Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

আড়ালেই মাস্টারমাইন্ডরা

আওয়ামী লীগ নেতা টিপুসহ জোড়া খুন

সাখাওয়াত হোসেন | প্রকাশের সময় : ৩০ জুলাই, ২০২২, ১২:০২ এএম

আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজ ছাত্রী সামিয়া আফনান প্রীতি খুনের ঘটনায় এখনও ব্যবহৃত অস্ত্র ও মোটরসাইকলটি উদ্ধার করতে পারেনি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। জোড়া খুনের নেপথ্যে জড়িত মাস্টারমাইন্ডরাও অধরা। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত শুটার ও অর্থদাতাসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব ও ডিবি পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব ও ডিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী বা মাস্টারমাইন্ড আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও ফ্রিডম মানিকের অন্যতম সহযোগী মুছাসহ আরও অনেকে জড়িত। তারা বিদেশে থাকায় তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের কয়েকজনকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
মামলার তদারকি কর্মকর্তা ডিবির মতিঝিল জোনের ডিসি রিফাত রহমান শামীম ইনকিলাবকে বলেন, চাঞ্চল্যকর এই জোড়া খুনের ঘটনায় বেশ কয়েকজন এখনও পলাতক রয়েছে। হত্যাকান্ডের সময় যে অপরাধী মোটরসাইকেল চালিয়ে খুনীকে নিয়ে পালিয়ে যায় তাকে শনাক্ত করা হয়েছে। সে দেশের বাইরে অবস্থায় করছে। তাকে গ্রেফতার এবং দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ চলছে। জড়িত আরো বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করার জন্য ডিবি কাজ করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে জড়িতসহ যারাই সম্পৃক্ত আছে সবাইকেই আইনের আওতায় আনা হবে।
সূত্র জানায়, ওমর ফারুক ওরফে কানা ফারুক, নাসির উদ্দিন ওরফে কিলার নাসির, সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ ও মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্যা পলাশকে র‌্যাব গ্রেফতার করে। এ ছাড়া ডিবি পুলিশ ঘটনার পর শুটার মাসুম ওরফে আকাশ, মতিঝিলের স্থানীয় যুবলীগ নেতা আরফান উল্লাহ খান ওরফে দামালকে গ্রেফতার করে। দামালের কাছ থেকে যে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে, সেটি সিআইডিতে পাঠিয়েছে ডিবি পুলিশ। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের এক নেতা জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। আরও গ্রেফতার হয়েছে নাসির উদ্দিন ওরফে কিলার নাসির, সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ, মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্যা পলাশ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিবির একজন কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, টিপুকে সরাসরি শুট করা মাসুম ওরফে আকাশ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডে শুটার মাসুম অর্থের বিনিময়ে এমন নৃসংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তবে এর নেপথ্যে কারা জড়িত তা জানা যায়নি। নেপথ্যে জড়িতদের শনাক্ত করনে তদন্ত চলছে। হত্যাকাণ্ডের আগেই মূল পরিকল্পনাকারী মাস্টারমাইন্ড মুছা দুবাই পালিয়ে যায়। এই হত্যাকাণ্ডে শুধু মুছাই নয়, এর পেছনে আন্ডারওয়ার্ল্ড ও আন্ডারগ্রাউন্ডের আরও সন্ত্রাসী জড়িত। তাদের মধ্যে কেউ বিদেশে বসে আবার কেউ কারাগারে বসে নির্দেশ দিয়ে কিলার ভাড়া করে এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে।
তদন্ত ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মতিঝিল একটি ব্যবসায়ী জোন এলাকা। প্রতি মাসে এখান থেকে অন্তত ১০ কোটি টাকা চাঁদা তোলা হতো। আর এই চাঁদার ভাগ-ভাটোয়ারা হতো ক্যাসিনো কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার ঢাকা মহানগর যুবলীগের দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ও নিহত জাহিদুল ইসলাম টিপুর মধ্যে। ওই চাঁদার কিছু অংশ যেত আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও ফ্রিডম মানিকসহ শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কাছে। সম্রাট ও খালেদ গ্রেফতার হওয়ার পর পুরো মতিঝিলকেন্দ্রিক যে চাঁদা তোলা হতো তা সম্পূর্ণ তুলতেন টিপু ও তার লোকজন। টিপুর মাধ্যমে সেই টাকার একাংশ চলে যেতে ওই আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের কাছে। বছর দুয়েক ধরে বিদেশে অবস্থানরত সন্ত্রাসীদের কাছে চাঁদার টাকা না পৌঁছায় টিপুকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করা হয় বলে ধারণা করছে তদন্তকারীরা। আর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে মুছা। এ ছাড়া রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট ও ফুটপাত থেকে শত শত কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হলেও সেই টাকার ভাগ টিপু কাউকেই দিতেন না বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানতে পেরেছে। ওই টাকার ভাগ না পেয়ে রমজানের আগেই টিপুকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়।
এ ছাড়া বোচা বাবু হত্যাকাণ্ডের পর স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বোচা বাবুর বাবা আবুল কালাম আজাদকে বলতেন টিপুই তার ছেলেকে হত্যার নেপথ্যে জড়িত ছিল। প্রায় প্রতিদিনই টিপুকে সন্দেহ করে এমন কথা বলে টিপুর সঙ্গ ছাড়তে বলা হয়। কিন্তু একদিকে ছেলে হত্যার বিচার, অন্যদিকে টিপুকে ছেড়ে যেতে না পারা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছিলেন আবুল কালাম আজাদ। বোচা বাবু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ওমর ফারুক ওরফে কানা ফারুক, কাইল্যা পলাশসহ অন্য আসামিদের বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর টিপুর শরণাপন্ন হয়। তারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল না বলেও জানায়। কিন্তু বোচা বাবু হত্যা মামলাটির সম্পূর্ণ খরচ চালান টিপু। এসব বিষয়েও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে টিপুর অন্তর্দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। টিপুকে যেদিন হত্যা করা হয়, সেদিন গাড়ির পেছনে বসা ছিল বোচা বাবুর বাবা আবুল কালাম আজাদ ও টিপুর আরেক বন্ধু।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বোচা বাবু হত্যা মামলা যদি আবুল কালামের জন্য আটকে থাকে তবে টিপুকে টার্গেট করা হবে কেন? একই গাড়িতে আবুল কালাম আজাদও ছিলেন। এসব বিষয় মাথায় রেখেই তদন্ত চলছে। বিদেশে বসে দেশে কারা কলকাঠি নাড়ছে তাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, টিপু হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকজন র‌্যাবের নজরদারিতে রয়েছে। গ্রেফতারদের কাছ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। আন্ডারওয়ার্ল্ডের পাশাপাশি আন্ডারগ্রাউন্ডে যারা জড়িত তাদেরও শনাক্ত করা হচ্ছে। দেশে তাদের অনুসারীদের গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলছে। গত ২৪ মার্চ রাত সোয়া ১০টার দিকে মতিঝিল এজিবি কলোনি কাঁচাবাজার সংলগ্ন রেস্টুরেন্ট থেকে বাসায় ফেরার পথে শাহজাহানপুরে ইসলামী ব্যাংকের পাশে বাটা শোরুমের সামনে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সময় গাড়ির পাশে রিকশায় থাকা সামিয়া আফরান প্রীতি নামে এক কলেজছাত্রীও নিহত হন। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের পর ওইদিন রাতেই শাহজাহানপুর থানায় নিহত টিপুর স্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সংরক্ষিত কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদেরদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন।



