পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চলমান বৈশ্বিক সঙ্কটের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশকে আবারও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলায় বাংলাদেশের পাশে থাকবে সংস্থাটি। এ পরিস্থিতি বাংলাদেশেরই বা প্রস্তুতি কি সে বিষয়েও জানতে চেয়েছে সংস্থাটি। গতকাল সকালে ঢাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠক করেন সফররত আইএমএফ’র উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যান্তোইনেত মনসিও সায়েহ। রাতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের আমন্ত্রণে রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেল সোনারগাঁওয়ে নৈশভোজে অংশ গ্রহণ করেন। নৈশভোজের আগে সন্ধ্যায় আইএমএফ ডিএমডি তাঁর প্রতিনিধিদলসহ অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বৈঠকে মিলিত হন। দুটি বৈঠকেই তিনি চলমান বৈশ্বিক সঙ্কটের কারণে অর্থনীতিতে যে ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ যুক্ত হয়েছে সে ব্যাপারে বাংলাদেশের পাশে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। বৈঠক সফল ও ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা কর্মকর্তারা। পাঁচ দিনের সফরে অ্যান্তোইনেত মনসিও সায়েহ বাংলাদেশে এসেছেন।
আইএমএফ ডিমএডি অ্যান্তোইনেত মনসিও সায়েহের এবারের সফরটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে নিয়েছে সরকার। কারণ এ সংস্থা থেকে বাংলাদেশকে সাড়ে ৪৫০ কোটি বা সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়ার বিষয়ে শর্তসহ খুঁটিনাটি চ‚ড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। তবে তাঁর এই সফরে ঋণের বিষয়টি আলোচনার টেবিলে নেই বলে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে। বৈঠকের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে এসেছেন আইএমএফ’র ডিএমডি। তিনি বিভিন্ন দেশ সফর করছেন, অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছেন। বাংলাদেশে আইএমএফ কাউন্টার-পার্ট হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই গভর্নরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে চলমান যে অস্থিরতা বিরাজ করছে, তার সঙ্গে বাংলাদেশ কীভাবে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
মেজবাউল হক বলেন, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির নীতিগুলো কীভাবে প্রণয়ন করা যায় এবং তার প্রয়োগ করার কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে জলবায়ু পরির্বতনজনিত ঝুঁকির প্রভাব মোকাবেলায় আইএমএফ কোন কোন খাতে আর্থায়ন করতে পারে তা এসেছে আলোচনায়। করোনাভাইরাস মহামারি পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের প্রশংসা করেছে প্র্রতিনিধি দল। বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সক্ষমতা বাড়াতে অর্থায়নের আশ্বাস দিয়েছে বৈশ্বিক সংস্থাটি।
সূত্র মতে, বাংলাদেশকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে গত নভেম্বরে আইএমএফ’র সঙ্গে বৈঠকে প্রাথমিক সমঝোতা হয়। সে বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, ঋণ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। বৈঠকে মূলত বৈশ্বিক অর্থনীতি ও বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন স‚চকগুলো প্রাধান্য পেয়েছে। আইএমএফ বলছে, এই সফর বংলাদেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরও জোরদার করতে সহায়ক হবে বলে তারা আশা করছে। এদিকে আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করবেন আইএমএফ ডিএমডি। বাংলাদেশ যেসব অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে আছে, সেসব বিষয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি আইএমএফ কীভাবে সেসব চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তরণে সহযোগিতা করতে পারে, সেসব বিষয় আসবে এসব বৈঠকে। এছাড়া বাংলাদেশে নারী অধিকার কর্মী এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও বৈঠক করার কথা রয়েছে আইএমএফ’র উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালকের। এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রগগুলো দাবি করেছে-আইএমএফের কাছ থেকে বড় অঙ্কের ঋণ পাবে বাংলাদেশ। মূলত সেই ঋণ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার আগে ডিএমডি এই সফর করছেন।
