Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চীনের সাথে সামরিক সংঘর্ষের হুমকি

তাইওয়ান সফর শেষে দ. কোরিয়ায় পেলোসি সফরের প্রতিবাদে তাইপেতে বিক্ষোভ :: ন্যান্সির সফরের কঠোর সমালোচনা ট্রাম্পের :: অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ : উ. কোরিয়া

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

মার্কিন সংসদের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের একটি সিরিজে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের সাথে দেখা করেছেন। মিসেস পেলোসি তাইওয়ানে অসামান্য অবদানের জন্য একটি পুরস্কার পেয়েছেন। তাইওয়ানে উচ্চ-স্তরের সফরের আগে কয়েক সপ্তাহ নীরবতার পর বুধবার হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিকে ছোট করা হয়নি উচ্চ-স্তরের বৈঠকের দিন, যেখানে তিনি তাইওয়ানের পক্ষে সমর্থনের প্রস্তাব দেন এবং চীনকে ক্ষুব্ধ করেন।

পেলোসি তাইওয়ানের আইন প্রণেতাদের সাথে এবং তারপরে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের সাথে দেখা করেন এবং দ্বীপের গণতন্ত্রের জন্য মার্কিন সমর্থনের দৃঢ় আশ্বাস দেন যা চীন দাবি করে। ইভেন্টের ঝড়ের দিন, তাকে ব্যানার নেড়ে সমর্থকদের ভিড়ে অভ্যর্থনা জানানো হয় এবং সংবাদ মিডিয়া এবং প্রতিবাদকারীরা অনুসরণ করে, তার ঘনিষ্ঠভাবে নজরদারিতে রাখা মিটিং এবং আন্দোলনগুলো আংশিকভাবে অনলাইনে সম্প্রচার করা হয়।

পেলোসি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সাথে বৈঠকের সময় বলেন, ‘আজ বিশ্ব গণতন্ত্র এবং কর্তৃত্ববাদের মধ্যে একটি পছন্দের মুখোমুখি’। ‘এখানে তাইওয়ান এবং সারা বিশ্বে গণতন্ত্র রক্ষায় আমেরিকার সংকল্প অটুট রয়েছে’।
সভাগুলোকে তাইওয়ানে একটি প্রতীকী বিজয় হিসাবে ব্যাপকভাবে সমাদৃত করা হয়, যদিও বস্তুগতভাবে হালকা। পেলোসির সফর ছিল একটি বিরল মুহূর্ত যখন চীনের প্রচণ্ড বিরোধিতার মুখে একটি বড় বিদেশী শক্তি প্রকাশ্যে দ্বীপটিকে সমর্থন করে। মিসেস পেলোসি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের হতাশা সত্ত্বেও সফর করেন।
এসব ঘটনা চীনকে অপমান করেছে। মার্কিন সমর্থনে বুধবার বিকেলে দক্ষিণ কোরিয়ায় উড়ে আসা পেলোসি, তাইওয়ানের কোভিড পরিচালনার প্রশংসা করেন এবং মানবাধিকার নেতাদের সাথে দেখা করেন, যদিও জোর দিয়ে বলেন যে, বেইজিং তাইওয়ানকে বিচ্ছিন্ন করতে পারলেও এটি মার্কিন নেতাদের সেখানে ভ্রমণ থেকে আটকাতে পারবে না।

