পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারতের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান- ‘বাংলাদেশে এখন উদার বিনিয়োগ সুবিধা, বৃহত্তর লাভের জন্য পরিবহন, অবকাঠামো প্রকল্প, শিল্পোৎপাদন, জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ করতে পারেন :: সাশ্রয়ী ব্যয়ে এবং স্বল্প সম্পদ ব্যবহার করে বাংলাদেশে শিল্প স্থাপন করা যায় :: বাংলাদেশ এখন উন্নত উৎপাদন সক্ষমতা নিয়ে প্রতিযোগিতামূলক দামে মানসম্পন্ন পণ্য ভারতের বাজারে সরবরাহ করতে প্রস্তুত :: বেশি দামে দূর দেশ থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি না করে বাংলাদেশি পণ্য আমদানি করুন।’ :: ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর সৈনিক ও কর্মকর্তাদের বংশধরদের ‘মুজিব বৃত্তি’ প্রদান
হাজার হাজার ভারতীয় নাগরিক এখন বাংলাদেশে কাজ করছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ভারতের ব্যবসায়ীরা সাশ্রয়ী ব্যয়ে এবং স্বল্পসম্পদ ব্যবহার করেই বাংলাদেশের অবকাঠামো প্রকল্প, শিল্পোৎপাদন, জ্বালানি এবং পরিবহন খাতে বিনিয়োগ করতে পারেন। গতকাল বুধবার দিল্লিতে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি (এফবিসিসিআই) এবং কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি (সিআইআই) যৌথভাবে আয়োজিত বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য ফোরামে বক্তৃতায় তিনি এ আহ্বান জানান। দিল্লির মৌর্য শেরাটন হোটেলে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ থেকে ভারতে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক পর্যটক ও চিকিৎসার জন্য রোগী আসেন। হাজার হাজার ভারতীয় নাগরিক এখন বাংলাদেশে কাজ করছেন। তারা উভয় দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেকার সম্পর্ক কূটনীতির রোল মডেল হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশ ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন ও বাণিজ্য অংশীদার। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান গভীর বন্ধুত্বের বন্ধন ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে এবং বিকাশ লাভ করবে। এ জন্য দুই দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে ঘনিষ্ঠ হওয়া এবং আমাদের জনগণের পারস্পরিক সমৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে তাদের যথাযথ ভূমিকা পালন করা উচিত। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সহযোগিতাকে কেবল বাণিজ্যের মধ্যে না রেখে, বিনিয়োগ, অর্থায়ন, সেবা ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের মত ক্ষেত্রে এর বিস্তৃতি ঘটাতে হবে। বাংলাদেশের ‘উদার’ নীতি এবং সরকারের দেয়া সুযোগ সুবিধার কথা তুলে ধরে অবকাঠামো, শিল্প, জ্বালানি ও পরিবহন খাতে বড় আকারের বিনিয়োগ করতে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সামনে বিগত ১২ বছরের বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমি আপনাদের প্রতি আহ্বান জানাব, ভারতীয় বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বাই-ব্যাক কাঠামোর আওতায় কম সময়ে, সাশ্রয়ী ব্যয়ে এবং স্বল্প সম্পদ ব্যবহার করে বাংলাদেশে শিল্প স্থাপন করতে পারেন। গত দশ বছরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সন্তোষজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই বাণিজ্য ভারসাম্য ভারতের দিকেই অনেকটা ঝুঁকে আছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নত উৎপাদন সক্ষমতা নিয়ে প্রতিযোগিতামূলক দামে মানসম্পন্ন পণ্য ভারতের বাজারে সরবরাহ করতে প্রস্তুত। তাই আমরা ভারতীয় আমদানিকারকদের আমন্ত্রণ জানাতে চাই, বহুদূরের দেশ থেকে বেশি দামে আমদানির বদলে বাংলাদেশি পণ্যের দিকে আপনারা নজর দিতে পারেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বিগত ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ মোট ১৩৭০.৩৫৭ মিলিয়ন ডলারের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) পেয়েছে, যার মধ্যে ভারত থেকে এসেছে মাত্র ১৫.৭৫১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (মোট এফডিআইয়ের মাত্র ১.১৫ শতাংশ)। দ্বিমুখী বাণিজ্য ও বিনিয়োগ থেকে আমরা কীভাবে আরো সুফল পেতে পারি, সেই পথ খুঁজে বের করতে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং বাণিজ্য সংস্থাগুলোকে সম্পৃক্ত করে আমাদের দুই দেশের সহযোগিতা আরো জোরদার করা প্রয়োজনীয়তা আমরা এখানে স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছি। এ অঞ্চলের সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ সুবিধা বাংলাদেশই দিচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য আছে আকর্ষণীয় প্রণোদনা নীতি। এ খাতের উন্নয়নে ধারাবাহিক সংস্কার চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। শিল্প, কর্মসংস্থান, উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধি এবং পণ্যের বহুমুখীকরণের মাধ্যমে বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ২৮টি হাই-টেক পার্ক স্থাপন করা হয়েছে। ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য মোংলা এবং মিরসরাইয়ে দুটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করা হচ্ছে। এখানে উপস্থিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানাচ্ছি। ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের সুবিধাজনক অবস্থানের কারণে ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা তাদের পণ্য কেবল ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে নয়, নেপাল, ভুটান এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতেও রপ্তানি করতে পারবেন।
কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির চলমান সঙ্কটের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এই সঙ্কট পণ্য পরিবহন ব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে। এতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোসহ অনেক দেশই তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, চলমান চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ভারত বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির অন্যতম। বর্তমানে বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহৎ অর্থনীতি ভারত ২০৫০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের পরে বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে বাংলাদেশও একটি সার্বভৌম, স্বাধীন দেশ হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ বাস্তবায়নে ‘অনেক দূর’ এগিয়েছে। দুর্ভিক্ষ ও খাদ্য-সহায়তার ওপর নির্ভরতা কাটিয়ে বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাংলাদেশ এখন চাল, শাকসবজি, শস্য ও মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বের বড় উৎপাদক দেশগুলোর অন্যতম।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এখনই সবচেয়ে ‘ভালো’ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সম্পর্ক এখন প্রতিবেশীদের কূটনীতির ‘রোল মডেল’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ ও ভারতের বিদ্যমান বন্ধুত্বের গভীর বন্ধন ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে এবং বিকাশিত হবে। সেজন্য দুই দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের উচিত আরো কাছাকাছি আসা এবং আমাদের জনগণের পারস্পরিক সমৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে যথাযথ ভূমিকা পালন করা। এর মধ্য দিয়ে আমরা এ অঞ্চলে সমৃদ্ধি ও শান্তি আনতে সক্ষম হব।
বাংলাদেশ ও ভারতের ব্যবসায়ীদের এই সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী গঙ্গাপুরম কিষাণ রেড্ডি, সিপিআইয়ের মহাপরিচালক চন্দ্রজিৎ ব্যানার্জি, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন ও সিআইআইয়ের সভাপতি সঞ্জীব বাজাজ। দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারকও বিনিময় হয়।
‘মুজিব বৃত্তি’ প্রদান : এদিকে প্রধানমন্ত্রী তার অবস্থানকালীন হোটেলের বলরুমে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বা গুরুতর আহত ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর সৈনিক ও কর্মকর্তাদের সরাসরি বংশধরদের ‘মুজিব বৃত্তি’ প্রদান করেন। এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেকার সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারিত্বের ঊর্ধ্বে এবং গত এক দশকে তা আরো জোরদার হয়েছে। গত ৫০ বছরে একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার পর উভয় দেশই ক্রমবর্ধমান বিস্তৃত সেক্টরাল সহযোগিতায় কাজ করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০টি মুজিব স্কলারশিপ, দশম শ্রেণিতে ১০০টি এবং দ্বাদশ শ্রেণির স্তরে ১০০টি, যুদ্ধের ভারতীয় প্রবীণ সৈনিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তাদের বংশধরদের জন্য আমাদের এই শুভেচ্ছা উপহার। যারা আমাদের জন্য ১৯৭১ সালে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন। আমরা ভারতীয় ভাইদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে তাদের অমূল্য জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং রক্ত দিয়েছেন। যারা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের স্মরণ করা আমাদের জন্য সর্বদা গর্বের বিষয়। আপনাদের আমার অভিবাদন, হে সাহসী হৃদয়, আমাদের বীরদের! তিনি বলেন, যেহেতু আমরা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে আমাদের মহান পূর্বপুরুষদের উত্তরাধিকারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহী, তাই তরুণ প্রজন্মকে সেই ঐতিহাসিক অতীতের সাথে পুনরায় সংযুক্ত করার জন্য আমাদের এ বিনীত প্রচেষ্টা। বৃত্তিপ্রাপ্তরা তাদের পূর্বপুরুষদের বীরত্বের স্মৃতি পুনরায় ঘুরে দেখার, বর্তমান পরিস্থিতির সাথে সম্পর্কিত এবং দুই দেশের মধ্যে সেতুবন্ধন চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা বিদেশি বন্ধুদের সম্মান জানাতে বাংলাদেশ সরকার একটি কর্মসূচি শুরু করেছে। আমরা সৌভাগ্যবান যে ২০১১ সালে প্রথম সম্মাননা প্রদানের অনুষ্ঠান করতে পেরেছিলাম, যখন বিদেশি বন্ধুদের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘বাংলাদেশ ফ্রিডম অ্যাওয়ার্ড’ ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে দেয়া হয়। পরবর্তীকালে ভারতের আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জীসহ ভারতীয় নেতাদের আরো পুরস্কার প্রদান করা হয়।
যুদ্ধের নায়ক এবং ভারতের নাগরিক সমাজের সদস্যদেরও পর্যায়ক্রমে সম্মানিত করা হয়েছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, মোট ৩৪০ জন বিদেশি নাগরিক এবং সংস্থাকে সম্মানিত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২২৬ জনই ভারতের। ২০১৭ সালের এপ্রিলে আমি নয়া দিল্লিতে মোদিজির উপস্থিতিতে বীরযোদ্ধাদের বংশধর ও পরিবারের নিকটাত্মীয় সদস্যদের পুরস্কার প্রদানের জন্য সম্মান পেয়েছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।