Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিশ্ব বাজারে উপসাগরীয় দেশগুলোর বিনিয়োগ জোয়ার

ফাইনান্সিয়াল টাইম্স | প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০২ এএম

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে উপসাগরীয় অঞ্চলে কাতারের ফুটবল বিশ্বকাপই একমাত্র জনাকীর্ণ অনুষ্ঠান ছিল না, আবুধাবিতে একটি বার্ষিক অর্থ সম্মেলন এতটাই জমজমাট ছিল যে, উপস্থিতদের কেবল দাঁড়ানোর জায়গাটুকু ছিল এবং অধিবেশন শেষে ব্যাঙ্কার ও বিনিয়োগকারীদের এমনকি পথের ওপর দাঁড়িয়েই চুক্তি করতে হয়েছে। কারণ, তেলসমৃদ্ধ এ অঞ্চলকে এখন ব্যাপক অবশিষ্ট পুঁজির অন্যতম উৎস হিসাবে দেখা হচ্ছে। প্রতিবেশী সউদী আরবেও একই রকম দৃশ্য দেখা গেছে, যেখানে দেশটির তথাকথিত ‘দাভোস ইন দ্য ডেজার্ট’ বিনিয়োগ সম্মেলনে ১ হাজারেরও বেশি রেকর্ড সংখ্যক ‘গ্লোবাল এক্সিকিউটিভ’ বা আন্তর্জাতিক নির্বাহীরা অংশ নিয়েছিলেন, যাদের মধ্যে প্রায় ৪শ’ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ থেকে আগত ছিল। মূলধন ও কৌশলগত অংশীদার লাভের প্রত্যাশায় গত দুই মাস ধরে প্রতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, চীন, ভারত থেকে আগত প্রতিষ্ঠানগুলো এভাবেই নিজেদের উপস্থাপন করেছে।
যারা উপসাগরীয় বিনিয়োগ লাভের পথ খুঁজছে, তাদের অনেকের মনে একটা জিনিস রয়েছে: মূলধনের প্রলোভন এবং এর ‘সভারেন ওয়েল্থ ফান্ড (এসডব্লিউএফ)’ বা সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের সাথে আকর্ষণীয় চুক্তি করা, কারণ এ অঞ্চলটি এক দশকের মধ্যে প্রথম পেট্রোডলার সৃষ্ট আর্থিক উদ্বৃত্তি উপভোগ করছে, যা এর আগে ২০০৮ সালে ঘটেছিল। সেসময় উপসাগরীয় এসডব্লিউএফ’র অনেকগুলো বৈশি^ক বিনিয়োগের নামে যখন তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি রেকর্ড ১শ’ ৪৭ ডলারে উন্নীত হয় এবং বিশ্বের বেশিরভাগ অংশই ব্যাপক আর্থিক সঙ্কটের শিকার হয়, তখন আবু ধাবির বিনিয়োগ এবং কুয়েতি ও কাতারি এসডব্লিউএফ সবথেকে বড় সাড়া ফেলেছিল। এসব তহবিল পুঁজি বাড়ানোর জন্য মরিয়া পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনিয়োগ করে। সিটি গ্রুপ, ক্রেডিট সুইস, বার্কলেস এবং ডেইমলার ছিল উপসাগরীয় পেট্রোডলারের বিনিয়োগের মাধ্যমে শক্তিশালী শিল্পসংস্থা এবং ব্র্যান্ডগুলোর অন্যতম।
এটি এমন একটি পদক্ষেপ, যা উপসাগর অঞ্চলের ক্রমবর্ধমানভাবে আত্মবিশ্বাসী নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে নেয়া হয়েছে, বিশেষ করে সউদী ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের, যিনি তিনি তার পশ্চিমা সমালোচনা প্রশমিত করতে চান এবং দেশটিকে একটি প্রধান জি২০ শক্তি হিসাবে উপস্থাপন করতে চান। এ উপসাগরীয় এসডব্লিউএফ বিনিয়োগের নতুন ধাপ করোনাভাইরাস মহামারি দিয়ে শুরু হয়েছিল। ২০২১ সালে মুবাদালা রেকর্ড ৩ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করে। গত বছর এটি পাঁচ বছরের জন্য যুক্তরাজ্যে ১ হাজার কোটি পাউন্ড বিনিয়োগ করার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। এর অংশীদার সংস্থা এডিকিউ মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং তুরস্কজুড়ে বিনিয়োগ অংশীদারিত্ব অধিগ্রহণের পথে রয়েছে। এমনকি আবুধাবির সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী এবং রক্ষণশীল বিনিয়োগ সংস্থা কিউআইএ উচ্চ গতিতে বিনিয়োগ করছে। এর সবচেয়ে বড় বিনিয়োগের মধ্যে রয়েছে জার্মান জ্বালানি প্রতিষ্ঠান আরডব্লিউই’তে ২শ’ ৪০ কোটি ইউরো এবং ভারতে জেমস মারডকের বোধি’তে ১শ’ ৫০ কোটি ডলার।
সউদী আরবে সরকারী বিনিয়োগ তহবিল বা পিআইএফ অত্যন্ত সক্রিয়। এটি সউদী বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্র্যান্ড সিয়ার থেকে শুরু করে কফি এবং বিমান লিজিং কোম্পানি পর্যন্ত অগণিত কোম্পানি চালু করছে। পাশাপাশি এটি বিদেশী শেয়ারের মাধ্যমেও শত শত কোটি ডলারের ব্যবসা করছে। এর সম্পদ ২০১৭ সালের ৯ শতাংশ থেকে গত জুনে প্রায় এক চতুর্থাংশে উন্নীত হয়েছে, যখন তহবিলের আকার সাত বছর আগের প্রায় ১৫ হাজার কোটি ডলারের থেকে ৬০ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি হয়েছে। এর লক্ষ্য হল, আন্তর্জাতিক বিনিয়োগে প্রায় ৩০ শতাংশ ২০২৫ সালের মধ্যে ১ ট্রিলিয়ন এর বেশি সম্পদে পৌঁছানো।
সউদী আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের বর্তমান বিনিয়োগ জেয়ারের একটি মূল লক্ষ্য হল দেশীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা সমর্থন করার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের অনুকূলে নিয়ে আসার জন্য রাষ্ট্রীয় তহবিল ব্যবহার করা। এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা উত্তপ্ত হওয়ার সাথে সাথে এটি আসে। পিআইএফ গত সাত বছরে ৬০টিরও বেশি নতুন দেশীয় প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে। এটি আগামী দশকে অর্থনীতিতে বার্ষিক ৪ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা একটি নতুন বিমানবন্দর এবং এয়ারলাইন তৈরি করা থেকে শুরু করে নতুন শিল্প উদ্ভাবন, সউদী আরবের ক্রমবর্ধমান এবং বিস্তীর্ণ অবকাঠামো প্রকল্পগুলো চালনা করা পর্যন্ত বিস্তৃত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিনিয়োগ জোয়ার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