পেলোসির সফর এ অঞ্চলের প্রধান মিত্রদের কাছ থেকে চীনের বিরুদ্ধে সমর্থন আদায়ের জন্য হোয়াইট হাউসের প্রচেষ্টাকেও ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে। বিশ্লেষকেরা বলছেন যে, তারা এ ভ্রমণে দূরে সরে গেছে এবং উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণে হতাশ হয়েছে। মিসেস পেলোসি যখন রাজধানী তাইপে ভ্রমণ করেন, তখন মাঝে মাঝে প্রায় কার্নিভাল পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। তবে মেজাজটি চীন এবং তাইওয়ানকে পৃথককারী প্রণালী জুড়ে আরো বিপজ্জনক ছিল, যা একটি সামরিক সংঘর্ষের বাস্তব সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। গতকাল চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনয়িং বলেছেন যে, পেলোসির সফরের পর যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ানের ওপর আরো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।
সফরের প্রতিবাদে তাইপেতে বিক্ষোভ : চীনের হুমকি উপেক্ষা করেই তাইওয়ানে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। তাইওয়ানের সবাই যে এতে খুশি তা নয়। বরং তাইপেতে একদল বিক্ষোভকারী পেলোসির সফরের প্রতিবাদ জানিয়ে তাকে ‘সমস্যা সৃষ্টিকারী’ ও ‘কুৎসিত আমেরিকান’ বলেছে। বিক্ষোভকারীরা তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলেছেন। বিক্ষোভকারীদের কারো কারো হাতে ‘তাইওয়ানস নিউ পার্টি’ লেখা ব্যানার ছিল। তাইওয়ানের ছোট এ রাজনৈতিক দলটি চীনের সঙ্গে দ্বীপটির পুনর্মিলনে সমর্থন করে। চীনপন্থি একটি দল হোটেলের বাইরে বিক্ষোভ করেছে বলেও জানায় বিবিসি। তাদের হাতে ধরা ব্যানারে লেখা ছিল, ‘যুদ্ধ উস্কানিদাতা বাড়ি ফিরে যাও’। ১৯৯৭ সালের পর পেলোসি যুক্তরাষ্ট্রের এত শীর্ষ পর্যায়ের সরকারি কোনো কর্মকর্তা যিনি তাইওয়ান সফরে গেলেন। চীন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তাইওয়ান নিজেদের স্বাধীনতা ঘোষণা করলেও বেইজিং তা একেবারেই মানে না। বরং তাইওয়ানকে তারা তাদের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া অংশ মনে করে যারা পুনরায় মিলিত হবে, এজন্য প্রয়োজনে বলপ্রয়োগের হুমকিও চীন দিয়ে রেখেছে। তাইওয়ানের বেলায় অন্যান্য দেশকে চীন তাদের ‘এক চীন নীতি’ অনুসরণ করতে বলে এবং এই নীতি সমর্থনের ওপর বেইজিংয়ের বৈদিশিক নীতি অনেকাংশে নির্ভরশীল।

তাইওয়ানে চীনের নিষেধাজ্ঞা : তাইওয়ান থেকে বেশ কিছু পণ্য আমদানির ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে চীন। নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে বেশ কিছু ফল, দু ধরনের মাছ ও বালু। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গতকাল বুধবার সকালে এ নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে। এর আগে রাতেই এ ধরনের আরেকটি নিষেধাজ্ঞার কথা জানিয়েছিলো বেইজিং কর্তৃপক্ষ। তার আওতায় ছিলো বিস্কুট ও কনফেকশনারী দ্রব্যসহ বেশ কিছু পণ্য। চীনের সঙ্গে তাইওয়ানের বাণিজ্য সম্পর্ক অনেক গভীর এবং তাইওয়ানের রফতানির প্রায় ত্রিশ ভাগই চীনে হয়ে থাকে। দেশ দুটি একে অপরের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার।

ন্যান্সির সফরের কঠোর সমালোচনা ট্রাম্পের : মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের কঠোর সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প তার ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ প্লাটফর্মে লেখেন, ‘উন্মাদ ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ানে কেন’? তিনি আরো লেখেন, ‘সব সময় ঝামেলা সৃষ্টি করে। তিনি যা করেন তার কিছুই ভালো হয় না’।

অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ : উ. কোরিয়া : ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরকে যুক্তরাষ্ট্রের চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ‘নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করে উত্তর কোরিয়া বুধবার কঠোর সমালোচনা করেছে। উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, পিয়ংইয়ং এ ব্যাপারে বেইজিংয়ের অবস্থানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন দেবে এবং তারা এ অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য ওয়াশিংটনকে দায়ী করে। উত্তর কোরিয়ার সরকারি বার্তা সংস্থা ‘কেসিএনএ’ পরিবেশিত এক বিবৃতিতে ওই মুখপাত্র বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অযাচিত হস্তক্ষেপ এবং তাদের আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও সামরিক উস্কানি প্রকৃতপক্ষে এ অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তা নষ্টের মূল কারণ।’ বিবৃতিতে পেলোসির সফর প্রশ্নে বেইজিংয়ের কঠোর প্রতিবাদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলা হয়, রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তাদের পাল্টা পদক্ষেপ গ্রহণের অধিকার রয়েছে। এতে আরো বলা হয়, ‘তাইওয়ান ইস্যুতে বহির্বিশ্বের যেকোনো হস্তক্ষেপের আমরা কঠোর নিন্দা জানাই এবং দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা রক্ষায় চীনের সরকারের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।’ উল্লেখ্য, চীন হচ্ছে উত্তর কোরিয়ার দীর্ঘ দিনের মিত্র ও দাতা দেশ।

