মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
অস্ট্রেলিয়া অনেক বড় কূটনৈতিক ভুল করেছে বলে মন্তব্য করেছে ফরাসি রাষ্ট্রদূত জঁ-পিয়েরো থেবোল্ট। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের সঙ্গে বিকল্প সমঝোতা হওয়ার পর ফ্রান্সের সঙ্গে কয়েক শত কোটি ডলারের ডুবোজাহাজ নির্মাণ চুক্তি বাতিলের করেছে অস্ট্রেলিয়া। এরপরেই ক্যানবেরা থেকে রাষ্ট্রদূত থিবোল্টকে ডেকে পাঠিয়েছে ফ্রান্স। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমি মনে করি, এটি একটি বড় ভুল। অংশীদারের সঙ্গে বাজে আচরণ করা হয়েছে। কারণ এটি কোনো চুক্তি ছিল না, ছিল অংশীদারত্ব। যা আস্থা, পারস্পরিক সমঝোতা ও আন্তরিকতার ওপর নির্ভর করে টিকে থাকে। বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়া বলেছে, তারা ২০১৬ সালে প্রচলিত ডুবোজাহাজের একটি বহর নির্মাণে ফ্রান্সের সঙ্গে করা চুক্তি বাতিল ঘোষণা করেছে। এর বদলে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটিশ প্রযুক্তিতে পরমাণু সক্ষমতার ডুবোজাহাজ নির্মাণ করা হবে। চার হাজার কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি বাতিলকে ‘পিছন থেকে ছুরিকাঘাত’ বলে আখ্যায়িত করেছেন ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এদিকে পরামর্শের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠিয়েছে ফ্রান্স। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা চুক্তির প্রতিবাদ জানাতেই দেশটি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যুক্তরাজ্যও ওই চুক্তির অংশীদার। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যতিক্রমী গুরুতর’ পরিস্থিতিতে ‘ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত’ নিতে হয়েছে। পরমাণু-সক্ষমতার ডুবোজাহাজ নির্মাণে অস্ট্রেলিয়াকে প্রযুক্তি সরবরাহে অকাস নামের একটি জোট গঠন করা হয়েছে। এতে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ফ্রান্সের সই হওয়া কয়েশ কোটি মার্কিন ডলারের একটি চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের প্রভাব মোকাবিলার চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে এই চুক্তিকে। বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের এক ভার্চ্যুয়াল বৈঠকের পরে এ চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছিল। প্রকাশ্যে ঘোষণা দেওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ফ্রান্সকে চুক্তির বিষয়ে অবগত করা হয়েছিল।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-ইয়েভেস লা দ্রিয়ান বলেন, প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর অনুরোধে রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠানো হয়েছে। এর আগে তিনি বলেছিলেন, বাইডেন প্রশাসন পিছন থেকে ছুরি মেরেছে। বাইডেনও ফ্রান্সের সঙ্গে তার পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো আচরণ করেছেন। লা ড্রিয়ান বলেন, আমরা অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে একটি আস্থার সম্পর্ক তৈরি করেছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। শুক্রবার তিনি বলেন, মিত্র ও অংশীদারদের মধ্যে এ চুক্তি অগ্রহণযোগ্য আচরণের মতো। আমাদের অংশীদারত্বের জোটের দৃষ্টিভঙ্গি এবং ইউরোপের জন্য ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের গুরুত্বের ওপর চুক্তির বিরূপ প্রভাব পড়বে।
