পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
জাতীয় নির্বাচনের আর দেড় বছরের মতো বাকি। ইতোমধ্যে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ অন্যান্য দল নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক কর্মকা ন্ডে সরব হয়ে উঠেছে। বিএনপি’র এখন একটাই দাবি, আগামী নির্বাচন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে না করা। নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সে নির্বাচনে যাবে না। তার দাবির প্রতি জোরালো সমর্থন পেতে ইতোমধ্যে সংসদের বাইরে থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপ, মতবিনিময় শুরু করেছে। ডান, বাম এবং মধ্যপন্থী সব দলের সাথেই সংলাপে বসেছে। এসব ছোট ছোট দলের সাথে বৈঠকে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়া এবং দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। বিএনপি’র লক্ষ্য ছোট ছোট দলগুলোকে একই ছাতার নিচে এনে দাবি আদায়ে একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। তাদের নিয়ে আন্দোলন করে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় করা। দলটি ইতোমধ্যে সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করা শুরু করেছে। সরকারি দলের বিভিন্ন মন্তব্যের প্রতিবাদে সভা-সমাবেশ করে পাল্টা জবাব দিচ্ছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি’র এ ধরনের কর্মসূচি পালন করা স্বাভাবিক।
দুই.
রাজনৈতিক দল হিসেবে যেকোনো দলেরই ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন ও চেষ্টা থাকা স্বাভাবিক। এটাই তার কাজ। ক্ষমতায় যেতে না পারলেও কার্যকর বিরোধী দল হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। ক্ষমতায় গেলে জনগণের কল্যাণে কাজ করবে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, বৃহৎ রাজনৈতিক হিসেবে বিএনপি জনগণকে কি স্বপ্ন দেখিয়ে ক্ষমতায় যেতে চায়? তার মিশন ও ভিশন কি? যে জনগণ তাকে ক্ষমতায় বসাবে, সে জনগণের কল্যাণে কি করবে, তা কি পরিস্কারভাবে তুলে ধরতে পারছে? পারছে না, কিংবা তুলে ধরছে না। কেন তুলে ধরছে না, তা দলটির শীর্ষ নেতারাই ভালো বলতে পারবেন। তাদের চলমান সভা-সমাবেশে কেবল সরকারের সমালোচনা, সরকার পতনের কথা এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ের কথাই বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। সাধারণ মানুষের এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, দুবেলা দুমুঠো খেয়ে কোনো রকমে বেঁচে থাকা। সরকার নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। বিদ্যুতের সংকট কাটাতে পারছে না। এর পরিবর্তে, গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে, পানি ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। সাধারণ মানুষের এই ত্রাহী অবস্থার মধ্যে সরকারের এসব সিদ্ধান্ত ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোটি কোটি মানুষ বেকার হয়ে গেছে। শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সরকার তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারছে না। বলা হয়ে থাকে, দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী দরিদ্র হয়ে গেছে। দারিদ্র্যসীমা ২২ থেকে ৩০ শতাংশে উঠেছে। জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি ও বিদ্যুৎ সংকটের জন্য সরকার আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি ও সংকটের কথা বলছে। অথচ পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও জিনিসপত্রের দাম কমাচ্ছে না। কমাতে পারছে না। আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে এক সয়াবিন তেলের দাম আকাশ ছোঁয়া করে ফেলেছে। এ দাম এখন আন্তর্জাতিক বাজারে কমলেও তা কমাতে পারছে না। সরকার দাম কমিয়ে মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও ব্যবসায়ীরা আগের দামেই বিক্রি করছে। সরকারের কথা পাত্তা দিচ্ছে না। এটা সরকারের চরম ব্যর্থতা। শুধু সয়াবিন তেল নয়, অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে। এখন সরকারের আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির অজুহাতটি সাধারণ মানুষের কাছে ‘রাখাল বালকের গল্পে’র মতো হয়ে গেছে। কারণ, সাধারণ মানুষ বরাবরই দেখছে, জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত দিলেও পরবর্তীতে দাম কমলেও তা কার্যকর করছে না। ফলে যখন সত্যি সত্যি বিশ্ববাজারে সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে, তখন আর সাধারণ মানুষ তা আমলে নিচ্ছে না। এই যে বিদ্যুৎ সংকট চলছে, তা উৎপাদনে যে জ্বালানি প্রয়োজন তার দাম বাস্তবিকই বৃদ্ধি পেয়েছে। সচেতন মহল তা মানলেও সাধারণ মানুষ তা মানতে নারাজ। তারা কেবল জানে, সরকার ব্যাপক বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। শতভাগ বিদ্যুতায়ন করেছে। বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার উৎসব করেছে। এমনকি বিদ্যুৎ রফতানির কথাও বলেছে। বিদ্যুতের এমন স্বয়ংসম্পূর্ণতার পরও কেন সংকট দেখা দেবে, তা সাধারণ মানুষ মানতে চাইবে কেন? তাদের প্রশ্ন, এত বিদ্যুৎ গেল কই? এ প্রশ্ন তারা করতেই পারে। তারা বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারের সাফল্য এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতার কথাকে ‘বাগাড়ম্বর’ কিংবা ‘উন্নয়নের ফানুস ফুটো হয়ে গেছে’ বলতেই পারে। এখন সরকার যতই ব্যাখ্যা দিক না কেন, তাদের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। কারণ, তারা চারদিক থেকে সংকটে পড়েছে। জীবন চালানোই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। কারো কারো মনে শ্রীলঙ্কার মতো দশা হওয়ার আতঙ্কও বিরাজ করছে। বৈদেশিক ঋণের কারণে শ্রীলঙ্কা যেভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে, দুই-তিন বছর পর বাংলাদেশেরও সেরকম অবস্থা হতে পারে। ইতোমধ্যে অর্থনীতিবিদরা সে ধরনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এক বিদ্যুৎ খাতেই বিদেশি ঋণের পরিমান ১ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। অন্যান্য খাতসহ মোট ঋণের পরিমাণ ৮ লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকা। দুই-তিন বছর পর থেকে এ ঋণ যখন পরিশোধ করা শুরু হবে, তখন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যাবে। শ্রীলঙ্কার মতো না হলেও অত্যন্ত শোচনীয় অবস্থার সৃষ্টি হবে। স্বাভাবিকভাবেই তখন সরকার যেভাবে বাংলাদেশকে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হিসেবে তুলে ধরেছে, তা যে ফাঁকা বুলি ছাড়া কিছু নয়, সেটা পরিস্কার হয়ে যাবে। বড় বড় প্রকল্পগুলো তখন স্থাপত্য শিল্পের নির্দশন হয়ে দাঁড়াবে, যা অর্থনৈতিক উন্নয়নে খুব বেশি ভূমিকা পালন করতে পারবে না। শ্রীলঙ্কাও এরকম বড় বড় প্রকল্প নিয়ে উন্নয়নের ফানুস উড়িয়েছিল। শেষ পর্যন্ত এগুলো দেশটির অর্থনীতিকে বাঁচাতে পারেনি। দেউলিয়া হয়ে গেছে। শ্রীলঙ্কার রাজাপকসের সরকার এসব প্রকল্প নিয়ে এন্তার দুর্নীতি, লুটপাট ও অর্থপাচার করেছে। বাংলাদেশেও মেগা প্রকল্পসহ নানা প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও শ্রীলঙ্কার মতো উপসর্গ অর্থনীতিবিদরা দেখছেন।
তিন.
তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেয়া হয়, আগামী নির্বাচন সরকার নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে রাজী হলো এবং সে নির্বাচনে বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় গেল, তখন দেশের যে সংকট তা তারা কিভাবে মোকাবেলা করবে? এ পরিস্থিতি উত্তরণে তারা কি করবে? কারণ, আগামী নির্বাচনের পরের বছর থেকেই বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হবে এবং ইতোমধ্যে যে আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে, তা মোকাবেলায় বিএনপি কি উদ্যোগ নেবে, এ পরিকল্পনা কি দলটি করেছে? এ পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলেও জনগণের জীবনমান উন্নয়নে কি ধরনের পদক্ষেপ নেবে, তা কি তুলে ধরছে? সাধারণ মানুষ তো দেখছে, দলটি এখন যে রাজনীতি করছে, তার মধ্যে তাদের কল্যাণের সুনির্দিষ্ট কোনো প্রতিশ্রæতি তুলে ধরছে না। তাদের সামনে যদি সুনির্দিষ্ট কোনো কল্যাণের প্রতিশ্রæতিই না থাকে, তাহলে তারা কেন ও কি কারণে বিএনপিকে নির্বাচিত করবে? ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যেমনই হোক, অনেকের পছন্দ না হলেও সে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প তুলে ধরে নানা উন্নয়নের ফুলঝুরি সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরছে। নানা প্রতিশ্রæতি দিচ্ছে। তার রাজনৈতিক ও উন্নয়ন ‘দর্শন’ তুলে ধরছে। বিএনপি কি এ কাজটি করছে? করছে না। এমনকি দলটির প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক ও উন্নয়নের যে ‘দর্শন’, তাও তুলে ধরতে দেখা যাচ্ছে না। কেবল এ সরকারের বিদায় এবং নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবী নিয়ে রাজনীতি করছে। এ রাজনীতিতে দলটির ‘দর্শন’ এবং সাধারণ মানুষের কল্যাণের প্রতিশ্রæতি কোথায়? ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যে কথায় কথায় বলে, বিএনপি জনবিচ্ছিন্ন একটি দল, তা এমনি এমনি বলে না। বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ যদি এ কথা আমলে নিয়ে জনসম্পৃক্ত ও জনকল্যাণে তার ‘ভিশন’ ও ‘মিশন’ তুলে ধরে রাজনীতি করত, তাহলে আওয়ামী লীগ এ কথা বলার সুযোগ পেত না। জনগণও তাদের নিয়ে আশাবাদী হতো এবং কথা বলত। জনগণ তো দেখছে, বিএনপি মুখে রাজনীতি করছে, ক্ষমতায় গেলে তাদের জন্য কি করবে, এ কথা বলছে না। বাস্তবতা হচ্ছে, সাধারণ মানুষ সরকারের প্রতি বিরূপ হলেও বিকল্প হিসেবে বিএনপিকে নিয়ে যে আশাবাদী হবে, এমন ভরসা পাচ্ছে না। অথচ দলটির প্রতি বিপুল মানুষের সমর্থন রয়েছে। এই সমর্থকরাই হতাশা ব্যক্ত করছে দলটির রাজনৈতিক ধারা দেখে। এমন সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা সত্তে¡ও দলটির নেতৃবৃন্দ সাধারণ মানুষের পাল্স ধরতে পারছে না, কিংবা বুঝতে পারছে না কেন? একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল জনকল্যাণের ‘দর্শন’ না নিয়ে রাজনীতি করছে, এটা শুধু বিস্ময়করই নয়, দুঃখজনকও বটে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যখন ক্ষমতাসীন হন, তখন দেশ ও জনগণের উন্নয়ন কিভাবে করা যায়, সেটাই ছিল তাঁর একমাত্র চিন্তা-চেতনা ও পরিকল্পনা। দেশের উন্নয়নে তিনি ১৯ দফা কর্মসূচি দিয়েছিলেন। এই দফা নিয়েই তিনি নিরলস ছুটেছিলেন। জনগণের সামনে ‘সবুজ বাংলাদেশ’ দর্শন দিয়েছিলেন। এ দর্শন বাস্তবায়নে তিনি খাল কাটা কর্মসূচিসহ নানা উদ্যোগ নিয়ে নিরলস কাজ করেছিলেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় এসে ২১ দফা কর্মসূচি দিয়েছিলেন। জনগণের সামনে দর্শন দিয়েছিলেন, ‘৬৮ হাজার গ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে।’ ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দর্শন ছিল, ‘দিন বদলের পালা।’ এরপর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ‘উন্নত দেশে’ পরিণত করা। ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি জনগণের সামনে কি ‘দর্শন’ তুলে ধরেছে, তা কি কেউ সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারবে? একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের তো সরকারবিরোধী রাজনীতির পাশাপাশি ক্ষমতায় গেলে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কি করবে, তার একটি ‘দর্শন’ থাকা খুবই স্বাভাবিক। দেখা যাচ্ছে, বিএনপি’র মতো একটি দল, যে কিনা তিন বার ক্ষমতায় ছিল, দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বৃহৎ বিরোধী দল হিসেবে সংসদে ছিল, সেই দলের এখন রাজনীতি থাকলেও, সুনির্দিষ্ট ‘দর্শন’ অনুপস্থিত। এমনকি দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ‘দর্শন’ও তারা তরুণ প্রজন্মসহ সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরছে না, কিংবা তুলে ধরতে ব্যর্থ হচ্ছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের দেড় বছর আগে ২০১৭ সালের মে মাসে দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ‘ভিশন ২০৩০’ নামে দেশ ও জনগণের কল্যাণে একটি ‘দর্শন’ ও কর্মসূচি তুলে ধরেছিলেন। এ কর্মসূচিতে সুশাসন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, সন্ত্রাস দমন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দৃঢ় করা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষিত বেকারদের ভাতা প্রদান, গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনার তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ করা, প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতায় ভারসাম্য আনাসহ নানা কর্মসূচি তুলে ধরেছিলেন। তাঁর এই ‘ভিশন ২০৩০’ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ হাসি-ঠাট্টা করলেও জনগণের সামণে দলটির এ ‘ভিশন’ ছিল। অর্থাৎ বেগম খালেদা জিয়া জনগণের সামনে একটি ‘দর্শন’ তুলে ধরেছিলেন। দুঃখের বিষয়, বর্তমান বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ খালেদা জিয়ার তুলে ধরা এ ‘ভিশন’ জনগণের সামনে বারবার তুলে ধরা দূরে থাক, ভুলেও তা মুখে আনেন না। কিংবা সময়ের প্রেক্ষাপটে সংশোধন-পরিবর্ধন বা নতুন কোনো ভিশন জনগণের সামনে তুলে ধরছেন না। তারা কেবল নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের দাবি নিয়ে পড়ে আছেন। জনসাধারণ যে নিদারুণ কষ্ট ও দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে, ক্ষমতায় গিয়ে এ থেকে উত্তরণে কি পদক্ষেপ নেবেন বা দেশ যে শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে, তা কিভাবে সামাল দেবেন, এ নিয়ে কোনো কর্মসূচি বা ‘দর্শন’ তুলে ধরছেন না। ভারতের দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী আমআদমী পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল ক্ষমতাসীন হয়েছেন, শুধু জনগণের কল্যাণে তার নানামুখী কর্মসূচি ও ‘দর্শন’ তুলে ধরে। জনগণও তার এ কর্মসূচিতে আশ্বস্থ হয়ে তার ছোট দলকেই বিজয়ী করেছে। ক্ষমতাসীন হয়ে তিনি জনকল্যাণে আরও বেশি কাজ করেছেন। যার ফলে জনগণ বারবার তার দলের হাতে দিল্লীর শাসনভার তুলে দিয়েছে। সর্বশেষ গুজরাট নির্বাচনে কেজরিওয়াল জনগণকে প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন, সেখানে তার দল বিজয়ী হলে জনগণকে ৩০০ ইউনিট বিদ্যুৎ ফ্রি দেবেন। বাস্তবতা হচ্ছে, জনগণ রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে এ ধরনের সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রæতিই আশা করে এবং এ আশা নিয়েই তাদের নির্বাচিত করে। বিএনপি কি জনগণকে এ আশা দিতে পারছে?
চার.
বিএনপি’র বর্তমান রাজনীতি পর্যবেক্ষণ করলে একজন সাধারণ মানুষও বলে দিতে পারে, জনগণের কল্যাণে দলটি’র কোনো কর্মসূচি ও ‘দর্শন’ বলে কিছু নেই। ক্ষমতায় গিয়ে জনগণের জন্য কি করবে, তা তার নেতৃবৃন্দ’র কাছ থেকে শোনা যাচ্ছে না। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের অপরিহার্যতা ক্ষমতাসীন দল ছাড়া কেউ অস্বীকার করছে না। এ নিয়ে বিএনপি আন্দোলন করুক তাতে কারো আপত্তি নেই, তবে এর পাশাপাশি ক্ষমতায় গেলে জনগণের জন্য কি করবে, এ কর্মসূচিও তো তুলে ধরতে হবে। দেশ যে চরম অর্থনৈতিক সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তা উত্তরণে কি পদক্ষেপ নেবে, নিদেনপক্ষে জিয়াউর রহমানের উন্নয়ন ‘দর্শন’ এবং বেগম খালেদা জিয়ার ‘ভিশন ২০৩০’র কর্মসূচিগুলোও তো তুলে ধরতে পারে। বিএনপি’র উচিৎ হবে, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন থেকেই জনগণের জীবনমান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের কার্যকর কর্মপদক্ষেপ, সুশাসন, আইনের শাসন, মানবাধিকার রক্ষা, বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করা, মানসম্পন্ন শিক্ষা ও উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, গুম, খুন, বিচারবর্হিভূত হত্যাকাÐের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের আইনের আওতায় আনা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করাসহ সুচিন্তিত কর্মসূচি ও গ্রহণযোগ্য একটি ‘দর্শন’ তুলে ধরা, যাতে জনগণ তার প্রতি অধিক আশাবাদী হতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।