উল্লেখ্য, চীনের কঠোর হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে মঙ্গলবার রাতে তাইওয়ান সফরে যান ন্যান্সি পেলোসি। স্থানীয় সময় রাত ১০টা ৪৪ মিনিটে তাকে বহনকারী প্লেনটি রাজধানী তাইপের সোংশান বিমানবন্দরে অবতরণ করে। মার্কিন সামরিক বাহিনীর একটি বিমানে করে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে তিনি তাইপেতে উড়ে যান। ন্যান্সি পেলোসির এই সফরকে ঘিরে চীনের সঙ্গে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এরই মধ্যে চীনে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত তলব করেছে চীনা কর্তৃপক্ষ। চারদিনব্যাপী তাইওয়ানের চারপাশে সামরিক মহড়ার ঘোষণাও দিয়েছে চীনা বাহিনী। সূত্র : নিউ ইয়র্ক টাইমস, রয়টার্স, স্কাই নিউজ, নিউ ইয়র্ক পোস্ট, বিজনেস ইনসাইডার।



 

Show all comments
  • Md Kamal Hossain ৪ আগস্ট, ২০২২, ৪:০৮ এএম says : 0
    আমেরিকার কাজই হলো গনতন্ত্র রক্ষার নামে পৃথিবী ব্যাপী অশান্তি সৃষ্টি করা।নিজেদের স্বার্থের জন্য ঝামেলা করে বিশ্বের দুর্ভোগ সৃষ্টি করে এই সব পরাশক্তি।
    Total Reply(0) Reply
  • Rais Uddin ৪ আগস্ট, ২০২২, ৪:০৯ এএম says : 0
    ইউক্রেন রাশিয়া সংঘাতে পৃথিবীতে অশান্তি নেমে এসেছে! আবার চীন তাইওয়ান আমেরিকা সংঘাত শুরু হলে কী হবে! আমেরিকা কী চাইছে??
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Alim ৪ আগস্ট, ২০২২, ৪:০৯ এএম says : 0
    আল্লাহ এই যুদ্ধ যেনো না হয়, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এমনিতে সাধারণ মানুষের অবস্থা খারাপ। এখন যদি চিন তাইওয়ান যুদ্ধ লাগে অনেক মানুষ না খেয়ে মরতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Moshiur Rahman ৪ আগস্ট, ২০২২, ৪:০৯ এএম says : 0
    চীনকে বুঝতে হবে এটা ভারত না,এটা আমেরিকা। চীন,মায়ানমার এর শাস্তি হওয়া দরকার
    Total Reply(0) Reply
  • চয়ন দাস ৪ আগস্ট, ২০২২, ৪:১০ এএম says : 0
    যেহেতু তাইওয়ানে আমেরিকার তৃতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তির আগমনে চীন যে হুমকি ধামকি দিয়েছিল , অন্তত এটার মান রক্ষার জন্যই একটু সুক্ষ আয়োজন বহি বিশ্বের কাছে । তবে ভবিষ্যতে চীন এবং আমেরিকা যে নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে জড়াবে এবং সমগ্র বিশ্ব তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের তিক্ততা স্বাদ গ্রহণ করবে তা সময়ের অপেক্ষা মাত্র!!
    Total Reply(0) Reply
  • Hossain Mohammad Titu ৪ আগস্ট, ২০২২, ৪:১০ এএম says : 0
    পুরো পৃথিবীতে যত যুদ্ধ বিদ্রোহ হচ্ছে তার 70% বেশি আমেরিকা দায়ী। ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ান সফরে এটা তার জলন্ত একটা প্রমাণ।
    Total Reply(0) Reply
  • Mominul Hoque ৪ আগস্ট, ২০২২, ৯:৪৩ এএম says : 0
    আমেরিকার অস্ত্র ব্যবসা রক্ষা করার জন্য এসকল প্রোপাগান্ডা করছে সারা বিশ্বে। তারা গণতন্ত্রের নামে বিশ্নের শান্তিপ্রিয় মানুষের শান্তি নষ্ট করছে। অশান্তির আগুনে ঘি ঢালছে তারা বারবার!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