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে এরকম একটি নিরাপত্তা চুক্তির ব্যাপারে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ প্যারিস এর প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়ায় তাদের নিজেদের রাষ্ট্রদূতকে যে ডেকে পাঠিয়েছে তা খুবই অস্বাভাবিক ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া থেকে ফ্রান্স তাদের রাষ্ট্রদূতদের এই প্রথমবারের মতো ডেকে পাঠাল। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, পরিস্থিতির ভয়াবহতার কথা বিবেচনা করেই তাদের এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ ইভ লু দ্রিয়া শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন যে প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাখোঁর অনুরোধে রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠানো হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকদের অনেকেও নতুন এ সমঝোতার সমালোচনা করছেন এবং এর নামের উচ্চারণের সাথে মিলিয়ে জোটটিকে ‘অকওয়ার্ড’ বা ‘বেমানান’ বলেও উল্লেখ করেছেন। চীনও এ উদ্যোগের সমালোচনা করে একে ‘স্নায়ু যুদ্ধের মানসিকতা’ বলে উল্লেখ করেছে।
কী আছে অকাস চুক্তিতে : মূলত বিরোধপূর্ণ দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের প্রভাব মোকাবেলার জন্যই নতুন এ অকাস জোট গঠন করা হয়েছে। ওই অঞ্চলে বহু বছর ধরেই সঙ্কট বিরাজ করছে এবং এর জের ধরে উত্তেজনাও চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বুধবার অকাস গঠনের কথা ঘোষণা করেন।
এ তিন নেতার এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অকাসের আওতায় প্রথম উদ্যোগ হিসেবে আমরা পরমাণু-চালিত সাবমেরিন সক্ষমতা অর্জনে সহায়তায় অঙ্গীকার করছি। এটি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে স্থিতিশীলতায় এবং আমাদের যৌথ স্বার্থের সহায়তায় মোতায়েন করা হবে’।
নবগঠিত অকাস জোটের তিনটি দেশ যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে যে সমঝোতা হয়েছে তাতে পরমাণু শক্তি-চালিত সাবমেরিন বা ডুবোজাহাজ তৈরির জন্য অস্ট্রেলিয়াকে প্রযুক্তি সরবরাহ করার কথা বলা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণে অ্যাডেলেইডে এসব সাবমেরিন নির্মাণ করা হবে।
অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইন্সটিটিউটের একজন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ মাইকেল শোব্রিজ বলেছেন, ‘একটি পারমাণবিক সাবমেরিনের প্রতিরক্ষা বিষয়ক প্রচণ্ড সক্ষমতা রয়েছে। এর ফলে কোনো অঞ্চলে এর বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। বিশ্বের মাত্র ছ’টি দেশের পারমাণবিক সাবমেরিন রয়েছে’। অস্ট্রেলিয়ার জন্য সাবমেরিন নির্মাণের পাশাপাশি গোয়েন্দা ও কোয়ান্টাম প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তথ্য ও প্রযুক্তি বিনিময়ের কথা বলা হয়েছে এ চুক্তিতে।
ফ্রান্স কেন ক্ষুব্ধ : যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ার এ নতুন উদ্যোগে স্বাভাবিকভাবেই ক্রুদ্ধ হয়েছে প্যারিস। কারণ তারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ চুক্তির ফলে অস্ট্রেলিয়ার সাথে তাদের পূর্ব-স্বাক্ষরিত বহু কোটি ডলারের একটি সমঝোতার অবসান ঘটেছে। দু’হাজার ষোল সালে অস্ট্রেলিয়া ও ফ্রান্সের মধ্যে ৩৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সেই চুক্তি সই হয়েছিল, যার আওতায় অস্ট্রেলিয়ার জন্য ১২টি সাবমেরিন নির্মাণ করার কথা ছিল।
‘ফ্রান্স বলছে, সাবমেরিন চুক্তির কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে বলে তারা ক্ষুব্ধ হয়নি, বরং মিত্র দেশ হওয়া সত্বেও যেভাবে ফ্রান্সকে এই দৃশ্যের বাইরে রেখে ইংরেজিভাষী তিনটি দেশের মধ্যে গোপনে আলাপ আলোচনা হয়েছে তাতে তারা ক্ষুব্ধ’।
