মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইমানুয়েল ম্যাখোঁর দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচনী বিজয় কোন সাধারণ ঘটনা নয়। ফ্রান্সে গত ২০ বছরের মধ্যে এই প্রথম কোন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য পুননির্বাচিত হলেন। বিবিসির বিশ্লেষক হিউ স্কোফেল্ড বলছেন, এক হিসেবে বলা যায়, ফ্রান্সে পঞ্চম রিপাবলিক প্রতিষ্ঠিত হবার পরের ইতিহাসে এই প্রথম বার এমন ঘটনা ঘটলো।
কারণ হলো, এটা ঠিকই যে এর আগে ১৯৮৮ সালে ফ্রাঁসোয়া মিতেরঁ এবং ২০০২ সালে জ্যাক শিরাক দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন - কিন্তু নির্বাচনের সময় এরা দু’জনেই প্রায় বিরোধী দলের প্রেসিডেন্টে পরিণত হয়েছিলেন। কারণ ভোট যখন হচ্ছিল, তখন ফ্রান্সের আসল 'সরকার' ছিল তাদের বিরোধীদের কব্জায়, রাজনৈতিকভাবে এরা দু'জনেই তখন ছিলেন ক্ষমতাহীন। এ ছাড়া ১৯৬৫ সালে দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন শার্ল দ্য গলও - কিন্তু প্রথম মেয়াদে তিনি নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিলেন না।
সুতরাং, আধুনিক ফ্রান্সে ম্যাখোঁই হচ্ছেন প্রথম প্রেসিডেন্ট যিনি একটি পুরো মেয়াদ তার দেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতির প্রতিটি দিক পরিচালনা করার পর - দ্বিতীয় মেয়াদের জন্যও জনগণের আস্থা অর্জন করলেন। বলা হয় - ফ্রান্সের জনগণের সাথে তাদের সরকারের সম্পর্কটা ঠিক সুবিধের নয়, কারণ ফরাসীরা নাকি যেটা করে তা হলো - হর্ষধ্বনি দিয়ে এক একটা সরকারকে ক্ষমতায় এনে বসায়, তার পর সেটাকে আবার প্রথম সুযোগেই ছুঁড়ে ফেলে দেয়।
তাহলে প্রশ্ন হলো: এমানুয়েল ম্যাখোঁ এটা সম্ভব করলেন কেমন করে? বিবিসির ইউরোপ সম্পাদক কাতিয়া অ্যাডলার বলছেন, নির্বাচনের আগে থেকেই ফ্রান্সে একের পর এক ভোটার তাকে বলেছিলেন, মারিন ল্যা পেনের জয় ঠেকানোর জন্যই ম্যাখোঁকে ভোট দেবেন তারা। ফ্রান্সের রাজনীতিতে উগ্র ডানপন্থী জাতীয়তাবাদী প্রার্থীকে ঠেকানোর জন্য ভোটারদের এ ধরনের সিদ্ধান্ত নতুন কিছুই নয়। ম্যাখোঁকে পছন্দ করেন না এমন বহু প্রার্থী এবার মারিন ল্যা পেনকে ভোট দেন - যিনি এবার রেকর্ড ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। লক্ষ লক্ষ লোক তাদের ভোট নষ্ট করেছেন, এমনকি ভোট দিতে যানও নি।
তার পরও. ম্যাখোঁ ৫৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন । এর পেছনে তার সমর্থকরা তো আছেনই, আরো আছেন তারা - যারা মারিন পেন প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন এটা কোনমতেই দেখতে চান না। প্যারিসে কথা হচ্ছিল সাংবাদিক ও লেখক আনা ইসলামের সাথে। আনা ইসলামের কথায়, মারিন পেনদের রাজনীতির মূল কথাই হচ্ছে বিদেশী-অভিবাসীদের প্রতি বিদ্বেষ, তাদের কথা 'ফ্রান্স শুধু ফরাসীদের।' কিন্তু ম্যাখোঁর বার্তা ছিল: এ দেশ সব নাগরিকের - যে যেখান থেকেই এসে থাকুক।
"এর পাশাপাশি মারিন পেনের মত একজন ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট হবেন -এটাও লোকে মেনে নিতে পারছিল না। এখানে ল মঁদ পত্রিকা লিখেছে, যেসব কারণে ফ্রান্সকে প্রগতিশীল দেশ বলা হয়, এই দক্ষিণপন্থীরা সেটাকে একেবারেই নষ্ট করে দিয়েছে। সাম্য, মৈত্রী আর ভ্রাতৃত্বের আদর্শের বিরোধী কেউ এ দেশের নেতৃত্বে আসুক এটা কোন মতেই লোকে চাইবে না" - বলছিলেন আনা ইসলাম।
