Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অকাস চুক্তির জের : এবার ব্রিটেনের সঙ্গে সামরিক সংলাপ বাতিল করল ফ্রান্স

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১০:৫৪ এএম

ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যে নতুন একটি নিরাপত্তা চুক্তির জেরে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সাথে একটি পূর্বনির্ধারিত সামরিক সংলাপ বাতিল করেছেন ফরাসি প্রতিরক্ষামন্ত্রী।

পারমাণবিক শক্তিচালিত ডুবোজাহাজ তৈরির জন্য অস্ট্রেলিয়া অকাস চুক্তিতে সই করার পর প্যারিস ক্ষুব্ধ হয়। কারণ এই চুক্তির কারণে ফ্রান্সের সাথে একটি বড় ডুবোজাহাজ ক্রয়চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসে দেশটি।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, ওই চুক্তি নিয়ে ফ্রান্সের চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু এই সপ্তাহে লন্ডনে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেসের সাথে ফ্লোরেন্স পার্লির বৈঠক বাতিল করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে সম্পন্ন হওয়া অকাস চুক্তিকে বিতর্কিত দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের প্রভাব মোকাবিলার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ চুক্তিটির মাধ্যমে ২০১৬ সালে ফ্রান্সের সাথে করা অস্ট্রেলিয়ার আরো একটি চুক্তি বাতিল হয়ে যায়, যার আওতায় ৩৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ১২টি প্রচলিত সাবমেরিন তৈরি করার কথা ছিল।
ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাঁ-ইভ লে দ্রিয়াঁ এটিকে ‘পিঠে ছুরিকাঘাত’ হিসেবে উল্লেখ করে একে ‘মিত্র এবং অংশীদারদের মধ্যে অগ্রহণযোগ্য আচরণ’ বলে বর্ণনা করেছেন।
মিত্রদের মধ্যে কার্যত অভাবনীয় এমন পদক্ষেপের পর ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ ওয়াশিংটন এবং ক্যানবেরায় থাকা ফরাসি রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহারের আদেশ দেন।
জাতিসঙ্ঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কের পথে থাকা বরিস জনসন প্লেনে বসে দেয়া এক বক্তব্যে বলেন, জোট নিয়ে ফ্রান্সের ‘চিন্তিত’ হওয়ার কিছু নেই। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, অ্যাংলো-ফরাসি সম্পর্ক ‘দৃঢ’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের মধ্যে একটি ‘অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক’ রয়েছে, যা তিনি ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করেন। এছাড়া ‘ফ্রান্সের প্রতি আমাদের ভালোবাসা অদম্য।’
‘অকাস কোনোভাবেই একপাক্ষিক জয়ের কোনো বিষয় নয়, এটি বর্জনীয় নয়। এটা এমন কিছু নয় যা নিয়ে কারো চিন্তার দরকার রয়েছে। বিশেষ করে আমাদের ফরাসি বন্ধুদের জন্য তো নয়ই।
জনসনের সফর সঙ্গী হিসেবে রয়েছেন নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস। যিনি চুক্তির বিষয়ে তার অবস্থান এরই মধ্যে সানডে টেলিগ্রাফের একটি নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন।
ট্রাস বলেন, এই চুক্তি যুক্তরাজ্যের নিজের স্বার্থ রক্ষায় ‘কঠোর’ হতে প্রস্তুত থাকার বিষয়টি স্পষ্ট করেছে এবং শত শত নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির সক্ষমতাকে সামনে এনেছে।
এদিকে, অস্ট্রেলিয়া ফ্রান্সের সাথে তার চুক্তি বাতিল করে অকাস চুক্তির পক্ষে নিজেদের অবস্থানও তুলে ধরেছে। প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ফ্রান্সের সচেতন হওয়া উচিৎ ছিল যে চুক্তিটি ভঙ্গ হতে পারে।
গতকাল রোববার এক বক্তব্যে মরিসন বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত, এটি একটি সিদ্ধান্ত নেয়ার জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছিল যে, অস্ট্রেলিয়ান করদাতাদের অর্থে নির্মিত সাবমেরিনগুলো চালুর পর প্রয়োজনের সময় সেগুলো যথাযথ সেবা দিতে পারবে কি না। আর কৌশলগত সব দিক বিবেচনা করে এবং বুদ্ধিমত্তা ও প্রতিরক্ষা পরামর্শের সর্বোত্তম সম্ভাবনার উপর ভিত্তি করে আমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়া যেত না।’
অকাস চুক্তির মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার পরমাণু শক্তিচালিত ডুবোজাহাজের মালিক হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এটা হলে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের সপ্তম দেশ হিসেবে এই ডুবোজাহাজের মালিক হবে।
চুক্তির আওতায় মিত্ররা সাইবার সক্ষমতা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অন্যান্য গভীর সমুদ্রে ব্যবহৃত অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করবে।

অকাস চুক্তিতে যা আছে
মূলত বিরোধপূর্ণ দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের প্রভাব মোকাবিলার জন্যই নতুন এই অকাস জোট গঠন করা হয়েছে। ওই অঞ্চলে বহু বছর ধরেই সঙ্কট বিরাজ করছে এবং এর জের ধরে উত্তেজনাও চলছে।
নবগঠিত অকাস জোটের তিনটি দেশ যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে যে সমঝোতা হয়েছে তাতে পরমাণু শক্তি-চালিত সাবমেরিন বা ডুবোজাহাজ তৈরির জন্য অস্ট্রেলিয়াকে প্রযুক্তি সরবরাহ করার কথা বলা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণে অ্যাডেলেইডে এসব সাবমেরিন নির্মাণ করা হবে।
অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইন্সটিটিউটের একজন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ মাইকেল শোব্রিজ বলেছেন, ‘একটি পারমাণবিক সাবমেরিনের প্রতিরক্ষা বিষয়ক প্রচণ্ড সক্ষমতা রয়েছে। এর ফলে কোনো অঞ্চলে এর বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। বিশ্বের মাত্র ছয়টি দেশের পারমাণবিক সাবমেরিন রয়েছে।’
অস্ট্রেলিয়ার জন্য সাবমেরিন নির্মাণের পাশাপাশি গোয়েন্দা ও কোয়ান্টাম প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তথ্য ও প্রযুক্তি বিনিময়ের কথা বলা হয়েছে এই চুক্তিতে।

ফ্রান্স ক্ষুব্ধ কেন?
যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ার এই নতুন উদ্যোগে স্বাভাবিকভাবেই ক্রদ্ধ হয়েছে প্যারিস। কারণ তারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই চুক্তির ফলে অস্ট্রেলিয়ার সাথে তাদের পূর্ব-স্বাক্ষরিত বহু কোটি ডলারের একটি সমঝোতার অবসান ঘটেছে।
২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়া ও ফ্রান্সের মধ্যে তিন হাজার সাতশত কোটি ডলার মূল্যের সেই চুক্তি সই হয়েছিল, যার আওতায় অস্ট্রেলিয়ার জন্য ১২টি সাবমেরিন নির্মাণ করার কথা ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিষয়ক বিবিসির সংবাদদাতা বারবারা প্লেট-আশার বলছেন, অকাস চুক্তিটি ফ্রান্সের জন্য একদিকে অর্থনৈতিক ধাক্কা। তেমনি নতুন এই নিরাপত্তা চুক্তির ঘোষণা ফরাসী নেতাদের জন্য বিস্ময়করও, কারণ এ বিষয়ে তাদের কোনো ধারণা ছিল না। সূত্র : বিবিসি



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফ্রান্স


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