 

Show all comments
  • jack ali ৩০ জুলাই, ২০২২, ১০:৪৬ পিএম says : 0
    May Allah's curse upon awamiinhuman and wipe out from our country so that peace will come back.
    Total Reply(0) Reply
  • Mukhtar Joy ৩০ জুলাই, ২০২২, ৩:২৩ এএম says : 0
    মহিলা হত্যার বিচার চাই আওয়ামী লীগ হত্যার বিচার চাই না।
    Total Reply(0) Reply
  • Deek Light ৩০ জুলাই, ২০২২, ৩:২৪ এএম says : 0
    সেখানে একজন শিক্ষার্থী বোনের মৃত্যু হয়েছে, এর সাথে জড়িত সবার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Ahad ৩০ জুলাই, ২০২২, ৩:২৪ এএম says : 0
    সাথে একটা নিরীহ কলেজ ছাত্রীকে প্রান দিতে হলো,,
    Total Reply(0) Reply
  • Md Shariful Islam ৩০ জুলাই, ২০২২, ৩:২৪ এএম says : 0
    এদের নিজেদের মাঝে কামড়াকামড়ির কারণে আরো এক সাধারণ বোনের জীবন চলে গেল। আল্লাহ আপনি সবাইকে মাফ করে দিন।
    Total Reply(0) Reply
  • Ismail Sagar ৩০ জুলাই, ২০২২, ৩:২৫ এএম says : 0
    বাংলাদেশে মানুষ হত্যা করা, এখুন পুতুল খেলার মতো। আমার দেখা অধিকাংশ হত্যাকারি উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে বড় বড়ো নেতা হয়ে গিয়েছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুন

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