জানা গেছে, চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি কিংবা ফেব্রæয়ারি মাসের শুরুতে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিতব্য পরবর্তী বৈঠকেই বাংলাদেশের ঋণ পাওয়ার বিষয়টি অনুমোদন করা হবে। আর সেই বোর্ড মিটিংয়ে বাংলাদেশ ঋণ পেতে পারে কি না কিংবা ঋণ ফেরত প্রদানে কতটা সক্ষম সে বিষয়ে চূড়ান্ত সুপারিশ করবেন অ্যান্তোইনেত মনসিও সায়েহ। এ কারণে তাঁর এই সফর অত্যন্ত গুরুত্বপ‚র্ণ বলে মনে করছে বাংলাদেশ। গতকাল সন্ধ্যায় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও আইএমএফ ডিএমডি বাংলাদেশের ঋণ পাওয়ার পাওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করছেন বলে দাবি করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত এই বৈঠকে সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তারা ছাড়া কেউ অংশগ্রহণের সুযোগ পাননি। এমনকি সংবাদমাধমের প্রবেশাধিকার রাখা হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ডলার সঙ্কটের মধ্যেও বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলো ভালো থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে আইএমএফ। এ কারণে চলতি বছরের মধ্যে বাজেট সহায়তা হিসেব প্রথম কিস্তির অর্থ পাবে বাংলাদেশ।
এছাড়া পরবর্তী আরও সাতটি কিস্তিতে আইএমএফ ঋণের পুরো অর্থ পরিশোধ করবে। সম্প্রতি সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছিলেন, আইএমএফ সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে রাজি। এই অর্থ বাংলাদেশ পাবে সাত কিস্তিতে। এছাড়া নভেম্বর মাসে এই ঋণ পাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন সংস্থাটির কর্মকর্তা কর্মকর্তা রাহুল আনন্দ। ওই সময় পনের দিন বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, একটি প্রতিবেদন তৈরি করে আইএমএফের নির্বাহী পরিষদে উপস্থাপন করা হবে। সকল আনুষ্ঠানিকতা সেরে দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে আইএমএফ বোর্ড এ ঋণ প্রস্তাবে চ‚ড়ান্ত অনুমোদন দিতে পারে। এ ঋণের অর্থ দিয়ে যেসব প্রæকল্প বাংলাদেশ সরকার হাতে নেবে, তার উদ্দেশ্য হবে সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখা এবং দুর্দশায় পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিয়ে দৃঢ়, অন্তর্ভ‚ক্তিমূলক এবং পরিবেশবান্ধব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এগিয়ে নেওয়া। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সামষ্টিক অর্থনীতির ঝুঁকি কমিয়ে আনতেও এই ঋণের অর্থ ব্যয় করা হবে।
আইএমএফ প্রতিনিধি দলের নভেম্বরের সফরের সময় বেশকিছু শর্ত নিয়ে আলোচনা করা হয়। এরমধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতের ভর্তুকি ব্যয় কমিয়ে আনার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয়েছিল। আইএমএফের সেই শর্ত মেনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়িয়ে মূল্য সমন্বয় করেছে সরকার। এছাড়া দেশে আর্থিক খাতের সংস্কারের বিষয়টি বিভিন্ন অঙ্গনে আলোচনায় গুরুত্ব পায়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংস্কার, আইন বাস্তবায়ন ও ডিজিটালাইজেশন, ব্যাংক খাতের সংস্কার ও খেলাপি ঋণ এবং সরকারের বিভিন্ন খাতের ভর্তুকির বিষয়গুলো সেই আলোচনায় ঘুরে ফিরে আসে। আইএমএফ’র এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে সম্প্রতি জানানো হয়, মূল্যস্ফীতি সহনশীল রাখতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতাকে সমর্থন করে আইএমএফ। এ জন্য ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ-সহায়তা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে ঢাকা সফর করছেন মনসিও সায়েহ। ঋণ আলোচনা চূড়ান্ত করতে তিনি ঢাকা এসেছেন। এতে আরও বলা হয়বিশ্ববাজার উত্তপ্ত এবং ক্রমাগত শক্তিশালী হচ্ছে মার্কিন ডলার, যা আঘাত করছে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে। এ কারণে আইএমএফ’র দিক থেকে সহায়তা দেয়ার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ যে ঋণ পাচ্ছে, তা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সহায়তা করবে। রাষ্ট্রীয় তহবিল ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির পাশাপাশি বর্ধিত মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় আইএমএফ’র ঋণ একটি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হবে বলেও মনে করছে আইএমএফ। এদিকে, আজ সোমবার সকাল ১০ টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাত ও বৈঠক করবেন আইএমএফ ডিএমডি। ওই সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর এবং অর্থবিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া এবারের সফর আইএমএফ ডিএমডি পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, তৈরি পোশাকখাতসহ আরও কয়েকটি প্রকল্প ঘুরে দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আগামী ১৮ জানুয়ারি তার ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।