পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বাংলাদেশকে ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়ার জন্য বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ৩৩টি শর্ত দিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শর্তগুলো হচ্ছে, সঞ্চয়পত্রের সুদর হার কমানো, বৈদেশিক মুদ্রানীতি শিথিল করা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ কমানো। তাদের শর্ত পূরণ হলে আগামী ৩ বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে ঋণ ছাড় দেবে। পশ্চিমা দেশগুলোর স্বার্থে দেয়া এই শর্ত মেনে বাংলাদেশ ঋণ নিতে আগ্রহী নয়। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল শর্ত মেনে ঋণ নেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। অর্থনীতিবিদরা বাংলাদেশের এই সিদ্ধান্তকে সাহসী বলে আখ্যায়িত করে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা মনে করছেন, বাংলাদেশকে বিপাকে ফেলতে এবং প্রতিষ্ঠান দুটির কথামতো চলার জন্যই শর্ত মেনে ঋণ দেয়ার কথা বলেছে। অতীতের কথা বিবেচনায় নিলে দেখা যাবে, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ যেসব ঋণ দিয়েছে, তাতে নানা ধরনের শর্ত ছিল। তাদের এসব শর্ত মনে বাংলাদেশকে ঋণ নিতে হতো। তবে শর্ত মেনে বা তাদের কথা মতো চলার পরিস্থিতি বাংলাদেশের এখন নেই। তাদের ঋণ ছাড়াই বাংলাদেশের অর্থনীতি চলতে সক্ষম।
করোনা সারাবিশ্বের অর্থনীতিকে দুর্বল করে দিয়েছে। পশ্চিমাবিশ্বের ধনী দেশগুলোর অর্থনীতির ভিত্তি নাড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও করোনার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে যেভাবে দুর্বল হয়ে পড়ার কথা, সেভাবে দুর্বল হয়নি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি ভাল অবস্থায় রয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের চেয়েও এগিয়ে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত্তিটি বেশ মজবুত হয়েছে। শত দুর্যোগেও নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে থাকার মতো অবস্থায় উপনীতি হয়েছে। এক সময় অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে পশ্চিমাদেশগুলোর পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠা বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ নানা শর্ত দিয়ে আমাদের দেশে ঋণের সওদা করত। এখনও তাদের ঋণ রয়েছে। এতে ঋণ নেয়া দেশগুলোর রাজনীতি এবং অর্থনীতির ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলোর ছড়ি ঘোরানো কিংবা তাদের কথামতো সরকারকে চলতে বাধ্য করার পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো। শুধু বাংলাদেশ নয়, আফ্রিকার দরিদ্র দেশ থেকে শুরু করে বিশ্বের অন্যান্য দরিদ্র দেশেও প্রতিষ্ঠান দুটি ঋণের সুবিধা দিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোকে তাদের ওপর খবরদারি করার নীতি বলবৎ রেখেছে। নেপথ্যে থেকে ঋণের কথা বলে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনেও ভূমিকা রাখে। তাদের কথা মতো না চললে, ঋণ দেয়া বন্ধ বা স্থগিতের মতো সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে বাধ্য হয়েই দেশগুলোকে তাদের কথামতো চলতে হয়। তবে বাংলাদেশ এখন আর দরিদ্র বা যুদ্ধবিধ্বস্ত কোনো দেশ নয়। ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। ২০৩১ সালের মধ্যে মধ্যম আয় এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হবে। দেশের মাথাপিছু আয় ও জিডিপিও আশানুরূপভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আইএমএফ-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ বছর মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে বাংলাদেশ ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে। অন্যদিকে, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে লকডাউনের কারণে সবকিছু বন্ধ থাকলেও লকডাউন শেষে পুর্নোদ্যমে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে। রফতানিও বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সউদী আরবসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ বিশাল বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। চীন বাংলাদেশের প্রধানতম উন্নয়ন সহযোগী হয়ে উঠেছে। দেশটি অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। করোনা মহামারি চলাকালীন সরকার বহুপক্ষীয় দাতাদের কাছ থেকে বিপুল অর্থ সহযোগিতা পেয়েছে। এমনকি করোনার মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি বৈশ্বিক মন্দাবস্থার মধ্যেও স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। পুরোদমে টিকা কার্যক্রম চলমান থাকা এবং করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় অর্থনীতির গতি দ্রুত বেগবান হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ-এর খবরদারিমূলক শর্ত মেনে বাংলাদেশের ঋণ নেয়ার প্রয়োজন আছে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন না। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন।
বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ যতটা না কাজ করে, তার চেয়ে কথা বেশি বলে। প্রতিষ্ঠান দুটি দরিদ্র দেশগুলোকে ঋণ সহায়তা দিয়ে সহযোগিতা করলেও, এর নেপথ্যে দেশগুলোর ওপর পশ্চিমাবিশ্বের আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠায় বেশি ভূমিকা রাখে। এক সময় অর্থনৈতিক দুর্বলতার কারণে বাংলাদেশকেও তাদের আধিপত্যবাদী শর্তে ঋণ নিতে হয়েছে। এখন ঋণ নিয়ে চলতে হবে, এমন অবস্থায় নেই। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ-এর ঋণ নিলে নানা শর্তের কারণে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টিসহ অর্থনীতির স্থিতাবস্থা বিনষ্ট হবে। ঋণের প্রয়োজন হলে, বিশ্বব্যাংক বা আইএমএফ-এর শর্ত নয়, বরং বাংলাদেশের স্বার্থের অনুকূলের শর্ত মেনে ঋণ নেয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে পারস্পরিক সমঝোতা কিংবা মুক্ত আলোচনা হতে পারে। ঋণদাতাদের একতরফা শর্ত কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।