Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কর অব্যাহতি সুবিধা উঠে যাচ্ছে

আইএমএফ ঋণ পাওয়ার শর্তের মধ্যে কর ছাড় পরিহারের বিষয়টি অন্যতম

মো. জাহিদুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অর্থনীতির আকারের বিবেচনায় বাংলাদেশে কর আদায়ের হার সবচেয়ে কম। এর কারণ শুধু করের আওতা কম কিংবা শুধু কর ফাঁকি নয়, বিপুল অঙ্কের কর অব্যাহতি বা ছাড়ও। কর অব্যাহতির এ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ পাওয়ার শর্তের মধ্যেও কর ছাড় পরিহারের বিষয়টি অন্যতম।
সূত্র জানায়, রাজস্ব বোর্ড ব্যতিক্রমধর্মী জনস্বার্থমূলক কার্যক্রম ছাড়া শুল্ক-কর অব্যাহতি তুলে দিতে চায়। এ বিষয়ে সম্প্রতি একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। ওই সভায় এনবিআরের পাশাপাশি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় এনবিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের শ্রেণিতে যাবে। এ ছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ-উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। লক্ষ্য অর্জনে কর-জিডিপির অনুপাত বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের এই অনুপাত ১০ শতাংশেরও কম। কর আদায় কাক্সিক্ষত পর্যায়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অব্যাহতির সংস্কৃতি অন্যতম বড় বাধা।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, সরকারের কার্যক্রম, প্রকল্প বাস্তবায়ন কিংবা মেরামতে পণ্য আমদানি বা কেনাকাটা করলে শুল্ক-কর অব্যাহতির আবেদনের পরিবর্তে কোন খাতে কত কর দিতে হবে, তার হিসাব করে প্রয়োজনীয় অর্থ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সেই বরাদ্দ থেকেই শুল্ক-কর পরিশোধ করতে হবে। মূল্য সংযোজন কর, আমদানি শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক বা আয়কর সব ক্ষেত্রেই এটি বাস্তবায়ন করতে হবে। ব্যতিক্রমী জনস্বার্থমূলক কারণ ছাড়া এসআরও জারি করে বিশেষ শুল্ক ছাড় সুবিধা পরিহার করা হবে।
বৈঠকে আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর ওমেন এবং আইসিডিডিআর,বির শুল্ক-কর অব্যাহতি নিয়ে আলোচনা হয়। সিদ্ধান্ত হয়, আগের বছরগুলোতে এসব প্রতিষ্ঠান যে পরিমাণ শুল্ক-কর অব্যাহতি সুবিধা ভোগ করেছে, এর সঙ্গে সমন্বয় করে আগামীতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে শুল্ক-করে বাজেট রাখতে হবে। এনবিআরের এ সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দফতরে খসড়া আকারে জানানো হয়েছে। শিগগির এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে তখনকার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অব্যাহতির পরিবর্তে প্রযোজ্য শুল্ক-কর আদায় করে কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর নির্দেশ দেন। নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করে এনবিআর। তবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা যাচ্ছিল না। কিন্তু আইএমএফ থেকে ৪৫০ কোটি ডলার পাওয়ার শর্ত হিসেবে এখন এ বিষয়ে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে সরকার। এনবিআরও এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে তৎপরতা বাড়িয়েছে।
রাজস্ব খাতে সংস্কার নিয়ে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে গত নভেম্বরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমকে চিঠি দেয় আইএমএফ। এতে বলা হয়, দু’পক্ষের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আইএমএফ কাজ করতে চায়। এ খাতের সংস্কারে আইএমএফ এনবিআরকে লিখিত সুপারিশ পাঠাবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এনবিআর কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়ানোরও পরামর্শ দেওয়া হয় চিঠিতে। আইএমএফ বলেছে, বাংলাদেশে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির তুলনায় কর আহরণ কম হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে, আয়কর, মূল্য সংযোজন কর-ভ্যাট ও আমদানি শুল্কে ব্যাপক ছাড় দেওয়া।
