Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিখ্যাত মঁ স্যাঁ মিশেলের নতুন রুপে আবির্ভাব

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০২১, ৩:২৬ পিএম

সমুদ্রের মাঝে এক টিলার উপর মনাস্ট্রি। জোয়ার-ভাঁটার খেলার মাঝে গোটা এলাকার রূপ বদলে যায়। এমন অসাধারণ স্থাপনাকে প্রেক্ষাপট হিসেবে ব্যবহার করে চোখ ধাঁধানো শোয়ের আয়োজন করেছেন এক ফরাসি ডিজে।

মঁ স্যাঁ মিশেল এমন রূপে এর আগে কখনো দেখা যায় নি। ফ্রান্সের উত্তর-পশ্চিমের বিখ্যাত মঠ-টিলা ১৯৭৯ সাল থেকে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় স্থান পেয়েছে। এমন জায়গায় পারফর্ম করা প্যারিসের ডিজে মিকায়েল কানিত্রোর জন্য অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা। সেই সুযোগের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘মঁ স্যাঁ মিশেল এক ঐতিহাসিক ও প্রতীকী স্থান। অসাধারণ দৃশ্যের পাশাপাশি আধ্যাত্মিক পরিবেশও রয়েছে। এই জায়গা আমাকে অনেক প্রেরণা দেয়। শিশু বয়সে বাবা-মার সঙ্গে দর্শনীয় স্থান হিসেবে সবার আগে এখানেই এসেছিলাম। এমনকি আমার প্রপিতামহীও সঙ্গে ছিলেন।''

প্যারিসের এই ডিজে ও তার টিম প্রায় ছয় মাস ধরে প্রস্তুতি চালিয়েছিলেন। এমন দুরূহ কাজ সম্পর্কে কানিত্রো বলেন, ‘‘এই জায়গাটি অত্যন্ত জটিল। সমুদ্রের মাঝে তৈরি এই কেল্লা অবশ্যই প্রযুক্তিগত ও শৈল্পিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে। এমন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া সত্যি কঠিন।’’ ১৫৭ মিটার উঁচু এই মনাস্ট্রি এক হাজার বছরেরও আগে অ্যাটলান্টিক মহাসাগরের এক টিলার উপর নির্মিত হয়েছিল। স্থাপত্য জগতের এক মাস্টারপিস হিসেবে সেটি পরিচিত।

সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা হিসেবে ফ্রঁসোয়া স্যাঁ জাম এই মঠের প্রতিটি কোণ চেনেন। ১৮৭৪ সালে এই স্থাপনাকে জাতীয় সৌধের মর্যাদা দেওয়া হয়। জায়গাটি ঘিরে মানুষের মুগ্ধতা কখনোই কাটে না। ফ্রঁসোয়া বলেন, ‘‘আমার মতে, এখানে প্রবেশ করলেই আমরা যেন আবার শিশু হয়ে উঠি বলেই এত আবেগ জেগে ওঠে। ছোট ছেলেদের জন্য এটা যেন তাদের কাঙ্খিত খেলনার দুর্গ। ছোট মেয়েদের জন্য সিন্ডারেলার রূপকথার দুর্গ।’’

আইফেল টাওয়ার ও ভার্সাই প্রাসাদের পর মঁ স্যাঁ মিশেল দর্শনীয় স্থান হিসেবে সবচেয়ে বেশি পর্যটক আকর্ষণ করে। সেই মধ্যযুগেও শিল্পীদের জন্য জায়গাটির জাদুময় আকর্ষণ ছিল। তীর্থস্থান হিসেবেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ফ্রঁসোয়া স্যাঁ জাম মনে করিয়ে দেন, ‘‘গোটা ইউরোপ থেকে হাজার হাজার তীর্থযাত্রী সে সময়ে এখানে আসতেন। মোট জনসংখ্যার বিচারে সেই সংখ্যা সত্যি বিস্ময়কর। আজ গোটা বিশ্ব থেকে বছরে ২৫ থেকে ৩০ লাখ মানুষ আসেন। মধ্যযুগের তীর্থযাত্রীদের পদচিহ্ন বরাবর তাঁরা এগিয়ে চলেন।’’

চোখ ধাঁধানো লাইট শো ইভেন্টের আওতায় ডিজে মিকায়েল কানিত্রো এমনকি মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবিও দেখাচ্ছেন। বিভিন্ন ঐতিহাসিক শোধের উপর তিনি এমন ছবি নিক্ষেপ করেন। এভাবে তিনি বিভিন্ন প্রজন্মের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটাতে চান। মিকায়েল বলেন, ‘‘আমার মনুমেন্টাল ট্যুরের মাধ্যমে এমন অনন্য ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলিকে আমি ভিন্ন স্বাদে তরুণ প্রজন্মের কাছে নিয়ে আসতে চাইছি। তারা ইলেকট্রনিক মিউজিক শোনে। অন্যদিকে অপেক্ষাকৃত বয়স্ক মানুষ ক্লাবে না গিয়েও আমার সংগীতের স্বাদ পাচ্ছেন।’’

ইউরোপীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য দিবস উপলক্ষ্যে প্যারিসের এই ডিজে মনাস্ট্রি টিলায় পার্টির আবহ সৃষ্টি করেছেন। এক রাতের জন্য এই মঠ লাইট শো-র উজ্জ্বল মঞ্চ হয়ে উঠেছে। ইলেকট্রো বিটের তালে প্রাচীন প্রাচীর কেঁপে উঠছে। ফ্রঁসোয়া স্যাঁ জাম অবশ্য তাঁর প্রিয় মঁ স্যাঁ মিশেলে নীরবতাই পছন্দ করেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রতি সন্ধ্যায় এখানে অসাধারণ এক প্রাকৃতিক ঘটনা ঘটে। সেটা হলো সূর্যাস্ত। সূর্যাস্তের এমন অভিজ্ঞতা অন্য কোথাও সম্ভব নয়।'' পরিবর্তনশীল বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে মঁ স্যাঁ মিশেল অতীতের মতো বর্তমানেও মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধ করে চলেছে। সূত্র: ডয়চে ভেলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফ্রান্স


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