Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফরাসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুই প্রার্থীর কার কী পরিকল্পনা?

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ এপ্রিল, ২০২২, ১২:৩৫ পিএম

ইমানুয়েল ম্যাখোঁ এবং মারিন লা পেন দেশে ও বিদেশে ভবিষ্যতে যে ধরনের ফ্রান্স গড়ে তোলার কথা বলছেন তা একেবারেই ভিন্ন রকমের। ফরাসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোট হচ্ছে রবিবার, ২৪শ এপ্রিল এবং সেদিন ভোটাররা এই দু'জন প্রার্থীর একজনকে তাদের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নিবেন।

আগামী পাঁচ বছরের জন্য কী তাদের পরিকল্পনা? ইমানুয়েল ম্যাখোঁ ও মারিন লা পেন তাদের ভোটারদের কী কী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন? এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এক নম্বর ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে জনগণের জীবন নির্বাহের খরচ। অতি-দক্ষিণপন্থী নেতা মারিন লা পেনও তার প্রচারণায় এই বিষয়টির ওপর জোর দিয়েছেন।

কিন্তু তার অন্যান্য বড় ধরনের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে সামাজিক আবাসন, ফরাসি নাগরিকদের জন্য তাদের চাকরি ও সামাজিক কল্যাণকে "জাতীয় অগ্রাধিকার" দেওয়া এবং ইসলামিজমের বিরুদ্ধে লড়াই। তিনি তার সমর্থকদের বলছেন যে এর আগে তারা কখনো এবারের মতো বিজয়ের এতো কাছাকাছি যতে পারেন নি।

অন্যদিকে মধ্যপন্থী নেতা বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ ভোটারদেরকে "আমরা সবাই" এই স্লোগানের মধ্যে নিয়ে আসতে চাইছেন। পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পর তিনি এখন তার মেয়াদকে "সম্পূর্ণ নবায়ন" করার জন্য ভোটারদের প্রতি আহবান জানাচ্ছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি বাম এবং মূলধারার ডান উভয় শিবির থেকেই ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন।

জীবন নির্বাহের খরচ: মারিন লা পেন মানুষের জীবন নির্বাহের খরচ কমানোর জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ৩০ বছরের কম বয়সী সবার আয়কর বাতিল করতে চান তিনি। জ্বালানির ওপর আরোপিত ভ্যাট ২০% থেকে কমিয়ে ৫.৫% করার পাশাপাশি তিনি একশটি প্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর থেকেও ভ্যাট বাতিল করার কথা বলেছেন।

ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তিনি ১০% বেতন ও মজুরি বাড়াতে চান। আগামী পাঁচ বছর ধরে শিক্ষকদের বেতনও প্রতি বছর ৩% করে বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। মহাসড়কগুলো পুনরায় জাতীয়করণের মাধ্যমে সেখানে পরিবহন টোল কমাতে চান ১৫%। এছাড়াও তিনি টিভি লাইসেন্স ফি বাতিল করে সরকারি রেডিও টিভি বেসরকারি খাতে তুলে দিতে আগ্রহী।

অন্যদিকে ইমানুয়েল ম্যাখোঁ বলছেন, জ্বালানি খাতে খরচ নাগালের ভেতরে রাখার জন্য তার সরকার ইতোমধ্যে কোটি কোটি ইউরো খরচ করেছে। এছাড়া তিনি চাকরিদাতাদের প্রস্তাব দিয়েছেন তাদের কর্মীদের ৬০০০ ইউরো পর্যন্ত বোনাস হিসেবে দেওয়ার জন্য। তিনিও শিক্ষকদের বেতন বাড়াতে চান, কিন্তু এজন্য তাদেরকে আরো কিছু দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং তিনিও টিভি লাইসেন্স ফি বাতিল করতে প্রস্তুত।

অবসর ভাতা বা পেনশন : ইমানুয়েল ম্যাখোঁ চাকরি থেকে মানুষের অবসর নেয়ার বয়স-সীমা ৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ করতে চান। কিন্তু তার এই নীতি ভোটাররা ভালোভাবে গ্রহণ করেনি, বিশেষ করে বামপন্থীরা। একারণে এখন তিনি ৬৪ বছর পর্যন্ত বাড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছেন। এছাড়াও তিনি রাষ্ট্রীয় অবসর ভাতা বা পেনশন ৯৫০ থেকে বাড়িয়ে ১,১০০ ইউরো করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

মারিন লা পেন অবসর নেওয়ার বয়স ৬২ বছরই রাখতে চান। তবে কেউ ২০ বছর বয়সে কাজ করতে শুরু করলে তিনি ৬০ বছর বয়সে অবসর নিতে পারেন। তিনি বলেছেন ভোটারদের বুঝতে হবে যে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বামপন্থী ভোটারদের শান্ত করার চেষ্টা করছেন। মারিন লা পেন সর্বনিম্ন রাষ্ট্রীয় পেনশন ১,০০০ ইউরো করতে চান, যা ইমানুয়েল ম্যাখোঁর পরিকল্পনার চেয়ে কম।

অভিবাসন ও নিরাপত্তা: অভিবাসনের প্রশ্নে মারিন লা পেন গণভোট আয়োজন করতে চান। তার পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে ফ্রান্সে প্রবেশ ও ফরাসি নাগরিক হওয়ার আইন আরো কঠোর করা। এবিষয়ে 'জাতীয় অগ্রাধিকার' নামে তার যে পরিকল্পনা রয়েছে সেটি অত্যন্ত বিতর্কিত এক কর্মসূচি। তার এই প্রস্তাবে বিদেশিদের আগে ফরাসি নাগরিকদেরকে আবাসন ও সামাজিক সেবা দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

বিদেশি নাগরিকদের জন্য যে ৬,২০,০০০ বাড়িঘর রয়েছে সেগুলোকে যেসব পরিবারে পিতামাতাদের মধ্যে অন্তত একজন ফরাসি তাদেরকে দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। শুরুর দিকে তিনি মৃত্যুদণ্ডের ওপর গণভোট আয়োজনের পক্ষে ছিলেন, কিন্তু পরে তিনি বুঝতে পারেন যে এটি অসাংবিধানিক।

ইমানুয়েল ম্যাখোঁ পুলিশ এবং সামরিক পুলিশ বাহিনীকে প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে মুক্ত রাখার অঙ্গীকার করেছেন। একই সাথে ২০৩০ সালের মধ্যে রাস্তায় পুলিশের সংখ্যা দ্বিগুণ করার কথা বলেছেন তিনি। মারিন লা পেন জেলখানায় কারাবন্দীদের জন্যে আরো ২০,০০০ স্থান এবং অতিরিক্ত ৭,০০০ পুলিশের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

হেডস্কার্ফ বা হিজাব: মারিন লা পেন পাবলিক প্লেস অর্থাৎ রাস্তাঘাটে নারীদের হেডস্কার্ফ বা হিজাব পরা নিষিদ্ধ করতে চান এবং নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করলে তাদের জরিমানা করারও প্রস্তাব করেছেন তিনি। হিজাবকে তিনি "ইউনিফর্ম" হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন যে কট্টরপন্থী ইসলামের ধারকরা এটি আরোপ করেছেন। পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্সে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মুসলিম বসবাস করে। প্রথম রাউন্ডের ভোটে তাদের ৬৯% অতি-বামপন্থী প্রার্থী জ্য লুক মেলশকে ভোট দিয়েছেন। দ্বিতীয় রাউন্ডের নির্বাচনে মুসলিম ভোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

এবিষয়ে কোনো পরিবর্তনের পরিকল্পনা নেই ইমানুয়েল ম্যাখোঁর এবং হিজাব নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধেও তিনি তার অবস্থান পরিষ্কার করে দিয়েছেন। হিজাব পরিহিত এক নারীর প্রশংসা করেছেন তিনি, যে নারী নিজেকে নারীবাদী বলে দাবি করেছেন। ম্যাখোঁ বলেছেন, "নির্বুদ্ধিতার বিরুদ্ধে এটাই সেরা জবাব।"

নির্বাচনী সংস্কার: মারিন লা পেন বিজয়ী হলে তিনি কিভাবে তার সংস্কার পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হবেন সেটা এক বড় প্রশ্ন। তিনি জাতীয় ঐক্যের সরকারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু জাতীয় পরিষদে তার দল ন্যাশনাল র‍্যালির আছে মাত্র সাতটি আসন। এবং জুন মাসের নির্বাচনে তার দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করাও কঠিন হবে।

আইন পরিষদের নির্বাচনে তিনি 'আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব' পদ্ধতি চালু করতে চান। এর অর্থ হচ্ছে- একটি দল যতো ভোট পাবে তার অনুপাতে পরিষদে ওই দলের প্রতিনিধিত্ব নির্ধারিত হবে। একই সাথে তিনি প্রেসিডেন্টের মেয়াদ বাড়িয়ে সাত বছর করতে আগ্রহী। তবে তার অন্যতম প্রধান নীতিগুলোর একটি নাগরিকত্ব বিষয়ে গণভোট। অর্থাৎ এবিষয়ে তিনি ভোটারদের মতামতও নিতে চান।

ইমানুয়েল ম্যাখোঁও পার্লামেন্ট নির্বাচনে 'আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব' পদ্ধতি চালু করার পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। তবে তার প্রতিদ্বন্দ্বী মারিন লা পেন যে গণভোট আয়োজনের কথা বলছেন তার সমালোচনা করে তিনি বলেছেন এথেকে বোঝা যায় যে লা পেন নিজেকে সংবিধানের ঊর্ধ্বে বলে মনে করেন। সূত্র: বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফ্রান্স


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