পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নতুন কিছু নয়। গত কয়েক মাস ধরে সাধারণ মানুষ মূল্যবৃদ্ধির জাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে। তাদের জীবনযাপন অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে সরকারের কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হচ্ছে না। সরকার শুধু তার রুটিন কাজ করে যাচ্ছে। টিসিবি’র ট্রাক বৃদ্ধি ও সাময়িক রেশন কার্ড দেয়া ছাড়া দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। অন্যদিকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে ব্যবসায়ীদের চিরকালের নানা অজুহাতকেই সমর্থন করে যাচ্ছে। পাশাপাশি বলছে, দেশের মানুষের আয় বেড়েছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলেও মানুষের সমস্যা হচ্ছে না। সরকারের এমন প্রবণতায় সাধারণ মানুষকে দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কোনো গতি থাকে না। তাদের সুবিধা দেখার মতো কেউ নেই। এ সমস্যা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠিকেন্দ্রিক নয়, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবনযাপনের সমস্যা। তাদের জীবনযাপন সহজ করার দায়িত্ব সরকারের। অথচ, এক্ষেত্রে সরকার চরম উদাসীন হয়ে আছে। জনগণের কাছে কোনো জবাবদিহিও করছে না। উল্টো ঈদের তিনদিন যেতে না যেতেই সরকার ব্যবসায়ীদের সাথে বসে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৩৮ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ শত দুঃখ-কষ্টের মাঝেও করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে ঈদের যে আনন্দে শরীক হয়েছিল, তাতে যেন বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিবাদ, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী এবং সমর্থকরাও তীব্র প্রতিবাদে ফেটে পড়েছে। এসব বাদ-প্রতিবাদে সরকারের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। সরকার সমর্থক একটি পত্রিকায় বলা হয়েছে, সিন্ডিকেটের কারসাজিতে তেলের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এ থেকে তিনটি বিষয় মনে করা যেতে পারে। প্রথমত, সিন্ডিকেটের কাছে সরকার অসহায় ও জিম্মি। দ্বিতীয়ত, যারা সিন্ডিকেট করেছে তারা ক্ষমতাসীন দলের কাছের লোক এবং তাদের কাছ থেকে সুবিধাপ্রাপ্ত। তৃতীয়ত, সরকার নিজেই ব্যবসায়ীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। তা নাহলে, চুপ থাকবে কেন? জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না কেন? সিন্ডিকেট কি সরকারের চেয়েও শক্তিশালী? এসব প্রশ্ন তোলা অযৌক্তিক নয়। আরেকটি প্রশ্ন আসতে পারে, সরকার সাধারণ মানুষের জন্য কিনা? এ মুহূর্তে যদি জরিপ করা হয়, তাহলে ফলাফল সরকারের পক্ষে যাওয়ার কোনো কারণ নেই।
দুই.
সরকার প্রায়ই বলে থাকে, সে ব্যবসাবান্ধব। এর সরল অর্থ হচ্ছে, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশ ও উন্নয়নে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক ও সহায়ক। এতে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের মানুষ ভাল থাকবে। ব্যবসার প্রসার মানে জিনিসপত্রের দামও মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকা। তবে সরকারের এ কথার মধ্যে যে ফাঁক রয়েছে, তা সাধারণ মানুষ এখন বুঝতে পারছে। তারা বুঝতে পারছে, সরকার ‘ব্যবসাবান্ধব’ নয়, ‘ব্যবসায়ী বান্ধব’। ব্যবসা বৃদ্ধি নয়, কতিপয় ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখা এবং তাদের বন্ধু হওয়ার নিমিত্তেই কথাটি বলেছে। পাশাপাশি নিজেও ব্যবসা করছে। অনেকটা গোপনে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। যেমন গোপনে পানির বিল বাড়িয়ে দেয়া, বিদ্যুৎ বিল কখনো কখনো বেশি নিয়ে যাওয়া, নানা