গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, জীবনের সকলক্ষেত্রে রাসূল (সা.) এর আদর্শের অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে। আইয়্যামে জাহেলিয়াতের ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত জাতি। বর্বর, বেদুঈন, শিক্ষা ও আলো থেকে বঞ্চিত অন্যায় জুলুম ও অনৈতিকতার সয়লাব মানবজাতি। ঠিক এমন সময় অরাজকতার অন্ধকারে আকস্মিকভাবে জ্বলে উঠলো আলোক মশাল। সভ্যতার সূর্যোদয়ের দায়িত্ব নিয়ে পৃথিবীতে আবির্ভূত হলেন সমগ্র মানবজাতির মুক্তির দূত ও জগতবাসীর জন্য রহমতস্বরূপ হযরত মুহাম্মদ (সা.)। তাঁর ছোঁয়ায় নবুওয়াতের মাত্র ২৩ বছরেই আরবরা বিনির্মাণ করলো এক নতুন পৃথিবী। তাই সামাজিক অবক্ষয় রোধ, অন্যায়-জুলুম ও অনৈতিকতার হাত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করে ইনসাফপুর্ণ, শান্তিময় ও সমৃদ্ধশালী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আমাদেরও রাসূল (সা.) এর আদর্শকে অনুসরণ করতে হবে জীবনের সকলক্ষেত্রে।
আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর গুলিস্তানস্থ কাজী বশির মিলনায়তনে জাতীয় সীরাত সম্মেলন পুরস্কার বিতরণ, বিশ্বজয়ী হাফেজ-ক্বারীদের সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ-এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত জাতীয় সীরাত সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, দলের শরীয়াহ বিষয়ক উপদেষ্টা মুফতী ওমর ফারুক সন্ধিপী। সংগঠনের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সীরাত সম্মেলনে বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় অংশ নেন দৈনিক ইনকিলাবের সহ-সম্পাদক মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, দৈনিক নয়াদিগন্তের সহ-সম্পাদক মাওলানা লিয়াকত আলী, সংগঠনের ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি প্রিন্সিপাল মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, লেখক ও গবেষক মাওলানা যাইনুল আবিদীন, বারিধারা কেন্দ্রীয় মসজিদের খতীব মাওলানা সাইয়্যেদ জুলফিকার জহুর, শেখ ফজলুল করীম মারূফ, ছাত্রনেতা নূরুল করীম আকরাম। সম্মেলন পরিচালনা করেন জয়েন্ট সেক্রেটারী ডা. শহিদুল ইসলাম ও মাওলানা জিয়াউল আশরাফ।
জাতীয় সীরাত সম্মেলনে ৬দফা প্রস্তাবনা পেশ করেন শেখ মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে, বিশ্ব মানবতার মুক্তিদূত হযরত মুহাম্মাদ (সা.) শেষ নবী এবং সর্বোচ্চ সম্মানীয় ব্যক্তি। বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনায় তা সংযুক্ত করতে হবে, আল্লাহ তা’য়ালা, রাসূল (সা.) ও ইসলামের অবমাননা রোধে সু-নির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করতে হবে, খতমে নবুওয়াত অস্বীকারকারী কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে। তবে সংখ্যালঘু হিসেবে বসবাসের সুযোগ থাকবে, জাতীয় জীবনের সর্বত্র সীরাতুন্নবী (সা.) অনুসরণের লক্ষে জাতীয় সীরাত একাডেমি প্রতিষ্ঠা করতে হবে, জাতীয় শিক্ষাক্রমের সর্বত্র সীরাত পাঠ বাধ্যতামূলক করতে হবে। বিশেষত অনার্স পর্যায়ে প্রতিটি বিষয়ে চার ক্রেডিট সীরাতের জন্য সংরক্ষিত রাখতে হবে এবং কাদিয়ানীদের যাবতীয় পণ্য বর্জনের আহবান জানাচ্ছে।
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, পরকালের নাজাতে ব্যক্তি জীবনের সর্বক্ষেত্রে রাসূল (সা.) এর আদর্শ অনুসরণ ও বাস্তবায়ন করাই হচ্ছে প্রকৃত মুমিন মুসলমানের কাজ। রাসূল (সা.) এর জীবনাদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি গড়ে তোলা সম্ভব। বিশ্বব্যাপী অশান্তি, দুর্দশাগ্রস্ত জাতিকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে হলে সর্বক্ষেত্রে নববী আদর্শ প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাসূল সাল্লাল্লাহু সালামের আদর্শই একমাত্র সমাধান। রাসূল (সা.) কেবলই মুসলমানদের নেতা ছিলেন না বরং তিনি সকল মানুষের নেতা ছিলেন। সকলের স্বার্থ তিনি নিশ্চিত করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি বলেন কেউ যদি কোন অমুসলিমদের সাথে অন্যায় আচরণ করে তাহলে তার বিরুদ্ধে কেয়ামতের দিন আমি নিজে আল্লাহ দরবারে বিচারের সুপারিশ করব। তিনি বলেন, হযরত ফাতিমা যদি চুরি করে তাহলে তার হাত কেটে দেয়া হবে মর্মে রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম কসম করেছেন। এভাবে রাসূল (সা.) আইনের শাসনের প্রতিভ‚ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার একক বিশ্বজনীন আদর্শ প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছেন। জাতীয় সীরাত সম্মেলন পীর সাহেব চরমোনাই আরো বলেন, রাসুল সালাম সালাম রাষ্ট্র সমাজ পরিচালনার প্রতিটি ক্ষেত্রে জনতার সাথে পরামর্শ করতেন। আজকে যারা ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে যারা শাসনক্ষমতায় জনতার অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করেছে। আমি সাবধান করে দিতে চাই যে, রাসূল (সা.) এর বিরোধী অবস্থান নিয়ে কেউ কখনো সফল হয়নি; বর্তমানেও হবে না।
প্রিন্সিপাল মাদানী বলেন, দেশে বিশৃঙ্খলা সষ্টির জন্যে পরিকল্পিতভাবে পূজামন্ডপে কোরআন রাখা হয়েছে। পূজামন্ডপে-মন্দিরে হামলা, হিন্দুদের বাড়ী-ঘরে হামলা ইসলামপন্থিরা জড়িত প্রমাণ করতে পারেনি। তারপরও সেইসূত্র ধরে ত্রিপুরা রাজ্যে মুসলমানদের বাড়ী-ঘর, দোকানপাঠ ও মসজিদে হামলা এবং মুসলমানদের উপর জুলুম নির্যাতন করা হচ্ছে। ওই মহলটি মুসলমান ও ইসলামী রাজনীতি বন্ধের চক্রান্ত করছে। মহাসচিব ইউনুছ আহমাদ বলেন, রাসূল (সা.) এর আগমনের পূর্বে বিশ্বব্যাপী এক মহাপরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। কাজেই অশান্তি দূর করে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে নববী আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন বলেন, বিশ্বের সর্বত্র মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত। আজ যারা মানবাধিকারের কথা বলে, তারাই মানবাধিকার বেশি লঙ্ঘন করে। বসিনয়া, হার্জেগোবিনিয়া, ভারত, স্পেনসহ বিশ্বের দেশে দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। কাজেই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার মূর্তপ্রতীক মুহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই সত্যিকারের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব। মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী বলেন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্বে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন রাসূল (সা.)। তিঁনি মানুষের সকল প্রয়োজন, ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সকল ক্ষেত্রে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।