Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফসলি জমি রক্ষা করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৮:৪৭ এএম

বৈধ-অবৈধ সব ধরনের ইটভাটা এখন পরিবেশ ও প্রাণ-প্রকৃতির জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইটভাটাগুলো পরিবেশের জন্য দীর্ঘ মেয়াদী নানামাত্রিক সংকট সৃষ্টি করে চলেছে। ফসলি জমিতে শত শত ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এগুলোর কাঁচামাল হিসেবে টপসয়েল বা ভূমির উপরিস্থিত উর্বর এটেল ও দোয়াশ মাটি ব্যবহার করায় কৃষিজমি ক্রমে সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। আইন অমান্য করে ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করার কারণে যথেচ্ছ বৃক্ষ নিধন চলছে। ইটভাটায় নি¤œমানের কয়লা ও মানহীন চিমনি ব্যবহারের ফলে বাতাসে বিষাক্ত কালোধোঁয়া ও জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতিকর কার্বণ ডাই-অক্সাইডসহ নানা ধরণের রাসায়নিক ছড়িয়ে পড়ছে। জনবসতি ও ফসলি জমির কাছে ইটভাটা গড়ে ওঠায় জনস্বাস্থ্যের পাশাপাশি ফসলের ফলন যেমন কমে যাচ্ছে, তেমনি মারাত্মক পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। যেকোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনে পরিবেশগত ছাড়পত্র নিতে হয়। দেখা যায়, এর তোয়াক্কা না করেই অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। ইটভাটা স্থাপনের ক্ষেত্রে পরিবেশ ছাড়পত্র অনেকেই নিচ্ছে না। পরিবেশ অধিদফতরেরও এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ফলে যেখানে সেখানে এমনকি ফসলী জমিতে অবৈধভাবে ইটভাটা গড়ে উঠছে। এর ফলে ফসলী জমি যেমন কমছে, তেমনি তা পরিবেশের জন্যও মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠেছে।

গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানা যায়, মাদারিপুরে কিছু ইটভাটায় অবৈধভাবে কাঠপোড়ানোর বিরুদ্ধে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে স্থানীয় পরিবেশ অধিদফতরে অভিযোগ করার পর গত একমাসেও অভিযুক্ত ইটভাটায় কাঠপোড়ানো বন্ধ হয়নি। ফরিদপুর অঞ্চলের পরিবেশ অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ অভিযোগের পরও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বলার অপেক্ষা রাখে না, পরিবেশ অধিদফতরের কাজই হচ্ছে, পরিবেশগত হুমকি সৃষ্টিকারী ও বেআইনী শিল্পকারখানা ও ইটভাটা চিহ্নিত করে তা বন্ধের উদ্যোগ নেয়া অথবা পরিবেশগত নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যেখানে খোদ ইটভাটা মালিক সমিতির পক্ষ থেকে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কাঠপোড়ানোর অভিযোগ করা হচ্ছে, সেখানে পরিবেশ অধিদফতর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এতে প্রতীয়মান হয়, অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটার মালিকরা পরিবেশ অধিদফতরসহ স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ফসলি জমিতে ইটভাটা গড়ে তুলেছে এবং সে সব ইটভাটায় কাঠ পুড়িয়ে পরিবেশের অপুরণীয় ক্ষতি করে চলেছে। মাদারিপুরের সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমকর্মীরা জেলার বৈধ-অবৈধ ইটভাটার তালিকা ও তথ্য চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা পায়নি বলে অভিযোগ পাওয়া উঠেছে। এতে প্রতীয়মান হয়, সারাদেশে যেসব ইটভাটা রয়েছে, সেগুলোর হালও একই রকম। এতে দেশব্যাপী যে বায়ুদূষণ এবং পরিবেশ ও ফসলি জমির ক্ষতি হচ্ছে এর দায় পরিবেশ অধিদফতরের ওপরই বর্তায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার বলেছেন, দেশের এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদী না থাকে। দেখা যাচ্ছে, পরিবেশ অধিদফতরের উদাসীনতায় ফসলী জমিতেই ইটভাটা গড়ে উঠছে। এটা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনারই খেলাপ। অবৈধ প্রক্রিয়ায় কৃষিজমিতে শত শত ইটভাটা গড়ে ওঠা এবং এসব ইটভাটা বছরের পর বছর ধরে কাঠ পুড়িয়ে জীববৈচিত্র্য, জনস্বাস্থ্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট করার দায় পরিবেশ অধিদফতর কিছুতেই এড়িয়ে যেতে পারে না।

মানবসম্পদের পর সবচেয়ে টেকসই মূল্যবান সম্পদ হচ্ছে ফসলি জমি। ফসলি জমি রক্ষা করতে না পারলে দেশে খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষি উৎপাদন বড় ধরণের হুমকির মুখে পড়বে। এ কারণেই কৃষি জমি রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ নেয়া জরুরি। জনসংখ্যাবৃদ্ধির কারণে আবাসন, নগরায়ণসহ শিল্পখাতে ভূমির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় কৃষিজমির পরিমান দ্রæত কমে যাচ্ছে। নানা মাত্রিক ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে প্রচলিত গতানুগতিক প্রযুক্তির ইটভাটা বন্ধের ব্যাপারেও জোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ইতিমধ্যে দেশে পরিবেশ বান্ধব ইটভাটাসহ বিকল্প উদ্যোগ শুরু হয়েছে। সেসব উদ্যোগে সরকারি সহায়তা ও প্রণোদনা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সাথে নিয়মিত মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করতে হবে। বিশেষত লোকালয়ের পাশে এবং ফসলিজমিতে গড়ে ওঠা ও পরিবেশগত নির্দেশনা অমান্যকারী ইটভাটাগুলো বন্ধ করতে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। সাধারণত স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং সরকারি দলের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ইটভাটার মালিক হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবৈধ ইটভাটা স্থাপন করছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ইটভাটার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, তবে তা যাতে পরিবেশ সুরক্ষিত রেখে পরিবেশবান্ধব উপযোগী করা হয়, এ দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। ফসলী জমিতে যাতে কোনোভাবেই ইটভাটা স্থাপনের অনুমতি না দেয়া হয়, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিশেষ নজর দিতে হবে। কৃষিজমি রক্ষায় সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে দেয়া নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফসলি জমি

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন