের দিন স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে গিয়ে টিকেট না পেয়ে অনেককে বিফল মনোরথ হয়ে ফিরতে হয়েছে। অনেকে উচ্চহারে টিকেট কিনে খেলা দেখেছেন। ২৫ হাজার দর্শকধারণক্ষম গ্যালারিতে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠে। দর্শকের গগনবিদারী আওয়াজ পুরো পরিবেশকে উৎসবমুখর করে তোলে। বিপিএল নিয়ে দর্শকের এই বিপুল আগ্রহ প্রমাণ করে টুর্নামেন্টটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। জাতীয় দলের অলরাউন্ডার ও ঢাকা ডায়নামাইটসের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান যথার্থই বলেছেন, ‘বিপিএল ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের কাছাকাছি চলে এসেছে। এখানে খেলা গৌরবের বিষয়।’ সবচেয়ে বড় কথা, আন্তর্জাতিক কোনো টুর্নামেন্টকে আকর্ষণীয় করে তুলতে যে ধরনের আয়োজন করা হয়, বিপিএলে তার কমতি থাকে না। নিঃসন্দেহে এর কৃতিত্বের দাবীদার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ও ফ্র্যান্সাইজিরা।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সহায়তায় এবং বিভিন্ন শিল্প গ্রুপের ফ্র্যান্সাইজিতে সফলভাবে বিপিএল আয়োজন দেশের ক্রিকেটকে অনেক দূর নিয়ে যাবে। মাত্র চারটি সিজনের মাধ্যমে টুর্নামেন্টটি যেভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করছে, তা যেমন বিস্ময়কর, তেমনি দেশের ক্রিকেটের জন্যও গৌরবের। সারা বিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমীরা জানতে পারছে, বাংলাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশে বিপুল দর্শকের সমাগমে বিশ্বমানের ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন হয়। দেশের ক্রিকেটের এই অগ্রগতি এবং উন্নতি আমাদের জন্য গৌরবের। গৌরব করার মতো যে কয়টি বিষয় রয়েছে, তার মধ্যে ক্রিকেট অন্যতম হয়ে উঠেছে। আমাদের ক্রিকেটের এই গৌরব ধরে রাখতে হবে এবং এগিয়ে নিতে হবে। বলা বাহুল্য, বেক্সিমকো ক্রীড়া ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে। চ্যাম্পিয়ন ঢাকা ডায়নামাইটসের ফ্র্যান্সাইজি হয়ে অসাধারণ কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছে। শুধু ক্রিকেটই নয়, অন্যান্য খেলাধুলায়ও প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিত পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছে। আমরা মনে করি, বেক্সিমকোর মতো ক্রিকেটসহ খেলাধুলার বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর এগিয়ে আসা উচিত। আগামীতে বিপিএলে যাতে আরও বেশি দল অংশগ্রহণ করতে পারে, এজন্য তাদের ফ্র্যান্সাইজি হয়ে আসা প্রয়োজন। এতে দেশের ক্রিকেট যেমন উপকৃত হবে, তেমনি আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমর্যাদা বৃদ্ধি পাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিপিএল

২৭ জানুয়ারি, ২০২৩
২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন