নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ফাইনালে ফরচুন বরিশালকে হারিয়ে তৃতীয় শিরোপা জয় করলো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিপিএলের অষ্টম আসরে ফাইনালে বরিশালের বিপক্ষে ১ রানের জয় পেয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় কুমিল্লা। আগে ব্যাট করে কুমিল্লার সংগ্রহ ৯ উইকেটে ১৫১ রান। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে মাত্র ২৩ বলে ৫৭ রান করেন সুনিল নারাইন। বিপরীতে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৫০ রানে থামে বরিশালের ইনিংস। বল হাতেও ৪ ওভারে মাত্র ১৫ রানে ২ উইকেট নিয়ে কুমিল্লার জয়ের নায়ক সুনিল নারাইন।
ফাইনালটি ঠিক ফাইনালের মতোই হয়েছে। ম্যাচের শেষ বল পর্যন্ত লড়েছে দুই দল। শেষ বলে জয়ের জন্য ফরচুন বরিশালকে করতে হতো ৩ রান। কিন্তু মাত্র ১ রান নিতে পেরেছেন স্ট্রাইকে থাকা ব্যাটার তৌহিদ হৃদয়। যার ফলে মাত্র ১ রানের শ্বাসরুদ্ধকর জয়ে তৃতীয়বারের মতো শিরোপা উল্লাসে মাতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। অন্যদিকে এ নিয়ে তিনবার ফাইনালে উঠে তিনবারই রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকলে হলো বরিশালকে। ২০১২ সালে টুর্নামেন্টের প্রথম আসরে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের কাছে হারের পর, ২০১৫ সালে কুমিল্লার কাছেই ফাইনাল হেরেছিল বরিশাল। এবার দ্বিতীয়বারের মতো কুমিল্লার বিপক্ষে হেরে হতাশায় আসর শেষ করতে হলো তাদেরকে। অন্যদিকে ২০১৫ ও ২০১৯ সালের পর এটা তৃতীয় শিরোপা জয় কুমিল্লার।
এবারের ফাইনালের শেষ অংশটুকু বাদ দিলে পুরো ম্যাচই প্রভাব বিস্তার করে খেলেছে বরিশাল। তবে শেষ ভালো যার, সব ভালো তার- প্রচলিত প্রবাদটি মনে রেখে শেষটাই ভালো করতে পারেনি ফরচুন বরিশাল। ইনিংসের শেষ ১৮ বলে ১৮, শেষ ওভারে ১০ এবং শেষ বলে ৩ রানও যে করতে পারলো না সাকিবের দল। তাই তো দিন শেষে শিরোপার হাসি হাসলো ইমরুল কায়েসের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। অথচ ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে মাত্র ১৫১ রানে থামে কুমিল্লার ইনিংস। ১৫২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে নিজেদের শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি বরিশালের। ইনফর্ম মুনিম শাহরিয়ার ৭ বল খেলে ফিরেছেন রানের খাতা খোলার আগেই। এরপর ব্যাট হাতে অগ্নিমূর্তি ধারণ করেন সৈকত। ব্যাটিং দানবের খেতাব কুড়ানো ক্রিস গেইলকে একপাশে দর্শক বানিয়ে ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন সৈকত। পাওয়ার প্লে’তে আর কোনো উইকেট না হারিয়ে স্কোর বোর্ডে ৫১ রান তোলে বরিশাল। একটু পর আসরে নিজের প্রথম ফিফটির দেখা পান সৈকত। মাত্র ২৬ বলে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। যদিও ইনিংসটাকে পরে আর টানতে পারেননি। বাঁহাতি স্পিনার তানভীরের বলে ইমরুল কায়েসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন প্যাভিলিয়নে। যাওয়ার আগে ১১টি চার ও ১টি ছয়ের মারে ৩৪ বলে সৈকত খেলেন ৫৮ রানের ইনিংস। তখন বরিশালের স্কোর্ডবোর্ডে ৭৯ রান।
