পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিগত প্রায় এক দশক ধরে দেশে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ মন্থর গতিতে চলছে। বিনিয়েগোর অফুরন্ত সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বিনিয়োগকারীদের ভালোভাবে আকৃষ্ট করা যাচ্ছে না। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, লালফিতার দৌরাত্ম, বিনিয়োগকারীদের দ্রুত বিনিয়োগের সুবিধা দেয়া, গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ পেতে ধীরগতিসহ অপ্রতুল অবকাঠামো এক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে রয়েছে। বিগত এক দশকে সউদী আরবের মতো ধনাঢ্য দেশ বিনিয়োগ করার কথা বলেছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রায় ৩৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে তা হয়নি। দেশটি ফিরে গেছে। কেন ও কি কারণে ফিরে গেছে, তা জানা যায়নি। ২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফরে এসে মেগাপ্রকল্পসহ ২০ বিলিয়ন ডলার লোন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও এই ঋণ পাওয়ার গতি অত্যন্ত ধীর হয়ে পড়েছে। এ বছরের জুন পর্যন্ত ২০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে এসেছে মাত্র ৮.০৪ বিলিয়ন ডলার। এই ঋণের মধ্যে জুন পর্যন্ত ৩.৫ বিলিয়ন ডলার ছাড় হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকার ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে চীন ঋণ দিয়েছে ৯ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। বাকি অর্থ সরকার দেবে। চীনের প্রতিশ্রুত ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এটি হতাশাজনক চিত্র। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ঋণের এ গতি বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ সংশ্লিষ্টদের অধিক তৎপরতা চালাতে হবে।
দেশে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এককভাবে নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্ট সালমান এফ রহমান বিদেশি বিনিয়োগ দেশে আনার জন্য নিরন্তর ছুটে চলেছেন। তিনি এক দেশ থেকে আরেক দেশে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সফর করছেন। বর্তমানে সউদী বিনিয়োগ দেশে আনার জন্য সেখানে রয়েছেন। ইতোমধ্যে সউদী বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে দুদেশের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব বিষয়ক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছেন। এতে সউদী আরব বাংলাদেশের অবকাঠামো, চিকিৎসা, পর্যটনসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করবে। এটি সালমান এফ রহমানের আন্তরিক প্রচেষ্টারই ফসল। এজন্য আমরা তাকে ধন্যবাদ জানাই। সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিদেশি বিনিয়োগ আনার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা চলাচ্ছেন, তার সাথে বিনিয়োগ সংশ্লিষ্টরা তাল মেলাতে পারছে না কিংবা শৈথিল্য প্রদর্শন করছে। প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে আমলাদের কাজ কি? একটি ধনাঢ্য বা বিনিয়োগে আগ্রহী দেশ যখন বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করে, তখন সে বিনিয়োগ দেশে আনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সকলকে ঝাপিয়ে পড়ার কথা। যতরকম পন্থা অবলম্বন করা যায়, তা করতে হয়। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট একশ্রেণীর আমলার দুর্নীতি ও অদক্ষতা প্রতিবন্ধক হয়ে রয়েছে। তারা বিনিয়োগকারীদের সাথে সহায়তামূলক আচরণ করেন না। এতে বিনিয়োগে আগ্রহীরা হতাশ হয়ে ফিরে যায়। অথচ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অগ্রগতি এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বিনিয়োগের বিকল্প নেই। আমাদের দেশে কোটি কোটি বেকার তরুণ শ্রেণী রয়েছে। দক্ষতার অভাবে তারা না পারছে দেশের বাইরে যেতে, না পারছে দেশে কাজ করতে। এখন বিদেশে দক্ষ শ্রমিক ছাড়া যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে, আমাদের দেশে বিদেশি দক্ষ শ্রমিক ও কর্মকর্তা দেশ থেকে বছরে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার নিয়ে যাচ্ছে। এই বিপুল অর্থ দেশ থেকে চলে যাওয়ার কারণ, দেশে দক্ষ শ্রমিক ও কর্মকর্তা না থাকা। অর্থনীতিবিদরা দেশে দক্ষ শ্রমিক তৈরি করার উপর বারবার জোর দিচ্ছেন। সমস্যা হচ্ছে, দক্ষ শ্রমিক তৈরির জন্য যে হারে বিনিয়োগ, কলকারখানা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠা দরকার তা হচ্ছে না। সরকার দেশে বিনিয়োগ করার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য ১০০টি শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পাঞ্চল শিঘ্রই চালু হচ্ছে। অন্যগুলোর কাজ চলছে। এতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মুখে তাদের জিম্মি হয়ে পড়তে হচ্ছে। যেখানে ভিয়েতনামের মতো দেশে বছরে গড়ে ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ হচ্ছে, সেখানে গত এক দশকে বাংলাদেশে গড়ে আড়াই বিলিয়ন ডলারের মধ্যে থেকে যাচ্ছে। ভিয়েতনাম বিদেশি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করতে অবিরাম কাজ করে চলেছে। আমাদের দেশে এ সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে তেমন কোনো তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। অর্থনীতিবিদরা বিনিয়োগের বাধা হিসেবে বরাবরই আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে দায়ী করে আসছেন। তারা বলছেন, যতদিন এ সংশ্লিষ্ট আমলারা তৎপর না হবেন এবং জটিলতা দূর করতে উদ্যোগী না হবেন, ততদিন বিনিয়োগের এ খরা কাটবে না। প্রশ্ন হচ্ছে, এ সংশ্লিষ্ট আমলারা কবে বিনিয়োগকে সহজ করতে উদ্যোগী হবেন?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে যেভাবে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা নিয়ে কাজ করছেন, তাঁর এই আন্তরিকতার সাথে যদি সংশ্লিষ্ট আমলারা তাল মিলাতে পারতেন, তাহলে আমাদের অর্থনীতির অগ্রগতির চেহারাটা আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠত। আমলাদের মধ্যে এ বোধোদয় কবে হবে, তাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যে সরকার যেসব অগ্রাধিকারমূলক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, তাতেও ঢিলেমি পরিলক্ষিত হচ্ছে। দফায় দফায় সময় ও ব্যয় বাড়ানোর অপসংস্কৃতির বেড়াজালে আটকে পড়ছে। অথচ জনগরেণ প্রত্যাশা, এসব মেগাপ্রকল্পের সুফল এ সরকারের মেয়াদকালে পাওয়া যাবে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে তাদের এ আশা যদি পূরণ না হয়, তবে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব মেগা প্রকল্পসহ অন্যান্য যেসব প্রকল্পের কাজ চলছে, এগুলোর সাথে জড়িত প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের অধিক তৎপর হতে হবে। তা নাহলে, অনেক প্রকল্পের কাজ শেষ করতে দীর্ঘ সময় লেগে যাবে এবং ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। এজন্য প্রকল্প সংশ্লিষ্ট পরিচালকদের জবাবদিহির আওতায় আনা জরুরি। কেন ও কি কারণে সময়মতো প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে না, এর ব্যাখ্যা তাদের দিতে হবে। যৌক্তিক কারণ না থাকলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যেসব অদক্ষ ও দুর্নীতিবাজ আমলা রয়েছে তাদের অপসারণ করে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।