ভ্যাট-ট্যাক্স, যা মোবাইল কোম্পানিগুলোর মতো হিডেন কস্ট বা অদৃশ্য খরচ আদায় করে নেয়ার মতো চালাকির আশ্রয় নিচ্ছে। গত সপ্তাহে আমার পরিচিত এক সাংবাদিক তার বাসার বিদ্যুৎ বিল নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে লিখেছে, আমি বাসায় বিদ্যুৎ দিয়ে যা যা ব্যবহার করি তাই রয়েছে। এগুলোর স্বাভাবিক ব্যবহার করে গত মাসে যে বিল এসেছে, এ মাসে এসেছে তার তিন গুণ। এটা কিভাবে হলো? এর রহস্য কি? শুধু এই সাংবাদিকই নয়, আরও অনেককেই একই কথা বলতে শুনেছি। এসব বিলকে একসময় বলা হতো ভুতুড়ে বিল। আসলে ভুতুড়ে বিল গড়পড়তা সবার ক্ষেত্রে হয় না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়। যখন সবার বিদ্যুৎ বিল সবসময়ের চেয়ে দ্বিগুণ কিংবা তিনগুণ হয়ে যায়, তখন বুঝতে হবে এটা সরকার জেনে-বুঝেই করছে। সরকার সাধারণ মানুষের পকেট কেটে নিচ্ছে। এখন সাধারণ মানুষ কার কাছে যাবে? কার কাছে প্রতিবাদ করবে? কে প্রতিকার করবে? যে সরকার নিজেই জনগণের পকেট কেটে নেয় বা জনগণের সাথে ব্যবসা করে, তার পক্ষে তো এর সমাধান করা সম্ভব নয়। দেশে কার্যকর বিরোধীদল আছে, এ বিশ্বাসও সাধারণ মানুষ মধ্যে বদ্ধমূল হয়নি। ফলে সরকার সাধারণ মানুষের সাথে যেমন খুশি তেমন আচরণ করছে। সরকারও ভাল করে জানে, সাধারণ মানুষের পক্ষে কিছুই করার নেই। তাদের পক্ষে কথা বলা ও প্রতিবাদ করারও কেউ নেই। তাদের উপর স্টিম রোলার চালিয়ে দিলেও কিছু করতে পারবে না। যেভাবে রাখা হবে, সেভাবেই তারা থাকবে। কোনো দেশের সরকার যখন এমন আচরণ করে, তখন সে দেশের সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ সহসা কমার কোনো কারণ থাকতে পারে না। সরকার যখন সিন্ডিকেটভুক্ত ব্যবসায়ীদের মতো চালাকি করে, তখন সাধারণ মানুষের কিছু করার থাকে না। সরকার শুধু গোপনে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির দাম বাড়ায় না, প্রকাশ্যেও বাড়ায়। গণশুনানী নামক প্রহসনের মাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে বাড়িয়ে দেয়। সাধারণ মানুষ কোথা থেকে টাকা দেবে, তা সরকার চিন্তা করে না। জায়গা-জমি, ঘটি-বাটি বিক্রি করে দেবে, নাকি না খেয়ে দেবে তা যেন সরকারের দেখার বিষয় নয়। টাকা দিতেই হবে, এটাই চূড়ান্ত। একে আধুনিককালের জমিদারী প্রথা বলা যেতে পারে। অন্যদিকে, সরকার জনগণের সামনে তার উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে সুশোভিত করে তুলে ধরে বলছে, আমরা উন্নতির শিখরে যাচ্ছি। এই তো আর কিছুকাল মাত্র। আগে গ্রামে শিশুদের কোনো দূরের পথ হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় যেমন তার অভিভাবক বলত, এই যে আর সামান্য পথ। কিছু দূর হাঁটলেই পৌঁছে যাব। শিশুও এমন আশ্বাসে হেঁটে চলে। তবে তার পথ আর শেষ হয় না। সরকার সাধারণ মানুষকে এই শিশুর সামান্য পথ দেখানোর মতো করেই বলছে, এই তো আর একটু, তারপরই আমরা স্বর্ণশিখরে পৌঁছে যাব।
সরকারের উন্নয়নের বড় একটি অবলম্বন হচ্ছে, দেখতে সুন্দর কিছু বড় বড় প্রকল্প বা পপুলার মনুমেন্টাল স্ট্রাকচার এবং পরিসংখ্যান। যেমন জিডিপি ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি। যেগুলো সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা সহজ নয়। অন্যদিকে পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে, কর্ণফুলী টানেল। এগুলো দেখতে অনেক সুন্দর, আলো ঝলমল, যাওয়া-আসার জন্য মনোরম ও মসৃণ পথ। সরকার সাধারণ মানুষকে বোঝাতে চাচ্ছে, এগুলো বাস্তবায়িত হলে ব্যাপক উন্নতি হবে। তবে কতটুকু উন্নতি হবে এবং এগুলো থেকে মানুষের আয় বাড়বে কিনা, এ তথ্য তুলে ধরা হয় না। আবার এগুলো যে বিনা পয়সায় ব্যবহার করা যাবে, তা নয়। চলাফেরা করার সময় টোল-ট্যাক্স দিতে হবে। যেমন পদ্মাসেতু খুলে দেয়ার পর এর উপর দিয়ে যাত্রী ও