প্যারিসে ২০২০ সালের অক্টোবরে একটি স্কুলের শ্রেণীকক্ষে ইসলামের নবীর কার্টুন প্রদর্শনের পর শিক্ষক স্যামুয়েল পাতিকে হত্যার ঘটনা নিয়ে ম্যাখোঁর কথাবার্তা ফরাসী মুসলিমদের অনেকেরই পছন্দ হয়নি। আনা ইসলাম বলছিলেন, তার অভিজ্ঞতায় এরকম পটভূমিতে বিশেষ করে মাগরেব অর্থাৎ আলজেরিয়া, মরক্কো ও তিউনিসিয়ান অভিবাসী বংশোদ্ভূতদের অনেকেই ম্যাখোঁকে ভোটদানে বিরত ছিলেন। তবে এবার নির্বাচনের আগে উগ্র-ডানপন্থী মারিন লো পেন বলেছিলেন, তিনি জয়ী হলে মুসলিম নারীদের প্রকাশ্যে হিজাব পরা নিষিদ্ধ করবেন, ফ্রান্সকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বের করে আনবেন।
কিন্তু তার বিপরীতে ম্যাখোঁ স্পষ্টই বলেন, তিনি হিজাব নিষিদ্ধ করবেন না এবং ইইউ ও তাতে ফ্রান্সের অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করবেন। "একারণে অন্য অনেক অভিবাসী-বংশোদ্ভূত ভোটারই আবার ভেবেছেন, মারিন লো পেনের সাথে তুলনা করলে এমানুয়েল ম্যাখোঁর বিকল্প তো কেউই নেই - তাই তাকেই ভোট দিতে হবে।"
কীভাবে জনমতকে তার পক্ষে আনলেন ম্যাখোঁ
হিউ স্কোফেল্ড বলছেন, ম্যাখোঁ ফ্রান্সের জনমতকে তার পক্ষে নিয়ে আসতে পেরেছেন প্রধানতঃ দুটি উপায়ে। একটি হলো: সামাজিক মাধ্যমে প্যারিসের উদ্ধত বড়লোক আর ক্রুদ্ধ প্রাদেশিক জনতার হাজার হাজার টিটকারি-ঠাট্টা-বিদ্রুপ সত্ত্বেও ফ্রান্সের লক্ষ লক্ষ মধ্যপন্থী মানুষ মনে করে যে মি. ম্যাখোঁ প্রেসিডেন্ট হিসেবে খুব একটা খারাপ করেননি।
এই লোকেরা মনে করেন, ফ্রান্সে ম্যাখোঁ যেসব সংস্কার এনেছেন সেগুলোর ফলে বেকারত্ব আর কোন রাজনৈতিক ইস্যু নয়। তারা মনে করে কোভিডও ভালোই সামাল দিয়েছেন তিনি। আর তিনি অবসর নেবার বয়সসীমা বাড়িয়ে দিয়েছেন - এটা আসলে অবধারিত ছিল।
'নিজস্ব ইমেজ'
হিউ স্কোফেল্ডের কথায়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও ম্যাখোঁর একটা নিজস্ব ইমেজ তৈরি হয়েছে। তিনি যে ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে সোজাসুজি কথা বলতে পারেন - এটাও লোকে পছন্দ করেছে - যদিও ওসব বৈঠকে তেমন কোন কাজ হয়নি। এরা মনে করেন- ম্যাখোঁ ফ্রান্সকে ইউরোপের অঙ্গনে একটা নেতৃত্বে ভুমিকায় নিয়ে যেতে পারেন। তিনি যে সামরিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইইউর স্বনির্ভর ভুমিকার কথা বলতেন - এখন তা অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক শোনাচ্ছে।
এই লোকেরা দেখছেন - মারিন লা পেনের সাথে তুলনা করলে এসব দিকে ম্যাখোঁ অনেক এগিয়ে। এই ভোটাররা যে ম্যাখোঁকে ঠিক পছন্দ করেন তা নয়। কারণ, অন্য ফরাসী নেতাদের চেয়ে তিনি অনেক বেশি অন্যরকম। কিন্তু তাকে তারা আস্তে আস্তে সম্মান করতে শুরু করেছে।
ফরাসী রাজনীতির অনেক কিছুই ভেঙে দিয়েছেন ম্যাখোঁ
হিউ স্কোফেল্ড লিখছেন, ফরাসী রাজনীতিতে রক্ষণশীল আর সোশাল ডেমোক্রেটদের চিরাচরিত প্রাধান্য ভেঙে দিয়েছেন এমানুয়েল ম্যাখোঁ। তিনি ফ্রান্সের পঞ্চম রিপাবলিকের কিছু অন্তর্নিহিত ক্ষমতা ব্যবহার করে এলিসি প্রাসাদ থেকে এক নিজস্ব শাসন ব্যবস্থা চালু করেছেন। ফলে তার বিরোধীরা এখন বাম ও ডান - এই দুই 'চরম' মেরুতে চলে গেছে। মি. ম্যাখোঁকে তারা কেউই চ্যালেঞ্জ করতে পারছে না।
ম্যাখোঁর বিরোধীদের তাই এবার হয় জঁ-লুক মেলেশঁর মত উগ্র বামপন্থী - নয়তো মারিন পেনের মত উগ্র ডানপস্থীকে ভোট দিতে হয়েছে। ফ্রান্সের সমাজও হয়ে পড়েছে বিভক্ত। নির্বাচনী জয়ের পর ম্যাখোঁ-ও বলেছেন এ "বিভক্তিকে জোড়া লাগানোর" কথা, "সবার প্রেসিডেন্ট হবার জন্য" তার চেষ্টার কথা। এ বছরের জুন মাসে ফ্রান্সে পার্লামেন্টারি নির্বাচন হবে - তাই এটা দেখার বিষয় হবে যে সেখানে কী ফল হয়। সূত্র: বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।