Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফ্রান্সের উপকূল শৈবালমুক্ত করতে অভিনব উদ্যোগ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১০ নভেম্বর, ২০২১, ৫:৪২ পিএম

অ্যালজি বা সামুদ্রিক উদ্ভিদ পচে গেলে যে বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হতে পারে, অনেকেই সে কথা জানেন না। ফ্রান্সের উপকূলে সেই সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ফ্রান্সের ব্রিটানি অঞ্চলের স্যাঁ ব্রিয়কের কাছে সুন্দর খাঁড়ির আর বেশি কিছু অবশিষ্ট নেই। সৈকত বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রায় সর্বত্র বালুর নীচে সবুজ সামুদ্রিক অ্যালজি পচছে।

‘স্টপ দ্য গ্রিন ফ্লাড’ নামের একটি সংগঠন সেই দুর্দশার মোকাবিলা করার চেষ্টা করছে। সংগঠনের প্রতিনিধি অঁদ্রে অলিভ্রোর হাতে সময় নেই। বাতাসে হাইড্রোজেন সালফাইডের মাত্রা পরিমাপ করছেন তিনি। বিষাক্ত এই গ্যাস দুর্গন্ধে ভরা বস্তু থেকে বালুতে মিশে যাচ্ছে। সেই কাজের ঝুঁকি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘২৫ পিপিএম মাত্রা ছুঁলেই দূরে চলে যেতে হয়। কারণ সেটা অত্যন্ত বিপজ্জনক। আমাকে মাস্ক পরতে হয়েছে। এমন ভয়ংকর পরিবেশে বেশিক্ষণ থাকতে পারবো না। এখানে ভেসে আসার ঠিক পর অ্যালজি লেটুসের মতো দেখতে লাগে। মোটেই বিষাক্ত হয় না। কিন্তু বালুতে পড়ে থাকতে থাকতে শক্ত আস্তরণের নীচে ভেঙে গেলে এক প্রক্রিয়ায় ২০টি গ্যাস নির্গত হয়।’

সেই অঞ্চলে চিরকাল সবুজ অ্যালজি দেখা যেত। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পানিতে নাইট্রেটের মাত্রা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় অ্যালজির পরিমাণ আর সামলানো যাচ্ছে না। অঁদ্রে বলেন, কম দূরত্বে শুকর, মুরগি ও অন্যান্য প্রাণীর খামারের সংখ্যা বেড়ে চলায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। খামারের প্রাণীর বিষ্ঠা ও সার থেকে বের হওয়া নাইট্রেট নদীর মাধ্যমে সমুদ্রে এসে পড়ে। গোটা অঞ্চলে কৃষিকাজ বেড়ে চলায় এমনটা ঘটছে। খাঁড়ির অগভীর পানিতে সামুদ্রিক উদ্ভিদের সংখ্যাও বাড়ছে।

ইয়ান ইয়োবেস আর এমন অবস্থা সহ্য করতে পারেন নি। খাঁড়ি থেকে দশ কিলোমিটার দূরে তাঁর খামার রয়েছে। তিনি পুরোপুরি অরগ্যানিক পদ্ধতিতে উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেন। গরু এখন শুধু ঘাস আর খড় খায়। কৃত্রিম সার একেবারেই ব্যবহার করা হয় না। তবে খামার ছোট বলেই এমন রূপান্তর সহজ হয়েছে। খামারের আকার যত বড়, দূষণের মাত্রাও তত বেশি হয় বলে ইয়ান নিশ্চিত। আর্থিক প্রণোদনা ছাড়া খুব বেশি পরিবর্তন সম্ভব নয় বলে তিনি মনে করেন। তার মতে, কিছু পরিবর্তন করলে চাষিদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বলে এই মুহূর্তে সেটা হচ্ছে না।

প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে স্যাঁ-মিশেল-অঁ-গ্রেভ শহরে ঠিক সেই পরীক্ষাই চলছে। ৩০ বছর আগে সবুজ অ্যালজির কারণে সেখানে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। মেয়র হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করে ফ্রঁসোয়া পঁশঁ চাষিদের সঙ্গে মিলে এক বোনাস সিস্টেম চালু করেছেন। এর আওতায় উৎপাদন প্রক্রিয়া পরিবর্তন করলেই হাতে টাকা আসছে। এলাকার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ চাষিই সেই উদ্যোগে শামিল হচ্ছেন।

প্রতিদিন সৈকতে অ্যালজি দূর করা হচ্ছে। ফলে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। দশ বছর আগে বছরে প্রায় ২০ হাজার টন অ্যালজি জমা হতো। এখন সেই পরিমাণ অর্ধেকেরও কম হয়ে গেছে। স্যাঁ-মিশেল-অঁ-গ্রেভ শহরের মেয়র ফ্রঁসোয়া পঁশঁ বলেন, ‘আমরা চাই জায়গাটি সত্তরের দশকের মতো পরিষ্কার হয়ে উঠুক। তাতেই সবার উপকার হবে। স্বাস্থ্য, পর্যটন, জীববৈচিত্র্যের জন্য সেটা কল্যাণকর হবে।’ অতীতে স্যাঁ-মিশেল-অঁ-গ্রেভ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সৈকতের মধ্যে পড়তো। এখন জায়গাটি আবার প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে।

‘স্টপ দ্য গ্রিন ফ্লাড’ নামের সংঘের সদস্যরা অনেক দশক ধরে হস্তক্ষেপ না করায় রাজনীতি জগতের সমালোচনা করেন। আঞ্চলিক স্তরে সবুজ অ্যালজি থেকে সুরক্ষার একাধিক পরিকল্পনায় কোনো কাজ হয় নি বলে তারা মনে করেন। অঁদ্রে অলিভ্রো বলেন, ‘বাস্তবে পরিকল্পনার রূপায়ন ঘটে নি। কেউ কিছু বদলাতে চায় নি। কারণ সে ক্ষেত্রে কৃষিক্ষেত্র ও জনসাধারণের উপর চাপ পড়তো।’ অঁদ্রে অবশ্য ছোট এক সাফল্য পেয়েছেন। ফ্রান্সের কৃষি মন্ত্রণালয় সবুজ অ্যালজির সমস্যা সরাসরি সমাধানের অঙ্গীকার করেছে। কোনো এক সময়ে তাঁর খাঁড়ি পুরোপুরি অ্যালজি-মুক্ত হবে বলে তিনি আশা করেন। সূত্র: ডয়চে ভেলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফ্রান্স


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