সৈকত আউট হওয়ার পর হাল ধরেন গেইল। দলের চাহিদা অনুযায়ী ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাট করতে থাকেন তিনি। ইনিংসের ১৩তম ওভারে গেইলকে আউট করেন তারই জাতীয় দলের সতীর্থ নারাইন। লেগবিফোরের ফাঁদে পড়ে গেইল প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন ৩১ বলে ৩৩ রানে। তার ইনিংসে ছিল এক চার ও দু’টি ছয়ের মার। অধিনায়ক সাকিব অবশ্য কাল সুবিধা করতে পারেননি, মুস্তফিজ দারুণ এক ক্যাচ নিয়ে ফেরান সাকিবকে। আউট হওয়ার আগে ৭ বলে ৭ রান করেন সাকিব। বরিশাল অধিনায়কের আউটের পর মোমেন্টাম ফিরে পায় কুমিল্লা। নুরুল হাসান সোহান রান আউটে কাটা পড়েন ১৪ রানে। সুবিধা করতে পারেননি ব্রাভো আর নাজমুল হোসেন শান্ত। ব্রাভো ১ আর শান্ত ১৫ বলে ১২ রান করে আউট হন। ৭ উইকেট হারানো বরিশালের শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে ১০ রান। আর শেষ বলে ৩ রান দরকার পড়লে দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে রান আউটে কাটা পড়েন মুজিব-উর রহমান। সঙ্গে সঙ্গেই উল্লাসে মেতে ওঠেন কুমিল্লার ক্রিকেটাররা। রোমাঞ্চকর জয়ে শিরোপা ঘরে তোলেন ইমরুল কায়েসরা। এ নিয়ে বিপিএলের ৮ মৌসুমে তিনবার ফাইনাল খেলে তিনবারই চ্যাম্পিয়ন হলো কুমিল্লা।
এর আগে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে কুমিল্লাকে দারুণ শুরু এনে দেন ওপেনার সুনিল নারাইন। লিটন দাসকে একপাশে রেখে ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালান তিনি। চার-ছয়ের ফুলঝুরি সাজানো নারাইনকে থামাতে মরিয়া সাকিব পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ব্যবহার করেন ৫ জন বোলারকে। তাতে অবশ্য নারাইনের কিছু যায় আসেনি। তবে সুবিধা করতে পারেননি লিটন, ইনিংসের তৃতীয় ওভারে তিনি ফেরেন সাকিবের শিকার হয়ে। ৬ বলে ৪ রান করেন এই ব্যাটার।
ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারের দ্বিতীয় বলে মেহেদী হাসান রানাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে শান্ত হাতে ধরা পড়েন নারাইন। তার আগে অবশ্য গড়ে ফেলেন আরো এক রেকর্ড। আগের দিন ১৩ বলে ফিফটির পর কাল নারাইনের ২১ বলে করা ফিফটি বিপিএলের ইতিহাসে ফাইনালে সবচেয়ে দ্রুতগতির। থামেন ৫৭ রানে। তার ২৩ বলের ইনিংসে ৫টি করে চার ও ছয়ের মার রয়েছে।
নারাইন আউট হলে ফের মুজিবকে বোলিংয়ে আনেন সাকিব। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দেন এই আফগান স্পিনার। পরে ৩ ওভারের স্পেলে ফেরান ফাফ ডু প্লেসি (৪) আর আরিফুল হককে (০)। তার আগে ব্রাভোর দুর্দান্ত এক থ্রোতে রান আউট হন মাহমুদুল হাসান জয়। ৭ বল খেলে ৮ রান করেন তিনি। বল হাতেও সাফল্য পান ব্রাভো। ইমরুল কায়েসকে আউট করেন ব্যক্তিগত ১২ রানে। উড়তে থাকা কুমিল্লা হঠাৎই ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। ৯৫ রান তুলতেই ৬ উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন মঈন আলি আর আবু হায়দার রনি। তাদের সপ্তম উইকেটে ৫২ বলে ৫৪ রানের পার্টনারশিপে চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ পায় কুমিল্লা। যদিও রনির ব্যাটিং একেবারেই টি-টোয়েন্টি সুলভ ছিল না। ২৭ বলে তিনি করেন ১৯ রান। মঈনের ৩২ বলে ৩৮ রানের সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৫১ রান তুলে কুমিল্লা। বরিশালের মুজিব ২৭ ও শফিকুল ৩১ রান খরচায় পান ২টি করে উইকেট। সাকিব, ব্রাভো ও মেহেদি রানা পান ১টি করে উইকেট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।