২০২০ সালে এনবিআরের তৈরি করা এক হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকার কর অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ওই বছর কাঁচামাল, যন্ত্রাংশ, পণ্য আমদানির বিপরীতে ৪৬ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার কর অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া বন্ড সুবিধার আওতায় শুল্ক-কর ছাড় দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ৫১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার মতো। এ ছাড়া আয়কর ও ভ্যাট খাতে আরো প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো ছাড় দেওয়া হয়েছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম ৮ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কর অব্যাহতি দেওয়া হয় শিল্প খাতের সক্ষমতা বাড়াতে। কর অব্যাহতি আগামীতে যৌক্তিক করা হবে। এটি চলমান প্রক্রিয়া।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি কর সুবিধা পাচ্ছে বিদ্যুৎ খাত। এ খাতের সব বড় প্রকল্পই কর অব্যাহতি ভোগ করছে। অবকাঠামো খাতের বড় প্রকল্পগুলো একই সুবিধা পাচ্ছে। বেসরকারি খাতেও ছাড় দেওয়া হচ্ছে। দেশের অনেক খাতকে প্রতিষ্ঠিত করতে কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এসব খাতের মধ্যে মোটরসাইকেল, মোবাইল ফোনসেট, কম্পিউটার, ওয়াশিং মেশিন, কম্প্রেশর, লিফট ও মাইক্রোবাস অন্যতম। এ ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি খাত, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, কৃষি খাতের বিভিন্ন পণ্য, সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পসহ আরো প্রায় ১০০টি পণ্যে কর অব্যাহতি রয়েছে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মজিদ বলেন, অনেক আগে থেকেই এনবিআর কর ছাড় দিতে চায় না। তবে রাজনৈতিক-অর্থনীতির কারণে সরকারের পক্ষ থেকে যখন বলা হয়, তখন এনবিআরের কিছু করার থাকে না। সুতরাং কর ছাড় পরিহারের বিষয়ে সরকারের উচ্চমহল থেকে সিদ্ধান্ত আসতে হবে।
গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই শুল্ক-কর ছাড় দেওয়া হয়। এগুলো পুর্ননির্ধারণ করা প্রয়োজন। শুধু আইএমএফের শর্ত পালন নয়, দেশের রাজস্ব বাড়ানোর প্রয়োজনেই কর ছাড় যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি রাজস্ব বাড়াতে এনবিআরের কার্যক্রমকে ঢেলে সাজানোরও পরামর্শ দেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ২৪ জুলাই ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চেয়ে আইএমএফকে চিঠি দেয় সরকার। ঋণের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করতে আইএমএফের ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল গত ২৬ অক্টোবর থেকে ১৫ দিন ঢাকা সফর করে। এ সময় সংস্থার পক্ষ থেকে বিভিন্ন করণীয় বা শর্ত নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে কর অব্যাহতি প্রত্যাহারসহ রাজস্ব খাতে সংস্কার, ভর্তুকি কমানো, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা, ব্যাংক খাতে সংস্কার, সুদের হারে সীমা তুলে দেওয়া অন্যতম। সরকারের সঙ্গে আলোচনা শেষে গত ৯ নভেম্বর বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার বিষয়ে সম্মতি জানায় আইএমএফ।
আগামী মাসের শেষ দিকে আইএমএফের পরিষদে বাংলাদেশের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উঠবে। পরিষদে অনুমোদনের প্রায় ১০ দিনের মধ্যেই ঋণের প্রথম কিস্তি পাবে বাংলাদেশ। ঋণের বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি আইএমএফের নিয়মিত কার্যক্রমে অংশ নিতে তিন দিনের সফর শেষে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা ত্যাগ করেছেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক (ইডি) ড. কৃষ্ণমূর্তি ভি সুব্রামানিয়ান। এছাড়া আগামী মাসে আইএমএফের ডিএমডি অ্যান্তইনেত সায়েহ বাংলাদেশ সফরে আসবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আইএমএফ ঋণ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->