মালামাল পরিবহনকারী যানবাহনকে যে টোল দিতে হবে, তা যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়ার সাথেই কেটে রাখা হবে। মালামালের সাথে টোল ফি ধরে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়া হবে। দেখা যাচ্ছে, এগুলোও ব্যবসার একটি উৎস হয়ে দাঁড়াবে। সরকার বলতে পারে, মানুষ টোল-ট্যাক্স না দিলে সরকার চলবে কিভাবে? এ প্রশ্নের জবাবে বলা যায়, মানুষ ট্যাক্স দেয় সরকার চালানোর জন্য নয়, তাদের সেবা করার জন্য। সরকার কি মানুষের এ সেবা করতে পারছে? তাদের জীবনমানের উন্নয়ন করতে পেরেছে? যদি এ নিশ্চয়তা থাকত, নান্দনিক এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের পর মানুষের আর্থিক উন্নতি তরতর করে বেড়ে যাবে, তাদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, তাহলে কোনো সমস্যাই থাকত না। তবে এমন হওয়ার সম্ভাবনা যে ক্ষীণ, তা বোধকরি ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ নেই। মাথাপিছু আয়ের বিষয়টি সবসময়ের জন্যই শুভংকরের ফাঁকি। একজন পরিবারের সবাই আয় করে না। পাঁচজনের পরিবার হলে এক বা দুইজন আয় করে। বাকিদের আয় নেই। মাথাপিছু আয়ের হিসাবে বাকিরাও উপার্জন করে। ফলে হিসাবটি মানুষের সামনে ফানুস হয়েই রয়েছে। ইতোমধ্যে মাথাপিছু আয় বেড়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছে সরকার। বর্তমান মাথাপিছু আয় ২৫৯১ ডলার থেকে ২৮২৪ ডলার হয়েছে। এই ঘোষণার মধ্যে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি জায়েজ করার একটা চেষ্টে রয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, সাধারণ মানুষ দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের খরচ কমাতে থাকবে।
তিন.
করোনায় দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ দরিদ্র হয়ে গেছে। অসংখ্য মানুষের আয় কমে গেছে। বেকারের সংখ্যা কোটি কোটি। আইএলও’র হিসাবে এখন দেশে বেকারের সংখ্যা ৪ কোটি। প্রকৃতপক্ষে সংখ্যাটি আরও বেশি হবে। কারণ, প্রতিবছর শ্রমবাজারে ঢোকার জন্য ২৬-২৭ লাখ মানুষ অপেক্ষায় থাকে। তাদের বেশির ভাগেরই কর্মসংস্থান হয় না। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেছে। বরং লোকবল ছাঁটাই না হয় বেতন-ভাতা কমিয়ে দিচ্ছে। সরকারিভাবেও নিয়োগ প্রক্রিয়া সংকুচিত হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে করোনার কারণে অনেকে চাকরি ও কর্মসংস্থান হারিয়েছে। নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত অসংখ্য পরিবারের আয় কমে গেছে। নিম্নবিত্তদের অনেকে দরিদ্র হয়েছে, মধ্যবিত্তদের অনেকে নিম্নবিত্তে পরিণত হয়েছে। নিম্নবিত্তদের অনেকে একবেলা খাবার কমিয়েছে। এসবই পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে। গত সপ্তাহে ভোজ্য তেলের দাম বেড়ে যাওয়া এবং বাজার থেকে উধাও হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ যে কি অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছে, তা অবিশ্বাস্য। মানুষ দোকানে গিয়ে তেল খুঁজে পায়নি। এক দোকানি কথা প্রসঙ্গে এক ক্রেতাকে হাসতে হাসতে বলল, কী করব ভাই, আমরাও তেল পাইনি। আমার কাছে এক আন্টি (যিনি মধ্যবিত্ত) তেল ধার চেয়েছে। বলল, তোমার ঘর থেকে আমাকে একটু তেল দাও, রান্না করতে পারছি না। একটি পত্রিকায় দেখলাম, এক দরিদ্র মহিলা দোকানে এসে আধা পোয়া তেল কিনেছে। প্রতিবেদককে বলেছে, গত এক মাস ধরে তেল ছাড়া রান্না করেছি। সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের মধ্যেই এ চিত্র বিরাজমান। তবে সরকার সাধারণ মানুষের এই দুর্দশার চিত্র কিছুতেই স্বীকার করতে চায় না। মানতেই চায় না, দেশের মানুষ কষ্টে আছে, তাদের জীবনের উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সরকারের এই চিত্র উপেক্ষা করেই প্রকাশ্যে-গোপনে সাধারণ মানুষের পকেট কেটে নিচ্ছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে ব্যবসায়ী নামক একশ্রেণীর দুর্বৃত্তকে মানুষের অর্থ লুটপাটের সুযোগ ও প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। নিত্যপণ্যের বাজারে চলছে লুটপাটের মহোৎসব। এরকম অরাজক পরিস্থিতিতেও সরকারের তরফ থেকে তেমন কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের কেবল বলতে শোনা যায়, বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, তাই আমাদের এখানেও বেড়েছে। এখন বলছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বেড়েছে। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, এ যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী পণ্য সরবারাহ বিঘ্ন ও দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এ হিসাবটি দেয় না, বিশ্ববাজারের তুলনায় পণ্যমূল্য কতটুকু বেড়েছে, এক লাফে দেড়-দুইগুণ বেড়েছে কিনা। প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্ববাজারে যদি ভোজ্য তেলের দাম কমে যায়, তখন কি দাম কমানো হবে? হবে না। এর নজির দেশে নেই। এর আগেও সরকার বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কথা বলে দেশে দাম বাড়িয়েছে। বিশ্ববাজারে যখন জ্বালানি তেলের দাম কমে যায়, তখন আর দাম কমায়নি। বরং এ সময়ে সরকারি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান লাভ করেছে। ব্যবসা করেছে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, সরকার জনগণের সাথে নেই। দায়িত্বশীল যেকোনো সরকারের উচিৎ বিশ্ববাজারে দাম বাড়লেও তার তুলনায় কতটুকু বাড়ানো যায় কিংবা কিভাবে দাম বাড়ানো না যায়, এ পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বিশ্ববাজারে দাম কমে গেলে দেশেও দাম কমিয়ে দেয়া। জনগণ যাতে দুর্ভোগে না পড়ে, পড়লেও যাতে সহনীয় পর্যায়ে থাকে, সে ব্যবস্থা করা। সরকারকে তো এ ব্যবস্থা করতে দেখা যাচ্ছে না।
চার.
জাতীয় নির্বাচনের আর দেড় বছরের মতো বাকি। যদি তাতে জনগণ নির্বাধে ভোট দিতে পারে এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়, তবে ফলাফল কি হতে পারে, তা যে কারো অনুমান করতে কষ্ট হয় না। এ নির্বাচন যেকোনো ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়। আমাদের দেশে স্বাভাবিকভাবে ক্ষমতাসীন দলের জনপ্রিয়তা কমে। জনগণ ক্ষমতাসীন দলের সরকার পরিচালনা এবং তাদের কতটুকু সেবা করতে পেরেছে, সবার আগে বিচার-বিশ্লেষণ করে। এক্ষেত্রে তারা সবার আগে বিবেচনায় নেয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সরকার তাদের সাধ্যের মধ্যে রেখেছিল কিনা। তাদের খাওয়া-পরার মৌলিক বিষয়টি ভালো রাখতে পেরেছিল কিনা। যদি তাদের কাছে মনে হয়, এ কাজটি সরকার করতে পারেনি, তখন তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। বিকল্প নতুন সরকার বেছে নেয়। আমাদের দেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দল পুনরায় ক্ষমতায় এসেছে, এমন নজির নেই। এর কারণ হচ্ছে, যে আশা-আকাক্সক্ষা নিয়ে জনগণ দলকে ক্ষমতায় বসায়, সে আশা পূরণ করতে পারে না। অপশাসন, দুর্নীতি, দলীয় লোকজনের দাপট বেড়ে যাওয়া এবং তা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কারণে জনগণের সমর্থন হারাতে থাকে। জনগণের চেয়ে দলের লোকজনের সেবাই তার কাছে মুখ্য হয়ে উঠে। বর্তমান ক্ষমতাসীন দল বিগত প্রায় সাড়ে ১৩ বছর ধরে ক্ষমতায়। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে, এই দীর্ঘ সময়ে সে জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন, সেবা, সুশাসন, কতটা করতে পেরেছে, তার জবাব পাওয়া যাবে।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।