Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অস্ট্রেলিয়ার প্রবাল প্রাচীরে নতুন প্রাণ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ৪:৫৩ পিএম

নভেম্বর মাসের শেষের দিকে অস্ট্রেলিয়ায় সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে থাকে। বছরভর এমন এক আদর্শ পরিবেশের জন্য অপেক্ষা করে থাকে প্রবালেরা। প্রতি বছর নভেম্বর বা ডিসেম্বরের এক পূর্ণিমার পরে একসঙ্গে জেগে ওঠে দ্য গ্রেট বেরিয়ার রিফ। শুরু হয় প্রকৃতির বৃহত্তম প্রজনন পর্ব। এ বছর প্রবাল প্রজনন বা কোরাল স্পনিং ঘটেছে ২৩ নভেম্বর রাতে।

এখনও পর্যন্ত বিশ্বের কোনও বিজ্ঞানী আগে থেকে অনুমান করতে পারেননি, ঠিক কোন দিন, কোন সময়ে এই ঘটনা ঘটবে। ১৯৮১ সালে জেমস কুক ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা প্রথম সমুদ্রের তলদেশে প্রবাল প্রাচীরের গায়ে নতুন প্রাণের সঞ্চার আবিষ্কার করেন। তার পর থেকে বহু গবেষণা চলেছে। কিন্তু আজ অবধি স্পষ্ট করে জানা যায়নি, ঠিক কখন এটি ঘটে। বিজ্ঞানীরা শুধু এটুকু জানেন, মূলত নভেম্বর ও ডিসেম্বরের মধ্যে ‘কোরাল স্পনিং’ হয়।

মেরিন বায়োলজিস্ট গ্যারেথ ফিলিপসের কথায়, ‘মূলত নভেম্বর বা ডিসেম্বরে পূর্ণিমার ২ থেকে ৬ দিন পরে প্রবালের প্রজনন শুরু হয়। আমরা একটা সময় অনুমান করতে পারি। কিন্তু এই বার্ষিক ঘটনা এখনও প্রকৃতির এক রহস্য।’ এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া একাধিক বিষয়ের উপর নির্ভর করে। স্পনিংয়ের আগে প্রায় এক মাস সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে থাকতে হবে।

এমন একটা সময়ে সমুদ্রের পানিতে লার্ভার জন্ম হবে, যখন প্ল্যাঙ্কটন ফিডার বা খাদকেরা ঘুমিয়ে থাকবে। তাতে প্রবালের লার্ভার বেঁচে থাকা নিশ্চিত হবে। সমুদ্রের পানি বেশি উত্তাল হলেও চলবে না। সব দিক বিচার করে পরবর্তী প্রজন্মকে পৃথিবীতে আনে প্রবাল।

প্রবাল প্রজনন বা কোরাল স্পনিং ঠিক কী? নিজেদের আয়ুকালে বেশির ভাগ সময়ই অ্যাসেক্সচুয়াল রিপ্রোডাকশন বা অযৌন জনন ঘটায় প্রবাল। অর্থাৎ, একটি ভেঙে দু’টি, চারটি... এ ভাবে বংশবৃদ্ধি ঘটে। কিন্তু বছরের একটি সময়ে, মূলত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মাঝে, কোনও এক পূর্ণিমার পরবর্তী রাতে তারা শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর নিঃসরণ ঘটায় সমুদ্রের পানিতে।

এদের মিলনের পরে ডিম্বাণু নিষিক্ত হয়ে প্রবালের লার্ভা জন্মায়। এবং সমুদ্রশয্যায় বাড়তে থাকে সন্তানেরা। ক্রমে তৈরি হয় প্রবাল। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রায় গোটা গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ জুড়ে (২৬০০ কিলোমিটার) এই প্রক্রিয়া চলেছে। সমুদ্র বিজ্ঞানীদের দাবি, বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এ বারের ‘রিপ্রোডাকশন শো’ সবচেয়ে বড়।

ট্রপিকাল নর্থ কুইন্সল্যান্ডের গ্রেট বেরিয়ার রিফে এক দশকেরও বেশি কোরাল স্পনিংয়ের সাক্ষী সমুদ্র বিজ্ঞানী ফিলিপস। তিনি বলেন, এ বছরের ঘটনা ‘আশার প্রতীক’। জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্র দূষণের জেরে সাম্প্রতিক কালে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় থাকা প্রবাল প্রাচীরকে ‘বিপন্ন’ তকমা দেয়া হয়েছে। তাদের অস্তিত্ব সঙ্কট নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

এই অবস্থায় এমন বৃহৎ কোরাল স্পনিংয়ে উচ্ছ্বসিত গবেষকেরা। কুইন্সল্যান্ডের কাছে ক্রেন উপকূলে সমুদ্রের তলদেশে প্রবাল প্রাচীরের বংশবৃদ্ধির ছবি ধরা পড়েছে বিজ্ঞানীদের ক্যামেরাতেও। প্রাচীর জুড়ে নানা রঙের খেলা ও কোটি কোটি সদ্যোজাত প্রবালের জন্ম প্রকৃতির এক বিস্ময়। সূত্র: সিএনএন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অস্ট্রেলিয়া


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