Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বশেষ নেতা গর্বাচেভের মৃত্যু

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভ মারা গেছেন। ৯১ বছর বয়সে মস্কোর সেন্ট্রাল ক্লিনিক্যাল হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে তার। বয়সজনিত অসুখে বেশ কিছুদিন ধরে ভুগছিলেন তিনি। কিডনির সমস্যাও ছিল। মঙ্গলবার মৃত্যু হয় তার। তবে তার মৃত্যু সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

গর্বাচভের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন রাশিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এবং জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস। ক্রেমলিনের মুখপাত্র জানিয়েছেন, পুতিন গর্বাচভের পরিবারের প্রতি শোকপ্রকাশ করেছেন। সোভিয়েত ইউনিয়নে পুতিন ছিলেন কেজিবি এজেন্ট। তার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট গর্বাচভের সম্পর্ক অবশ্য অস্পষ্ট। পুতিন কখনোই তা প্রকাশ করেননি।

বিশ্বে স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছিলেন গর্বাচেভ। ১৯৮৫ সালে ক্ষমতায় আসার পর তিনি বিশ্বের কাছে সোভিয়েত ইউনিয়নকে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। অনেকগুলা সংস্কার কর্মসূচী গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন তিনি ঠেকাতে পারেননি। মিখাইল গর্বাচেভের মৃত্যুতে তার প্রতি সারা বিশ্ব থেকে শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘তিনি ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিয়েছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘মিখাইল গর্বাচেভ ব্যতিক্রমী একজন রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। তার মৃত্যুতে বিশ্ব একজন নেতা হারালো যিনি শান্তির জন্য একজন অক্লান্ত সমর্থক ছিলেন।’

মস্কোর যে হাসপাতালে তিনি মারা গেছেন, তার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে গুরুতর শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে তার শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হয়। তাকে প্রায়ই হাসপাতালে ভর্তি করতে হচ্ছিল। গত জুন মাসে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল যে, কিডনির জটিলতায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু ঠিক কি কারণে তার মৃত্যু হয়েছে, তা এখনো ঘোষণা করা হয়নি।

১৯৮৫ সালে সোভিয়েত কম্যুনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক হন মিখাইল গর্বাচেভ, যখন তার বয়স ৫৪ বছর। সেই সময় তিনি ছিলেন ক্ষমতাসীন কাউন্সিল পলিটব্যুরোর সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। তার পূর্বসূরি কনস্তান্তিন চেরনেঙ্কো মাত্র এক বছর দায়িত্বে থাকার পর ৭৩ বছর বয়সে মারা গেলে বয়স্কদের ভিড়ে তিনি দায়িত্ব পান। তার মূল নীতি গ্লাসনস্তের (উন্মুক্ত হওয়া) ফলে দেশের জনগণ সরকারের সমালোচনা করার সুযোগ পায়, যা অতীতে চিন্তাও করা যেতো না। কিন্তু এর ফলে সোভিয়েত ইউনিয়নের অনেক অঞ্চলে জাতীয়তাবাদী চিন্তার উদ্ভব ঘটে, যার ফলশ্রুতিতে ইউনিয়নের পতন ঘটে। আন্তর্জাতিকভাবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি করেছিলেন। যখন পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর বাসিন্দারা তাদের কম্যুনিস্ট শাসকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে শুরু করে, তিনি সেসব দেশে হস্তক্ষেপ করতে রাজি হননি।

পশ্চিমা দেশগুলো তাকে একজন সংস্কারক হিসাবে দেখে, যিনি স্নায়ু যুদ্ধে অবসান করার পরিবেশ তৈরি করেছিলেন। সেই সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে গভীর উত্তেজনা ছিল। পূব-পশ্চিমের সম্পর্কে ব্যাপক পরিবর্তনে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা রাখার জন্য ১৯৯০ সালে তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান।

কিন্তু ১৯৯১ সালে যে নতুন রাশিয়ার জন্ম হয়, সেখানে রাজনীতিক হিসাবে তার তেমন ভূমিকা ছিল না। তিনি বরং শিক্ষা এবং মানবিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। ১৯৯৬ সালে তিনি একবার রাজনীতিতে ফিরে আসার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাত্র ০.৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। রাশিয়ার তাস বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, তাকে মস্কোর নভোদেভিচি কবরস্থানে তার স্ত্রীর কবরের পাশে সমাহিত করা হবে, যেখানে অনেক নামী রাশিয়ানের কবর রয়েছে। সূত্র : দ্য ওয়াল স্ট্রীট জার্নাল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মৃত্যু


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