লন্ডন কেন বাদ : অকাস চুক্তির প্রতিবাদে ওয়াশিংটন ও ক্যানবেরায় ফরাসি রাষ্ট্রদূতদের প্যারিসে ডেকে পাঠানো হয়েছে, কিন্তু নতুন এ জোটে যুক্তরাজ্যের জড়িত থাকা সত্ত্বেও লন্ডনে নিযুক্ত তাদের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠানো হয়নি। এ বিষয়ে ফরাসি সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া ব্যাখ্যায় ফ্রান্সের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন এ জোটে যুক্তরাজ্যের ভূমিকা খুব গৌণ বলে মনে করে ফ্রান্স।
যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া কী বলছে : হোয়াইট হাউজের একজন কর্মকর্তা বলছেন, ফরাসি সরকারের এ উদ্যোগে বাইডেন প্রশাসন দুঃখ প্রকাশ করে বলেছে, বিরোধ মিটিয়ে ফেলার ব্যাপারে সামনের দিনগুলোতে তারা ফ্রান্সের সঙ্গে আলোচনা করবে।
ফ্রান্সের এ সিদ্ধান্তকে স্বাভাবিকভাবে নেয়নি অস্ট্রেলিয়াও। তারা বলছে, ফ্রান্সের এ পদক্ষেপ দুঃখজনক। অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যারিস পেইন বলেছেন, ফ্রান্সের হতাশ হওয়ার কারণ তারা বুঝতে পারছেন। তবে তারা আশা করছেন ফ্রান্সও ‘দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গুরুত্ব অনুধাবন করবে’। উল্লেখ্য যে দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় উদ্বিগ্ন অস্ট্রেলিয়া।
চীনের বক্তব্য : চীন অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। কিন্তু অকাস চুক্তির ফলে এই দুটো দেশের সম্পর্ক যে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সে নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। চুক্তির তীব্র সমালোচনা করে চীন একে ‘চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন’ ও ‘সঙ্কীর্ণ মানসিকতা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাঁও লিজিয়ান বলেছেন, এ জোট আঞ্চলিক শান্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার ঝুঁকি তৈরি করেছে এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে জোরদার করছে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়া - এ তিনটি দেশের তীব্র সমালোচনা করেছেন তিনি এবং অকাস চুক্তিকে ‘স্নায়ুযুদ্ধ মানসিকতা’ উল্লেখ করে বলেছেন, তারা তাদের নিজেদের স্বার্থেরও ক্ষতি করছে। চীনা গণমাধ্যমগুলোতেও একই মনোভাব ব্যক্ত করে সম্পাদকীয় প্রকাশ করা হয়েছে।
পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতার শঙ্কা মালয়েশিয়ার : মালয়েশিয়া শনিবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, অকাস চুক্তি ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতার অনুঘটক হতে পারে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এটি অন্যান্য শক্তিকে এ অঞ্চলে বিশেষ করে দক্ষিণ চীন সাগরে আরো আক্রমণাত্মক আচরণ করতে উস্কে দেবে’। বিবৃতিতে চীনের কথা উল্লেখ করা হয়নি, কিন্তু এ অঞ্চলে বেইজিংয়ের পররাষ্ট্রনীতি ক্রমবর্ধমানভাবে দৃঢ়ভাবে কাজ করে চলেছে, বিশেষ করে সম্পদসমৃদ্ধ দক্ষিণ চীন সাগরে এর সামুদ্রিক দাবি, যার মধ্যে কিছু মালয়েশিয়ার নিজস্ব দাবির সাথে সাংঘর্ষিক।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আসিয়ানের মধ্যে একটি দেশ হিসেবে মালয়েশিয়া আসিয়ানকে শান্তি, স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা অঞ্চল হিসাবে বজায় রাখার নীতি অনুসরণ করে’। মালয়েশিয়া সব পক্ষকে এ অঞ্চলে কোনো প্রকার উস্কানি ও অস্ত্র প্রতিযোগিতা এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। সূত্র : এনবিসি, বিবিসি বাংলা, এএফপি ও রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।