Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভবিষ্যতে পিপিপিতেই প্রকল্প বাস্তবায়নে যেতে হবে

প্রকৃত ঋণ খেলাপিদের এক্সিটওয়ে দিতে আইন বদলাতে পারে সরকার আলোচনা সভায় সালমান এফ রহমান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩১ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক সঙ্কটে ভবিষ্যতে সরকারি বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতেই প্রকল্প বাস্তবায়নে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, রিজার্ভ যেভাবে কমছে, তাতে পিপিপি প্রজেক্টে জোর দিতে হবে। পিপিপি-ই ভবিষ্যৎ, আমাদের এই পথে যেতে হবে। গতকাল শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই মিলনায়তনে ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে পিপিপি’র ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা পিপিপিতে ধীরগতির অভিযোগ আমলে নিয়ে এ উপদেষ্টা বলেন, পিপিপিতে যে আইনটা আছে, এটি খুব ভালো আইন। তবে কিছু সংশোধন করে ফার্স্ট ট্রাকে আনতে হবে। তবে দুইটি সমস্যা আছে। বিশেষ করে প্রস্তাব দেয়ার সময়ে বলা হয় যে আমি যদি পাই তাহলে কাজ করবো। কিন্তু দেখা যায় যে কাজ পাওয়ার পর তাদের কাছে বিনিয়োগ করার মতো টাকা নেই। প্রস্তাব দেয়ার পর যদি তাদের কাছে বিনিয়োগ করার মতো টাকা থাকে, তাহলে আমি তাদের বলবো যে আপনাদের প্রধান্য দেয়া হবে।

অনেক সুযোগ থাকার কথা উল্লেখ করে সালমান এফ রহমান বলেন, পিপিপি প্রজেক্টের জন্য আমাদের আরো জোর দিতে হবে। ৭৬টি প্রজেক্ট ইতোমধ্যে হাতে রয়েছে। জাপানের সঙ্গে ৩/৪ টি প্রজেক্ট আছে এবং কোরিয়ার সঙ্গে ৩/৪ টি প্রজেক্ট আছে।
ঋণ খেলাপির বিষয়ে তিনি বলেন, ঋণ খেলাপি শুধু বাংলাদেশে না, অনেক দেশেও আছে। ভারত ও চীনেও আছে। ঋণ খেলাপি সব জায়গায় আছে। আমাদের এর সমাধান বের করতে হবে। উদ্যোক্তা যদি কোনো প্রতারণা বা কারসাজি করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে প্রতিষ্ঠানটিকে বন্ধ করা যাবে না। এছাড়া কর রেশিও বাড়াতে আরও পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। সালমান এফ রহমান বলেন, প্রকৃত ঋণ খেলাপিদের জন্য এক্সিটওয়ে তৈরি করার জন্য সরকার ব্যাংকিং আইন পরিবর্তনের চিন্তা করছে। ঋণ খেলাপির কারণে ভারতে অনেক ব্যাংক মার্জ করা হয়েছে। চীনে কেউ ইচ্ছাকৃত খেলাপি হলে, সংশ্লিষ্ট খেলাপি কোম্পানিটির উৎপাদন চালিয়ে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট উদ্যোগ রাখে সরকার।

বাংলদেশে বিগত ১৪ বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে তা সারাবিশ্বের কাছেই একটি রোল মডেল। এর মূল কারন কি আসলে? মূল কারন অনেকগুলো। তবে সালমান এফ রহমান মনে করেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারন বিদ্যুৎ। তিনি বলেন, যখন আমরা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেছি, তখন আমাদের মাত্র সাড়ে চার হাজার মেগাওয়াট আমাদের উৎপাদন ছিল ও জেনারেশন। সেসময়ের লোডশেডিং সম্পর্কে আপনারা জানেন। বিদ্যুতের সমস্যা সমাধানের পরেই কিন্তু আমাদের অর্থনৈতিক গ্রোথ হয়েছে। এই বিদ্যুতের গ্রোথের পেছনে বেসরকারি খাতের অবদান সবচেয়ে বেশি। কিন্তু সেক্ষেত্রে পিপিআর আইন পরিবর্তন করে দ্রুততার সঙ্গে আইন করা হয়েছে রেন্টাল পাওয়ারের।

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, এখানে কয়েকটা কারণে রেন্টাল পাওয়ার এতো সফল হয়েছে। আজকে বাংলাদেশের মোট পাওয়ার সক্ষমতার ৫৪ শতাংশ কিন্তু বেসরকারি খাতের। এটা দু’তিনটা জিনিসের কারনে সফল হয়েছে। পিপিআর থেকে স্পিডি পাওয়ারের আইন, পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট। এ দুটি চুক্তির ড্রাফট ছিল আন্তর্জাতিক মানের এবং এরপরই বেসরকারি খাত বিনিয়োগ করতে রাজি হয়। সুতরাং একটা অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে যদি আপনি বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আনতে চান।

তিনি বলেন, আমরা কিন্তু অনেক সফল হয়েছি। দু’টি চুক্তির ফলে বেসরকারি খাত রির্টান ও ইনক্রিমেন্টেসন পাওয়ার গ্যারান্টি পেয়েছে। পিপিপি বাস্তবায়নে অনেক জটিলতা হয় বলে অনেক বক্তা উল্লেখ করেছেন। আপনারা বলছেন, সরকার ও বেসরকারি খাতের মধ্যে আস্থা নেই। কোথায়, পাওয়ার সেক্টরেতো আস্থাতো ছিল। আমাদের দেশের অনেকে এখানে এসেছে এছাড়া বিদেশীরাও এসেছে। ইউনাইটেড গ্রুপ আছে, সামিট গ্রুপ আছে; আরো অনেকগুলো। মোট ৫৪ শতাংশের মধ্যে আমি মনে করি ৪০ ভাগ হবে লোকাল। বাকি ১৪-১৫ শতাংশ হবে বিদেশী। যেভাবে আমরা পাওয়ার সেক্টরে করেতে পেরেছি অন্য খাতেও করতে পারবো।

সালমান এফ রহমান বলেন, পিপিপি মানে নতুন কোন কনসেপ্ট না। বঙ্গবন্ধুর সময় দেশ স্বাধীন হওয়ার সাথে সাথে আমরা শূন্য রিজার্ভ দিয়ে শুরু করেছিলাম। তখন যতগুলো জিনিস আমাদের আমদানি করতে হতো বাটার ব্যবস্থায়। তখন বাটারটা জিটুজি হতো। পোল্যান্ড, চেকোস্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরিসহ যতগুলো দেশ ছিল তাদের কাছ থেকে ঔষধ, সারসহ অনেককিছু আমরা আমদানি করতাম। এর বিপরীতে পাট, চা, চামড়া, চিংড়ি এগুলো রফতানি করতাম। এটা শতভাগ জিটুজি ছিল। ঠিক সেইসময় আমরা বঙ্গবন্ধু সাথে দেখা করেছিলাম এবং বলেছিলাম, আমরা বেসকারি খাতে বাটার করতে পারি না কেন? তিনি তখন বলেছিলেন, তোমরা এটা করতে পারো তবে একটা শর্তে, তোমরা ৬০ ভাগ ট্রেডিশনাল এবং ৪০ ভাগ নন ট্রেডিশনাল আইটেম রফতানি করতে হবে। তখন আমরা বলেছিলাম, আমরা নন ট্রেডিশনাল আইটেম পাবো কোথায়? তখন তিনি চাসহ অনেকগুলো নন ট্রেডিশনাল আইটেমের কথা বললেন। উনি এটা বিশ্বাস করেছিলেন, দেশকে যদি এগিয়ে নিতে হয় বেসরকারি খাতের উন্নয়ন প্রয়োজন।

এই শিল্পোদ্যোক্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবার যখন ক্ষমতায় আসলেন (১৯৯৬ সালে)। বেসরকারি খাতে অনেককিছু প্রথম তার হাত ধরে হয়েছে। প্রথমটা হলো এয়ারলাইনস, পাওয়ার স্টেশন, এলিভেশন স্টেশনকে প্রথম লাইসেন্স তার আমলেই দেয়া হয়েছিল। সেসময় কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের লাইসেন্স ছিল। উনি এসে আরো অনেকগুলো ব্যাংক ও ইন্সুরেন্সকে লাইসেন্স দিয়েছিলেন।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী প্রফেসর শাসমুল আলম বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক শক্তির মূল উৎস অবকাঠামোগত উন্নতি। এদেশে শক্তিশালী প্রাইভেট সেক্টর গড়ে উঠেছে। একা সরকারের পক্ষে এতো তহবিল সরবরাহ করা সম্ভব নয়। তাই বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আনার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। এছাড়া বিশ্বাস-অবিশ্বাসের একটি সংস্কৃতিও গড়ে উঠেছে, যা থেকে সরে আসা উটিত বলে মত তার।

পিপিপি কর্তৃপক্ষের নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, প্রাইভেট সেক্টর সরকারকে বিশ্বাস করে না। আবার সরকারও প্রাইভেট খাতকে বিশ্বাস করে না। তবে বর্তমানে এই সমস্যা অনেকটাই কেটে যাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
বুয়েটের প্রফেসর ড. শামসুল হক বলেন, এদেশে জনসংখ্যা বেশি, ভূমি কম, কনফ্লিক্ট বেশি। এজন্য একটি ইউনিট করা দরকার। তাহলে বাস্কেটে সাকসেস স্টোরি থাকবে।

এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিমউদ্দিন বলেন, অবকাঠোগত উন্নয়নের ফলে বর্তমানে ব্যবসা-বাণিজ্য অনেক সম্প্রসারিত হয়েছে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ ৫২ বিলিয়ন ডলার সমপরিমানের রফতানি করেছিল। ২০৪১ সালে উন্নত বিশ্বের কাতারে দাঁড়াতে হলে এই রফতানি ৩০০ বিলিয়নে উন্নীত করতে হবে। এজন্য পোর্টের সক্ষমতা, বাড়াতে হবে, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়েকে আরো আধুনিক করতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন টেস্ট করতে হলে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসতে হয়। এ সমস্যা সমাধান করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রকৃত ঋণ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